বাংলাদেশের সেরা ৫টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত!

এখন ভর্তিযুদ্ধের মৌসুম। দেশের সকল উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শিক্ষার্থীরা এই সময়ে আদাজল খেয়ে বসে যায় পড়াশোনায়। সবার লক্ষ্য একটাই, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের সাব্জেক্টে পড়ার সু্যোগ পেতে হবে।

কিন্তু বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সীট সংখ্যা পাশ করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। তাই স্বাভাবিক ভাবেই সব শিক্ষার্থী সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না কিংবা ভালো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলেও ভালো সাবজেক্ট পায় না।

তখন দ্বিতীয় অপশন হিসেবে হাতে থাকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

এই আর্টিকেলে আমরা জানবো-

বাংলাদেশের ৫টি সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু


১। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

বাংলাদেশের সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় নর্থ সাউথকে সবার উপরে রাখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। “QS World Ranking 2022” এর হিসেব অনুযায়ী যেই চারটি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ব র‍্যাংকিং এ জায়গা করে নিয়েছিলো, তাদের মধ্যে নর্থ সাউথ ছিলো চার নাম্বারে।

সাধারণ মানুষের ধারণা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বোধহয় চাকরী-বাকরী তেমন একটা পায় না। অথচ কিউএস এশিয়া র‍্যাংকিং এ নর্থ সাউথের “Employer Reputation” ৩৭ দশমিক ২ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েটের “Employer Reputation” মাত্র ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।

এর থেকেই বোঝা যায়, চাকুরীর বাজার নিয়ে প্রাইভেট এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তথাকথিত যেসব নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে, সেগুলো কতটা অহেতুক এবং অযাচিত।

মূলত, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ শাখা ২০১৫ সালে সারা দেশের ভেতর প্রথম বারের মতো এসিবিএসপি থেকে মার্কিন স্বীকৃতি লাভ করেছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত একর জমির উপর এক লক্ষ ২৫ হাজার বর্গফুটের একটি ক্যাম্পাস আছে, যেখানে তিনটি বেসমেন্টসহ ছয়টি ভবন রয়েছে।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চার বছরে সাবজেক্ট ভেদে গড়ে দশ লক্ষ থেকে ১৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

২। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

ব্র্যাক শুধু একটা নাম নয়, শিক্ষাঙ্গনে এটা একটা ব্র্যান্ডও বটে। QS World Ranking 2022 এর পরিসংখ্যানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের ৩য় নাম্বারে দেখানো হয়েছে।

এই জরিপ অনুসারে, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ‘Employer Reputation’ বিশ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ‘Employment Outcomes’ চব্বিশ দশমিক ৫ শতাংশ।

শুধু QS Ranking নয়, বরং বেশিরভাগ র‍্যাংকিং – এই ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি উপরের দিকে থাকে এবং টেক্কা দেয় বেশিরভাগ নামকরা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কেও।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির মতো লিখিত পরীক্ষা নয়, বরং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য একটি অনলাইন ভাইভাতে অংশ নিতে হয়। সেখানে বেশ যাচাই-বাছাই করে কর্তৃপক্ষ স্বল্প কিছু শিক্ষার্থীকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ দেয়।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো, এখানকার শিক্ষক এবং ফ্যাকাল্টিরা অত্যন্ত যোগ্যতা সম্পন্ন, মার্জিত এবং প্রোফেশনাল। এছাড়াও, এখানে ক্রেডিট সিস্টেমের ফ্লেক্সিবিলিটি থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রতি সেমিস্টারে নিজেদের ইচ্ছা মতো কোর্স কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিতে পারে।

আফসোসের কথা হলো, ব্রাক ইউনিভার্সিটির নিজস্ব কোনো স্থায়ী ক্যাম্পাস নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বর্তমানে ঢাকার মহাখালীতে একটি অস্থায়ী ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। তবে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ চলছে রাজধানীর বাড্ডায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চার বছরে সাবজেক্ট ভেদে গড়ে বারো লক্ষ থেকে পনেরো লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়।

৩। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

অতি অল্প সময়ের ভেতর বাংলাদেশের যে সমস্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় লাইমলাইট নিজেদের দিকে করে নিতে পেরেছে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের অন্যতম।

“QS Ranking World 2022” এ নাম না থাকলেও “QS Ranking of Asia Region 2022” এর তালিকায় সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ৫ম এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর ভেতর ৩য় অবস্থানে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

এছাড়াও, বাংলাদেশের এই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়টি “Times Higher Education in 2022” এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে ২য় স্থান, “Scopus Indexed Publications in 2022” অনুসারে ২য় স্থানে, “UI-Greenmetric World University 2022” এর র‍্যাংকিং অনুসারে ১ম স্থান অধিকার করেছে এবং এগুলোসহ আরো বিভিন্ন জরিপে প্রথম সারীতে স্থান দখল করে নিয়েছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বেশ কয়েকজন কৃতি শিক্ষার্থী গুগল, মাইক্রোসফট, এ্যামাজনের মতো জায়গায় ভালো পদে চাকুরী করছে। ডিপার্টমেন্টগুলো বড় হওয়ায় ড্যাফোডিলের এ্যালামনাই সংখ্যাও অনেক বেশি এবং তারা দেশে বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

সর্বোপরি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রয়েছে বিশাল মুক্ত ক্যাম্পাস, যেটা কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েরই নেই। প্রায় সাড়ে তিনশো একর জায়গার উপর স্থাপিত এই সবুজের চাদরে ঘেরা ঢাকা ক্যাম্পাসে সবই আছে, যা একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা প্রয়োজন।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চার বছরে সাবজেক্ট ভেদে গড়ে ছয় লক্ষ থেকে নয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তবে এইচএসসি এবং এসএসসির রেজাল্টের উপর ওয়েভার থাকায় মেধাবী শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক কম খরচে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পায়।

৪। আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে সাধারণ মানুষ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জানি না কেন, মানতে চায় না। এই ইউনিভার্সিটিতে পড়লে কিছু মানুষ কনফিউজড হয়ে যাবে, আপনি প্রাইভেটে পড়েন, নাকি পাবলিকে পড়েন।

বাংলাদেশের যেকোনো মধ্যবয়স্ক শিক্ষিত মানুষকে যদি আপনি তিনটি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির নাম বলতে বলেন, নিঃসন্দেহে সে ব্র্যাক ও নর্থ সাউথের পরই বলবে আহসানউল্লাহর কথা।

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে ঢাকা আহছানিয়া মিশন নামের একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ঢাকা আহছানিয়া মিশন নামক সংগঠনটি ১৯৫৮ সালে খান বাহাদুর আহছানউল্লা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে চান্স পাওয়া তুলনামুলকভাবে কঠিন। এখানে প্রতি সেমিস্টারে প্রায় তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দেয় এবং গড়ে মাত্র আটশো জনের মতো ভর্তির সুযোগ পায়।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ এবং পড়াশোনার কারিকুলাম দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতোই। যেমনঃ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ক্রেডিট সিস্টেম অনেক ফ্লেক্সিবল হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একেক সেমিস্টারে একেক কোর্সে এনরোল করে নিজের পছন্দ মতো আলাদা হয়ে যায়।

এজন্য প্রতি সেমিস্টারেই দেখা যায় আশেপাশে নতুন নতুন মানুষ, যার ফলে কারো সাথেই তেমন গভীর বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে না।

এছাড়াও, অন্যান্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি সেমিস্টারে এনরোল করার সময় সেকশন আলাদা হলেই শিক্ষার্থীরা ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু, আহছানউল্লাহতে ভর্তির পর বাকি চার বছর সব শিক্ষার্থীরা একই কোর্সে, একই সঙ্গে ক্লাস করে। তাই দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার জন্য তাদের ভেতর বন্ডিংটা ভালো হয়।

আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চার বছরে সাবজেক্ট ভেদে গড়ে আট লক্ষ থেকে দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

৫। আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অন্যতম সেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভেতর অন্যতম। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিরা দারুন অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এবং পেশাদার। কোর্স আউটলাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আমেরিকান স্টাইল ফলো করার চেষ্টা করে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল আউটলুক বেশ ইউনিক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং জাপানের মতো বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের পার্টনারশীপ আছে।

এই পার্টনারশিপের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের ভেতর শিক্ষার্থী বিনিময় থেকে শুরু করে একসঙ্গে রিসার্চ, লেকচারার বিনিময় করতে পারে।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি তাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের অন-ক্যাম্পাস সুবিধা, যেমন- বৃহৎ লাইব্রেরী, কম্পিউটার ল্যাব, স্টেডিয়াম, হাউজিং, জিমসহ ইত্যাদী সার্ভিস দিয়ে থাকে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য ইন্টারমিডিয়েটের পর এ্যাডমিশন পরীক্ষা দিতে হয়। পরীক্ষার রেজাল্টের উপর নির্ভর করে একজন শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে কিনা।

আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য চার বছরে সাবজেক্ট ভেদে গড়ে দশ লক্ষ থেকে বারো লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।

আরও পড়ুন-

Leave a Comment