ভিডিও এডিটিং এর জন্য সেরা ৭টি অ্যাপস

কন্টেন্ট ক্রিয়েশনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এডিটিং। ভিডিও এডিটিংও কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে কন্টেন্টের গ্রহণযোগ্যতা। ভালো এডিটিং এর জন্য চাই ভালো মানের সফটওয়্যার।


তবে সবার ল্যাপটপ, কম্পিউটার নাও থাকতে পারে। বিশেষ করে যারা নতুন শুরু করেছেন বা শুরু করতে চাচ্ছেন।এছাড়াও যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে আছেন তাদের যখন-তখন ভিডিও এডিট করার দরকার হতে পারে। তখন ল্যাপটপ, কম্পিউটার না থাকলেও সমাধান মিলবে হাতের কাছে থাকা স্মার্টফোনটিতে।

বর্তমানে সবার হাতে হাতেই স্মার্টফোন আছে এবং প্রযুক্তির কল্যাণে স্মার্টফোনেই এখন ভিডিও এডিটিং অ্যাপসের সাহায্যে হাই-কোয়ালিটির ভিডিও এডিট করা সম্ভব।

তবে মজার বিষয় হচ্ছে প্লে স্টোর ও অ্যাপ স্টোরে অসংখ্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপস রয়েছে। এবং, প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন অ্যাপস যুক্ত করা হচ্ছে।

এতসব অ্যাপসের মাঝে মানসম্মত অ্যাপস খুঁজে বের করা একটু কঠিনই বটে। তাই সবার সুবিধার কথা বিবেচনা করে এই অসংখ্য ভিডিও এডিটিং অ্যাপসগুলো থেকে আমরা বাছাই করে নিয়ে এসেছি সেরা ৭টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপস।

এই অ্যাপসগুলো ব্যবহার করে যখন খুশি তখন হাই-কোয়ালিটির ভিডিও এডিট করে ফেলতে পারবেন।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

সেরা ৭টি ভিডিও এডিটিং অ্যাপস সম্পর্কে


১। এডোবি প্রিমিয়ার রাশ (Adobe Premiere Rush Video Editing App)

এডোবি প্রিমিয়ার রাশ অ্যাপটির ইন্টারফেস খুবই পরিচ্ছন্ন এবং এর এডিটিং ফিচারগুলোও খুব সিম্পল রাখা হয়েছে । ফলে খুব সহজেই চটজলদি ভিডিও এডিট করা সম্ভব এই অ্যাপটি দিয়ে।

অ্যাপটি লাইটওয়েট হওয়ায় স্টোরেজ নিয়ে প্যারা খেতে হয় না। ভিডিও এডিটিং এর অন্যতম একটি অংশ হলো অডিও সাউন্ড ঠিক রাখা, অ্যাপটিতে আপনি প্রতিটি ক্লিপের ভলিউম পরিবর্তন করতে পারবেন।

এছাড়াও বিভিন্ন অংশ সাইলেন্ট রাখা ও পছন্দ মতো মিউজিক যুক্ত করার অপশন তো আছেই। অ্যাপটির সাহায্যে একাধিক ক্লিপসহ ভিডিও এডিট করতে পারবেন।

ভিডিওতে ইচ্ছেমতো মিউজিক ও সাউন্ড এফেক্টস ব্যবহার করতে পারবেন। অ্যাপটিতে প্রিসেট এডিটিং অপশন থাকলেও আপনি চাইলে ম্যানুয়ালি বিভিন্ন ফুটেজের কালার এডিট করতে পারবেন।

অ্যাপটির ফ্রি ভারসনে সীমিত কিছু ফিচার ও ২ জিবি ক্লাউড স্টোরেজ পাবেন। তবে সব কন্টেন্ট ও ফিচার পেতে হলে সাবস্ক্রিপসন নিতে হবে। সাবস্ক্রিপসন নিলে ১০০ জিবি পর্যন্ত ক্লাউড সেবা পাবেন সাথে মোবাইল ও ডেস্কটপে আপনার প্রজেক্টগুলো সিঙ্ক করতে পারবেন । মাসিক সাবস্ক্রিপসনের জন্য ব্যয় করতে হবে ৯.৯৯ ডলার।

২। ফিল্মোরা গো (Filmora Go Video Editing App)

ভিডিও এডিটিং এর বেসিক থেকে শুরু করে এডভান্সড লেভেলের অসংখ্য টুলস রয়েছে এই অ্যাপটিতে। রয়েছে অসংখ্য ইফেক্টস যেখান থেকে আপনি প্রিসেট ইন্ট্রো, থিম,ট্রানজিশন ইত্যাদি এড করতে পারবেন।

এছাড়াও কী ফ্রেমিং, কালার কারেকশন, গ্রীন স্ক্রিন, অটো রিফ্রেইম, প্যান & জুম, অডিও ডাকিং,এআই প্রোট্রেইট ইত্যাদি জনপ্রিয় টুলস তো আছেই। অ্যাপটি থেকে সরাসরি ফেইসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইমেইল ইত্যাদি সোশাল সাইটে শেয়ার করার অপশন রয়েছে।

ভিডিওতে সিনেমেটিক লুক দেওয়ার জন্য এই অ্যাপটি এক কথায় অসাধারণ। অ্যাপটি ব্যবহার করার জন্য সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। তবে সাবস্ক্রিপশন নিলে এক মাস ফ্রি ট্রায়াল ও যেকোনো সময় সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল করার ব্যবস্থা রয়েছে।

৩। ভিএন (VN Video Editing App)

এই অ্যাপটিও খুবই লাইটওয়েট আর কম দামি স্মার্টফোনেও ভালো রান করে। অ্যাপটিতে আছে স্পিড র্যা ম্পিং এর সুবিধা যা অনেক জনপ্রিয় অ্যাপেও থাকে না।

এছাড়াও জুম এফএক্স, ইচ্ছেমতো ফন্টস ইমপোর্ট করা, ৬০ টির মতো ফিল্টারস ও বিভিন্ন ধরনের ট্রানজিশন, গ্রিনস্ক্রিন, কীফ্রেইম এনিমেশন, কালার কারেকশন, সাউন্ড চেঞ্জিং, মিউজিক এড ইত্যাদি অপশন তো আছেই।

অ্যাপটি নতুন এডিটরদের জন্য খুবই সহায়ক হবে এছাড়াও এক্সপার্টরাও স্বস্তি পাবেন। অ্যাপটি একদম ফ্রী সাথে ওয়াটারমার্কেরও ঝামেলা নেই। ভিডিও এডিট করার পর ইন্সট্যান্টলি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্লাটফর্ম ইউটিউব, টুইটার, ফেউসবুক ইত্যাদি’তে শেয়ার করতে পারবেন।

০৪। কাইনমাস্টার (Kinemaster Video Editing App)

যারা ভিডিও মেকিং ও এডিটিং এর সাথে যুক্ত আছেন তারা মোটামুটি সবাই কানমাস্টার নামটির সাথে পরিচিত। ভিডিও এডিটিং এর জন্য এই অ্যাপটি কোনো এক সময় ঢালাও ভাবে ব্যবহৃত হতো। এখনো হাজারটা প্রতিদ্বন্দ্বীর ভিড়ে এর জনপ্রিয়তা কোনো মাত্রায় কমে আসেনি।

অ্যাপটিতে এডিটিং এর বেসিক সব ফিচার যেমনঃ- ট্রিমিং, ক্রপিং, স্পিড কন্ট্রোল, ট্রানজিশন, এফেক্টস ইত্যাদি সম্পূর্ণ ফ্রিতে করা যায়।

প্রফেশনাল এডিটর যারা আছেন তাদের অনেক এডভান্সড টুলসের দরকার পরে। সেসব কিছুও কাইনমাস্টারে মজুদ আছে তবে তার জন্য সাবস্ক্রিপশন নিতে হয়। মাসিক ৫.০১ ডলার ব্যয় করে এডভান্সড লেভেলের স্ট্যান্ডার্ড সব টুলস আনলক করা যাবে।

০৫। ইনশট (Inshot Video Editing App)

ইনশট ব্যবহার করা সহজ হওয়ায় অ্যাপটিকে টিকটক ভিডিও, ইন্সটাগ্রাম রিলস ও ইউটিউব শর্টসের জন্য আদর্শ ধরা হয়। তবে ইউটিউব ও ফেইসবুক ভিডিও এডিটিং এর জন্যও অনেকে এটি ব্যবহার করে থাকেন।

ভিডিও এডিটিং এর পাশাপাশি ফটো এডিটিং এর জন্যও অ্যাপটি বেশ জনপ্রিয়। অ্যাপটি সব ধরনের স্মার্টফোনেই ভালো পারফর্ম করে থাকে, কাজেই কম দামি ফোন হলেও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।

অ্যাপটিতে, কালার কারেকশন, মাল্টি লেয়ার, ফিল্টার্স থেকে শুরু করে টেক্সট ও মিউজিক এড করা অর্থাৎ বেসিক লেভেলের সব কিছু রয়েছে। এছাড়াও স্পিড এডজাস্টমেন্ট করার অপশন রয়েছে, যা অন্যসব অ্যাপসে পাওয়া দুষ্কর পাশাপাশি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ার জন্য প্রি মেইড টেমপ্লেটসও রয়েছে।

অ্যাপটিতে ফ্রি ও পেইড ভারসন রয়েছে। অ্যাপটির ফ্রি ভারসনে লিমিটেড কিছু ফিচার রয়েছে ও কিছুক্ষন পর পর বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। অপরদিকে পেইড ভারসনে আনলিমিটেড সব ফিচার দিয়ে নির্বিঘ্নে এডিটিং করা যায়।তাই অ্যাপটিতে থেকে বেস্ট আউটপুট পেতে হলে সাবস্ক্রিপশন নেওয়ার বিকল্প নেই।

০৬। পাওয়ার ডিরেক্টর (Power Director Video Editing App)

হাতে পর্যাপ্ত সময় না থাকলেও পাওয়ার ডিরেক্টর অ্যাপটি দিয়ে দ্রুত এডিটিং এর কাজ সেরে ফেলা যায়। কারন অ্যাপটি খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি।

অ্যাপটিতে রয়েছে, অসংখ্য এফেক্টস ও এআই টুলস,স্ক্রিন রেকর্ডিং, মাল্টিক্যাম এডিটিং, মোশন ট্র্যািকিং,ট্রানজিশন ইত্যাদি। পাশাপাশি এডিটিং এর বেসিক সকল ফিচার মজুদ তো আছেই।

তাই যারা ভিডিও এডিটিং নতুন শুরু করেছেন তাদের জন্য এই অ্যাপটি হাইলি রিকমন্ডেড। এছাড়া এক্সপার্টসরাও সময় বাঁচানোর জন্য নির্দ্বিধায় অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারেন।

অ্যাপটির ফ্রি ও পেইড দুটি ভারসন রয়েছে। পেইড ভারসন টেস্ট করার জন্য ৩০ দিনের ট্রায়ালের ব্যবস্থা রয়েছে তবে ট্রায়াল চলাকালীন ভিডিওতে ফোর’কে সাপোর্ট করবে না ও ভিডিওতে ব্র্যাইন্ডের ওয়াটার মার্ক থাকবে। সাবস্ক্রিপশন নিলে এসব ঝামেলা নেই সাথে সকল ফিচারের এক্সেস থাকবে।

০৭। ভিডিওশো (VideoShow Video Editing App)

ভিডিওশো অ্যাপটির ইন্টারফেস ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়ায় খুব স্বল্প সময়েই যেকেউ এর এডিটিং প্রসেস বুঝে ফেলতে পারবে। অ্যাপটিতে ৫০ টির মতো ভিন্ন ভিন্ন থিম রয়েছে সাথে কম্প্রেসিং এর মাধ্যমে ভিডিওর সাইজ কমানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

এছাড়াও আনলিমিটেড ভিডিও ডিউরেশন, টেক্সট, এফেক্টস,মিউজিক, সাউন্ড এফেক্টস,লাইভ ডাবিং, ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লারিং অডিও স্পিড এডজাস্টমেন্ট, ভয়েস ইনহেন্সমেন্ট ইত্যাদি অসাধারণ সব সুবিধা রয়েছে।

অ্যাপটিতে বিভিন্ন ধরনের প্রিসেটস ও ট্রানজিশন রয়েছে। এসব এডভান্সড এডিটিং ফিচারের সাহায্যে খুব সহজেই প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও এডিট করা সম্ভব।

অ্যাপটির ফ্রি ভারসনে লিমিটেড কিছু ফিচার রয়েছে সাথে বিজ্ঞাপন ও ওয়াটারমার্কের ঝামেলা। তাই ঝামেলাহীনভাবে, আনলিমিটেড ফিচারের সাহায্যে প্রো লেভেলের ভিডিও এডিটি করতে চাইলে অ্যাপটির পেইড ভারসনে যাওয়াই শ্রেয়।

আরও পড়ুন-

 

Leave a Comment