একটি ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ তৈরি করার আগে প্রত্যেককেই ‘ওয়েব হোস্টিং’ শব্দটির সাথে পরিচিত হতে হয়। সবার জন্য এই পরিচয় পর্বটি সুখকর হয় না। আমি নিজেও একটা সময় ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে প্রচুর বিভ্রান্তিকর ধারণা পোষণ করতাম। এই লেখাটি পড়ে ফেলার পর ওয়েব হোস্টিং কি, ওয়েব হোস্টিং কেন গুরুত্বপূর্ণ, ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার সহ এটি সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার ধারণা স্পষ্ট হবে।
ওয়েব হোস্টিং কি (What is Web Hosting)?
মনে করুন, আপনি একটি বাড়ি তৈরী করতে চান। সেজন্য প্রথমেই আপনার ঠিক কিসের প্রয়োজন হবে? অবশ্যই একটি জমির! সেই জমিটির উপরেই গড়ে উঠবে আপনার শখের বাড়িটি।
একটি ওয়েবসাইটকে যদি কোনো বাড়ির সাথে তুলনা করা হয়, তবে ওয়েবসাইটটির ওয়েব হোস্টিং হবে সেই বাড়িটির জমি। একটি জমি যেমন সেটার উপর নির্মিত বাড়ির সমস্ত ওজন বহন করে, ঠিক তেমনই একটি ওয়েব হোস্টিং সার্ভার তার উপর নির্মিত ওয়েবসাইটে আপলোড করা সকল উপাদানের (যেমন ছবি, লেখা, কোড ইত্যাদী) ভার বহন এবং সংরক্ষণ করে।
অল্প কথায় বললে, ওয়েব হোস্টিং হচ্ছে এমন একটি জায়গা, যেখানে আপনার ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল জমা থাকবে।
ইন্টারনেটে প্রচুর ওয়েব হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা ফ্রিতে কিংবা টাকার বিনিময়ে হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকে। কোনো একটি ওয়েবসাইট যে প্রতিষ্ঠান থেকে হোস্টিং সেবা গ্রহণ করে, সেই প্রতিষ্ঠানকে ওই ওয়েবসাইটের হোস্ট বলা হয়।
If you are even in search of a good provider, take a look at these Siteground reviews and find out why they are great providers.
– Recommended by Swapnil Bangla .Com
আরও পড়ুন-
ওয়েব হোস্টিং ওয়েবসাইটের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
সহজ উত্তর– একটা বাড়ি তৈরী করার জন্য জমি যতটা গুরুত্বপূর্ণ!
ওয়েব হোস্টিং একটি ওয়েবসাইটের ফাইলসমূহ শুধু সংরক্ষণই করে না৷ বরং সেটা ভিজিটরের কম্পিউটারের স্ক্রিনে প্রদর্শনের জন্যেও কাজ করে।
যখন কোনো ভিজিটর একটি ওয়েবসাইটে ঢোকে, তখন ভিজিটরের ব্রাউজার ওয়েবসাইটটির হোস্টের কাছে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো ট্রান্সফার করে দেয়ার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন ওয়েবসাইটটির হোস্ট ব্রাউজারকে কাঙ্ক্ষিত সব উপাদান (যেমন ছবি, লেখা, কোড ইত্যাদী) ট্রান্সফার করে। ফলে ভিজিটর সেই ওয়েবসাইটটি তার কম্পিউটার স্ক্রিনে দেখতে পায়।
তাহলে অনুমান করতে পারছেন কি, আপনি এই ওয়েবসাইটে এই লিখাটি পড়তে আসার ঠিক আগ মুহুর্তে কত কি ঘটে গেছে?
আপনার ব্রাউজার এই ওয়েবসাইটের হোস্টের কাছে এই লিখাটি প্রদর্শন করার জন্য রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে হোস্ট আপনার ব্রাউজারে এই লিখাটিসহ এখানে থাকা সব ছবি ও ডিজাইন প্রদান করেছে। একারণেই আপনি এই লেখাটি পড়তে পারছেন। (আপনার ব্রাউজারকে মনে মনে একটা ধন্যবাদ দেবেন নাহ্ 😉?)
সার্ভার কি?
আগেই বলেছি, ওয়েব হোস্টিং হলো একটি ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল রাখার জায়গা। কিন্তু ভেবে দেখুন, এই ফাইলগুলো আসলে রাখা হচ্ছে কোথায়?
সহজ উত্তর– কোনো একটি কম্পিউটারে। কোন কম্পিউটারে? কোনো ওয়েবসাইটের মালিক যে হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে হোস্টিং কিনেছে, সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো একটা কম্পিউটারে।
সেই কম্পিউটারটি আপনার আমার কম্পিউটারের মতো হলেও সারা দিনরাত সেটা চালু রাখা হয় এবং সবসময়ই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে।
সেই কম্পিউটারের স্টোরেজেই কোনো একটি ওয়েবসাইটের সমস্ত ফাইল জমা রাখা হয়েছে। কোনো অবস্থায় যদি কম্পিউটারটি বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা ইন্টারনেট কানেকশন হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে ওই কম্পিউটারে যে ওয়েবসাইটের ফাইল সংরক্ষিত আছে, সেই ওয়েবসাইটটিও বন্ধ হয়ে যাবে৷
এই কম্পিউটারটিই হলো ঐ ওয়েবসাইটের সার্ভার। হার্ডডিস্ক, র্যাম, প্রসেসর এবং ইন্টারনেট কানেকশন মিলে তৈরী হয় একটি সার্ভার। সার্ভারের ভালো মন্দ নির্ভর করে কম্পিউটারের কনফিগারেশনের উপর।
ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার ও কি কি?
সুযোগ সুবিধার উপর নির্ভর করে হোস্টিংকে চারভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো–
- শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার (Shared Hosting Server)
- ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার (VPS Hosting Server)
- ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভার (Dedicated Hosting Server)
- ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভার (WordPress Managed Hosting Server)
শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার
যে হোস্টিং সার্ভারে একাধিক ওয়েবসাইট জায়গা ভাগাভাগি করে নেয়ার মাধ্যমে একসাথে ডাটা সংরক্ষণ করে, সেই হোস্টিং সার্ভারকে বলা হয় শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার।
অর্থাৎ, মনে করুন, কোনো একটি হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ১০০ জিবি হার্ডডিস্কের একটা কম্পিউটার আছে। এখন, প্রতিষ্ঠানটি সেই কম্পিউটারে ৫০ টি ওয়েবসাইটের প্রতিটিকে ২ জিবি করে জায়গা দিল। তাহলে সেই কম্পিউটারটির সার্ভার শেয়ার্ড হোস্টিং এ পরিণত হবে। কারণ, সেখানে ৫০ টি ওয়েবসাইট জায়গা ভাগাভাগি করার মাধ্যমে নিজেদের ডাটা সংরক্ষণ করছে।
শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারের সুবিধা-অসুবিধা
শেয়ার্ড হোস্টিং অন্য যেকোনো হোস্টিং অপেক্ষা বেশি জনপ্রিয়। স্বল্প মূল্যই এই জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ওয়েবসাইট পাবলিশারই শেয়ার্ড হোস্টিং ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন হোস্টিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানী নানারকম সুযোগ সুবিধার মোড়কে মুড়িয়ে শেয়ার্ড হোস্টিং এর প্যাকেজ বিক্রির চেষ্টা করে।
বাংলাদেশী টাকায় মাসিক হিসেবে সর্বনিম্ন মাত্র ৫০ থেকে ১৫০ এবং বাৎসরিক হিসেবে সর্বনিম্ন ৬৫০ থেকে ২০০০ টাকায় ভালো মানের শেয়ার্ড হোস্টিং পাওয়া যায়। এছাড়াও বেশিরভাগ কোম্পানী শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারের ক্রেতা এবং ভিপিএসসহ অন্য উন্নত হোস্টিং সার্ভারের ক্রেতাদের সমান সাপোর্ট দেয়।
কিন্তু সুবিধার পাশাপাশি এর অসুবিধাও আছে। শেয়ার্ড হোস্টিং এ বিভিন্ন লিমিটেশন থাকে। এছাড়া, একই সার্ভার ভাগাভাগি করে ব্যবহারের কারণে ওয়েবসাইটগুলো কিছুটা ধীরগতি সম্পন্ন হয়। তাছাড়াও, কোনো একটি ওয়েবসাইটে যদি অধিক সংখ্যক ভিজিটর আসে, তবে ঐ ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সার্ভারে থাকা অন্য ওয়েবসাইটগুলোর উপরেও চাপ পড়তে শুরু করে। ফলে সার্ভারের একটা ওয়েবসাইটের জন্য অন্য ওয়েবসাইটগুলো ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে যেতে পারে।
শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার তাদের জন্যই সঠিক পছন্দ, যাদের ওয়েবসাইটটি ব্লগ জাতীয়, নতুন বা ভিজিটর কম। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা দৈনিক ১৫০০০-২০০০০ এর বেশি ভিজিটর আসা ওয়েবসাইটকে শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারে না রেখে ভিপিএসে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার
ভিপিএস হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ভিপিএস হোস্টিং এর বিশেষত্ব হলো, এই হোস্টিং সার্ভারকে একাধিক ব্যবহারকারীর কাছে ভাগ করে দেয়া হয়না। এখানে থাকা প্রত্যেকটি সার্ভার মাত্র একজন ব্যবহারকারীর দখলে থাকে। অন্য কেউ এই সার্ভারের নাগাল পায় না।
বিভিন্ন হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের তুলনামূলক হাই কনফিগারেশনওয়ালা কম্পিউটারগুলোতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় অনেকগুলো সার্ভার তৈরী করে৷ তারপর একেকটা সার্ভার একেকজন ব্যবহারকারীর কাছে ভাড়া দেয়।
ভিপিএস ওয়েব হোস্টিং (VPS Hosting) সার্ভারের সুবিধা-অসুবিধা
VPS Hosting শেয়ার্ড হোস্টিং এর চেয়ে বেশি কর্মক্ষমতা সম্পন্ন। একটা সার্ভারে শুধুমাত্র একজনের ওয়েবসাইট স্থাপিত হওয়ায়, সার্ভারের সকল ক্ষমতা ব্যবহারকারীর হাতে থাকে। সার্ভার ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটারে স্থাপিত হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটের গতি বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাছাড়াও, নিরাপত্তার দিক থেকে ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভারের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে।
ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারের অসুবিধা একটাই। সেটা হলো এর মূল্য৷ এর সর্বনিম্ন মূল্য বাংলাদেশী টাকায় প্রতি মাসে প্রায় ৮০০ থেকে ১৫০০ হয়ে থাকে, যা বেশ খানিকটা ব্যয়বহুল। তবে ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন শুরু হলে এটাকে খুব একটা বড় পরিমাণ বলে মনে হবে না৷
শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার এবং ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারের মধ্যে পার্থক্য
শেয়ার্ড ওয়েব হোস্টিং সার্ভারে একটা কম্পিউটারের একটা সার্ভারই একাধিক ব্যবহারকারীর কাছে ভাড়া দেয়া হয়। অথচ ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারে তা নয়। ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারে কম্পিউটার থাকে একটাই, কিন্তু সার্ভার থাকে অনেকগুলো। প্রত্যেকটা সার্ভার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির কাছে ভাড়া দেয়া হয়।
ব্যাপারটা অনেকটা পাঁচতারকা হোটেল বুকিং এর মতো। সেখানে আপনাকে দরজা জানলাবিশিষ্ট সুন্দর কক্ষ ভাড়া দেয়া হবে, যেখানে আপনি যা খুশি তাই করতে পারবেন। এটা ভিপিএস ওয়েব হোস্টিং সার্ভারের উদাহরণ।
অন্যদিকে মনে করুন আপনি নিম্ন মানের একটা হোটেলে উঠলেন। সেখানে সবই ভালো, কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন কক্ষের সুবিধা নেই, সবাইকে একটা কক্ষেই জায়গা ভাগ করে থাকতে হয়। তাহলে এই হোটেলটা হবে শেয়ার্ড ওয়েব হোস্টিং সার্ভারের মতো।
আশা করি শেয়ার্ড হোস্টিং সার্ভার এবং ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারের মধ্যকার পার্থক্যটা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।
ডেডিকেটেড ওয়েব হোস্টিং সার্ভার
ডেডিকেটেড ওয়েব হোস্টিং সার্ভার হলো এমন একটি হোস্টিং সার্ভার, যেখানে একটি কম্পিউটারে শুধুমাত্র একটাই সার্ভার থাকে এবং সেটার ব্যবহারকারীও থাকে একজন।
আপনি যদি কোনো হোটেলের নির্দিষ্ট কোনো কক্ষ ভাড়া না নিয়ে পুরো হোটেলটাই ভাড়া নিয়ে নেন, এবং হোটেলের ভেতরকার সব দেয়াল ভেঙ্গেচুড়ে একটা বিশাল ঘর তৈরী করেন, তবে সেটাই হবে ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভারের যথার্থ উদাহরণ।
ডেডিকেটেড হোস্টিং আবার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। সেগুলো হলোঃ
- ম্যানেজড হোস্টিং (Managed Hosting) : ম্যানেজড ওয়েব হোস্টিং ব্যবহার করলে হোস্টিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানিই সার্ভার মেইনটেনেন্স, কনফিগারেশন, সার্ভার স্টোপ, সফটওয়্যার ইন্সটল ইত্যাদির মতো যাবতীয় সব কাজগুলো করে দিবে। আপনার তেমন কিছুই করতে হবেনা। এজন্য ম্যানেজড ডেডিকেটেড হোস্টিং দাম তুলনামূলকভাবে বেশি।
- আনম্যানেজড হোস্টিং (Unmanaged Hosting) : আনম্যানেজড হোস্টিং সার্ভিসে মেইনটেনেন্স, কনফিগারেশন, সার্ভার সেটাপ, সফটওয়্যার ইন্সটল ইত্যাদির মতো কাজগুলো নিজেকেই করতে হবে।
ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভারের সুবিধা-অসুবিধা
Dedicated Hosting সার্ভারের মতো স্বাধীনতা অন্য কোনো হোস্টিং সার্ভারে খুঁজে পাবেন না৷ খুঁজতে যাওয়াটাও একধরনের বোকামী এবং এক্ষেত্রে পুরো সার্ভারের সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভারে নির্মিত ওয়েবসাইট হয় সুপার ফাস্ট। আর নিরাপত্তাও অনেক অনেক বেশি।
ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভারের মূল্য ভিপিএস হোস্টিং সার্ভারের তুলনায় অনেক বেশি। এর মূল্য বাংলাদেশী টাকায় মাসিক হিসেবে সর্বনিম্ন ৮০০০-১০০০০ টাকা হয়ে থাকে৷ সার্ভারের কম্পিউটার কনফিগারেশনের উপর এর দাম নির্ভর করে।
Dedicated Hosting সার্ভার মূলত বড় বড় এবং বিপুল ভিজিটরওয়ালা ওয়েবসাইটগুলোর জন্য। বড় বড় কোম্পানি তাদের ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা এবং সার্ভার ডাউনের ভয়ে ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভার ব্যবহার করে থাকে।
ক্লাউড ওয়েব হোস্টিং সার্ভার
ক্লাউড ওয়েব হোস্টিং অন্যান্য হোস্টিংগুলোর তুলনায় ভিন্ন ধাচের। অন্যসব হোস্টিং এর মতো ক্লাউড ওয়েব হোস্টিং এর সার্ভার কোনো একটি নির্দিষ্ট কম্পিউটারে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর ব্যপ্তি বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।
Cloud Web Hosting এর ক্ষেত্রে কোনো একটি ওয়েবসাইটের ডাটা শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার সার্ভারে না রেখে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন সার্ভারে ছড়িয়ে দেয়া থাকে। এ কারণে যেকোনো একটি সার্ভার ডাউন হয়ে গেলেও ব্রাউজারকে অন্য কোনো সার্ভার ঠিকই প্রয়োজনীয় ডাটা ট্রান্সফার করে। ফলে ভিজিটর নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট দেখতে সক্ষম হয়।
ক্লাউড ওয়েব হোস্টিং দিয়ে তৈরী করা প্রতিটি ওয়েবসাইট অন্য হোস্টিংগুলোর তুলনায় প্রচন্ড গতিসম্পন্ন হয়ে থাকে। কারণ, অন্য সাধারণ ওয়েব হোস্টিংগুলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের নির্ধারিত কম্পিউটারে রাখা হয়। দূরের কোনো জায়গা থেকে যদি কেউ ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে আসে, তবে সার্ভার আর ভিজিটরের ব্রাউজারের মধ্যে বোঝাপড়া হতে একটু সময় লাগে৷
কিন্তু ক্লাউড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে তা একদমই হয় না৷ কারণ আগেই বলেছি, ক্লাউড হোস্টিং এর ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটের ডাটা নির্দিষ্ট কোনো সার্ভারে বন্দী থাকে না। বরং সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সার্ভারে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এজন্য, যখন কোনো ভিজিটর ওয়েবসাইটে ঢোকে, ভিজিটরের ব্রাউজার সবচেয়ে নিকটবর্তী সার্ভারে ওয়েবসাইটের ডাটা চেয়ে রিকোয়েস্ট পাঠায়।
আরো সহজভাবে, মনে করুন আপনি আমার আমার ওয়েবসাইটে সুইজারল্যান্ড থেকে ঢুকতে চাইলেন। আমি যদি ক্লাউড হোস্টিং ব্যতীত অন্য কোনো হোস্টিং ব্যবহার করে থাকি এবং সেটার সার্ভার যদি বাংলাদেশে হয়ে থাকে, তবে দূরত্বের কারণে বেশ খানিকটা সময় লেগে যাবে ওয়েবসাইটে ঢুকতে।
কিন্তু আমি যদি ক্লাউড হোস্টিং ব্যবহার করতাম, তবে এতো সময় লাগতো না। কারণ আগে থেকেই সুইজারল্যান্ডের কোনো একটা সার্ভারে আমার হোস্টিং কোম্পানি ওয়েবসাইটের ডাটা এন্ট্রি করে রাখতো।
এসবের বাইরেও আরো কয়েক প্রকার হোস্টিং রয়েছে। নিচে সেগুলোর বর্ণনা যুক্ত করা হলো।
ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভার
ওয়ার্ডপ্রেস (.org) বর্তমানে ইন্টারেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট তৈরীর কারখানায় পরিণত হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত পুরো ইন্টারনেটের প্রায় ৩৭% ওয়েবসাইটই তৈরী হয়েছে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করে।
যেহেতু ওয়ার্ডপ্রেসের চাহিদা এতো বেশি, তাই হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুমাত্র ওয়ার্ডপ্রেসের ওয়েবসাইট তৈরীর জন্যই বিশেষ এক প্রকার হোস্টিং সার্ভার তৈরী করেছে, যার নাম ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং সার্ভার।
আর এইসব হোস্টিং সার্ভারের যাবতীর কাজ হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দ্বারা ম্যানেজ হয় বলে এটার আরেক নাম ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভার।
ওয়ার্ডপ্রেস ম্যানেজড হোস্টিং সার্ভারে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যতীত অন্য কোনো প্লাটফর্ম ইন্সটল করা যায় না। এই সার্ভার ব্যবহার করে সুপার ফার্স্ট ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগ তৈরী করা সম্ভব।
রিসেলার হোস্টিং সার্ভার
রিসেলার শব্দ দেখে নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন, এখানে হোস্টিং সার্ভার পুনরায় সেল বা বিক্রি করা হয়।
সহজ কথায়, বিভিন্ন ব্যক্তি বা ছোট প্রতিষ্ঠান বড় কোনো হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হতে ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভার কিনে নিয়ে সেটার ১ জিবি বা ২ জিবি অংশ নিজেদের ক্লায়েন্টদের কাছে ভাড়া দেয়। তারা এটা করে সম্পূর্ণ ব্যবসার খাতিরে। ব্যাপারটা অনেকটা খুচরা বিক্রির মতো।
সক্ষমতা থাকলে রিসেলার কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে হোস্টিং না নিয়ে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান থেকেই হোস্টিং কেনা ভালো এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
ফ্রি হোস্টিং
নাম শুনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, এসব হোস্টিং প্রদান করা হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এরকম হোস্টিং পেতে কোনো টাকা খরচ করতে হয় না। বিভিন্ন হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের কোম্পানির নাম প্রচার প্রসারের জন্য এধরণের হোস্টিং প্রদান করে।
ফ্রি হোস্টিং সম্পূর্ণ বিনামূল্যের হওয়ার কারণে এর রয়েছে প্রচুর সীমাবদ্ধতা এবং নিরাপত্তাহীনতা ভয়। যেমনঃ
- ফ্রি হোস্টিং এ ওয়েবসাইট তৈরী করলে, তাতে ঠিকমতো এসইও করা যায় না।
- ওয়েবসাইট কখন হারিয়ে যাবে, তার কোনো ঠিক নাই।
- ওয়েবসাইটে বেশি ভিজিটরের সমাগম হলেই, সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে।
- দিনের বেশিরভাগ সময়ই ওয়েবসাইটটি থাকবে স্লিপিং মুডে।
- যে কোনো সময় হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান আপনার ওয়েবসাইটকে সাসপেন্ড করে দিতে পারে।
- ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ নিতে সমস্যা হবে।
- ওয়েবসাইট হবে সুপার স্লো।
- ওয়েবসাইটটি মনের মতো করে অপটিমাইজ করতে পারবেন না।
সিরিয়াস টাইপ কিংবা টাকা উপার্জনের জন্য ওয়েবসাইট তৈরীর ক্ষেত্রে কখনোই ফ্রি হোস্টিং ব্যবহার করবেন না। তবে উদ্দেশ্য যদি শুধুই শেখা হয়, তবে ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
হোস্টিং কেনার আগে
ভাই, সত্য কথা হলো, প্রথমবার হোস্টিং কেনার আগে সবাই খুব দুঃশ্চিতার মধ্যে থাকে। আপনিও হয়তো দুঃশ্চিতার মধ্যে আছেন। বেশিরভাগ মানুষ ভাবে, কত স্টোরেজের হোস্টিং নিব!
আপনার ওয়েবসাইটটা যদি ব্লগিং বিষয়ক হয়ে থাকে এবং লেখালেখিই যদি আপনার মূল লক্ষ্য হয়, তবে ১ জিবির হোস্টিংই আপনার জন্য যথেষ্ট। এর বেশি নেওয়া মানেই অপচয়।
ব্যান্ডউইথ বেশি হওয়া প্রয়োজন। নয়তো ট্রাফিক বেশি হয়ে গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যান্ডউইথওয়ালা হোস্টিংসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আর নতুন কিংবা মিডিয়াম ভিজিটরওয়ালা ওয়েবসাইটের জন্য শেয়ার্ড হোস্টিংই বেস্ট। ভিজিটর দৈনিক অন্তত ৫০০০ এর উপর গেলে তবেই ভিপিএস হোস্টিং এ যাওয়া উচিৎ।
আমি XeonBD থেকে শেয়ার্ড হোস্টিং নিয়েছি। কারণ এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান। এদের হোস্টিং দামে সস্তা, জিনিস ভালো।
বাংলাদেশের হোস্টিং সেবা প্রদানকারী ওয়েবসাইটগুলোর মাঝে র্যাংকিং এ XeonBD শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সবসময়ই ছিল নাম্বার ওয়ানে। আর এদের সার্ভিসও ভালো। আমি এ পর্যন্ত যতবার সমস্যায় পড়েছি, স্বল্প সময়ের ভেতরই তাদের সাপোর্ট পেয়েছি। এজন্য আমি সবসময়ই XeonBD কেই সবার কাছে রিকমেন্ড করে থাকি।
হোস্টিং কেনার বিকল্প
অনেকে বলতে পারেন, ভাই, হোস্টিং কেনার কোনো বিকল্প আছে কি? টাকা ইনভেস্ট করে হোস্টিং কিনতে চাচ্ছি না…
সেক্ষেত্রে আমি বলব, অবশ্যই! বিকল্প আছে বৈ কি! কিন্তু সেজন্য একটা কম্পিউটারের দরকার। কম্পিউটার না থাকলে কিনে ফেলুন। তারপর সঠিক পদ্ধতি জেনে আপনার কম্পিউটারটিকেই একটা হোস্ট বানিয়ে ফেলুন না! কে বারণ করেছে? তবে সেক্ষেত্রে কিন্তু সারা দিনরাত চব্বিশ ঘন্টা আপনার কম্পিউটার খোলা রাখতে হবে এবং পাশাপাশি থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ। কম্পিউটার বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা ইন্টারনেট সংযোগ চলে গেলে সঙ্গে সঙ্গেই আপনার ওয়েবসাইটও বন্ধ হয়ে যাবে।
কি দরকার এতো ঝামেলা করার? এর ফলে ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ খরচা যা আসবে, তারচেয়ে হোস্টিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঢের কমই চাইবে বলে আমার ধারণা।
শেষকথা
নতুন অবস্থায় সবার মনেই ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে বিভ্রান্তি থাকে। সেই বিভ্রান্তি দূর করার প্রয়াসেই এই আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে। আশা করি আপনার মনের সংশয় দূর করতে পেরেছি। যদি এরপরেও ওয়েব হোস্টিং এবং ওয়েব হোস্টিং কত প্রকার সে সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন মনে জেগে থাকে, অবশ্যই কমেন্ট সেকশনে প্রশ্ন করবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ্য থাকবেন।
আরেকটা কথা! এই বিরস লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করেছিলাম, রস যোগ করার। কিন্তু কি করব বলুন, টপিকটাই তো রসকষহীন…🥴
প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু-