ব্লগ বা ওয়েবসাইট থেকে আয়ের সেরা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো গুগল অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়। তবে অনেকবার, অনেক রকম ভাবে চেষ্টা করেও অনেক ক্ষেত্রে অনেকেই অনেক কারণে অনুমোদন (Approval) পান না। আবার, অ্যাডসেন্সে অনুমোদন পাওয়া যতটা কঠিন; তার চেয়ে কঠিন সেটা ধরে রাখা। ক্ষেত্রবিশেষে নিজের ভুলে বা অন্য কোনো অজানা কারণে বা সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়ে অনেকের অ্যাডসেন্স একাউন্ট ব্যান হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে, বর্তমানে অনেক ব্লগার তাদের ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প খুঁজে চলেছেন। আপনিও যদি তাদের মধ্যে একজন হয়ে থাকেন; তবে এই লেখাটি আপনার জন্যই।
গুগল অ্যাডসেন্স (Google AdSense) কি?
গুগল এডসেন্স হলো গুগলের একটি অ্যাডভারটাইজিং প্রোগ্রাম; যে প্রোগ্রামে যোগদান করে কোন একজন ব্যাক্তি তার ব্লগ বা ইউটিউব চ্যানেলে অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয় করে থাকে।
বিভিন্ন কম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বা সেবার প্রচার ও বিক্রির জন্য গুগল অ্যাডসেন্সকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেয়। এই অর্থের বিনিময়ে গুগল তাদের বিজ্ঞাপন বিভিন্ন ব্লগার ও ইউটিউবারদের মধ্যে বিতরণ করে।
বিজ্ঞাপন দাতাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ কন্টেন্টের ভিত্তিতে ৬৮% ও সার্চের ক্ষেত্রে ৫১% ব্লগ ও ইউটিউবের মালিককে দেয়া হয়। অ্যাডসেন্স শুধু ওয়েবসাইট ও ইউটিউবই নয়, মোবাইল অ্যাপ, ভিডিও সহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
অ্যাডসেন্স কমিশন প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু প্রধান নিয়ম অনুসরণ করে। সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে অ্যাডসেন্স প্রকাশক বা Publisher দের টাকা প্রদান করে।
1. CPM (Cost Per Mille)
2. CPC (Cost Per Click)
3. CTR (Click Through Rate)
4. PPC (Pay Per Click)
CPM
এখানে CPM এ Mille একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হাজার। সহজ ভাষায় CPM কে বলা যেতে পারে Click Per Thousand Impression. অর্থাৎ কোনো এডে প্রতি ১০০০ ভিউ এর জন্য আপনাকে যে পরিমাণ কমিশন দেয়া হবে সেটাই হলো ঐ বিজ্ঞাপনের CPM.
CPC
যখন কোনো ভিজিটর কোনো অ্যাডে ক্লিক করে তার জন্য সে ওয়েবসাইটের মালিককে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেয়া হয়। এভাবে প্রতি ক্লিকের বিনিময়ে আপনাকে যে অর্থ দেয়া হবে সেটাই হলো CPC বা Cost Per Click.
CTR
আপনার ভিজিটরদের কত শতাংশ অ্যাডে ক্লিক করেছে তার মানকে বলা হয় Click Through Rate বা CTR.
PPC
পিপিসি (PPC) ফলো করা হয় অ্যাডভারটইজার বা বিজ্ঞাপন দাতাদের উপর। অ্যাডের প্রতি ক্লিকে অ্যাডভাইজার গুগলকে কত টাকা পরিশোধ করবে তার উপর ভিত্তি করে গুগল প্রকাশকদের যে পরিমাণ কমিশন করে থাকে তাকেই PPC বা Pay Per Click Rate বলা হয়।
আরও পড়ুন –
ব্লগ বা ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্সের বিজ্ঞাপন কিভাবে প্রদর্শিত হয়?
এই বিজ্ঞাপন গুলো সহজ পাঠ্য, সাধারণ ছবি, এনিমেটেড পিকচার, ভিডিও, ফ্ল্যাশ ভিডিও যেকোন ফরম্যাটে প্রদর্শিত হতে পারে। আপনি ইচ্ছে করলে এর আকার, গঠন, সংখ্যা ও ধরণ সবকিছুই অ্যাডসেন্স ড্যাশবোর্ডে নির্ধারণ করে দিতে পারবেন। তবে সাধারণত গুগল বর্তমানে ২টি উপায়ে ৫টি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে থাকে।
প্রথম উপায় বা পদ্ধতি
প্রথমত গুগল অটো অ্যাডস (Auto Ads) নির্বাচন করার জন্য প্রকাশকদের সুযোগ প্রদান করে থাকে। Auto Ads অন করা হলে প্রকাশকদের শুধুমাত্র একটি জাভাস্ক্রিক্ট কোড তার ওয়েবসাইটের হেডিং এর মধ্যে (head -ট্যাগ এর মধ্যে) যুক্ত করে দিলেই হয়। পরবর্তীতে গুগল নিজে থেকেই ওয়েবসাইটের সম্ভাব্য সবচাইতে সেরা পজিশনে অ্যাডসেন্স অ্যাড বসানোর কাজটি করে থাকে।
দ্বীতিয় পদ্ধতি
কোন প্রকাশক যদি অটো অ্যাডস এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করতে ইচ্ছুক না হয়ে থাকেন তবে সেক্ষত্রে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ম্যানুয়ালি অ্যাড কোড সাইটে যুক্ত করার মাধ্যমেও ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্স এর অ্যাড প্রকাশ করা যায়।
এক্ষেত্রে প্রকাশককে সাধারণত ৪টি ফরম্যাটের অ্যাড কোড নিজের হাতে ওবেবসাইটের বিভিন্ন পজিশনে বসিয়ে দিতে হয়।
ফরম্যাটগুলো হচ্ছে-
১। Display ads
২। In-feed ads
৩। In-article ads
৪। Search engine
গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারেন। এজন্য আপনাকে অবশ্যই গুগল অ্যাডসেন্স এর গাইডলাইন সঠিকভাবে অনুসরণ করে আপনার ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে হবে। সেইসাথে আপনার ওয়েবসাইটে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিজিটর থাকাও আবশ্যক।
বিজ্ঞাপনের জন্য আপনাকে প্রথমে গুগল অ্যাডসেন্সে সাইন আপ করতে হবে। এরপর গুগল আপনার দেয়া সকল ইনফরমেশন ও ওয়েবসাইটের যোগ্যতা পর্যবেক্ষণ করবে। ওয়েবসাইটি অ্যাডসেন্স মানসম্মত হলে আপনাকে বিজ্ঞাপন প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে।
কখন Google AdSense এর সেরা বিকল্প (Best Google AdSense Alternative) খোঁজার প্রয়োজন হয় এবং কেন?
ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল যে কারণেই তৈরি করা হোক না কেন; তার মূল উদ্দেশ্য হলো অনলাইন থেকে আয়। গুগল অ্যাডসেন্স একটি ওয়েবসাইটের আয় অনেকাংশেই বাড়িয়ে দিতে পারে।
একবার অনুমোদন পেয়ে গেলে অ্যাডসেন্স থেকে সারাজীবন আয় করা সম্ভব। কিন্তু আপনি যদি এডসেন্সের অনুমোদনই না পান তবে এ সুযোগগুলো আপনার কোনো কাজে আসবে না।
গুগল অ্যাডসেন্সে অনুমোদন পাওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। অ্যাডসেন্সের জন্য সাইন আপের পর আপনার ওয়েবসাইট খুবই সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তখন সামান্য একটু ক্রুটি পেলেও আবেদন রিজেক্ট হয়ে যাবে।
তাছাড়া নতুনদের জন্য গুগল অ্যাডসেন্সে অনুমোদন পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায় শুধুমাত্র Google AdSense এর সেরা বিকল্প ব্যবহারেই আপনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ পেতে পারেন।
সুবিধার পাশাপাশি গুগল অ্যাডসেন্স এর কিছু জটিলতাও রয়েছে। গুগল অ্যাডসেন্স সঠিকভাবে ব্যবহারের কিছু নির্দেশনা দেয়া আছে। এই নির্দেশনার কোন ব্যাতিক্রম করা হলে তার ফলশ্রুতিতে অ্যাডসেন্স কর্তৃপক্ষ আপনার একাউন্ট ডিজেবল বা ব্যান করে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।
নির্দেশনা সমূহের মধ্যে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণটি হচ্ছে- আপনি কখনোই আপনার নিজের ওয়েবসাইটে অ্যাড ক্লিক করতে পারবেন না। ভুলে যদি কখনো ক্লিক হয়ে যায় এবং গুগল অ্যাডসেন্স কর্তৃপক্ষ তা বুঝতে পারে, তবে তারা আপনার একাউন্টটি বিনা নোটিশে ব্যান করে দিতে পারে।
CTR বা Click Per Rate ১৫% এর বেশি হলে আপনার একাউন্ট বাতিল হতে পারে। গুগল ২-৫% CTR কে আদর্শ মনে করে। CTR এর মান বেশি হলে গুগল ধরে নেয় এডমিন নিজে অথবা অন্য কাউকে দিয়ে ভিন্ন উপায়ে অ্যাডে ক্লিক করাচ্ছে; যা অ্যাডসেন্স নীতির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই CTR ১০% এর বেশি হলে সাময়িক বা পূর্ণ সময়ের জন্য অ্যাড বন্ধ করে দিতে পারে।
ওয়েবসাইটের জন্য এসেন্সের বিকল্প হিসেবে এমন অনেক অ্যাডভারটাইজিং নেটওয়ার্ক আছে যেখানে তুলনামূলক জটিলতা অনেক কম। সেগুলো আপনি খুব সহজে ও অধিক স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবেন।
ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প ১২টি বিজ্ঞাপনী সংস্থা (Ads Network)
১. Media.net
Media.net; Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে বর্তমানে সমাদৃত। বিশ্বের সেরা Contextual advertising platform এর মধ্যে মিডিয়া ডট নেট এর অবস্থান দ্বিতীয়। তবে এটি গুগল নয়, Yahoo এবং Bing দ্বারা পরিচালিত। এখানে উল্লেখ্য যে, Media.net সাইটে বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট অনুমোদন দিচ্ছে না। আপনি Media.net এর অ্যাড ব্যবহার করে অনলাইনে আয় করতে চাইলে আপনার ওয়েবসাইটটি অবশ্যই ইংরেজি ভাষার কন্টেন্ট দিয়ে তৈরি করা হতে হবে। অথবা আপনার ওয়েবসাইটের Primary Language অবশ্যই ইংরেজি হতে হবে।
প্লাটফর্মটির Advertising program এর প্রায় পুরোটাই গুগল এডসেন্সের সঙ্গে মিলে যায়। অ্যাডসেন্সের মতো এটিও একটি contextual advertisement platform. অর্থাৎ এখানে সবসময়ই কনটেন্টের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অ্যাড দেখানো হয়।
Media.net এ সাধারণত আপনাকে CPM এর ভিত্তিতে কমিশন দেয়া হয়। আপনার টাকা উত্তোলনের উপযোগী হলে ১৫ দিন পর একাউন্টে জমা করে দেয়া হবে।
ইয়াহু এবং মাইক্রোসফটের বিং নেটওয়ার্কের অধীনে পরিচালিত Media.net সবসময়ই হাই কোয়ালিটি অ্যাড সরবরাহ করে থাকে। বর্তমানে প্রায় ৫০০,০০০ ওয়েবসাইট এখান থেকে আয় করে চলেছে।
মিডিয়া ডট নেট USA ভিজিটরদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। যদি আপনার ওয়েবসাইটে USA ভিজিটরের সংখ্যা বেশি হয় (নূন্যতম মাসে ৫০,০০০ পেজভিউ হলে ভালো হয়); তবে আপনার জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে এটিই বেস্ট প্লাটফর্ম।
২. Adthrive
গুগল অ্যাডসেন্স ও Media.net এর পর সবচেয়ে জনপ্রিয় Google AdSense এর সেরা বিকল্প প্লাটফর্মটি হলো Adthrive. যদি আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক মাসে ১০০,০০০ এর উপর হয় তবে ওয়েবসাইটের জন্য অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবে Adthrive খুবই লাভজনক একটি প্লাটফর্ম।
Adthrive এ সাইন আপের পর আপনার ওয়েবসাইটটি নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তাই এখানে অনুমোদন পাওয়া বেশ কঠিন।
এটি একটি google certified publisher partner যা প্রতিনিয়ত ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আপনার জন্য সেরা অ্যাড বেছে দেবে।
বিশ্বের সেরা অনেক কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট সেলের জন্য Adthrive এর উপর ভরসা করে চলেছে।
৩. PropellerAds
ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে Media.net এর মতোই PropellerAds বেশ জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম। এটি নতুন বা পুরাতন যে কোন ওয়েবসাইটের জন্যই অ্যাডের সুযোগ করে দেয়।
PropellerAds তার pop under add এর জন্য সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এটি ব্রাউজার উইন্ডোর পেছনে ও উইন্ডো বন্ধ হওয়ার সময় শো করে। এছাড়া PropellerAds ব্যানার, পুশ নোটিফিকেশন, স্পন্সর লিংকসহ অন্যান্য ফরম্যাটেও অ্যাড প্রচার করে থাকে।
এটি একটি self-serve অ্যাডভারটাইজিং প্লাটফর্ম যেখানে আপনি সহজেই নিজের campaign নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
৪. Infolinks
প্রায় ১ লক্ষ পাবলিশার্স Infolinks এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অ্যাড থেকে প্রতিনিয়ত আয় করে চলেছে। ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে Infolinks দারুন একটি advertisement network.
ছোট-বড় যে কোন ওয়েবসাইট “Infolinks Publisher” এ রেজিষ্ট্রেশন করে আয় করতে পারে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কোন ফ্যাক্টর নয়। তবে কনটেন্ট অবশ্যই ইউনিক হতে হবে এবং ইংরেজি ভাষার হতে হবে।
রেজিস্ট্রেশনের পর পাবলিশার্সদের একটি অ্যাড কোড দেয়া হয়। কোডটি নিজের সাইটে ইনস্টল করে নিলেই অ্যাড দেখানো শুরু হবে। অ্যাড থেকে ৫০ ডলার আয় হলেই আপনি টাকা তুলে নিতে পারবেন।
আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক কম হলেও আপনি Infolinks থেকে অ্যাডের সুযোগ পেতে পারেন। তবে ভিজিটর কম এমন ওয়েবসাইটে অ্যাড থেকে আয়ের পরিমাণ খুবই কম হয়ে থাকে।
৫. Yllix
Yllix ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে খুবই সহজ একটি প্লাটফর্ম। এখানে সাইন আপের সাথে সাথেই আপনার একাউন্ট সক্রিয় হয়ে যাবে। কোন ম্যানুয়াল যাচাই করা হয় না বলে সম্পূর্ণ নতুন একটি ওয়েবসাইটও এখানে অনুমোদন পেতে পারে।
ইলিক্স (Yllix) এ ব্যানার, পপ আপ, পপ আন্ডার, স্লাইডার, ট্যাব আপসহ বিভিন্ন ধরনের অ্যাড এর সুযোগ রয়েছে। অ্যাড- এ প্রতি ক্লিকের উপর আপনাকে কমিশন দেয়া হবে।
Yllix এর আন্তর্জাতিক ফিল রেট আছে এবং এটি সব দেশ থেকেই ট্রাফিক গ্রহণ করে।
৬. Meredian by Sovrn Add Network
নতুন ওয়েবসাইটের জন্য অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবে Sovrn Add Network উপযুক্ত একটি প্লাটফর্ম। তবে Sovrn এ অনুমোদনের জন্য আপনার ওয়েবসাইটে অবশ্যই ইউনিক কনটেন্ট থাকতে হবে। এবং সেগুলো হতে হবে Sovrn এর Standard Guideline অনুযায়ী।
এখানে আপনাকে CPM বা Cost Per Thousand Impression এর উপর ভিত্তি করে কমিশন দেয়া হবে। এক্ষেত্রে যদি কোন ভিজিটর আপনার অ্যাডে ক্লিক করে তবু আপনাকে কোন এক্সট্রা কমিশন দেয়া হবে না।
Sovrn এ অ্যাপ্রুভালের ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটর সংখ্যা কোন প্রভাব ফেলবে না। তবে ওয়েবসাইটে ট্রাফিক যত বাড়বে; অ্যাড থেকে আপনার কমিশনের পরিমাণও তত বেশি হবে।
সুভার্ণ (Sovrn) এর আরো একটি সুবিধা হলো এখানে আপনি ওয়েবসাইটে অ্যাড এর জন্য একটি minimum price নির্ধারণ করতে পারবেন। এবং পরবর্তীতে আপনার ওয়েবসাইটের সকল অ্যাড সে price অনুযায়ী হবে।
যদি Sovrn এর কাছে সেই নির্দিষ্ট মূল্যের অ্যাড না থাকে তাহলে Google AdSense থেকে অ্যাড এনে দেয়া হয়। এই পদ্ধতিকে বলে Add Pass.
৭. Amazon Native Shopping Adds
অ্যামাজনের Display add program এর মাধ্যমে যে কেউ ওয়েবসাইটে অ্যাড প্রকাশ করতে পারে। এখানে sing up এর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে এপ্রুভাল দিয়ে দেয়া হয়।
তবে এপ্রুভাল পাওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অন্তত একটি পণ্য বিক্রি করতে হবে। না হলে আপনার একাউন্ট ডিএক্টিভেট হয়ে যাবে এবং সেক্ষেত্রে আবারো সাইন আপ করতে হবে।
অ্যামাজন ন্যাটিভ শপিং অ্যাডস এ CPC বা CPM সুবিধা নেই। আপনি তখনি কমিশন পাবেন যখন কোন ভিজিটর আপনার অ্যাডে ক্লিক করে কিছু ক্রয় করবে। প্রতি সেলের জন্য আপনাকে ৪-১২% কমিশন দেয়া হবে। কোন প্রোডাক্ট সেলের ৬০ দিন পর আপনি আপনার কমিশন পেয়ে যাবেন।
৮. Revcontent
ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে Revcontent খুবই ভালো একটি নেটওয়ার্ক। ন্যাটিভ অ্যাড (Native Ads) এর জন্য Revcontent খুবই জনপ্রিয়।
এ প্লাটফর্মে অনুমোদন পাওয়া খুব একটা সহজ নয়। আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক মাসে অন্তত ৫০,০০০ হতে হবে। ওয়েবসাইটের কনটেন্টও হতে হবে ইউনিক।
৯. Adversal
এটি তুলনামূলক অনেক সহজ একটি প্লাটফর্ম। Adversal আপনার ওয়েবসাইটে কয়েক মিনিটের মধ্যেই অ্যাড সেট করে দেবে।
এখানে অনেক কিছুই আপনি নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। তবে এজন্য আপনার ওয়েবসাইটে প্রতিমাসে অন্তত ৫০,০০০ পেজভিউ হতে হবে। তাছাড়া আপনার ওয়েবসাইটটি হতে হবে নিজস্ব ডোমেইন নেম এর।
১০. Evadab
Evadab এমন একটি অ্যাডভারটাইজিং নেটওয়ার্ক যা ছোট বড় যেকোন ওয়েবসাইটকে অ্যাড প্রকাশের সুযোগ দিয়ে থাকে।
এখানে push, native, in page সহ বিভিন্ন ফরম্যাটে এডের মাধ্যমে প্রচুর আয় করা সম্ভব। তাছাড়া আপনি এডমিন প্যানেলের অনেক কিছুই নিজে হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
Evadab এ কমিশন নির্ধারণ করা হয় CPC ও CPM এর নিয়মানুসারে। আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক বেশি হলে Evadab থেকে প্রচুর আয় করা সম্ভব।
১১. Monumetric
এটি একটি full-service এড রেভিনিউ প্লাটফর্ম। ওয়েবসাইটের জন্য Google AdSense এর সেরা বিকল্প হিসেবে Monumetric থেকে আপনি বেশ ভালো পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারেন।
এখানে আপনাকে CPM বা Cost Per Thousand Impression এর ভিত্তিতে কমিশন দেয়া হবে।
Monumetric এ অনুমোদনের জন্য আপনার ওয়েবসাইটের মাসিক ভিউ অন্তত ১০০,০০০ হওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া এখানে সাইন আপের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ফি হিসেবে দিতে হয়।
১২. AdClickMedia
AdClickMedia তুলনামূলক সহজ একটি এডভারটাইজিং কম্পানী। গুগল অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবে AdClickMedia এডভারটাইজার ও পাবলিশারদের (website owners) জন্য একটি সেরা প্লাটফর্ম।
আপনার ওয়েবসাইটি একদম নতুন হলেও এখানে আপনি বিজ্ঞাপন এর জন্য অনুমোদন পেয়ে যাবেন। CPC ও CPM অনুযায়ী আপনাকে কমিশন দেয়া হবে।
Google AdSense এর সেরা বিকল্প প্লাটফর্মে অনুমোদন পেতে করণীয়
গুগল অ্যাডসেন্সের তুলনায় এসব প্লাটফর্মে অনুমোদন পাওয়া সহজ হলেও কিছু বিষয় মনে রাখা জরুরি।
১. কোন ওয়েবসাইট গুগল অ্যাডসেন্স কর্তৃক ব্যান করা হলে অন্যান্য প্লাটফর্মেও সাইটটিকে অনুমোদন দেয়া হয় না। তাই অ্যাডসেন্স নীতি বিরোধী এমন কোন ভুল করা যাবে না; যাতে আপনার ওয়েবসাইটটি ব্যান হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
২. অনেক প্লাটফর্ম অনুমোদনের আগে ওয়েবসাইটের কনটেন্ট ভালো করে যাচাই করে নেয়। তাই আপনার কনটেন্টগুলো অবশ্যই মোটামুটি ভালো মানের হতে হবে।
৩. অ্যাডভারটাইজিং প্লাটফর্মে অনুমোদনের জন্য কপিরাইট আইন মেনে চলাও ভীষণভাবে প্রয়োজন। আপনার কনটেন্টের লেখা-ছবি সকল কিছুই হওয়া চাই কপিরাইট ফ্রি।
৪. ওয়েবসাইটে ট্রাফিক কম হলে গুগল অ্যাডসেন্স / অ্যাডসেন্সের বিকল্প প্লাটফর্ম কোনটাই আপনার জন্য তেমন আয় বয়ে আনবে না। তাই ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে ও ধরে রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
৫. যে কোন অ্যাড নেটওয়ার্ক প্লাটফর্মে সাইন আপের আগে তার শর্তাবলী ভালো করে পড়ে নেয়া প্রয়োজন। না হলে পরবর্তীতে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
গুগল অ্যাডসেন্স এর সেরা বিকল্প অ্যাড নেটওয়ার্ক থেকে আয় করা টাকা তুলবেন কিভাবে?
অ্যাডভারটাইজিং প্লাটফর্মগুলো থেকে টাকা তোলার প্রক্রিয়া কিছুটা ঝামেলার। তবে ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থার উন্নতি আশা করা যাচ্ছে।
ক্যাশ আউটের জন্য আপনি স্থানীয় ব্যাংক সুবিধা কাজে লাগাতে পারেন। সেটা DBBL, ইসলামি ব্যাংক, ব্রাক ব্যাংকসহ যেকোন লোকাল ব্যাংক হতে পারে। প্রায় সকল অনলাইন প্লাটফর্ম “WIRE Transfer” এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার সুবিধা দিয়ে থাকে।
Payoneer Mastercard দিয়ে দেশের যেকোন এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা সম্ভব। এই কার্ডের সাথে একটি আমেরিকান ও একটি ইউরোপিয়ান ব্যাংক একাউন্ট দেয়া হয়। যেসকল মার্কেটপ্লেসে লোকাল ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফারের সুবিধা নেই; সেসব ক্ষেত্রে US Bank account ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রায় সকল অনলাইন প্লাটফর্মে “US Bank transfer” সুবিধা দেয়া হয়।
এছাড়া, ক্যাশ আউটের জন্য Paypal account ফ্রিল্যান্সারদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশে PayPal ব্যবস্থা নেই। এক্ষেত্রে PayPal এর বিকল্প হিসেবে আপনি Skrill অনলাইন ব্যাংক ব্যবহার করতে পারেন। এখানে ট্রান্সফারের সাথে সাথেই আপনার Skrill account এ টাকা পৌঁছে যাবে।
যদি আপনার ওয়েবসাইটটি সম্পূর্ণ নতুন হয়ে থাকে তবে আমার মতে Yllix, Sovrn, Evadab এবং Infolinks আপনার জন্য সহজ হবে। আর যদি ওয়েবসাইটিতে ট্রাফিক বেশি হয় তাহলে আপনি Adthrive ও AdClickMedia ট্রাই করে দেখতে পারেন। অ্যাডসেন্সের বিকল্প হিসেবে অন্যান্য প্লাটফর্মগুলো যতই সুবিধা দিক না কেন; গুগল অ্যাডসেন্সই সেরা। তাই অন্যান্য অ্যাডভারটাইজিং নেটওয়ার্কে অ্যাপ্লাইয়ের আগে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য চেষ্টা করা উচিত।