পৃথিবী এখন প্রযুক্তির হাতের মুঠোয়। যত দিন যাচ্ছে, প্রযুক্তি নিয়ে আসছে নতুনত্ব। যা জীবনধারণকে আরও সহজ করে তুলছে। কমিয়ে দিচ্ছে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম। এতে পাল্টে যাচ্ছে মানুষের জীবন যাত্রার চিত্র। ভালো খারাপ সব কিছুই হাতের কাছে তুলে দিচ্ছে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তি মানুষের নিকট আশীর্বাদ স্বরূপ হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব এখন এগোচ্ছে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে। এই বিপ্লবের মূলে আছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)। জীবনযাত্রার মান পাল্টাচ্ছে।
কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও অ্যাপস, ইত্যাদিকে আমরা দ্রুত যোগাযোগের অন্যতম বাহন হিসেবে গণ্য করতে পারি। এতে মানুষ সুফল পাচ্ছে বলেই প্রযুক্তির প্রতি মানুষের আগ্রহ বেড়ে চলছে।
যন্ত্রমুখী হয়ে উঠছে প্রতিটি কাজে। ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করা হচ্ছে খাবার, বাজার করা সহ নানান ব্যবহার্য জিনিসপত্র। হেটে যেতে হচ্ছে না বাজারে। মানুষ সুবিধা খুজতে গিয়ে হয়ে উঠছে আরাম প্রিয়।
বাংলাদেশও বিগত কয়েকবছর ধরে তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আমূল পাল্টে দিয়েছে দেশের তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়া। আরও কিছুদিন পরে যেসব পরিবর্তন আশা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা করোনার ধাক্কায় সেটি হয়ে গেছে অনেক আগেই। যেমন- করোনাকালীন সময়ে বেড়েছে অনলাইন কার্যক্রম।
এখন যেভাবে নতুন নতুন ডিভাইস, কৌশল ও প্রবণতা ব্যাপক হারে চালু ও বিকশিত হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের লাইফস্টাইলকে আমূল পাল্টে দেবে। বেড়ে চলছে প্রযুক্তি নির্ভরতা এবং ব্যবহার হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ডাটানলেজ এর।
যার দরুণ প্রযুক্তি নিজ গতিতে এগিয়ে চললেও থামিয়ে দিচ্ছে মানুষের মানসিক ও শারীরিক গতিকে।
জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের ভালো দিক এর সাথেও রয়েছে খারাপ দিকও। অযথা সময় অপচয় এর পরিমাণ বেড়েছে সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলোতে।
দেখা যাচ্ছে এক ধর্মালম্বী কারো নামে ফেইক একাউন্ট খুলে সেই আইডি থেকে অন্য ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। এতে বাড়ছে ধর্মে ধর্মে রেষারেষি।
গণমাধ্যম গুলো এমন হাজার হাজার ফেইক এ্যাকাউন্ট এবং ফেইক নিউজে ছেয়ে গেছে।
সাথে বেড়েছে সাইবার বুলিং। প্রতি বছর সারা বিশ্বে সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। এবং এগুলো নষ্ট করছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রণালী। পাশাপাশি প্রযুক্তি কল্যাণে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মধ্যেও নেগেটিভ ভাবনার পরিবেশ তৈরি করছে।
ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানের তথ্য ও ছবি চুরি করে ব্ল্যাকমেল করার মতো ঘটনাও অহরহ ঘটছে। অপরাধী চক্র তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড সংঘটিত করার জন্য ইন্টারনেটকে গোপনীয় মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়।
শুধু ইন্টারনেট নয় প্রযুক্তির অন্য খাতকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন অপরাধ কর্ম করে যাচ্ছে অপরাধীরা।
কম্পিউটার, স্মার্টফোন, গেমিং সিস্টেম, বিশেষ করে পর্দায় কাজ করা যায় এমন যেকোনো যন্ত্রের প্রতি তীব্র টানকে প্রযুক্তির প্রতি আসক্তি হিসেবে ধরা যায়। শুধুমাত্র শিশু ও কিশোররাই যে আসক্ত হচ্ছে তেমন নয়। যেকোনো বয়সের মানুষই আসক্ত হতে পারে প্রযুক্তির ছোঁয়ায়।
এতে থমকে হচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রার মান। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক গুলোর ক্ষত্রে দুরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছে।
নৈতিকতা মূল্যবোধ কমে আসছে মানুষের মাঝে। সেটাও সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির জন্যই। ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদিতে যেমন গুণধারী পরিবর্তন করেছে প্রযুক্তি তেমনি পরিবর্তন করেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মানকেও। যার সিংহভাগ কারণ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলারই রূপ নিয়েছে।
এগুলো আয়ত্তে আনার দায়িত্ব আমাদেরই, নিজেদেরকে সংযত করতে না পারলে খারাপ বৈকি ভালো হবে না ভবিষ্যৎ।
প্রাসঙ্গিক লেখাসমূহ-