অনলাইন আয় বর্তমানে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। জেনে অবাক হবেন- বর্তমানে বিভিন্ন ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করেও অনলাইনে আয় করা সম্ভব। কিভাবে টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করা সম্ভব; আজ সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
টেলিগ্রাম কি (What is Telegram Messenger)?
হোয়াটসঅ্যাপ ম্যাসেঞ্জারের মতো টেলিগ্রামও একটি ম্যাসেজিং অ্যাপ। টেলিগ্রামে খুব দ্রুত ম্যাসেজ আদান প্রদান করা যায়। এবং এর মাধ্যমে অডিও, ভিডিও কলসহ বিভিন্ন অ্যাটাচমেন্টের ফাইল শেয়ার করা যায়। এর সিকিউরিটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।
টেলিগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপের মতো একটি এনক্রিপ্টেড সিকিউরড ম্যাসেজিং অ্যাপ। পার্সোনাল ম্যাসেজিং এর পাশাপাশি এতে পাবলিক গ্রুপ এবং চ্যানেল খোলা যায়। যেগুলোতে অসংখ্য মানুষ জয়েন করে থাকে।
সর্বোপরি সকল সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় টেলিগ্রামের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও অফিসিয়ালি টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করার কোনো সুযোগ নেই। তবে আনঅফিশিয়ালি কিছু টেকনিক অবলম্বন করে আপনি খুব সহজেই টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে যেমনটি বলেছিলাম, টেলিগ্রাম গ্রুপ এবং চ্যানেলে অসংখ্য মানুষ জয়েন করে। এই কমিউনিটির মাধ্যমেই মূলত টেলিগ্রাম থেকে আয় হয়ে থাকে।
টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করতে চাইলে সর্বপ্রথম আপনাকে ৫/১০ হাজার সদস্যের একটি চ্যানেল এবং একটি গ্রুপ লাগবে। ৫/১০ হাজার শুনে ভয়ের কিছু নেই, টেলিগ্রামে খুব সহজেই মেম্বার পাওয়া যায়।
এক্ষেত্রে আপনাকে যে বিষয়গুলোর উপর নজর দিতে হবে সেগুলো হলো-
- একটি ডিমান্ডেবল টেলিগ্রাম চ্যানেল খুলতে হবে।
- টেলিগ্রাম চ্যানেলটির খুব সুন্দর একটি নাম দিতে হবে।
- চ্যানেলের ভালো এবং ইউনিক একটি লোগো দিতে হবে।
- ধারাবাহিকভাবে কন্টেন্ট দিতে হবে।
- চ্যানেলের সদস্যদের চ্যানেলটি শেয়ার করার জন্য সুন্দরভাবে অনুরোধ করতে হবে।
- মতামত শেয়ার ও আলাপ আলোচনার জন্য উক্ত নামেরই একটি গ্রুপ খুলে মেম্বারদের এঙ্গেজ রাখতে হবে।
- চ্যানেল খোলা হয়ে গেলে এবার চ্যানেলের ডেস্ক্রিপশনে চ্যানল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখুন।এবং চ্যানেলটির জন্য একটি গ্রুপ খুলে, গ্রুপের লিংক যুক্ত করে দিন।
- মেম্বার বা সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে মাসে ২/১ বার গিভওয়ের ব্যবস্থা করুন।
উপরোক্ত কাজগুলো করলে আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলটির গ্রোথ বাড়বে এবং মেম্বারদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারলে ইনকাম করা সহজ হবে।
আরও পড়ুন-
এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক-
টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করার উপায়
টেলিগ্রাম থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায় আছে যেমনঃ- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, পেইড মেম্বারশিপ, পেইড প্রমোশন, লিংক শর্টনার, প্রোডাক্ট রিসেলিং, সাবস্ক্রিপশন ফি, ডোনেশন, সিপিএ মার্কেটিং ইত্যাদি। এর মধ্য থেকে ৪টি সহজ ও জনপ্রিয় উপায় নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ-
০১। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে মূলত, অন্য কোনো ব্যাক্তি, কোম্পানি অথবা প্লাটফর্মের পণ্যের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন মানুষের কাছে প্রচার করে সেগুলো তাদের কাছে বিক্রি করাকে বুঝায়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটররা (যারা পণ্য প্রচার করে) প্রতিটি পণ্য বিক্রির জন্য সেই কোম্পানি বা প্লাটোফর্মের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে কিছু টাকা পেয়ে থাকে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণে পণ্য বিক্রি করতে পারলে, বিনা মূলধনে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে মাস শেষে বেশ ভালো অংকের টাকা আয় করা সম্ভব।
অ্যাফিলিয়েশনে মূলধন বা বিশেষ যোগ্যতার প্রয়োজন না হলেও এর জন্য ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভালো ফলোয়ার, বেশি সংখ্যক গ্রুপ ও পেজের সদস্য অর্থাৎ টার্গেটেড অডিয়েন্স থাকা লাগে।
টেলিগ্রামে যেহেতু খুব সহজেই সাবস্ক্রাইবার বা মেম্বার পাওয়া যায়, তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য টেলিগ্রাম একটি ভালো মাধ্যম হতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে অ্যাফিলিয়েশন পাবো কিভাবে? বা এটা কি ১০০% পেমেন্ট করে থাকে কি না?
অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট রয়েছে যারা তাদের পণ্যগুলো বেশি বিক্রি করার জন্য ও বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য অ্যাফিলিয়েশন পোগ্রাম চালু করেছে। যেমনঃ- Amazon, Ebay, Clickbank, Daraz, Rokomari Store ইত্যাদি সাইটগুলো থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। অথবা আপনার পছন্দের ক্যাটাগরির নামের সাথে অ্যাফিলিয়েশন লাগিয়ে সার্চ করলেও পছন্দমতো অ্যাফিলিয়েশন সাইট পেয়ে যেতে পারেন।
শিক্ষামূলক প্লাটফর্মেও বাংলাদেশে অ্যাফিলিয়েশন পাওয়া যায় বর্তমানে। যেমনঃ- ১০ মিনিট স্কুল, হাল্কেনস্টেইন ইত্যাদি প্লাটফর্ম। আর হ্যাঁ! টাকা নিয়ে কোনো ঝামেলা হবে না। এই সাইটগুলো ১০০% বিশ্বস্থ। ১৫ অথবা ৩০ দিন অন্তর অন্তর অ্যাফিলিয়েশনের টাকা আপনাকে দিয়ে দিবে।
০২। স্পন্সরশীপ বা এড সেল করে আয়
স্পনসরশীপ বা এড সেলিং’য়ের জন্য ইউটিউব বা ফেইসবুকের মতো জনপ্রিয় সাইট লাগবে না। আপনি চাইলে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে খুব সহজেই টেলিগ্রাম থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। তবে এর জন্য আট থেকে দশ হাজারের মতো সাবস্ক্রাইবার লাগবে।
এই সংখ্যার সাবস্ক্রাইবার থাকলে খুব সহজেই আপনি স্পনসরশীপ পাবেন। টেলিগ্রামে স্পনসরশীপের জন্য আপনাকে কষ্ট করে সে প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিভিউ দিতে হবে না। আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলের সাথে মিলে বা আপনার পছন্দের মতো স্পনসর কোম্পানির সাথে আপনাকে যুক্ত হতে হবে।
এরপর, তারা তাদের প্রোডাক্ট সম্পর্কিত ২-৩ মিনিটের একটি শর্ট ভিডিওর সাথে প্রোডাক্ট সম্পর্কিত কিছু তথ্য যুক্ত করে দিবে। স্পনসরশিপ বিভিন্ন রকমের হতে পারে যেমনঃ- ডেইলি প্রোডাক্ট, বিউটি প্রোডাক্ট, এডুকেশনাল কোর্স, ফ্রিল্যান্সিং কোর্স, অ্যাপস ও ওয়েবসাইট প্রোমট, পেইজ বা চ্যানেল প্রোমট ইত্যাদি।
স্পনসরশীপ পাওয়ার পর স্পনসর কোম্পানিগুলো থেকে আপনাকে কিছু এড বা প্রোডাক্ট সম্পর্কিত কিছু পোস্ট দেওয়া হবে। তাদের নির্ধারিত বিজ্ঞাপনগুলো আপনার টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেখাতে হবে।
চ্যানেলে ৮-১০ হাজার বা তার বেশি সদস্য থাকলে স্পনসর থেকেও বেশ ভালো পরিমাণে আয় করা সম্ভব। তবে খেয়াল রাখতে হবে শুধু স্পনসরশিপের কন্টেন্ট পোস্ট করে মেম্বারদের বিরক্তির কারন যাতে না হয়ে যান। এমনটি হলে সাবস্ক্রাইবার বা মেম্বার হারাবেন।
০৩। শর্ট লিংক থেকে আয়
টেলিগ্রামে লিংক শর্টনার খুবই জনপ্রিয় একটি আয়ের মাধ্যম। এর প্রধান দুইটি কারণ হলোঃ
১। এতে পরিশ্রম নেই বললেই চলে।
২। চ্যানেলে ৮-১০ হাজার সদস্য থাকলে হেসে খেলে আয় করা যায়।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক-
লিংক কি?
অনলাইনে প্রতিটি সাইটের নির্দিষ্ট ঠিকানা বা এড্রেস রয়েছে। এই এড্রেসগুলোকে স্বতন্ত্র ও অন্যগুলো থেকে আলাদা করার জন্য বিভিন্ন লেটার, টাইটেল, ট্যাগ ও এট্রিবিউটের সমন্বয় বেশ বড় সংখ্যার একটি ডেটা রেফারেন্স তৈরি করা হয়। যেখানে ক্লিক করলে সম্পূর্ণ ডেটাটি ইউজারকে দেখানো হয় যাকে আমরা লিংক বলে থাকি।
এই বড় সংখ্যার লিংকগুলোকে ছোট করা হলে তাকে শর্ট লিংক বলে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- শর্ট লিংক থেকে আয় কিভাবে হয়? আসলে যে সাইটগুলো লিংক শর্ট করে থাকে তারা শর্ট লিংকের সাথে কিছু বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ফলে ভিজিটরস যখন উক্ত লিংকে ক্লিক করে তখন কনটেন্ট এর সাথে বা কন্টেন্ট দেখানোর আগে ওই বিজ্ঞাপনগুলো দেখানো হয়।
যতো বেশি মানুষ ওই শর্ট লিংকে ক্লিক করে ততোবেশি সেসব ওয়েবসাইটগুলোর আয় হয়। এবং তারা তাদের আয়ের কিছু অংশ আপনাকে দিবে। টেলিগ্রাম চ্যানেল বা গ্রুপে যেহেতু কন্টেন্ট এর জন্যই মেম্বাররা এড হয় তাই আপনার কন্টেন্ট দেখার জন্য শর্ট লিংকগুলোতে তারা অবশ্যই ক্লিক করবে।
এভাবে যতো বেশি সংখ্যক মানুষ লিংকগুলোতে ক্লিক করবে ততো বেশি আপনি আয় করতে পারবেন।
অনলাইনে অসংখ্য লিংক শর্ট করার সাইট রয়েছে। তবে কিছু জনপ্রিয় ও বিশ্বস্থ সাইট হলোঃ- Adf.ly, Al.ly, Exe.io, shrinkMe, Uiz.io, ShrinkEarn, ouo.io, Shorte.st, Adyou.me, victly.com ইত্যাদি।
০৪। পেইড মেম্বারশিপ থেকে আয়
টেলিগ্রাম চ্যানেলে বেশি মেম্বার থাকলে ও চ্যানেলে কন্টেন্টের চাহিদা থাকলে পেইড মেম্বারশিপ হতে পারে আয়ের অন্যতম একটি মাধ্যম। যেমনটি আপনারা জানেন, টেলিগ্রাম চ্যানেল মূলত দুইধরনের হয়ে থাকে। একটি হলো পাবলিক চ্যানেল এবং অপরটি প্রাইভেট চ্যানেল।
পাবলিক চ্যানেলে যেকেউ যুক্ত হতে পারে। তবে প্রাইভেট চ্যানেলে যুক্ত হতে পারমিশন লাগে। বেশি চাহিদাসম্পন্ন ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির কন্টেন্টের জন্য প্রাইভেট চ্যানেলটি রাখা হয়। এবং, সেখানে যুক্ত হওয়ার জন্য কিছু নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে তারপর যুক্ত হতে হয়।
পাঁচ থেকে সাত হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকলেই পেইড মেম্বারশিপ চালু করে বেশ ভালো পরিমাণ টাকা আয় করা সম্ভব। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে সাবস্ক্রাইবারদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে হবে এবং তাদের প্রলুব্ধ করার জন্য মাঝে মাঝে হাই ডিমান্ডেবল কন্টেন্ট দিতে হবে।
পেইড মেম্বারশিপ চালু করলে প্রথমেই বেশি টাকা চার্জ করতে যাবেন না যেনো! এমন একটি এমাউন্ট ঠিক করবেন যাতে সবাই খুব সহজেই যুক্ত হতে পারে।
প্রথম প্রথম এমাউন্ট ১০০ টাকার নিচে রাখাই ভালো । এতে করে যদি দুই থেকে তিন হাজার মানুষকেও যুক্ত করতে পারেন সব মিলিয়ে টাকার পরিমান কিন্তু বেশ বড়ই হবে।
পেইড মেম্বারশিপ চালু করার পর পাবলিক চ্যানেলের কথা ভুলে গেলে চলবে না কারন এখান থেকেই আপনি পেইড মেম্বার পাবেন। কাজেই এখানেও সমানতালে কন্টেন্ট দিতে হবে । এবং চ্যানেলে মেম্বার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-