মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ অধ্যায় হলো শিক্ষা গ্রহণ। শিক্ষার আলো মানুষের মনকে আলোকিত করে এবং মানবিক গুণাবলিকে করে বিকশিত। শিক্ষক হলো মা-বাবারও উর্ধ্বে। এটাই আজীবন আমরা জেনে এসেছি। তাই শিক্ষকের ভূমিকাও একজন ছাত্রের জীবনে বিশেষ প্রভাব ফেলা প্রয়োজন। মহান শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত অনেকেই। কিন্তু সবাই আদর্শ শিক্ষক হতে পারেন না।
একটু গভীরভাবে ভেবে দেখলে আমরা দেখতে পারি- একজন মানুষ মা-বাবার পরপরই শিক্ষকের সহচর্যে চলে যায়। আর জীবনের অর্ধেক সময় কাটাতে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেই। তাই শিক্ষকদের আচার-আচরণের বিশেষ প্রভাব পরে একটি মানুষের উপর। একজন শিক্ষার্থীর অনুকরণের প্রধান বিষয় হিসেবে দাড়ায় একজন শিক্ষক। তাই শিক্ষকের নিজেদের আচার-আচরণের প্রতি প্রথমেই সচেতন থাকতে হবে।
শিক্ষক শুধু পাঠ্যবইয়ের জ্ঞান দানের মাধ্যমে তার দায়িত্ব পালন করে না। তাকে হতে হবে আদর্শ শিক্ষক। যে পাঠ্যবইয়ের সাথে একজন সু-মানুষ গড়ার দায়িত্বও তুলে নেয়।
শিক্ষক যদি তেলা মাথায় বেশি করে তেল ঢালে তবে সে কখনওই আদর্শ শিক্ষক হতে পারবে না। একজন আদর্শ শিক্ষক প্রতিটি শিক্ষার্থীদের ভিতর আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলবে এটাই শিক্ষিত জাতি হিসেবে সবাই কামনা করতে পারবে।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ‘Todd Whitaker’-এর লেখা ‘50 Ways to Improve Student Behavior’- এ তিনি বলেছেন, একজন শিক্ষকের আদর্শ শিক্ষক হয়ে ওঠার পেছনে অন্যতম বাধা হচ্ছে- শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের অভাব।
যে শিক্ষার্থী নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাস রাখে না সেটা সবচেয়ে বেশি বাধা হয়ে দাড়ায় শিক্ষকের আদর্শ হয়ে উঠার পেছনে।
পড়ালেখায় দূর্বল একটা শিক্ষার্থীকে গুরুত্ব কম দিতেই আমরা প্রায় সব শিক্ষককেই দেখি। কেউ দূর্বলদের নিয়ে ঘাটতে চায় না।
শিক্ষকরাও শ্রেণীকক্ষে, বাড়িতে যেখানেই হোক; মেধা তালিকাদের পড়াতেই বেশি সন্তুষ্টি পায়। তাই পিছিয়ে পড়ায় তালিকাভুক্তরা হারিয়ে ফেলে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ।
সেই আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হলে শিক্ষককেই গড়ে তুলতে হবে ভরসাস্থল। “তোমার দ্বারা হবে, চেষ্টা করে যাও, তুমি মেধাবী সেই মেধা কাজক লাগাও” এটা হবে একজন আদর্শ শিক্ষকের বাণী।
যদি কোনো শিক্ষক সবসময় একজন ছাত্রের ভুলগুলোই যাচাই করে এতে করে আগ্রহ হারিয়ে যায় একজন শিক্ষার্থীর। নিজের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
শিক্ষক নিজে জ্ঞানী; তাতে একজন ছাত্রের শিক্ষা ব্যবস্থা নির্ভর করে না। অবশ্যই তাকে সেই জ্ঞান বিতরণ এর ক্ষেত্রে পারদর্শী হতে হবে। “আমি নিজে বুঝি কিন্তু অন্যকে বুঝাতে অক্ষম ” তাতে অন্যের কোনো উপকার হবে না।
একজন আদর্শ শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীর শেখার সমান সুযোগ সৃষ্টি করে থাকেন। ছাত্রছাত্রীদের সাথে আত্মিক বন্ধন তৈরি করাও একজন শিক্ষকের দায়িত্ব। তবেই পাঠদান করতে সুবিধা হবে শিক্ষকের।
একজন আদর্শ শিক্ষক ভালোভাবেই জানেন কোন উপায়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালে তারা বিষয়টিকে খুব সহজই গ্রহণ করতে পারবে এবং কোনো ধরনের বিরক্ত লাগবে না। এতে শিক্ষার্থীরাও মনোযোগী হয় পড়ালেখার প্রতি। পড়ালেখার মাধ্যমকে করে তুলতে হবে আনন্দময়।
আদর্শ শিক্ষক পড়ানোর পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের সুন্দর মতামত তুলে ধরেন। একজন শিক্ষকের অবশ্যই ছাত্রছাত্রীর মতামতকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত।
আর বর্তমানে যেভাবে শিক্ষাব্যবস্থা গুলো ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে, যেভাবে শিক্ষকরা শুধু মেধাবীদের পিছনেই দৌড়াচ্ছে এবং গৃহ শিক্ষকরাও যেভাবে টাকাকে আগে প্রাধান্য দিচ্ছে- তা একজন শিক্ষকের ব্যর্থতা ও শিক্ষক জাতির কলঙ্ক ।
এতে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই না বরং শিক্ষার্থীরা ভুলে যাবে নৈতিকতা। আদর্শ শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রতিটি শিক্ষকেরই প্রয়োজন।
প্রাসঙ্গিক লেখা-