অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ধাপ সম্পর্কে জানুন

একটা ব্যবসা দাঁড় করানো কোন সহজ কাজ নয়। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ব্যবসার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এখানেও আপনাকে যথেষ্ঠ ধৈর্য্য এবং শ্রম দিতে হবে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার ব্যবসার প্রথম দুই মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা ঠিকমত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা সম্ভব হলে ব্যবসার ভিত মজবুত হবে, এবং পরবর্তীতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে লাখ লাখ টাকা আয় করা কোন ব্যাপারই হবে না।

আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কার্যক্রমকে ভবিষ্যতে সফল করতে চাইলে, প্রথম দুই মাসে নীচের ধাপগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন।

প্রথম ধাপ : –

আপনার বাছাইকৃত নিশে এবং যে পণ্যের প্রচার করবেন সেই পণ্যটিকে ভালোভাবে পর্যালোচনা করুন

প্রথমেই আপনার ‘নিশে’-টিকে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন। নিশ্চিত করুন, নিশেটি যেন খুব বেশী দুর্বোধ্য না হয়। আরেকটি বিষয় জরুরী। যে বিষয় বা নিশে (Niche) নিয়ে কাজ করছেন সেটিতে আপনার উৎসাহ কেমন ভেবে দেখুন। নিজের উৎসাহ নেই এমন বিষয় নিয়ে আপনি বেশীদিন কাজ করতে পারবেন না।

কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ নিশে নিন : যে নিশে নিয়ে আপনি কাজ করছেন, সেখানে প্রমোট করার মত বিপুল সংখ্যক ভালো পণ্য থাকা জরুরী। এখানে একটা সাধারণ নিয়ম হচ্ছে এমন নিশে নেয়া উচিত যার প্রাসঙ্গিক অসংখ্য পণ্য অ্যামাজনে পাওয়া যায়। এর ফলে, রিভিউ করার জন্য আপনার কাছে প্রচুর পণ্য থাকবে। এবং প্রচুর কিওয়ার্ড থাকবে যেগুলি নিয়ে আপনি কাজ করতে পারেন।

নিশের স্বতন্ত্রতা : নিশে সংক্রান্ত ক্ষেত্রে, শেষ যে বিষয়টি খেয়াল রাখবেন সেটি হল – অনন্যতা। আপনার মার্কেটিং প্রক্রিয়া যেন অন্য প্রতিদ্বন্দীদের তুলনায় ভিন্ন রকম হয়। আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইটটিকে যেন একই নিশের অন্য সাইটগুলো থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার উপস্থিতিও যেন স্বতন্ত্র হয় অন্যদের তুলনায়।

দ্বীতিয় ধাপ : –

ওয়েবসাইটের ডিজাইন অতিরিক্ত জটিল করবেন না

নিশে বাছাই করা হল। কি পণ্য বিক্রী করবেন সেটিও ঠিক করলেন। এবার আপনাকে ওয়েবসাইট নিয়ে ভাবতে হবে। এমন ওয়েবসাইট তৈরী করুন যেটি ভিজিটরদের চোখে অস্বস্তির সৃষ্টি করবে না। সেজন্য আপনার সাইটের ডিজাইনটিকে যথাসম্ভব সরল রাখার চেষ্টা করুন। একটি সাধারণ সাদা কালো ডিজাইনের ওয়েবসাইট, সাথে পার্থক্য রচনার জন্য তৃতীয় অন্য আর একটি মাত্র রঙ ব্যাবহার করে যথেষ্ট আধুনিক একটি ওয়েবসাইট বানানো সম্ভব।

অধিকাংশ সফল ওয়েবসাইটই খেয়াল করবেন যে, তাদের ডিজাইনের মডেলটি খুব সরল। যেমন ফেসবুকের কথাই ভাবুন। সেখানে সাদা আর নীলের মাঝেই কাজ শেষ। টুইটারের বেলাতেও এটি সত্য। আপনার নিশে’র অন্য ওয়েবসাইটগুলি কিরকম ডিজাইন করেছে সেখান থেকেও অনুপ্রেরণা নিতে পারেন।

কল-টু-একশান বাটন : এ ধরণের ডিজাইনের সুবিধা হচ্ছে আপনার পণ্যের ছবি এবং হেডলাইনের বোল্ড অক্ষরগুলির প্রতি ভিজিটরদের মনযোগ বেশী নিবদ্ধ হবে। সরল ডিজাইনের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে আপনার কল-টু-একশান বাটনগুলো খুব স্পষ্ট ভাবে চোখে পড়বে। সাধারণ ওয়ার্ডপ্রেস এবং ফ্রি বা প্রিমিয়াম থীম ব্যবহার করে আপনি সহজেই এধরণের ওয়েবসাইট বানাতে পারেন।

ফিচার ও প্লাগ-ইন: ওয়েবসাইট নির্মাণের পর, ভাবুন কি কি ফিচার সেখানে যোগ করতে চান। প্রথমে খুব বেশী ফিচার বা প্লাগ-ইন যোগ করার দরকার নেই। যতটুক না হলেই নয় তার চেয়ে বেশী ফিচার যোগ করবেন না। প্রথমদিকে সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ারিং বাটনগুলো যোগ করায় গুরুত্ব দিন। আপনি একটি পপ-আপ বা পপ-আন্ডার ইমেইল সাইন-আপ ফিচারও যোগ করতে পারেন।

আরও পড়ুন –

তৃতীয় ধাপ : –

প্রাথমিক সেলস-পেজ (বিক্রয়-পাতা) তৈরি করুন

ওয়েবসাইট নির্মাণ শেষ হলে, আপনাকে প্রাথমিক সেলস-পেজ তৈরি শুরু করতে হবে। এই পেজটিকে ডিজাইন করা হয় পণ্য বিক্রয়ের জন্য। সুতরাং এই পাতার নির্মাণে কৌশলী ও সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন।

পণ্য-রিভিউ পেজ : অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে অধিকাংশ সেলস পেজ আর্টিকেলের ভঙ্গিতে তৈরী করা। এভাবে একটি পেজ বানাতে পারেন, যেখানে একটি মাত্র পণ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আপনি পন্যটি ব্যবহারের নানান সুবিধার কথা আলোচনা করলেন। পণ্য ব্যবহার করে বিশেষ কি কি উপকার পাবেন ভোক্তা সেসব তুলে ধরলেন।

এরকম রিভিউয়ের ভঙ্গিতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা বেশ জনপ্রিয়। কারণ এই প্রক্রিয়ায় সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসএইও করা যায় বেশী। এরকম নির্দিষ্ট পন্যের রিভিউমূলক আর্টিকেলে আপনি প্রচুর অর্গানিক ট্রাফিকও পাবেন আপনার সাইটে। তাঁরাই পরবর্তীতে পণ্যটি কিনবেন।

কারণ, যারা রিভিউয়ের অনুসন্ধান করছেন কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের জন্য তারা ইতিমধ্যেই তাদের কাঙ্ক্ষিত ব্রান্ডটিকে শনাক্ত করে ফেলেছেন। আপনার রিভিউ পড়ে তারা যখন পণ্যটি কিনবেন, আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে কমিশন পাবেন বা আয় করবেন মূল প্রতিষ্ঠান থেকে।

সামগ্রিক পর্যালোচনামূলক পেজ : আরেকটি যেটা করতে পারেন, আপনি একটি সামগ্রিক বাজার পর্যালোচনামূলক আর্টিকেলের ভঙ্গিতে পেজটি তৈরী করলেন। ধরা যাক, প্রযুক্তি পণ্যের রিভিউ প্রকাশ করে এমন একটা ওয়েবসাইট বানিয়েছেন আপনি।

সেখানে, ক-ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। তাহলে আপনি পেজের শিরোনাম দিলেন, “ফিচার্ড ফোনের বাজার : ১০,০০০ টাকায় একটি ভাল ফোন কিনুন।” সেখানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১০,০০০ টাকার ফোন এবং সেগুলির ফিচারগুলোকে পাশাপাশি তুলনা করলেন।

এর মধ্যেই আপনি ক-ব্র্যান্ডের ফোনকে যুক্ত করে দিলেন। কিন্তু ক-ব্র্যান্ডের ফোনটির প্রকৃত বাজার মূল্য কিছু বেশী (ফলে ফিচারও একটু ভাল অন্যগুলোর তুলনায়)। কিন্তু আপনার সাইটের অ্যাফিলিয়েট লিংক ও কোড ব্যবহার করলে ডিসকাউন্টের মাধ্যমে ১০,০০০ টাকাতেই স্মার্টফোনটি কেনা যায়।

এই ধরণের পেজে আপনি আরও বেশী ভিজিটর পাবেন। কিন্তু সবাইকে আপনার ব্র্যান্ড বিক্রী করতে পারবেন কিনা তা বলা মুশকিল। কারণ এই আর্টিকেলের পাঠকরা বাজার পর্যালোচনা করছে। কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড স্থির করে তারা আপনার পেজে আসেননি।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটের সেলস পেজ তৈরী করার এই দু’টো সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এই পদ্ধতিতে সার্চ ট্রাফিক যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পণ্যও বিক্রী হয় বেশী।

ক্রেতাদের প্রশ্নের উত্তর : সেলস পেজ ডিজাইন করার সময় খেয়াল রাখবেন ভিজিটররা পণ্য বিষয়ে তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর যেন পান। প্রয়োজনে আর্টিকেলের সাথে একটি প্রশ্নোত্তর পর্ব যুক্ত করে দিবেন লিখিত বা ভিডিও আকারে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটংয়ের সেলস পেজটি দীর্ঘ হওয়া দরকার। কারণ দীর্ঘ এবং তথ্য সমৃদ্ধ পেজই র্যাঙ্ক করতে পারে।

কিওয়ার্ড সাপেক্ষে অপটিমাইজেশান : সেলস পেজ ডিজাইনের মূল বিষয়গুলো গুছিয়ে আনার পরে, একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডে র্যাঙ্ক করার জন্য পেজটিকে অপটিমাইজ করুন। ধরা যাক, আপনার পেজ মোবাইল ফোন বিক্রী বিষয়ে। সেক্ষেত্রে আপনি “কম দামে অ্যান্ড্রয়েড ফোন” “ অ্যান্ড্রয়েড ফোনে মূল্যছাড়” “অ্যান্ড্রয়েড ফোনের বাজার” এ জাতীয় কোন কিওয়ার্ডের বিপরীতে আপনাদের পেজকে অপটিমাইজ করতে পারেন।

আপনার কন্টেন্টকে অপটিমাইজ করার জন্য, এই কীওয়ার্ডটিকে প্রতি একশ শব্দে তিনবার করে উল্লেখ করতে পারেন। আপনার টাইটেলের শুরুর অংশে, এবং প্রথম প্যারাগ্রাফে কিওয়ার্ডটিকে রাখুন। এই কাজগুলি করলে সার্চ ইঞ্জিনের রোবটগুলোর জন্য আপনার পেজকে শনাক্ত করা সহজ হবে।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন –

ট্র্যাকিং-টুল : কন্টেন্ট অপটিমাইজ করার পর আপনি পেজের জন্য একটি ট্র্যাকিং টুল সেট করতে পারেন। এজন্য আপনি “গুগল এনালাইটিক্স” ব্যবহার করতে পারেন। বিকল্প হিসেবে একটি ইন-সাইট ( সাইটের ভেতরেই) ট্র্যাকিং প্লাগ-ইন যুক্ত করে নিতে পারেন।

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে, এই পেজের কল-টু-একশান বাটনগুলো যেন অন্য পেজগুলোর চেয়ে বেশী চোখে পড়ার মত হয়। এই কল-টু-একশান বাটনগুলো পোস্টের বিভিন্ন অংশে যুক্ত করুন। দীর্ঘ পোস্টগুলির ক্ষেত্রে, লেখার শুরুতে, মাঝখানে এবং শেষে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকটি যুক্ত করতে পারেন।

চতুর্থ ধাপ : –

সেকেন্ডারী কন্টেন্ট তৈরি করুন

মূল সেলস পেজ তৈরী করার পর আপনাকে সেকেন্ডারী কন্টেন্টের পেজ তৈরি করতে হবে। এগুলি মূল পেজের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট কন্টেন্ট। ওয়েবসাইটকে কন্টেন্টে পূর্ণ করার জন্য এগুলি তৈরী করা হয়।

ইন্টারনাল লিংকিং করা যায় এরকম আর্টিকেল লিখুন : সেকেন্ডারী কন্টেন্ট হিসেবে বিভিন্ন ধরণের ব্লগ পোস্ট লিখতে পারেন। এই পোস্টগুলোর সাথে ইন্টারনাল লিংকিং করা থাকবে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সেলস পেজের। যেমন- মোবাইলের ওয়েবসাইটটিটর উদাহরণটির কথা ধরুন। আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন বিষয়ে পাঠক আকর্ষণ করার মত কিছু ব্লগপোস্ট লিখতে পারেন। তারপর, স্মার্টফোনের বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান নিয়ে কয়েকটি আর্টিকেল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার যোগ্য আর্টিকেল লিখুন : সেকেন্ডারী কন্টেন্ট হিসেবে এমন পোস্ট তৈরী করুন যেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার হবার সম্ভাবনা বেশী। যেমন, আপনি বিশ্বের সবচেয়ে দামী এবং বিচিত্র ফিচার সম্পন্ন মোবাইল ফোন, বা ভবিষ্যতে সম্ভব হতে পারে এমন কিছু ফ্যান্টাসী মোবাইল ফোন বিষয়ে একটি লেখা লিখলেন।

এধরণের লেখায় আপনি কোন পণ্য বিক্রী করছেন না সরাসরি। কিন্তু আপনার অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইটে ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারছেন। এই পেজগুলির জন্যেও এসইও করতে হবে। আপনার সাইটের মূল কীওয়ার্ডগুলোর সাপেক্ষে পেজটিকে অপটিমাইজ করুন। প্রতিটি সেকেন্ডারী কন্টেন্টের শেষেই আপনার মূল সেলস-পেজ ঘুরে আসার জন্য আহ্বান করুন ভিজিটরদের।

পঞ্চম ধাপ : –

সোশ্যাল মিডিয়া পেজ এবং একাউন্ট তৈরী করুন

ওয়েবসাইট তৈরী করা হয়ে গেলে, এবার পেজে ট্রাফিক নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন। এই প্রচেষ্টার শুরুতেই রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইটের একটি ওয়েবপেজ তৈরী করা। যেসব সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট শেয়ার করার উপায় আছে, সেগুলিকে প্রাধান্য দিন।

টুইটার, ফেসবুক, লিংকড-ইন এ এই ফিচারগুলো আছে। ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এবং পিন্টারেস্ট অন্যদিকে এধরণের কাজের উপযোগী নয়।

এইসব একাউন্ট ব্যাক্তিগত প্রোফাইল যেভাবে তৈরী করেন, সেভাবেই ওয়েবসাইটের প্রোফাইল তৈরী করুন। আপনার ওয়েবসাইটের একটি প্রোফাইল পিকচার দিন। তারপর প্রাসঙ্গিক একটি কভার ফটো যোগ করুন। আপনার নিশে নিয়ে ঐ সামাজিক মাধ্যমটিতে যেখানে মানুষ আলোচনা করছে, সেখানে যুক্ত হোন।

নিয়মিত তাদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার (লাইক, কমেন্ট) মাধ্যমে ফলোয়ার তৈরী করুন আপনার সাইটের। আপনার পরিচিত, বন্ধু-বান্ধবদেরকে পেজ লাইকের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

কিছু কিছু সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রথম দিকে মানুষের চোখে পড়ার সবচেয়ে কার্যকর উপায় “বিজ্ঞাপন” ব্যবহার করা। যেমন ধরা যাক ফেসবুকে। ফেসবুকের পেজ বুস্টের অপশন, যেটি ফেসবুকের একটি পেইড বিজ্ঞাপনী সার্ভিস, ব্যবহার করে আপনি পেজের ফলোয়ার বাড়াতে পারেন।

ক্রেতা হয়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে, অর্থাৎ অ্যাফিলিয়েট লিংক ক্লিক করে পন্য কিনবেন এরকম পেজ-ফলোয়ার পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ফেসবুক ব্যাবহারীদের টার্গেট করুন আপনার অ্যাডে।

আরও পড়ুন –

ষষ্ঠ ধাপ : –

শিডিউল মেনে নিয়মিত কন্টেন্ট পোস্ট করুন

সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট তৈরীর পর, বিভিন্ন গ্রুপ ডিসকাশানগুলোতে অংশ নিয়ে আপনার ফলোয়ার তৈরী করুন। আপনার পেজের মোটামুটি একটি অবস্থানে গেলে আপনার ওয়েবসাইট কন্টেন্ট সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করুন। আপনার কন্টেন্টের গুণে সাইটে ট্রাফিক আসতে শুরু করবে।

পোস্টের শিরোনাম : ক্লিক পাওয়ার জন্য চিত্তাকর্ষক শিরোনাম দিতে হবে পোস্টগুলোর। এজন্য পোস্টের মূল যে বিষয়, সেটি শিরোনামে প্রকাশ পেলেই সবচেয়ে ভালো হয়। অযথা ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা ঠিক হবে না। কারণ তাতে অনেক পাঠক বা ভিজিটরই বিরক্ত হন। এই কৌশলটিকে বলে ক্লিক-বেইটিং। এবং আধুনিক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনেকেই এটিকে একটি অপচর্চা হিসেবে জানেন। তাছাড়া ক্লিক-বেইটিং করলে ফেসবুকের এলগরিদম আপনাকে দুই নম্বরী হিসেবে সাব্যস্ত করবে।

পোস্টিং শিডিউল : আপনার সাইটের ভিজিটরদের সাথে শেয়ার করার মত নতুন কন্টেন্ট সবসময়ই যেন থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য একটি শিডিউল মেনে পোস্ট করুন। ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট আপনি নিজে তৈরী করতে পারেন। আবার চাইলে আউটসোর্সিং-ও করা যায়। অর্থাৎ, অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিলেন। আপনার যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিঙের বাইরেও অন্য পেশা থাকে, তাহলে সেকেন্ডারী কন্টেন্ট লেখার অংশটি আউটসোর্স করাই ভালো। তবে আউটসোর্স করা কন্টেন্টও প্রুফরিড করা উচিত। প্রয়োজনে আপনি সেখানে নিজের আইডিয়া যোগ করলেন।

সপ্তম ধাপ : –

ট্রাফিকের অন্য উৎসগুলোও ব্যবহার করুন

আপনার ফলোয়ার তৈরী হলে, এবং শিরোনামগুলোকে সঠিক ভাবে অপটিমাইজ করার পর স্থির একটি ধারায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আপনার সাইটে ট্রাফিক আসতে শুরু করবে।

ফোরামের আলোচনায় অংশ নিন : সোশ্যাল মিডিয়ার ট্রাফিকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আপনি ট্রাফিকের অন্য উৎসগুলোর শরাপন্ন হোন। যেমন নিশে সম্পর্কিত যে প্রশ্ন ও উত্তরের ফোরামগুলো রয়েছে সেগুলোতে অংশগ্রহণ করুন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেট সম্পর্কিত এই ব্লগের অন্য পোস্টে বিষয়টি আগেও উল্লেখ করা হয়েছিল। বিভিন্ন কমিউনিটি ফোরামগুলোতে অংশ নিয়ে আপনার নিশে সম্পর্কিত প্রশ্নের মূল্যবান মতামত দিন। এর ফলে এসব ফোরামের মানুষদের কাছে আপনার একটি স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে। তখন আপনার অ্যাফিলিয়েট সাইটের পন্য ক্রয়ের ব্যাপারে ভরসা পাবেন তারা।

একাধিক ফোরামে অবস্থান : এসব ফোরামে অংশ নেয়ার পর লক্ষ্য করতে থাকুন, কোন ফোরামগুলো থেকে আপনার সাইটে বেশী ট্র্যাফিক আসছে। ধরা যাক, ক্বোরা আপনার সাইটে সবচেয়ে বেশী ট্র্যাফিক পাঠায়। তাহলে ওখানেই বেশী সময় দিন। তারপরও, যেকোন একটি মাত্র ফোরামে পড়ে না থাকাই ভালো। কারণ সেক্ষেত্রে আপনি ট্রাফিকের জন্য একটি ফোরামের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবেন। সুতরাং একাধিক ফোরাম হাতে রাখুন।

অষ্টম ধাপ : –

মানুষকে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়ে আসার জন্য অটোমেটেড ইমেইল নিউজলেটার পাঠান

মানুষ যতই আপনার ওয়েবসাইটে আসবেন, আপনি আপনার পপ-আপ সাবক্রিপশান ফর্মেও ততই ইমেইল এড্রেস পেতে থাকবেন। যখন দেখবেন ত্রিশ জনের মত হয়ে গিয়েছে, তখন ইমেইল নিউজলেটার তৈরী করা শুরু করুন। আপনার নিউজলেটারটিতে, সাইটের নিশের সম্পর্কিত আপডেট নিয়ে একটি বা দু’টি ছোট আর্টিকেল থাকতে পারে। সাথে সাইটে নতুন কি কি যোগ করলেন তার একটি সারাংশ। এই সারাংশ পড়েই আপনার সাইটে ভিজিটররা আসতে থাকবেন।

অটো-রেসপন্ড ইমেইল : নতুন সাবস্ক্রাইবারদের জন্য আপনি কিছু অটো-রেসপন্ড ইমেইলের ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনি আপনার নিশে নিয়ে একটি হাউ-টু গাইড বা কিভাবে করবেন জাতীয় লেখা তৈরী করবেন প্রথমে। অটো-রেসপন্ডারের কাজ হবে প্রতি সপ্তাহে গাইড থেকে একটি করে টিপস আপনার সাবস্ক্রাইবারদের পাঠাবে। MailChimp বা ConvertKit বা এই জাতীয় সার্ভিস ব্যবহার করে আপনি অটো-রেসপন্ডের কাজটি করতে পারেন।

নবম ধাপ : –

সাইটের অগ্রগতিকে ট্র্যাক করুন ও সে অনুযায়ী সাইট অপটিমাইজ করুন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ অর্থ আয়ের প্রধানতম উপায় হচ্ছে, সাইটে যে মানুষেরা আসেন, ইন্টারনেটে তাদের আচার ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করা। আপনার লক্ষ্য থাকবে সমস্ত ভিজিটরকে আপনার প্রধান সেলস পেজটিতে নিয়ে আসবেন। এজন্য আপনার ওয়েবসাইটের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজগুলিকে চিহ্নিত করুন। এবং এই পেজগুলিতে আপনার মূল সেলস পেজটির লিংক বিভিন্ন ভাবে সংযুক্ত করুন।

জনপ্রিয় পেজকে সেলস পেজে রূপান্তর : আপনার জনপ্রিয় কন্টেন্টটিকে যদি কোন পণ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায়, তাহলে সেখানেও অ্যাফিলিয়েট লিংক যোগ করে, জনপ্রিয় পেজটিকেই একটি সেলস পেজে পরিণত করতে পারেন। এখানে সাফল্য পাওয়ার জন্য জরুরী হচ্ছে, মানুষকে ক্লিক করার জন্য খুব বেশী চাপাচাপি করবেন না।

দশম ধাপ : –

একটি নিশে-কে প্রতিষ্ঠিত করার পর আরেকটি নিয়ে কাজ শুরু করুন

ওপরের ধাপগুলো সম্পন্ন করে আসার পর, এবং সেখান থেকে মোটামুটি উপার্জন শুরু হওয়ার পর আপনি নতুন একটি নিশে নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। এভাবে শুধু একটি দুটি নয়, বহু সংখ্যক নিশে নিয়ে ওয়েবসাইট তৈরী করা যায়।

বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে আপনাকে সাইটগুলোর কন্টেন্ট তৈরী, এবং সাইটটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি আউটসোর্সিয়ের মাধ্যমে করতে হবে। আপনি নিজে যদি ফুল টাইম অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবেই কাজ করতে চান সেক্ষেত্রেও নতুন ওয়েবসাইটগুলোর পেছনে আপনি নিজের সময় দিলেন, এবং পুরোনোগুলোর দায়ভার আপনার আউটসোর্সগুলোর কাছে বুঝিয়ে দিবেন।

একটি গড়পড়তা সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট আপনার জন্য মাসে বিশ হাজার টাকা উপার্জন করতে পারবে। এরকম পাঁচটি কি ছ’টি ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারলেই আপনার পক্ষে মাসে এক লাখ টাকার মত ইনকাম করা সম্ভব। কেউ যদি প্রতিদিন সময় দেন, তাহলেই এক বছরের মধ্যেই এই অবস্থায় যাওয়া কঠিন কিছু নয়।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু একবার আপনার সাইটগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, ব্যাক্তিগত কাজের ভার অনেক কমে আসবে। তখন আপনি শুধু আপনার নিয়োগকৃতদের কাছ থেকে খোঁজখবর রাখবেন কিরকম চলছে সাইটগুলো।

অনলাইন কার্যক্রমে সাফল্য আসুক সকলের।

Leave a Comment