অনলাইনে আর্টিকেল লিখে আয় করার কথা ভাবছেন? অথবা, ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার (Freelance Content Writer) হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন। ইচ্ছে আছে, তবে সাহস পাচ্ছেন না। কিভাবে শুরু করা যায়? কোথায় আর্টিকেল লেখার কাজ পাবেন? কাজ শেষ করে টাকা পেমেন্ট নেবেন কিভাবে – এই প্রশ্নগুলো যদি আপনাকে দ্বিধায় ব্যস্ত রাখে তবে এই লেখাটি আপনারই জন্য।
সম্পূর্ণ লেখাটি গুরুত্ব সহ পড়ে নিন এবং এখানে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা অনুসরণ করুন। আশা করি আপনার অভিষ্ট লক্ষ্যে খুব সহজেই পৌঁছতে পারবেন।
প্রথমেই আসুন জেনে নেই-
কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing) কি এবং কন্টেন্ট রাইটার (Content Writer) কাদের বলা হয়?
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন উপাদান যেমন, তথ্য, ছবি, ভিডিও, এনিমেশন এদেরকেই মূলত কন্টেন্ট বলা হয়। যে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান এইগুলো তৈরির কাজে যুক্ত থাকেন তাদের কন্টেন্ট রাইটার (Content Writer) বা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বলা হয়।
আপনি যদি একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশের জন্য একটি তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল বা প্রবন্ধ, নিবন্ধ, ছোটগল্প বা সংবাদ লিখেন তবে আপনার এই কাজকেই কন্টেন্ট রাইটিং (Content Writing) বলা হবে।
কিভাবে কন্টেন্ট রাইটিং পেশা শুরু করবেন?
প্রথমেই বলে রাখছি, আজ আমি কন্টেন্ট রাইটিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ আর্টিকেল লেখার কাজকে পেশা হিসেবে নির্বাচন করে কিভাবে অনলাইনে আয় করা যায় সে সম্পর্কে আপনাদের কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
কিভাবে আর্টিকেল লিখে আয় করা যায়?
আর্টিকেল লিখে আয় করাটা কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ নয়। তার উপর আপনি যদি আর্টিকেল লেখার কাজকেই পেশা হিসেবে বেছে নিতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই এর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ভালোভাবে সম্পন্ন করে নিতে হবে।
তবে আসুন জেনে নেই, কন্টেন্ট রাইটিং তথা আর্টিকেল রাইটিং ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
প্রথম পদক্ষেপ-
পত্রিকা পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন (আর্টিকেল লিখে আয় করার কৌশল শেখার প্রথম পদক্ষেপ)
আপনি কোন ভাষায় আর্টিকেল লেখার কাজ করতে ইচ্ছুক তা প্রথমেই মনস্থির করে নিন।
ভাষাজ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য ভাষার ব্যাকরণগত নিয়মনীতি সঠিকভাবে জানার চেষ্টা করুন।
এরপর বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত আর্টিকেলগুলো নিয়মিত পড়ুন ও তাদের মতো করে গুছিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল লেখার অনুশীলন করতে থাকুন। এতে করে যে সুবিধাটি হবে, তা হচ্ছে আপনার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। বিশেষ করে ইংরেজিতে আর্টিকেল লিখে আয় করতে ইচ্ছুক হলে এই অভ্যাসটা খুবই কাজে লাগবে।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ-
নিয়মিত অনলাইন ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল পড়ুন
আপনি হয়তো লক্ষ্য করে দেখেছেন, পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ আর অনলাইন ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল এক রকম হয় না। ভাষাশৈলী, উপস্থাপনা, তথ্যের ব্যবহার, সবকিছুই ভিন্নধর্মী আঙ্গিকে সাজানো হয়।
ঠিক এ কারণেই, আর্টিকেল লিখে আয় করার জন্য অনলাইন ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল নিয়মিত পড়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
আপনি যে বিষয়ে আর্টিকেল লিখে আয় করতে ইচ্ছুক সেই বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্লগে প্রকাশিত আর্টিকেল সমূহ পড়তে থাকুন।
এছাড়া বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর ভিত্তিক অনলাইন ফোরাম (যেমন Quora.com) সমূহে বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত লেখাগুলো পড়তে পারেন।
তৃতীয় পদক্ষেপ-
নিজের একটি পোর্টফোলিও ব্লগ তৈরি করুন
আপনি যা কিছু পড়ছেন এবং পড়ে, শিখে বা ধারণা অর্জন করে নিজের মতো করে লেখার চেষ্টা করছেন, তা আপনার একটি পোর্টফোলিও ব্লগ তৈরি করে তাতে প্রকাশ করুন।
প্রাসঙ্গিক লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-
কিভাবে ব্লগ তৈরি করে অনলাইনে আয় করা যায়?
ব্লগের অ্যাবাউট (About Me) পাতায় আপনার ব্লগটি তৈরির উদ্দেশ্য তথা আপনি যে একজন ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটার এবং অনলাইনে আর্টিকেল লিখে আয় করতে ইচ্ছুক সেই তথ্যটি পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করুন।
২ থেকে ৪ দিন বা ১০ থেকে ২০ টি আর্টিকেল লিখে বন্ধ করে দেবেন না। নিয়মিত লিখতে থাকুন। এতে করে তিনটি সুবিধা হবে।
নিজের একটি ব্লগ থাকার সুবিধা
১। আপনার ব্লগের দর্শক তৈরি হবে এবং সেই দর্শকদের কল্যাণে আপনার ব্লগ গুগল অ্যাডসেন্স ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অনলাইনে আরো কিছু বাড়তি আয় করার সুযোগ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন –
২। আপনার লেখার মান উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।
৩। পরবর্তীতে আপনি যখন বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ আর্টিকেল লেখার কাজ পাবার জন্য এপ্লাই করবেন, তখন আগ্রহী নিয়োগকর্তারা কিন্তু আপনার কাজ তথা প্রকাশিত আর্টিকেল দেখে লেখার মান বিচার-বিশ্লেষন করবেন।
যদি আপনার লেখা সমূহ তাদের বিচারের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারে তবে আর্টিকেল লেখার কাজ পাবার জন্য আপনাকে নিয়োগকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজনে খুব একটা কৌশল প্রয়োগ করতে হবেনা। তারা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে আপনাকে দিয়ে তাদের কন্টেন্ট তৈরি করে নেয়ার জন্য।
টাকা খরচ করে ব্লগ তৈরি করে আয় করার ইচ্ছে নেই!
ভাবনা কি? বিকল্প ব্যবস্থাও আছে।
বিনা পুঁজিতে অনলাইন ব্যবসা (আর্টিকেল রাইটিং) শুরু করার নিয়ম
Quora.com এ বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক ও তথ্যসমৃদ্ধ উত্তর দিতে শুরু করুন। সেই সাথে Quora Space তৈরি করে সেখানেও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকুন। আপনার উত্তরগুলো যথেষ্ট যুক্তি ও তথ্যপূর্ণ এবং নূন্যতম ১০০০ শব্দের উর্ধ্বে যেন হয় সেই দিকটি নিশ্চিত করবেন।
এতে করে ধীরে ধীরে আপনার প্রচুর অনুসারী তৈরি হতে থাকবে। পরবর্তীতে সেই অনুসারীদের মধ্য থেকেই আপনি প্রচুর কাজ দাতা পেয়ে যাবেন যারা স্বানন্দে নিজ উদ্যোগে আপনাকে আকর্ষণীয় সম্মানীর বিনিময়ে তাদের কাজ করে দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।
এছাড়া আপনি ইচ্ছে করলে Medium.com ব্যবহার করেও বিনামূল্যে একটি ব্লগ তৈরি করে নিতে পারবেন।
প্রাসঙ্গিক লেখা-
কোরা (Quora) এবং মিডিয়াম পার্টনার প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কিভাবে অনলাইনে আয় করা যায়?
প্রস্তুতি তো নেয়া শেষ হলো। এবার কি করা যায়?
চতুর্থ পদক্ষেপ-
লিংকডইন (LinkedIn) প্রোফাইল তৈরি করে নিন
আপনি নিশ্চয়ই লিংকডইন এর নাম শুনেছেন। এটি পেশাজীবীদের সামাজিক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট।
পেশাজীবীদের মধ্যকার যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে আপনি ভাববেন না যেন এটি ফেসবুক বা টুইটার এর মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। বরং এটি তার ব্যবহারকারীদের সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার একটি যোগাযোগ সৃষ্টি ও রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করে।
সমগ্র বিশ্বের কর্মজীবী মানুষদের চাকরি ও ব্যবসা বিষয়ক তথ্য বিনিময়, কাজের সুযোগ সৃষ্টি, কাজ বা চাকরি দাতা ও আগ্রহী চাকরি প্রার্থীদের পছন্দ মতো চাকরি বা পেশা নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে এই লিংকেইন (LinkedIn)। ঠিক এ কারণেই LinkedIn কে বলা হয়ে থাকে Professional’s Network.
আপনিও সেই নেটওয়ার্ক এর অংশ হতে একটি প্রফোইল তৈরি করে নিন।
প্রোফাইলে আপনার ব্লগের ঠিকানা দিন। আপনি যে ফ্রিল্যান্স কন্টেন্ট রাইটিং এ আগ্রহী সেই বিষয়টি আপনার প্রোফাইলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করুন।
শুধু তাই নয়, আপনার যোগ্যতার প্রমাণ স্বরূপ লিংকডইন এ কিছু মানসম্মত আর্টিকেল প্রকাশ করুন। সেই আর্টিকেল সমূহ আপনার ব্লগের গুরুত্বপূর্ণ ও মানসম্মত আর্টিকেল এর লিংক দিতে ভুলবেন না যেন।
আপনি জেনে আনন্দিত হবেন, বর্তমানে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস -এ আর্টিকেল লেখার কাজ যতটা পাওয়া যায় তার চাইতে LinkedIn এর মাধ্যমে তার চাইতে বেশি পরিমানে কাজ পাবার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, বর্তমানে মার্কেটপ্লেসগুলোতেও অধিকাংশ আউটসোর্সাররা কাউকে কাজ দেয়ার আগে তার LinkedIn প্রোফাইল ভালোভাবে পড়ে নেন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ পদক্ষেপ-
বিভিন্ন ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল তৈরি করুন
আপনি যদি উপরের সবগুলো ধাপ ভালোভাবে সম্পন্ন করে নিতে পারেন, তবে নিশ্চিত ভাবেই বলা যায়- এবার আপনি সরাসরি বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলোতে প্রোফাইল তৈরি করে নেয়ার জন্য যথেষ্ট যোগ্য হিসেবে নিজেকে গড়ে নিয়েছেন।
সুতরাং, আর দেরি না করে Upwork.com, Fiverr.com অথবা Freelancer.com একটি প্রোফাইল তৈরি করে নিন।
প্রোফাইলে আপনার যোগ্যতার প্রমাণপত্র (যদি কোন সার্টিফিকেট থাকে তবে তাদের স্ক্যান করা চিত্র, কি ধরণের কাজ করতে ইচ্ছুক তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ, ব্যক্তিগত ব্লগের ঠিকানা, LinkedIn প্রোফাইল এর লিংক এবং আপনার কাজের কিছু স্যাম্পল প্রিভিউ যুক্ত করুন।
সবশেষে আপনার নির্বাচিত বিষয়ের উপর কাজ দাতাদের জব পোস্ট এর খুঁজে বের করে তাতে বিড করুন। (Upwork.com ও Freelancer.com, guru.com, etc. এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)।
প্রাসঙ্গিক লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইনে আয় করা যায়?
আর্টিকেল লিখে আয় করার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন
একটি কথা মনে রাখবেন- অনলাইনে ভালো কাজ পেতে হলে ধৈর্য্য ধরার কোন বিকল্প নেই। এমন নয় যে, আপনি কাজের বিড করার সাথে সাথেই কাজ পেয়ে যাবেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটা হয়না।
কারণ, নতুনদের সাধারণত কেউ বিশ্বাস করতে চায়না। তবে আপনি যদি উপরের পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করে কাজ পাবার চেষ্টা করেন তবে আশা করা যায়, কাজ খুঁজে পেতে এবং আর্টিকেল লিখে আয় করার ক্ষেত্রে একটি ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছাতে আপনাকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না। শুভকামনা রইল সবার জন্য।