কিভাবে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করা যায়?

গুগলের একটি খুবই জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সার্ভিস হচ্ছে- ব্লগার.কম (ইংরেজিতে- Blogger.Com)। যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র একটি গুগল একাউন্ট বা জিমেইল একাউন্ট তৈরি ও ব্যবহার করে ব্লগার.কম -এ একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করতে পারবেন।

এখানে উল্লেখ্য যে, ফ্রি ব্লগার সাইটে আপনার দেয়া নামের সাথে (.blogspot.com) এক্সটেনশন যুক্ত থাকবে।

কিভাবে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়?

একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করতে আপনি ব্লগার.কম ব্যবহার করতে পারেন।

গুগল নিয়ন্ত্রিত blogger.com ব্লগারদের জন্য উপলব্ধ একটি প্রাচীনতম ওয়েবসাইট। এটি নতুন ব্লগার, বিশেষত যারা প্রথমবার ব্যক্তিগত ব্লগ সাইট প্রকাশ করতে চান তাদের জন্য একটি সহজ সমাধান প্রদান করে।

সক্রিয় গুগল অ্যাকাউন্ট থাকা যে কেউ বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারেন।

কিভাবে একটি ব্লগার সাইট তৈরি করবেন?

বিনামূল্যে একটি ব্লগার ব্লগ সাইট তৈরি করার জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন।

১। আপনার ব্রাউজারের অ্যাড্রেস বারে https://www.blogger.com/about/ টাইপ করুন এবং এন্টার চাপুন।

নিচের চিত্রের মত একটি পেজ খুলবে।

ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট খোলার নিয়ম - Blogger এর Home Page
ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট খোলার নিয়ম – Blogger এর Home Page

ব্লগার অ্যাকাউন্টে সাইন ইন করতে আপনার Google বা জিমেইল অ্যাকাউন্টটি ব্যবহার করুন। Sign in লিংকটি পেজের উপরে ডানদিকে দেখতে পাবেন।

ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির নিয়ম - Create new blog বাটনে ক্লিক করুন
ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরির নিয়ম – Create new blog বাটনে ক্লিক করুন

২। Create New Blog লেখা বাটনে ক্লিক করুন।

ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট খোলার নিয়ম - Blog Title এবং Address দিন
ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট খোলার নিয়ম – Blog Title এবং Address দিন

৩। “Title” ফর্মে আপনার ব্লগের নাম বা একটি শিরোনাম লিখুন।

৪। আপনাকে “Address” ফর্মের ক্ষেত্রে আপনার পছন্দসই সাইটের ঠিকানা যা কিনা আপনি Blog Address হিসেবে ব্যবহার করবেন ঠিক সেই ইংরেজি শব্দটি (.blogspot.com) এক্সটেনশনসহ লিখতে হবে (যেমনঃ wplifetips.blogspot.com)।

৫। এরপর Theme অংশে উপলব্ধ থিম বিকল্পগুলি থেকে আপনার পছন্দনীয় ব্লগ থিমটি নির্বাচন করুন।

প্রাসঙ্গিক লেখা-

ব্লগার সাইটের জন্য ৫টি সেরা ও জনপ্রিয় ম্যাগাজিন থিম

৬। সবশেষে Create Blog লেখা বাটনে ক্লিক করে আপনার ব্লগটি অনলাইনে প্রকাশিত করা নিশ্চিত করুন।

কিভাবে ব্লগারে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে টাকা আয় করা যায়?

ব্লগার সাইটে গুগল এ্যাডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করার কৌশল-

আপনার ফ্রি ব্লগার সাইট তৈরি করে টাকা আয় করার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাড এর মাধ্যমে আয় করা।

এর জন্য আপনাকে আপনার সাইটটি অ্যাডসেন্স এর জন্য প্রস্তুত করে নিতে হবে।

এরপর গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাবার জন্য এপ্লাই করতে হবে।

গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট এপ্রুভাল পাবার জন্য করণীয় কি?

জানতে হবে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট এপ্রুভাল পাবার জন্য কি কি বিষয়ের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রেখে ব্লগ তৈরি করতে হবে। (Google AdSense Program Policies)

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

১। আপনার ব্লগে নিয়মিত মানসম্মত মৌলিক লেখা লিখতে হবে (নূন্যতম ৩৫টি)।

২। ব্লগার.কম সাইটে ফ্রি (.blogspot.com) যুক্ত ব্লগের বয়স কমপক্ষে ৬ মাস হতে হবে।

৩। মোটামোটি গ্রহণযোগ্য পরিমানের নিয়মিত দর্শক থাকতে হবে – আনুমানিক ১০০০ জন ইউনিক ভিজিটর প্রতি মাসে আপনার ব্লগ ভিজিট করলে গুগল এডসেন্স এর এপ্রুভাল পেতে সহজ হবে।

৪। আপনার ব্লগ সাইটটিতে মোবাইল রেসপন্সিভ ত্রুটিমূক্ত থিম ব্যবহার করতে হবে।

৫। আপনার ব্লগে গুগল এডসেন্স এর প্রতিদ্বন্দ্বী কোন কোম্পানির অ্যাড ব্যবহার করতে পারবেন না।

আপনি যদি উপরের বিষয়গুলো অনুসরণ করে আপনার ব্লগটি সাজাতে পারেন তবে এই ব্লগে গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য এপ্লাই করলে খুব দ্রুত এপ্রুভাল পেয়ে যাবেন।

এরপর যথাযোগ্য যায়গায় অ্যাডসেন্স এর অ্যাড বসিয়ে আপনি অনায়াসেই অনলাইনে একটি ফ্রি ওয়েবসাইট বানিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়

আপনি ইচ্ছে করলে আপনার ফ্রি ব্লগার সাইটে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাড যুক্ত করতে সক্ষম হলে পরবর্তীতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।

তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন। ব্লগে অ্যাফিলিয়েট সাইটের বা প্রোডাক্টের লিংক অবশ্যই গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল পাবার পরে দেবেন।

কেননা, অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টের লিংক বা বিজ্ঞাপনের কারণে অনেক সময় গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রুভাল দিতে গড়িমসি করে বা রিজেক্ট করে দেয়।

ওয়ার্ডপ্রেস.কম দিয়ে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে আয়

এছাড়া WordPress.Com সাইটেও একটি ফ্রি ওয়েবসাইট বানিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করে টাকা উপার্জন করা যায়।

ফ্রি ব্লগ তৈরি করে আয় করার অন্যান্য কিছু পদ্ধতি


পোর্টফোলিও সাইট ডিজাইন করে তা ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ প্রচার করে আয় কৌশল

আপওয়ার্ক, ফাইবার, ফ্রিল্যান্সার.কম, গুরু প্রভৃতি মার্কেটপ্লেসে আপনার প্রোফাইলে পোর্টফোলিও ব্লগের লিংক দিয়ে তাতে আপনার কাজ ও কর্মদক্ষতার কিছু প্রমাণ প্রদর্শন করে রাখুন।

এতে করে বায়াররা আপনার কাজ দেখে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। ফলশ্রুতিতে আপনাকে তাদের কাজের জন্য হায়ার করার সম্ভাবনা অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।

ব্লগারে বিনামূল্যে ওয়েবসাইট তৈরি করে বিভিন্ন সেবা প্রদানের বিনিময়ে টাকা গ্রহণ করে আয়

বিভিন্ন মূল্য সংযোজনকৃত সেবা যেমন- কনসালটেন্সি সার্ভিস, ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস, আইন ও চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ প্রদান প্রভৃতি পদ্ধতি প্রয়োগ করে আয় করা সম্ভব।

ফ্রি ব্লগার সাইটে ছবি বা শিল্পকর্ম বিক্রি করে আয়

আপনি যদি শিল্পী বা ভালো মানের গ্রাফিক্স ডিজাইনার হয়ে থাকেন তবে আপনার ছবি ব্লগে বিক্রির ব্যবস্থা করেও ভালো অংকের টাকা উপার্জন করতে পারবেন।

ইবুক বিক্রি করে আয়

আপনার ফ্রি ব্লগার সাইটে বিভিন্ন প্রকারের নিজের বা কোন প্রতিষ্ঠান বা প্রকাশনা সংস্থার ইবুক সরাসরি বিক্রি করে অথবা অ্যামাজন কিন্ডল স্টোর, ফ্লিপকার্ট প্রভৃতি ই-কমার্স সাইটের ইবুক এর এর বিজ্ঞাপন বা রিভিউ প্রকাশ করে বিক্রির ব্যবস্থা করে কমিশন গ্রণের মাধ্যমে আয় করতে পারবেন।

বিনামূল্যে ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে ভিডিও টিউটোরিয়াল প্রকাশ করে আয়

আপনি নিশ্চয়ই ইউটিউব এর নাম শুনেছেন। বর্তমানে অনলাইনে আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে ইউটিউব সর্বাধিক জনপ্রিয় একটি মাধ্যম।

ধরে নিচ্ছি, আপনি নিজেও ইউটিউব এর মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করে আপনার ভিডিও চ্যানেল মনিটাইজ করার মাধ্যমে আয় করতে চাইছেন।

এক্ষেত্রে, আপনি কিন্তু খুব সহজেই আপনার ফ্রি ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ ব্যবহার করে আপনার ইউটিউব চ্যানেল এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে দর্শক তৈরি করতে পারবেন।

কিভাবে-

আপনার ভিডিওগুলো ইউটিউব চ্যানেলে হোস্ট করে প্রতিটি ভিডিও এর বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করে আপনার ফ্রি ব্লগার বা ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে নিয়মিত আর্টিকেল প্রকাশ করুন ও তাতে আপনার ভিডিও এর লিংক যুক্ত করুন অথবা YouTube Video Embed করে দিন।

আপনার ব্লগের দর্শকরাই একটা সময়ে আপনার চ্যানেল সাবস্ক্রাইবার ও নিয়মিত দর্শকে পরিণত হবে। যা কিনা আপনার ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে অনলাইনে আয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ইমেইল মার্কেটিং করে আয়

বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার প্রচুর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে অনলাইন ভিত্তিক সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন সেবা সমূহ (যেমন- ই-গভার্ণেন্স, কর ও ভ্যাট পরিশোধ, নতুন ব্যাংক একাউন্ট খোলা ও টাকা লেনদেন) চালু করার পর থেকে মানুষ অনেক বেশি অনলাইন নির্ভর হয়ে উঠেছে।

এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, অনলাইনে এই সেবা সমূহ গ্রহণের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেবা গ্রহণকারী ব্যাক্তিদের একটি ইমেইল এড্রেস থাকার প্রয়োজনীয়তা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে মানুষ নিজের প্রয়োজনেই ইমেইল একাউন্ট তৈরি ও ব্যবহারবিধি শিখে নিচ্ছেন।

আপনি এই বিষয়টি ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে অনলাইনে আয় করার লক্ষ্যে ব্যবহার করতে পারেন।

ইমেইল মার্কেটিং কি?

ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম প্রধান বিপণন কৌশল হচ্ছে ইমেইল মার্কেটিং। নির্দিষ্ট কিছু ইমেইল ঠিকানায় ইমেইল এর মাধ্যমে নিজের পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা নতুন প্রকাশনার তথ্য সমূহ পৌঁছে দেয়ার জন্য বর্তমান বিশ্বে ইমেইল মার্কেটিংয়ের প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে।

আপনি খুব সহজেই আপনার ফ্রি ব্লগার ব্লগে Thrive Leads এর মাধ্যমে একটি আকর্ষণীয় ইমেইল সাবস্ক্রাইবার ফর্ম তৈরি করার পর ফর্মটি ConvertKit ইমেইল মার্কেটিং কোম্পানির সাথে ইন্টিগ্রেটেড করে ব্লগের সুবিধাজনক যে কোন যায়গায় প্রদর্শন করে ভিজিটরদের সাবস্ক্রাইব করার জন্য অনুরোধ জানাতে পারেন।

আপনার ব্লগের লেখাগুলো ভিজিটরদের ভালো লাগলে তাঁরা নিজেরাই ব্লগের নিত্যদিনের আপডেট খবরাখবর জানার জন্য সাবস্ক্রাইব করবেন।

পরবর্তীতে, সেই সাবস্ক্রাইবারদের নিয়মিত ইমেইল নিউজ লেটারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সরবরাহ করার সাথে সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাফিলিয়েট পণ্যের লিংক যুক্ত করে দিন।

এতে করে, নিশ্চিতভাবেই আপনার অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টের একটা ভালো অংকের সেলস জেনারেটর করা বা পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হবে।

অর্থাৎ, আপনি ইমেইল মার্কেটিংয়ের সহায়তায় একটু কৌশল খাটিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে লাখ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

ব্লগ তৈরি করে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-

কিভাবে ব্লগ তৈরি করে অনলাইনে আয় করা যায়?

ব্লগারে ফ্রি ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার উপায় সম্পর্কিত লেখাটি আজ এ পর্যন্তই। ভালো লাগলে শেয়ার, কমেন্ট করতে ভুলবেন না যেন। ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকলে গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশায় এখানেই শেষ করছি।