বিনামূল্যে ব্লগ তৈরি করার নিয়ম

আপনি কি জানেন, ব্লগ কি? বাংলায় ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করে আয় করাটা তুুুলনামুলকভাবে সহজ কেন? কিংবা কোন ব্লগ তৈরির প্ল্যাটফর্ম আপনার জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ হতে পারে। এবং, ব্লগারে কিভাবে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়? না জানলে আপনাকে স্বাগতম! আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন! এই লেখাটিতে, ব্লগার ব্যবহার করে সহজেই এবং বিনামূল্যে ব্লগ তৈরি করার নিয়ম এবং ব্লগিং সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ব্লগ তৈরি করে আয় করা বা ব্লগিং নিয়ে বর্তমানে মানুষের আগ্রহ ক্রমাগত বাড়ছে৷ যুগের সাথে পাল্লা দিয়ে সৃজনশীল মানুষগুলো তাদের মেধা উন্মোচনের প্লার্টফর্ম হিসেবে বেছে নিচ্ছে ব্লগকে। ব্লগ সম্পর্কে অন্যান্য ভাষায় প্রচুর লেখা থাকলেও বাংলা ভাষায় এর সংখ্যা খুবই সীমিত৷

ব্লগ কি? (What is blog?)

ব্লগ হলো নিজের অনুভূতি প্রকাশের একটি মাধ্যম। এখানে কোনো ব্যক্তি নিজের মতামত, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন লেখা, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। দিন যত যাচ্ছে, ব্লগের চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে এর ব্যাপ্তি ও প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে।

একটা সময় ছিল, যখন ব্লগকে ডায়েরির সাথে তুলনা করা হতো। মানুষ যেমন তার জীবনে প্রতিদিন ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ছোটখাটো ঘটনা ডায়েরিতে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখে রাখে, ব্লগেও তারা নিজের জীবনের ছোট ছোট সুখ দুঃখের কথা গুছিয়ে লিখে রাখত।

১৯৯৯ সালে Pyra Labs প্রথমবারের মতো Weblog নামে এমন অনলাইন ডায়েরী তৈরীর প্লার্টফর্ম তৈরী করে। দেখতে দেখতে খুব দ্রুত তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। Weblog এর এতো বেশি জনপ্রিয়তা দেখে গুগল খুব দ্রুত এটিকে কিনে নেয়। পরবর্তীতে এর নামকরণ করে Blogger।

কিন্তু ২০০৩ সালে আসার পর ব্লগের ব্যাপ্তি অন্য মাত্রায় পদার্পন করে। মানুষ ব্লগ সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে শুরু করে। যেখানে ব্লগকে আগে সাধারণ একটা অনলাইন ডায়েরী ভাবা হতো। সেখানে মানুষ ওয়ার্ডপ্রেসের দারুন সব ফিচারের কারণে একে অনলাইন ম্যাগাজিন টাইপ ওয়েবসাইট ভাবতে শুরু করে। ব্লগ নিয়ে ভবিষ্যতের বিশাল সম্ভাবনা এবং নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছা নতুন করে জাগ্রত হয়।

আরও পড়ুন-

ব্লগ ও ওয়েবসাইটের মধ্যে পার্থক্য

আগে খুব সহজেই ব্লগ ও সাধারণ ওয়েবসাইটগুলোকে আলাদা করা যেত। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, ব্লগ ও সাধারণ ওয়েবসাইটগুলোর ডিজাইন দেখতে একইরকম ডাইনামিক হচ্ছে।

আগে ব্লগগুলোতে তেমন কোনো ডিজাইন রাখা হতো না। মূল ফোকাস থাকত কনটেন্টের দিকে। কিন্তু এখন ডাইনামাইক সব ডিজাইনওয়ালা টেমপ্লেটের সুবাদে সাধারণ অন্যান্য ওয়েবসাইট থেকে ব্লগকে আলাদা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

এখানে বলে রাখা ভালো– ব্লগ মূলত নিজেই একটা ওয়েবসাইট। ব্লগ বলতে এমন একটি ওয়েবসাইটকে বোঝানো হয় যেখানে নিয়মিত কনটেন্ট আপলোড করা হয়।

একটি ব্লগসাইট অনেকগুলো পোস্টের সমাহার৷ নতুন নতুন পোস্ট করে ব্লগসাইট আপডেটেড রাখতে হয়। কোনো ব্লগসাইটে হয়তো দিনে বেশ কয়েকটা পোস্ট ছাপা হয়, আবার কিছু ব্লগে সপ্তাহে একটি। কিন্তু ছাপা হয়ই।

অন্যদিকে সাধারণ ওয়েবসাইট অনেকগুলো পেইজের সমাহার। এখানে কোনো একজন ডেভেলপার ওয়েবসাইট তৈরীর সময় প্রয়োজনীয় কিছু পেইজ বানিয়ে তথ্য সংযুক্ত করে তা রেখে দেয়। নিয়মিত আপডেটের আর প্রয়োজন হয়না।

ব্লগ সাইটগুলো বর্তমানে কতটা জনপ্রিয়?

এক কথায় অনে-এ-এ-এক!

ব্লগ শব্দটি এখন প্রায় সব ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের কাছেই পরিচিত। এর কারণ হলো ইন্টারনেটে ক্রমাগত ব্লগসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি।

আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, ইন্টারনেটের ৪১% এর অধিক ওয়েবসাইট শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে তৈরি। আর ওয়ার্ডপ্রেস একটি ব্লগ তৈরির প্লাটফর্ম। মানে, ইন্টারনেটে শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা ব্লগের সংখ্যাই প্রতি ১০০ তে ৩৩ টি!

ওয়ার্ডপ্রেস ছাড়াও ব্লগ ও ওয়েবসাইট বানানোর আরো অনেক প্লাটফর্ম রয়েছে। সেই সবগুলো প্লার্টফর্মে তৈরী ব্লগগুলো মিলিয়ে হিসেব করলে ইন্টারনেটের কত ভাগ জায়গা জুড়ে ব্লগসাইটের আধিপত্য আছে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত জ্যামিতিক হারে বেড়েই চলেছে। এই বিশাল হার দেখেই বোঝা যায়, ব্লগসাইট কতটা জনপ্রিয়!

ব্লগ তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা

ব্লগিং এর মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠান বা প্রোডাক্টের পাবলিসিটি বাড়ানো কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করে মানসিক শান্তির অর্জনের পাশাপাশি আরো অনেক ব্যাপার জড়িয়ে রয়েছে। লেখালেখি হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল।

এটা নিয়মিত চর্চার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব। আর আপনার ব্লগ আপনাকে সেই চর্চার সুযোগ করে দেবে। নিম্নোক্ত আরো কিছু কারনে আপনি একটি ব্লগ তৈরী করতে পারেন।

ব্লগে কিছু লেখার আগে আপনাকে সেই বিষয় সম্পর্কে সবকিছু পরিষ্কারভাবে জানতে হয়। তাই ব্লগিং এর মাধ্যমে আপনি অনেক কিছু জানতে পারবেন, শিখতে পারবেন।

সুন্দর করে সাজিয়ে লিখার অভ্যাস তৈরির সাথে সাথে আপনার চিন্তাভাবনাও অনেক গোছালো হয়ে উঠবে। এটা আপনার বাস্তব জীবনের জন্য খুব সহায়ক।

ব্লগিং করে একটা সময় গুগলে এ্যাডসেন্স এর অ্যাডের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন। ব্লগারদের অর্থ উপার্জনের একটি বড় সোর্স এটি। তবে এজন্য আপনাকে শ্রম দিতে হবে। কনটেন্ট বা পোস্ট যথাসম্ভব সুন্দর ও ইফেক্টিভ বানাতে হবে।

আপনার স্বপ্ন যদি হয় লেখক কিংবা সাংবাদিক হওয়া, তবে ব্লগিং এর মাধ্যমে আপনি খুব দ্রুত পরিচিতি পেতে পারেন।

প্রতি ১০০ জন ব্লগারের মধ্যে ২০ জন মাসে ব্লগের মাধ্যমে এতো উপার্জন করে যে, তার আর চাকরীর প্রয়োজন হয় না। তবে এমন অবস্থা আসতে সময় লাগে। তাই ভবিষ্যতের বেকারত্বের সম্ভাবনা দূর করতে ব্লগিং আপনার জন্য একটা বড় অস্ত্র হতে পারে।

বাংলা ব্লগ বানিয়ে কি গুগলে র‍্যাংক (Google Rank) করতে পারব?

হ্যাঁ এবং খুব সহজে।

বাংলাদেশ আইটি সেক্টরগুলোতে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবৎ খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলেছে। এর কারন হলো দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা।

ব্লগ সাইট আগে তেমন একটা ছিল না বাংলাদেশে। কিন্তু এখন আস্তে আস্তে প্রচুর ব্লগ সাইট তৈরি হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো বেশিরভাগ ব্লগসাইটগুলোতেই ভালো কনটেন্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। অনলাইন জুড়ে শুধু কপি পেস্টের ছড়াছড়ি।

হাতেগোনা কয়েকটা ওয়েবসাইট বাদ দিয়ে বেশিরভাগ ওয়েবসাইটেই মানহীন সব আর্টিকেল। মানহীনতার জন্য বেশিরভাগ ব্লগার গুগলে র‍্যাংক করতে পারে না। ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুত হতাশ হয়ে নিজের চুল নিজেই ছিড়ে “বাংলা ভাষায় কনটেন্ট লিখাই ভুল”- টাইপ ডায়লগ দেয়।

যারা এমন ডায়লগ দেয়, তাদের কথায় কান দেবেন না৷ নিজ মাতৃভাষায় ব্লগ লেখার আনন্দই অন্যরকম। অন্য কোনো ভাষায় এতো আনন্দ পাবেন না।

আর যদি আনন্দকে সাইডে রেখে উপার্জনের জন্য বাংলা ছেড়ে ইংরেজিতে লিখতে চান, তবে সে আশায় গুড়ে বালি হতে বাধ্য! কারণটা হচ্ছে- ইংরেজিতে সারা বিশ্বের মানুষ লিখালিখি করছে৷ তাই প্রতিযোগিতাও অনেক অনেক বেশি৷ সেই প্রতিযোগিতায় দক্ষতা ছাড়া টিকে থাকা অনেক বেশি কঠিন।

তবে, আপনার যদি ওই লেভেলের দক্ষতা আর ইংরেজিতে প্রচুর পারদর্শীতা থাকে, তবে ইংরেজীতে ব্লগ করতে পারেন। কিন্তু দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য, গুগলে বাংলা তথ্যভান্ডার উন্নত করার জন্য বাংলাতে ব্লগ লেখাও একধরনের দেশপ্রেমের উদাহরণ।

এখন বলি বাংলায় কনটেন্ট লিখে “খুব সহজে” র‍্যাংক করার কথা বলেছি কেন। বাংলায় সহজে র‍্যাঙ্ক করতে না পারার কারণ মূলত গুগল নির্দেশিত উপায়ে কনটেন্ট না লিখা৷ আপনি দেখবেন, বাংলায় টেকনোলজি সম্পর্কিত বেশিরভাগ সার্চ রেজাল্টেই নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইট সব সময় সার্চ লিস্টের উপরের দিকে থাকে।

কিন্তু ইংরেজীতে সার্চ দিলে একেক সময় একেকটা। এতে বোঝা যায়, বাংলায় মানসম্মত পোস্ট ওই নির্দিষ্ট কিছু ওয়েবসাইটই দিয়ে এসেছে। এজন্য বাংলাতে ব্লগিং করলে প্রতিযোগিতা অনেক কম, যদি আপনার কনটেন্ট ভালো মানের হয়।

উদাহরণ হিসেবে আসুন ব্যাপারটা একটু কল্পনা করে দেখি!

মনে করুন, আপনি খুব সিরিয়াসলি ব্লগ লিখতে চাইলেন। এখন আপনি ভাষা হিসেবে বেছে নিলেন ইংরেজিকে, কারণ আপনার ধারণা– ইংরেজি যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা, তাই বিশ্বের প্রচুর মানুষ ইংরেজিতে সার্চ দেয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোতে। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরের অভাব হবে না!

এটা ভেবে আপনি বাংলাকে সাইডে রেখে ইংরেজীতে ব্লগিং শুরু করলেন। অনেকগুলো মোটামুটি ভালো মানের কনটেন্টও লিখলেন।

আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, গুগল র‍্যাকিং এ টপ ১০০ এর মধ্যেও আপনার ঐ মোটামুটি ভালো কনটেন্ট থাকবে না। কারন ভাই, আপনার মতো সারা বিশ্বের ম্যাক্সিমাম ব্লগার ইংরেজিতে অনেক আগেই আপনার কনটেন্টের ওই সেইম টপিকের উপর অনেক অনেক ভালো কনটেন্ট বানিয়েই রেখেছে।

আর আরেকটা জিনিস আপনার জানা দরকার। গুগলে কেউ কোনো কিছু সার্চ দিলে যদি তার লোকেশন গুগল ট্রেস করতে পারে, তবে তার দেশের ব্লগারদের লেখা সার্চ কিওয়ার্ডের সাথে মিল কোনো ভালো কনটেন্ট থাকলে সেগুলোই গুগল ওই ব্যক্তিকে প্রথমে শো করে। এটা গুগলের একটা পলিসি।

আপনি যদি ভাবেন, আপনি ইংরেজিতে ভালো কন্টেন্ট লিখলে ইউরোপ আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশ থেকে খুব সহজে ভিজিটর পেয়ে যাবেন, তবে এটা ভুল ধারণা। ইউরোপ আমেরিকায় অনেক ব্লগার আপনার মতোই সুন্দর সুন্দর কনটেন্ট বানিয়ে রেখেছে এবং গুগলে সেগুলোই ওইসব দেশের সার্চকারীকে প্রদর্শন করবে।

ইংরেজি কনটেন্টগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা যে কতো, তা বোঝার জন্য গুগল কিওয়ার্ড রিসার্চ ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে দেখবেন, ইংরেজির বেশিরভাগ কিওয়ার্ডে কম্পিটিশন “High”। কিন্তু বাংলা বা বাংলিশ কিওয়ার্ডে কম্পিটিশন একদম নিচের লেভেলে “Low”!

ইংরেজিতে কনটেন্ট বানালে আপনি নিজ দেশের ভিজিটরও হাড়াবেন। কারণ আমাদের দেশের মানুষ ইংরেজিতে তেমন অভ্যস্ত না৷ তারা বাংলাতে কনটেন্ট এক্সপেক্ট করে।

ফলে দেখা যাবে, আপনি বাইরে থেকেও ভিজিটর পাচ্ছেন না, আবার দেশের ভিজিটরও পাচ্ছেন না।

কিন্তু আপনার কনটেন্ট যদি ইংরেজিতে না হয়ে বাংলাতে হতো, তাহলে আপনি একটু চেষ্টা করলেই ভালো ফল পেতেন। কারণ বাংলাতে কম্পিটিশন খুব কম। এজন্য ভালো কনটেন্ট তৈরি করলে প্রচুর রেগুলার ভিজিটর পেয়ে যেতেন।

বাংলা ভাষায় ব্লগিং করে অনলাইনে আয় করা সম্ভব?

হ্যাঁ, সম্ভব।

গুগল ২০১৭ সালে বাংলা ভাষায় তাদের নিজস্ব অ্যাড সার্ভিস গুগল অ্যাডসেন্স এর অনুমতি দিয়েছে।

অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে ব্লগে এ্যাড দেখিয়ে অনলাইনে আয় করা যায়। যে কোনো দেশের ব্লগারদের অর্থ উপার্জনের ব্যাপারে প্রথম পছন্দ হলো গুগল অ্যাডসেন্স। এর মাধ্যমে যত সহজে উপার্জন করা সম্ভব, অন্য কোনো অ্যাডভার্টাজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে ততো সহজে আয় সম্ভব হয় না।

বাংলাসহ প্রায় ৪৭টি ভাষাকে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। ভাষাগুলোর নাম নিচে সরবরাহ করা হলো।

Google AdSense এর জন্য অনুমোদন প্রাপ্ত ভাষা সমূহ

গুগল অ্যাডসেন্স সমর্থিত ভাষা
গুগল অ্যাডসেন্স সমর্থিত ভাষা

ব্লগ তৈরি করে আয় করার আরও কিছু উপায় জানতে অনলাইনে আয় বিষয়ক লেখাগুলো পড়তে ভুলবেন না যেন!

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-

কি কি মাধ্যমে বিনামূল্যে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়?

ব্লগসাইট বানানোর অনেক প্লার্টফর্ম আছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু একদম ফ্রি, আবার কিছু কিছু একদমই ফ্রি নয়। নিচে কয়েকটি প্লার্টফর্মের তালিকা দেওয়া হলো।

  • Blogger.com
  • Wix.com
  • Joomla.com
  • Medium.com
  • Weebly.com
  • WordPress.com
  • Tumblr.com, ইত্যাদি।

অনেকে WordPress.org আর Worpress.com কে গুলিয়ে ফেলে। মনে রাখবেন, এরা ভিন্ন ভিন্ন দুইটি প্লাটফর্ম।

এগুলোর মধ্যে ব্লগার (blogger.com) সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল পরিচালিত সম্পূর্ণ ফ্রি একটি সার্ভিস যারা আপনার ওয়েবসাইটকে সারাজীবন বিনামূল্যে পরিষেবা দেয়ার জন্য ওয়াদাবদ্ধ।

ওয়ার্ডপ্রেস.কম ও ফ্রি। কিন্তু এর প্রচুর সীমাবদ্ধতা আছে এবং এটি লাইফ টাইমের জন্য ফ্রি পরিষেবা দেয় না। নির্দিষ্ট স্টোরেজ (সম্ভবত ৩ জিবি) শেষ করার পর আপনাকে তাদের হোস্টিং কিনতেই হবে।

অন্যদিকে wordpress.org হোস্টিং সুবিধা প্রদান করেনা। WordPress.org এর মাধ্যমে বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) WordPress সম্পর্কিত বিভিন্ন সেবা যেমন- WordPress CMS বিনামূল্যে ডাউনলোড, ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য বিনামূল্যে থিম, প্লাগইনস প্রভৃতি প্রদান করে থাকে। যে কোনো হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং কিনে তারপর WordPress বিনামূল্যে ইনস্টল করে ব্যবহার করা যায়।

Weebly.com ও wordpress.com এর মতো নির্দিষ্ট স্টোরেজ পর্যন্ত ফ্রী ব্যবহারের সুবিধা দেয়।

কোন প্লাটফর্মে ব্লগ বা ওয়েবসাইট বানাবেন তা বোঝার জন্য প্রথমে হোস্টিং এবং ডোমেইন কি তা জানতে হবে। (তবে না জানলেও তেমন সমস্যা নেই। বেশি বোড়িং লাগলে দুইটা প্যারা স্কিপ করুন।)

ওয়েব হোস্টিং (Web Hosting)

মনে করুন, আপনি একটি বাড়ি তৈরী করবেন। এজন্য প্রথমেই কিসের প্রয়োজন পড়বে? অবশ্যই একটি জমির! আগে জমি কিনতে হবে। তারপরই আপনি সেই জমির উপর বাড়ি তৈরী করতে পারবেন।

আপনার বাড়িটি যদি একটা ওয়েবসাইট হয়, তবে এই জমিটা হচ্ছে হোস্টিং! তাহলে বুঝতেই পারছেন, যে কোনো বা বাড়ি বা ওয়েবসাইট– হোক সেটা ব্লগ কিংবা ডাউনলোডিং ওয়েবসাইট, অবশ্যই সেটার জন্য একটি জমি বা হোস্টিং থাকা আবশ্যক।

ডোমেইন নেম (Domain Name)

এই যে আপনি বাড়ি কিনলেন, বাড়িটার তো একটা নাম দিতে হবে! তাছাড়া আপনার আত্মীয়রা আপনার বাড়ি খুঁজে পাবে কিভাবে? এই নামটাই হলো আপনার ওয়েবসাইটের ডোমেইন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, Facebook.com হলো ফেসবুকের ডোমেইন বা ঠিকানা। আমরা ব্রাউজারের Url বক্সে Facebook.com লিখে ইন্টারে চাপ দিলেই ব্রাউজার আমাদের ডিরেক্ট ফেসবুকে পৌছে দেয়।

ডোমেইন সাধারণত ৩ ভাগে বিভক্ত।

Top Level Domain

কোনো ডোমেইনের শেষে যদি .com, .net, .org, .xyz ইত্যাদী এক্সটেনশন(ডট চিন্হের ডান অংশ) থাকে, তবে সেগুলো Top Level ডোমেইন। তাহলে ফেইসবুক.কম একটি টপ লেভেল ডোমেইন।

Country Level Domain

যেসব ডোমেইনের শেষ এক্সটেনশনটুকু কোনো দেশকে নির্দেশ করে, সেগুলো হলো Country Level Domain। যেমন, মালয়েশিয়ার কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনের এক্সটেনশন হলো .my। Facebook এর ডোমেইন যদি Facebook.com না হয়ে Facebook.my হতো তবে এটি মালয়েশিয়ার কান্ট্রি লেভেলযুক্ত ডোমেইন হিসেবে মর্যাদা লাভ করতো। বাংলাদেশের কান্ট্রি লেভেল ডোমেইনের এক্সটেনশন হলো .bd।

Low Rated Domain

এগুলো মূলত ফ্রী ডোমেইন। বিভিন্ন প্লার্টফর্ম তাদের ইউজারদের সাময়িক সুবিধা দেয়ার জন্য বিনা মূল্যে Low Rated Domain সাপ্লাই দিয়ে থাকে। ওয়ার্ডপ্রেস এবং ব্লগার দুইটি প্লাটফর্মই ফ্রিতে লো লেভেল ডোমেইন সরবরাহ করে।

ওয়ার্ডপ্রেসের সরবরাহ করা ডোমেইন

yourname.wordpress.com

ব্লগারের সরবরাহ করা ডোমেইন

yourname.blogspot.com

ফেসবুক যদি ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রীতে ডোমেইন নিয়ে খোলা কোনো ওয়েবসাইট হতো, তবে এর ডোমেইন হতো এমন–

facebook.wordpress.com

কিংবা ফেসবুক যদি ব্লগারে ফ্রীতে খোলা কোনো Low Rated Domain ওয়ালা ওয়েবসাইট হতো, তবে এর ডোমেইন হতো এমন–

facebook.blogspot.com

তাহলে,

কোথায় ব্লগ খুলবেন?

ব্লগিং করার সুযোগ দেওয়া ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেস সবচেয়ে ভালো মানের প্লার্টফর্ম। তবে ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ তৈরি করা কিছুটা ব্যয়বহুল।

অন্যদিকে ব্লগার ওয়ার্ডপ্রেসের মতো এতো ভালো মানের নয়। এর বয়স বেশি। চুল দাড়ি সব পেকে গেছে। টাকা থাকা সত্ত্বেও কিপটামী করে চুলে কালার করায় না। তবে মন খুব উদার। শরীরে দয়া মায়া বেশি। তাই যা দেয়, সব ফ্রীতে দেয়। সারাজিবনের জন্য বাসস্থান বা হোস্টিং তো ব্লগারে না চাইতেই পাওয়া যায়!

অন্যান্য প্লাটফর্মগুলো পেইড কিংবা প্রথম কিছুদিন ফ্রিতে দিয়ে পরবর্তীকালে অনেক বেশি টাকা চেয়ে বসে।

এখানে অন্য প্লাটফর্মগুলোকে সাইডে রেখে বহুল আলোচিত দুইটি প্লাটফর্ম সম্পর্কেই শুধু বলব।

আপনার জন্য গুগলের Blogger ভালো নাকি WordPress ভালো হবে সে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভেবে দেখুন যে, আপনি কি করেন এবং আপনার অর্থনৈতিক সক্ষমতা কেমন!

ওয়ার্ডপ্রেস আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে, যদি–

আপনার কিছু টাকা ইনভেস্ট করার সামর্থ থাকে। বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি ExonHost সর্বোনিম্ন ৩০০০ টাকা বাৎসরিক মূল্যে ভালো মানের ওয়েব হোস্টিং সেবা সরবরাহ করে।

ওয়ার্ডপ্রেস এর জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হোস্টিং গুলোর দাম অনেক বেশি। আগেই বলে রাখি, সাধারণ হোস্টিং আর ওয়ার্ডপ্রেসের হোস্টিং কিন্তু এক নয়! ইন্টারনেটের মোট ওয়েবসাইটের শতকরা ৪১ ভাগ ওয়েবসাইটই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো। তারমানে ওয়ার্ডপ্রেসে ব্লগ বানানোর জন্য হোস্টিং এর চাহিদা খুব বেশি।

একারণেই নামী হোস্টিং সাইটগুলো শুধু মাত্র ওয়ার্ডপ্রেসের জন্যই বিশেষ ধরণের ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং প্যাকেজ সরবরাহ করে। এসব হোস্টিং প্যাকেজের স্পিড, পার্ফর্ম্যান্স সাধারণ হোস্টিং এর তুলনায় অনেক বেশি।

শুধু তাই নয়, এসব বিশেষ হোস্টিং প্যাকেজ কিনে যারা ওয়ার্ডপ্রেসের ওয়েবসাইট হোস্ট করে, তাদের হোস্টিং সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানের জন্য হোস্টিং কোম্পানিগুলো আলাদা দক্ষ ডেভেলপার নিয়োগ করে।

এজন্য সাধারণ হোস্টিং এর তুলনায় ওয়ার্ডপ্রেসের হোস্টিং গুলোর দাম তুলনামূলক ভাবে একটু বেশি।

সহজেই গুগলে সার্চ লিস্টের সামনের দিকে আপনার ওয়েবসাইটের নাম দেখতে চান।

খুব দ্রুত সফল হতে চান।

অসাধারণ সব ফিচার ও ডায়ানামাইক স্টাইলের ওয়েবসাইট পেতে চান।

Google Blogger আপনার জন্য চমৎকার। যদি–

  • আপনি ছাত্র হয়ে থাকেন।
  • নতুন ব্লগ শুরু করতে চান।
  • পার্ট টাইম টেনশনহীনভাবে ব্লগিং করতে চান।
  • আপনার পকেটে MB কেনার টাকা ছাড়া কোনো টাকা পয়সা না থাকে।
  • আপনি শিখতে আগ্রহী এবং নতুন।
  • টাকা খরচ না করার মানসিকতা থাকে।
  • চাপ নিতে না চান।

এখন তাহলে আপনিই যাচাই বাছাই করুন, আপনার জন্য কোন প্লার্টফর্ম ভালো। তবে আমার মনে হয় আপনার জন্য ব্লগার বেস্ট। কারণ, আপনি নতুন ব্লগ শুরু করতে চাইছেন। আর নতুনদের জন্য গুগল ব্লগারের বিকল্প নেই।

ব্লগারে কিভাবে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়? (ব্লগ তৈরি করার নিয়ম)

আপনি যদি গুগলের ব্লগারে ব্লগ তৈরি করার নিয়ম জানতে চান বা একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন, তবে এটা কয়েক সেকেন্ডের কাজ মাত্র! অন্য যেকোনো প্লাটফর্মের তুলনায় ব্লগারে ব্লগ তৈরি করার নিয়ম সবচেয়ে সহজ। নিচের স্টেপগুলো ফলো করুন।

১। প্রথমে ব্লগারে যান।

২। আপনার গুগল এ্যাকাউন্টে লগইন করা না থাকলে লগইন করুন। এক্ষেত্রে আপনি লগইন করার জন্য আপনার জিমেইল একাউন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

৩। ব্লগের জন্য একটি টপিক বাছাই করুন। (আপাতত মনে যা আসে, লিখে দিন। পরে পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে৷

ব্লগ তৈরি করার নিয়ম – ব্লগারের টাইটেল বারে টাইটেল লিখুন
ব্লগ তৈরি করার নিয়ম – ব্লগারের টাইটেল বারে টাইটেল লিখুন

৪। এবার ডোমেইন বাছাই করুন। যদি আপনার পছন্দের নামটি Available না থাকে, তবে অন্যকোনো নাম দিয়ে চেষ্টা করতে থাকুন। পছন্দের নাম না পেলে মন খারাপের কিছু নেই৷ পরে টপ লেভেলের একটা ডোমেইন কিনে নিলেই হবে।

ডোমেইনের দাম হোস্টিং এর চেয়ে অনেক কম এবং বাৎসরিক হিসেবে পরিশোধ করতে হয়৷ বাংলাদেশের বেশিরভাগ ডোমেইন রিসেলার সাইটগুলো প্রায় ৮০০-১০০০ টাকায় এক বছর মেয়াদে ডোমেইন বিক্রি করে থাকে।

ব্লগারের সাবডোমেইন Address দিন
ব্লগারের সাবডোমেইন Address দিন

৫। ব্যাস, কাজ শেষ! আপনার ব্লগ রেডি!

৬। বাম পাশের থ্রী আইকনে চাপ দিলে কন্ট্রোলিং অপশনগুলো দেখতে পারবেন।

ব্লগারের মেনু বার
ব্লগারের মেনু বার

৭। “View your blog” ক্লিক করে আপনার ব্লগে ভিজিট করুন!

View your blogger blog

৮। আপনার ওয়েবসাইটটি দেখতে অনেকটা এমন হবে।

 It's a blogger blog site

৯। প্রতিবার ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ পেতে আপনার কন্ট্রোল প্যানেলে যাওয়ার জন্য Blogger.Com লিংকে প্রবেশ করুন।

ব্লগার এর ওয়েব ঠিকানা
ব্লগার এর ওয়েব ঠিকানা

ওয়েবসাইট বানানোর পর এখন কাজ হলো ভালো একটা থিম আপলোড করার। এই ব্লগে ইতিপূর্বে ভালো মানের ব্লগার থিম নিয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করা হয়েছে। প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন।

— শেষকথা —

পরিশেষে বলতে চাই, ব্লগ হচ্ছে একজন সৃজনশীল মানুষের জন্য অর্থ কিংবা জমি জমার মতোই খুব প্রিয় একটা সম্পদ। কারণ, এটা সে খুব যত্ন করে গড়ে তোলে এবং কষ্ট করে শ্রম দিয়ে কনটেন্ট বানায়।

ব্লগিংকে অর্থ উপার্জনের বস্তু হিসেবে না দেখে শখের বস্তু হিসেবে দেখলে আপনি আনন্দ এবং অর্থ দুইটাই পাবেন। পাশাপাশি বাড়তে থাকবে আপনার স্কিল।

ব্লগারে ব্লগ তৈরি করার নিয়ম তথা কিভাবে ব্লগারের একটি ফ্রি ব্লগ তৈরি করা যায়, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। তাই দেরি না করে এখনই একটা ব্লগ বানিয়ে শুরু করে দিন ব্লগিং! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।

সম্পাদকের বাছাই-

Leave a Comment