হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বংশগত কারণে বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, ঔষধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত কেমিক্যালের ব্যবহার, ধুলোবালি, ইত্যাদি কারনে চুল পড়ে। নানা রকম হেয়ার স্টাইল করার সময় চুলে তাপ দেওয়া, সেটিং স্প্রে ইত্যাদি নানা ধরনের কেমিক্যাল প্রোডাক্ট ব্যবহারের ফলে চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের আজকের আলোচনায় মাথার চুল দ্রুত লম্বা ও ঘন করার উপায় সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি, লেখাটি আপনাদের কাজে আসবে।
বর্তমান সময়ে নারী পুরুষ উভয়েরই চুল পরার প্রকোপ বৃহৎ আকার ধারন করেছে। আজকাল ঘন চুল দেখাই যায় না বললে চলে। আবার চুল পরার পর নতুন চুলও গজাতে চায় না সহজে। এমন অবস্থায় সবার কাছেই লম্বা ও ঘন চুল স্বপ্নের মতো।
লম্বা, দীর্ঘ চুল কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। একটু সচেতন ও নিয়মাবলি মেনে চললে আপনিও পেতে পারেন লম্বা, ঘন, স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল। দৈনন্দিন জীবনে চুলের যত্নে আমরা অধিকাংশ মানুষ অহড়হ ভুল করি, যেগুলো এড়িয়ে চললে চুল লম্বা ও ঘন করা সম্ভব।
লেখাটির প্রথমেই মাথার চুল লম্বা ও ঘন করার ক্ষেত্রে কিছু কার্যকরী প্যাক নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এরপর এই প্যাকের কৌশলি ব্যবহার করার পদ্ধতি এবং শেষে দেওয়া হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস।
সম্পূর্ণ লেখাটি সুন্দর করে পরে নিয়ামাবলি মেনে চললে আপনিও হতে পারেন স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, লম্বা ও ঘন চুলের অধিকারী।
আরও পড়ুন-
- মুখের ব্রণ দূর করার উপায়
- মুখের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির ৫টি ঘরোয়া উপায়
- চুলপড়ার কারণ এবং ঘন কালো চুল পাবার উপায়
যে প্যাকগুলো ব্যবহারের ফলে চুল হবে ঘন ও লম্বা-
ডিমের প্যাক ব্যবহার করে চুল দ্রুত লম্বা করার উপায়
ডিম কম বেশি আমাদের সবার ঘরেই থাকে। শরীরে পুষ্টির জন্য ডিম যেমন উপকারী। চুলের পুষ্টি যোগাতেও ডিমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই ঘরোয়া উপকরণটি দিয়ে খুব সহজেই ঘন চুল পাওয়া সম্ভব।
ডিমে থাকা সালফার ও প্রোটিন চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি চুলকে করে মজবুত।
ডিমের প্যাক বানানোর পদ্ধতি –
বাটিতে একটি ডিম ভেঙে নিন। এর সাথে যোগ করুন ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল ও ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল। উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন। আধঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। প্যাকটি চুলকে করবে ঘন, লম্বা ও মজবুত।
মেহেদী পাতা ও আমলকির প্যাক ব্যবহার করে মাথার চুল ঘন করার উপায়
চুল লম্বা ও ঘন করতে মেহেদী পাতার জুরি নেই। রোদ, ধুলোবালি, ঘাম ইত্যাদি কারনে চুলের ভঙ্গুরতা দেখা দেয় এবং চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। মেহেদী পাতা চুল পরা কমায়। চুলকে করে ঝলমলে ও গোঁড়া থেকে মজবুত। ফলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়। এ জন্য মেহেদী পাতার ব্যবহার খুবই জনপ্রিয়।
চুলের মেহেদী প্যাক বানাতে ৩-৪ মুঠো মেহেদী পাতা ও ২টি আমলকি একত্রে ব্লেন্ড করে নিন। চুল হালকা ভিজিয়ে মেহেদীর পেস্ট গোঁড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে নিন।
মেহেদীর প্যাক ২ ঘন্টা রাখলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায় তবে চাইলে ১ ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং চুলে শ্যাম্পু করা যাবে না। মেহেদীপাতা চুলে ভরপুর পুষ্টি যোগায় সে জন্য এটি মাসে ২ বার ব্যবহারই যথেষ্ট। স্বাস্থ্যউজ্জ্বল, আকাঙ্ক্ষিত লম্বা চুল পেতে ১৫ দিন পর পর চুলে মেহেদীপাতা লাগান।
মেথির প্যাক প্রয়োগ করে চুল দ্রুত লম্বা করার উপায়
মেথিতে রয়েছে নিকোটিনিক এসিড যা চুলকে মজবুত করে। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রোটিন যা চুলের জন্য বিশেষ উপকারী। পাতলা চুল ঘন করতে ২ টেবিল চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।
পরদিন উক্ত মেথি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে আধকাপ পানির সাথে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এ পেস্টটি ৩০ মিনিট মাথায় লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে চুলে শ্যাম্পু করে করে নিন। ঘন, স্বাস্থ্যউজ্জ্বল চুল পেতে সপ্তাহে ১ বার পেস্টটি ব্যবহার করুন।
লম্বা, ঘন চুল পেতে তেল যেভাবে লাগাবেন
নারিকেল তেলের সাথে মোটামুটি আমরা সবাই পরিচিত। নারিকেল তেল চুলের জন্য অনেক উপকারী। এটা সত্য। তবে এর সাথে কিছু উপাদান মিশিয়ে এর পুষ্টিমাত্রা আরো বৃদ্ধি করা সম্ভব।
কিভাবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক
চার কোয়া রসুন ও দুটো পেঁয়াজ ও একটা ছোট সাইজের আদা নিন। এগুলো কুচি করে কেটে নারিকেল তেলের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত গরম করুন যতক্ষন পর্যন্ত না উপকরণগুলো বাদামী বর্ণের হয়।
গরম করা হয়ে গেলে ঠান্ডা হওয়া অব্দি অপেক্ষা করুন। ঠান্ডা হওয়ার পর তেলটি ঘষে ঘষে মাথায় লাগান। চাইলে একদিন রাখতে পারেন অথবা ১-২ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিতে পারেন।
সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ২ বার পেয়াজ রসুন ও আদা সমৃদ্ধ তেলের মৃস্রণটি লাগান। এটি চুলের গভীরে পুষ্টি যোগাবে। চুলকে করবে ঘন ও মজবুত। এবং, চুল লম্বা হতেও সাহায্য করবে।
ক্যাস্টর অয়েলের সাথে আরো তেল যুক্ত করে মাথার চুল ঘন করার উপায়
ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এ তেলটি চুল লম্বা ও ঘন করার সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। এর কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া নেই। এটি ব্যবহারে চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে এবং নতুন চুল গজায়।
ক্যাস্টর অয়েলের পুষ্টিমাত্রা দ্বিগুন করতে –
২ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ও ১ চামচ অ্যালোভেরা জেল একত্রে মিশিয়ে সম্পূর্ণ চুলে লাগান। ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। চুল ঘন করতে এটি সপ্তাহে ২ বার লাগান।
যে বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে-
১. শ্যাম্পু করা
রেশমি, ঝলমলে চুল কার না ভালো লাগে? আর সে জন্যই অধিকাংশ মানুষ প্রতিদিন শ্যাম্পু করেন। কিন্তু এর ফলে চুল বাহির থেকে সুন্দর দেখালেও ভিতরে ভিতরে চুলের বারোটা বেজে যায়!
জানেন কি, প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুলের প্রাকৃতিক তেলের আস্তরন নষ্ট হয়ে যায়! ফলে চুল হয়ে যায় রুক্ষ, শুষ্ক, নরম। দেখা দেয় চুলপড়া সমস্যা, খুঁশকী! এই সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রতিদিন শ্যাম্পু করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
সপ্তাহে সর্বোচ্চ তিনবার শ্যাম্পু করতে পারেন। তবে এর থেকে বেশি না করাই ভালো। শ্যাম্পু করার সময় কখনোই চুল জোরে জোরে ঘষবেন না। আলতো করে ঘষে ৫-১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিবেন।
চুল ঝলমলে ও সুন্দর দেখানোর জন্য আমরা কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকি। কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল অনেক বেশি নরম হয়ে যায় এবং চুলপড়া শুরু হয়। তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করলেও অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে।
কন্ডিশনার কখনোই চুলের অগ্রভাগে ব্যবহার করা যাবে না। ব্যবহার করতে হবে নিম্নভাগে অর্থাৎ নিচের অংশে এবং ৩-৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
২. চুল আচড়ানো
আমাদের অনেকেরই অভ্যাস আছে ভেজা থাকাকালীন চুল আঁচড়ানোর। ভেজাবস্থায় চুলের গোড়া অনেক বেশি নরম থাকে। ঐ সময় চুল আঁচড়ালে চুল গোঁড়া থেকে উঠে আসে।
তাই গোসলের পর চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। চুল আঁচড়ানোর সময় সবসময় নিচ থেকে আঁচড়াতে হবে। এতে করে সহজেই জট খুলে আসবে ও ছিড়বে কম।
৩. ট্রিম করা বা চুল কাটা
প্রতি তিন মাস পর পর ২-৩ ইঞ্চি চুল কাটতে হয়। এতে করে চুল ভেঙে যায় না ও খুব দ্রুত বাড়ে। চুল না কাটলে কিছুটা বড় হওয়ার পর ভেঙে যায় ও চুল পাতলা হতে থাকে। অনেকের লম্বা চুলের ঝোকে চুল কাটতেই ইচ্ছা করে না।
আবার অধিকাংশ মানুষ জানেনও না চুল কাটার বিষয়টা। তাই, চুলপড়ার হাত থেকে বাঁচতে ও চুল লম্বা করতে ৩ মাস পর পর চুল কাটুন।
৪. তেল দেওয়া
চুলপড়া কমাতে, লম্বা করতে, মাথা ঠান্ডা রাখতে অর্থাৎ চুলের সব রকম পরিচর্যায় তেলের ব্যবহার অনস্বীকার্য। চুলের সিল্কি ভাব চলে যাবে বা তেলতেলে ভাব থেকে বাঁচতে বর্তমান প্রজন্ম তেল দিতে নাক সিটকায়। যার জন্য আজকাল চুলপড়া একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই চুলকে প্রানবন্ত রাখতে সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ৩ বার তেল দিতে হবে।
চিপচিপে ভাব থেকে বাঁচতে তেল দেওয়ার পরদিন বা তেল দেওয়ার ২-১ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে পারেন। শ্যাম্পু চুলের উপরের ময়লা দূর করে। কিন্তু তেল ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায় ও চুলকে করে মজবুত। তাই নিয়ম করে মাথায় তেল দিন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-