পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পূর্ব শর্ত হলো ভালো ছাত্র হওয়া। খারাপ ছাত্ররা কিন্তু কখনোই পরীক্ষায় ভালো করে না। তাই পরীক্ষায় ভালো করতে হলে, আগে ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।
ভালো ছাত্রের কথা চিন্তা করলে সবার আগে আমাদের মাথায় আসে এমন এক শ্রেণীর মানুষের কথা, যাদের সম্পর্কে বলা হয়- “উনারা দিন রাত ২৪ ঘন্টা পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকেন”। বিষয়টি কিন্তু মোটেও তেমন না।
চিন্তা করে দেখুন তো, একজন সুস্থ মানুষ দৈনিক ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমায়। গোসল, খাওয়া, বা ধর্মীয় কাজে ২ থেকে ৩ ঘন্টা চলে যায়। আবার বর্তমান জেনারেশন তো অবশ্যই সোশাল সাইট গুলোতে ঢোকে।
একজন সময় সচেতন ছাত্রকেও ঢুকতে হয়, তা না হলে কখন কি আপডেট হচ্ছে, সেটা জানা থেকে সে বঞ্চিত হয়। আবার তার ফ্যামিলিকে সময় দিতে লাগে। কারো কারো হয়তোবা দুপুর বা বিকেলে ২/১ ঘন্টা ঘুমোনোর অভ্যাস আছে। অনেকে ২/১ ঘন্টা খেলাধুলা বা ঘুরাঘুরি নিয়ে মেতে থাকে।
এমন টাই হয়ে থাকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে। তো, সেখানে ২৪ ঘন্টা পড়ার কথা যে বলি আমরা, সেটা কিন্তু নিতান্তই হাস্যকর। যারা ভালো ছাত্র তারাও কিন্তু উক্ত বিষয়গুলো করে, কিন্তু লিমিট অনুযায়ী!
ভালো ছাত্র বা ছাত্রী হওয়া যতোটা কঠিন বলে মনে হয়, আসলে কিন্তু ততোটা না! এর জন্য চাই ইচ্ছা ও শক্তি আর সঠিক দিক নির্দেশনা। তাহলে চলুন জেনে নেই-
ভালো ছাত্র-ছাত্রী হওয়ার সেরা ৫ টি উপায়
১| মনোযোগী হওয়া
যেকোনো কিছু করার আগে সবার আগে মনটাকে স্থির করে নিতে হয়। মনোযোগী হতে হয়। এবং মনোযোগ বাড়ানোর বিষয়গুলোর উপর বিশেষ নিজর দিতে হয়। যখন যে কাজ করছেন তখন শুধু সেটাই করবেন, অন্য কিছু করতে গেলে শেষে গিয়ে কোনোটাই ঠিকমতো হবে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- যখন আমরা খাবার খাই, অধিকাংশ মানুষই একহাতে মোবাইল, অন্য হাতে খাবার খেতে ব্যস্ত হয়ে পরি! যার ফলস্বরূপ খাবারটা উপভোগ করা হয় না। সাথে মোবাইলে যে বিষয়টা নিয়ে মগ্ন ছিলাম সেটাও ভালোভাবে করা হয় না!
ছাত্রবস্থায় যদি মনোযোগী হয়ে ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারেন তবেই না ভবিষ্যতে সাফল্যের কিরণ দেখতে পারবেন! আর সে জন্যই কিছু ছোট ছোট টিপস শেয়ার করছি, যেগুলো অনুসরণ করে চললে মনোযোগ অটুট থাকবে।
চলুন জেনে নেই টিপসগুলো-
১। দিনের শুরুতেই কাজগুলো লিখে রাখাঃ কোনো কিছু যদি লিখে রাখা হয়, তখন সেটা আমাদের রিমাইন্ডারের কাজ করে। লিস্ট দেখলে বুঝে যান, এটার পর ওটা, ওটার পর সেটা। বাড়তি যে সময় নষ্ট হয়, সেটা আর হয় না। কারন আপনি জানেন কোনটার পর কোনটা করতে হবে।
২। ডিজিটাল ডিভাইস দূরে রাখাঃ বর্তমান সময়ের ছেলেমেয়েরা সবচেয়ে বেশি আশক্ত ফেইসবুক, ইউটিউব ও গেইমে! এবং আরো সোস্যাল সাইটে। পড়ার সময় হুট করেই একটা নোটিফিকেশন পড়ার বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে। একটু পাঁচ মিনিটের জন্য চ্যাক করতে গিয়ে ২/৩ ঘন্টা অনায়াসে পার হয়ে যায়। তাই যখন ভাবছেন পড়বেন, তার মানে শুধু পড়ুন। অন্য কিছু করা থেকে বিরত থাকুন ও পড়ার সামগ্রী রাখুন শুধু। বাকি সব ডিজিটাল ডিভাইস সরিয়ে ফেলুন আপনার কাছ থেকে। অথবা সাইলেন্ট করে রাখুন।
৩। পড়ার মাঝে বিরতি নেওয়াঃ কোনো কাজই আমরা একটানা করতে পারি না। একটানা কাজ করতে গেলে অনেক বেশি প্রেশার পরে। যার ফলস্বরূপ কাজটাও ঠিকভাবে হয় না। তাই পড়ার সময় অবশ্যই মাঝে মাঝে বিরতি নিতে হবে। আধঘন্টা পর পর ৫ মিনিট বিরতি নেওয়া যেতে পারে। ফলে ব্রেন সতেজ হবে এবং নতুন উদ্যোমে পড়ার শক্তি পাওয়া যাবে।
৪। পুরষ্কৃত করাঃ কোনো একটা কাজ শেষ করার পর আমাদের কেউ কিছু দিলে কতো আনন্দ লাগে! তাই না? হ্যাঁ, এটা নিজের সাথে করতে হবে। কোনো একটা চ্যাপ্টার ঠিক করো বা কয়েকটা পেজ ঠিক করো। এগুলো শেষ হলে তোমার পছন্দের চকোলেট, আইসক্রিম, বা অন্য কিছু নিজেকে নিজে ট্রিট দিবে। যখন সেটি সত্যি শেষ করে ফেলবে, তখন ওই জিনিসটা ট্রিট দাও নিজেকে। দেখবে অন্যরকম প্রশান্তি কাজ করবে, এবং কাজ করার আগ্রহ বাড়বে।
২. আত্মবিশ্বাসী হওয়া
সফল হওয়ার জন্য সবার আগে যেটা দরকার, সেটা হলো আত্মবিশ্বাসী হওয়া। আত্মবিশ্বাস মানে নিজের প্রতি বিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস নিজেকে তৈরি করতে হয়। অন্য কেউ তোমাকে মোটিভেশনের শরবত গুলিয়ে খাইয়ে দিলেও কিছু করতে পারবে না। যদি তোমার নিজের উপর বিশ্বাস না থাকে, আস্থা না থাকে!
আত্নবিশ্বাসী হবার উপায়
১। অন্যের কথায় কান দেওয়া যাবে নাঃ মানুষের কাজই হচ্ছে বিদ্রুপ করা। পরিহাস করা এবং মানুষকে উপরে উঠতে না দেওয়া। আমরাও এসব পিছনের মানুষের কথা শুনে দমে যাই। আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। অন্যের কথায় কান না দিয়ে ততক্ষণ পর্যন্ত পরিশ্রম করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত সাফল্য না মেলে।
২। সবলতা ও দুর্বলতার জায়গা জানুনঃ কোনো কিছু করার আগে, আপনাকে আগে চিন্তা করতে হবে আপনার দুর্বলতা কোন জায়গায় এবং কতোটুক পরিশ্রম করলে এই দুর্বলতা কাটানো যাবে। সবলতার দিকটা জানুন। যাতে করে, আপনার দৃড়তার ক্ষেত্রটির কথা মনে করে আলাদা শক্তি পান।
৩। ইতিবাচক মানুষদের সাথে চলুনঃ কথায় আছে- সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। আপনি যেমন মানুষদের সাথে চলবেন, তাদের ভালো ও মন্দ দিকগুলো একটু একটু করে আপনাকে প্রভাবিত করবে এবং কোন একসময় আপনিও তাদের মতো হয়ে যাবেন।
খারাপ মানুষের সাথে চললে খারাপ দিকগুলোই শিখবেন এবং নেতিবাচক চিন্তায় মগ্ন থাকবেন। কোনোভাবেই আত্মবিশ্বাসী হতে পারবেন না। তাই সফলতা পেতে চাইলে নেতিবাচক মানুষদের পরিহার করুন।
৩. লক্ষ্য নির্ধারণঃ
আমরা অনেকেই স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে গুলিয়ে ফেলি। এই দুইটি কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। স্বপ্ন হলো কোনো কাঙ্খিত স্থানে নিজেকে কল্পনা করা। আর লক্ষ্য হলো- সিদ্ধান্ত গ্রহন। কোনো কিছু আপনাকে করতেই হবে। এবং সেটি কখন করবেন, কবে করবেন, কিভাবে করবেন, যখন সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন তখন ওই কাজটি আর স্বপ্ন থাকবে না, কাজটি হবে লক্ষ্য। লক্ষ্য থাকা চাই বড়। ছোট স্বপ্ন বা লক্ষ্য কোনোটিই আপনাকে উৎসাহ দিবে না।
বাস্তবতার শুরুটা কিন্তু চিন্তা এবং পরিকল্পনা থেকেই। আপনি যে বিষয় পছন্দ করেন, যে বিষয় ভালো লাগে, সে বিষয়ে স্বপ্ন দেখুন এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলুন। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে শুধু স্বপ্ন দেখে গেলে, সেটা স্বপ্নই রয়ে যাবে।
তাই স্বপ্ন পূরণ এর জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। ৩/৪ বছর পর নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান, এবং তার জন্য সঠিক লক্ষ্য এবং উদ্যোম থাকা চাই।
৪. সময়ের সঠিক ব্যবহার করাঃ
সময়ের কাজ সময় মতো না করলে, পরবর্তীতে সেটা বৃহৎ আকার ধারন করে। এবং সারাদিন বেখায়ালি হয়ে সময় নষ্ট করার পর যখন আমরা দিন শেষে দেখি- কিছুই শেষ হয় নি, তখন পাহাড় সমান হতাশা কাজ করে আমাদের মধ্যে। কিছু করিনি,করিনি করে, হতাশায় হতাশায় আরো করা হয় না।
অতীতের দিকে তাকালে হতাশ হবেন। ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকালে চিন্তিত হবেন। কিন্তু, যদি বর্তমানের দিকে তাকিয়ে ওই মূহুর্ত থেকে কাজে লেগে পরেন তাহলে এটাই হবে আপনার ভবিষ্যৎ! সময়ের সঠিক ব্যবহারের জন্য নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারেন-
★ পরিকল্পনা প্রনয়ণ
যেকোনো কিছু করার আগে, সবার আগে দরকার সঠিক পরিকল্পনা প্রনয়ন। আর সে পরিকল্পনা যদি লিখে রাখা হয় তাহলে কিন্তু সফল হওয়ার ধাপে এগিয়ে থাকে! এর জন্য আপনাকে সমস্ত পরিকল্পনা লিখে রাখতে হবে। পরিকল্পনা করার ফলে, সব কিছু সাজানো থাকবে। কোনটা আগে করবেন, কোনটা পরে করবেন, এসব চিন্তায় চিন্তিত থাকতে হবে না।
বিখ্যাত হেনরি ফোর্ডের একটি উক্তি না বললেই নয়, তিনি বলেছিলেন- বড় বড় লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হয় ছোট ছোট অংশে ভাগ করে। কোনো কাজ করার আগে নিজেকে ৩ টি প্রশ্ন করুন –
১। কি করবেন?
২। কেনো করবেন?
৩। কবে করবেন?
★★ গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের লিস্ট তৈরি করুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সর্বপ্রথম রাখুন- যেটা অবশ্যই করতে হবে। দ্বিতীয় সারিতে রাখবেন- যেগুলো করা দরকার। তৃতীয় সারিতে রাখবেন- যেগুলো করতে হবে বা করা যায়। এভাবে দরকারি কাজগুলো আগে সাজিয়ে এবং কম দরকারি কাজগুলো পরে রেখে টু ডু লিস্ট বানালে সময়ের পাই টু পাই ব্যবহার হবে।
৫. হাতের লেখা সুস্পষ্ট ও দ্রুত করা
হাতের লেখা যদি স্পষ্ট না হয় তবে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্র সম্পর্কে টিচারদের মনে নেতিবাচক চিন্তা এসে যায়। ভালো ফলাফল করার পূর্ব শর্ত হলো হাতের লেখা স্পষ্ট করা। যদি হাতের লেখা খারাপ থাকে? যদি অনেক বেশি ঢিলে হয়ে থাকে? তো আপনার জন্য রয়েছে নিম্নোক্ত টিপ্স-
★ আপনার আইডল কে? সেটা নির্বাচন করুন। অর্থাৎ আপনি কার মতো হাতের লেখা করতে চান তারটা দেখুন। সে কিভাবে অক্ষর লিখছে? কতটুকু ব্যবধান রাখছে? এই বিশেষ নজরটা দিন। এক কথায় তার লেখা কপি করুন।
★★ প্রতিদিন কমপক্ষে ২ পৃষ্ঠা লিখুন। এবং স্টপ ওয়াচ ব্যাবহার করে লিখুন। অতি দ্রুত অক্ষরগুলি আলাদা আলাদা লিখে প্রাকটিস করুন।
উপরে বর্নিত প্রত্যেকটি বিষয় মেনে চললে ভালো অথবা সেরা ছাত্র-ছাত্রী হওয়া কোনো ব্যাপারই না। শুধু দরকার ইচ্ছাশক্তির।
মনে রাখবেন- ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। অন্যরা পারলে আপনিও পারবেন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-