অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে অনেকেই পণ্য প্রমোট এর বিষয়টি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে থাকেন। কি ধরণের পণ্য প্রমোট করবেন, কিভাবে করবেন, সেটি স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারেন না। মার্কেটিং বা বিক্রী করা -এই কাজটি যারা আগে কোনদিন করেননি, তাদের অনেকে আড়ষ্ঠতায়ও ভুগে থাকেন। আমাদের দেশে পেশা, আয়-রোজগাড়, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান বিষয়ে সাধারণ সর্বাঙ্গীণ পশ্চাৎমুখীতা, উদ্ভট ধ্যানধারণা এই জন্য দায়ী।
আজকের লেখায় বিষয়গুলোর কিছুটা সুরাহা করার চেষ্টা করব। নীচে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর পণ্য (Affiliate Marketing Product) কিভাবে প্রমোট করা যায় সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন পণ্য (Affiliate Product) প্রমোট করুন
আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কার্যক্রম এমন পণ্য নিয়ে শুরু করলে ভালো হয়, যেগুলি আপনি আপনার ভিজিটরদের কাছে প্রমোট করতে আগ্রহ পাবেন। এমন পণ্য যেগুলি আপনি নিজে অতীতে ব্যবহার করেছেন।
আপনি অতীতে ব্যবহার করেছেন এমন পণ্য শেয়ার করার সুবিধা হল পণ্য বিষয়ে আপনার বাস্তব ও ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ভিজিটরদের কাছে আপনাকে অযথা বানোয়াট কিছু বলতে হবে না। অনলাইনে যারা প্রতিষ্ঠিত মার্কেটার তারা সাধারণতঃ এই পদ্ধতিতেই বিক্রী করে থাকেন নিজেদের পণ্য।
যেমন ধরা যাক, একজন রাধুনী। তিনি রান্নার ভিডিও, ব্লগপোস্ট এসব কন্টেন্ট তৈরী করে থাকেন অনলাইনে। ওয়েবসাইট, ব্লগ সাইট, ইউটিউব চ্যনেল, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কন্টেন্টগুলো মানুষকে দিয়ে থাকেন তিনি। এখন এই রাধুনী, তার রান্নায় সাধারণতঃ যেসব ব্র্যান্ডের মশলা, তৈজসপত্র ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলিকেই ভিডিও, ব্লগপোস্টে উল্লেখ করতে পারেন।
এক্ষেত্রে তিনি এই পন্যগুলোর অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করলে দু’দিক থেকেই ভালো। তিনি যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য বিষয়ে মানুষকে জানাতে পারছেন, তেমনি মানুষও আগ্রহী হবে। আলাদাভাবে কোন একটি মাত্র পণ্য নিয়ে সরাসরি বিজ্ঞাপনধর্মী কন্টেন্ট বানালে মানুষ সেভাবে সাড়া দিবেন না হয়তো।
যে বিষয়টি নিয়ে আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করছেন সেই ক্ষেত্রটিতে নিজেকে এবং নিজের ওয়েবসাইটকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আপনি এই কৌশলের ব্যবহার করতে পারেন। যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা ভাবছেন সেটি নিয়ে অনলাইনে গবেষণা করুন।
যে সম্ভাব্য প্রোডাক্টটিকে আপনি ভিজিটরদের কাছে বিক্রী করবেন সেটি নিয়েও যথাসম্ভব রিসার্চ করুন। আপনি যদি নিজেই এই প্রোডাক্টের ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন, তাহলে আলাদা করে শুধু কন্টেন্ট নির্মাণের খাতিরে এসব পণ্য কেনার কোন ব্যাপার থাকবে না। ইতিমধ্যেই পণ্য আপনার রয়েছে।
আপনি ব্যবহার করেননি এমন পন্য কিভাবে প্রমোট করা যায়?
কিছু কিছু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এমন পণ্য কেনার কথা বলেন যেগুলি তার নিজেরা হয়তো ব্যবহার করেননি। সাধারণতঃ জেনেরিক প্রোডাক্টগুলোর ক্ষেত্রে এই কাজটি করা যায়। অর্থাৎ এমন পণ্য যেগুলি মানুষ কিনবেনই। আপনি কি ব্র্যান্ড উপস্থাপন করলেন, বা পণ্যের দাম কেমন সেটি মুখ্য হবে না।
এরকম একটি উদাহরণ হতে পারে ব্যায়ামের যন্ত্রপাতি, যেমন ডাম্বেল বা বারবেল। একজন ফিটনেস পরামর্শদাতা মানুষকে বলতে পারেন ডাম্বেল দিয়ে ব্যায়াম করার কথা। যে লোকটাই এই পরামর্শ মানতে চাইবেন, তাকে ডাম্বেল কিনতেই হবে।
ফিটনেস পরামর্শ দাতাকে কোন নির্দিষ্ট কোম্পানীর ডাম্বেল দিয়ে ব্যায়াম করে দেখানো জরুরী নয়। তিনি একটি ছবি, আর অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে দিলেই হল। কারণ, এখানে পণ্যের ধরণটি অত্যন্ত সরল।
যে কোম্পানীই বানাক না কেন, একটি দশ কেজির ডাম্বেলের পক্ষে দশ কেজির ডাম্বেলের চেয়েও বেশী মাহাত্ন্য অর্জনের অবকাশ নাই। মূল বিষয় হচ্ছে ব্যায়ামটি ঠিকমত করা। ফিটনেস পরামর্শ দাতা কোন কোম্পানীর ডাম্বেল ব্যাবহার করেছিলেন সেটি মুখ্য নয়, তিনি যে ব্যায়ামটি করছেন সেটিই মুখ্য।
এরকম জেনেরিক প্রোডাক্টের উদাহরণ আরও অসংখ্য। এসব পণ্য বহুল প্রচলিত হওয়ায় আপনার পাঠক বা দর্শকরা ভালো করেই জানেন পণ্যটি কি কাজ করে। আলাদাভাবে শুধু পণ্যটিকে বিজ্ঞাপিত করার প্রয়োজন হয় না।
আপনি সরাসরি ব্যবহার করতে না দেখালেও, আপনার পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য তারা পণ্যটি কিনবেন। আপনার কাজ হচ্ছে অ্যামাজন বা অন্য যেই প্রোগ্রাম আপনি ব্যাবহার করছেন তার প্রোডাক্ট পেজের একটি লিংক শেয়ার করা, যেখানে গ্রহণযোগ্য দামে পণ্যটি বিক্রী হচ্ছে।
আপনি ব্যবহার করেননি এমন পণ্যকে উপস্থাপনের সময় যথাসম্ভব রিসার্চ করে রাখা ভালো। ইন্টারনেট তথ্যের প্রাচুর্যে পূর্ণ। যে কোন প্রোডাক্ট বিষয়েই আপনি চাইলে রিসার্চ করতে পারেন। প্রোডাক্টটি যদি অ্যামাজনে পাওয়া যায়, তাহলে সেখানে থেকে রিভিউটাও পড়ে নিতে পারেন। রিভিউগুলো যারা লিখেন, তারা সাধারণতঃ পণ্য ব্যবহারের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই লিখে থাকেন।
একদম নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ একটি ভুল করে থাকেন যে, তারা তাদের পণ্যের প্রসারে অতিরিক্ত ইতিবাচকতা দেখিয়ে থাকেন। শুনলেই মনে হয় পণ্যটি বিক্রী করতে তারা মরিয়া। আপনি যখন আপনার কন্টেন্টের কথা বলবেন, তখন মানুষের সামনে এমনভাবে উপস্থাপিত হওয়াটা হিতে বিপরীত হতে পারে। বরঞ্চ যে পণ্য নিয়ে বলবেন, সেটির সমন্ধে বাস্তব তথ্য হাজির করুন। পণ্যটির বিষয়ে ভাল-মন্দ দুটোই আলোচনা করুন। তাহলেই সাফল্যের সম্ভাবনা বেশী।
কি ধরণের কন্টেন্ট তৈরি করবেন?
কন্টেন্ট তৈরী করার সময় এমন কন্টেন্ট তৈরী করুন যেখানে স্বাভাবিক এবং প্রাসঙ্গিকভাবেই আপনার অ্যাফিলিয়েট পণ্যটিকে উল্লেখ করতে হয়। অর্থাৎ, পণ্যের জন্য কন্টেন্ট নয়, কন্টেন্টের জন্য পণ্য। পাঠক বা ভিউয়ার দেখবেন যে, আপনি যে লেখাটি লিখেছেন, সেখানে নিজের বক্তব্যকে আরও স্পষ্ট করে তোলার জন্য আপনি অ্যাফিলিয়েট পণ্যটির উদাহরণ টেনে আনছেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা সাধারণতঃ কয়েক ধরণের কন্টেন্টের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য বিক্রয় থাকেন। কন্টেন্টটি হতে পারে একটি আর্টিকেল। আপনার ওয়েবসাইটে এই আর্টিকেল প্রকাশ করা হবে। পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এমন মানুষদের জন্য এরকম কন্টেন্ট ভালো। আপনার কন্টেন্টটি হতে পারে একটি ইউটিউব ভিডিও, অথবা আই-টিউন্সের জন্য ভিডিওটির একটি অডিও সংস্করণ। আপনি চাইলে আপনার আর্টিকেল পেজে এই ভিডিও এবং অডিও ফাইলকে এমবেড করে সবটাকে একসাথে সমন্বিত করতে পারেন।
এর সাথে আপনি কিছু বাড়তি কন্টেন্টও তৈরী করতে পারেন। যেমন বিহাইন্ড-দা-সিন ভিডিও, ছবি। এরপর এসব কন্টেন্ট আপনার সোস্যাল মিডিয়া একাউন্ট বা আপনার ওয়েবসাইট ব্লগে যোগ করুন। এরকম করার মাধ্যমে, আপনি আপনার একাউন্ট একটিভ রাখতে পারবেন। যেসব মানুষ আপনার সোস্যাল মিডিয়া কন্টেন্ট দেখবেন, তারাই আপনার বিষয়ে আরও উৎসাহিত হবেন। ধরুন, আপনি একটি নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। সেটির ছবি শেয়ার করলেন। আর ফলোয়াররা ওখান থেকেই আপনার প্রকল্পটি বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।
এই সমস্ত কন্টেন্ট তৈরীর উদ্দেশ্য মূলতঃ একটাই। আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক এবং বাটনগুলোর প্রতি ভিজিটরদের মনযোগকে রিডিরেক্ট করা। আপনার টার্গেট ক্রেতাগণ হয়তো নিজের মনে সোস্যাল মিডিয়া বা গুগল ব্যবহার করছেন। এর মধ্যেই , তারা আপনার কন্টেন্টের সামনে পড়ে গেলেন।
নিতান্তই কৌতুহলের বশে তারা আপনার ভিডিওটি কিছুক্ষণ দেখলেন, বা আপনার লেখাটা পড়লেন, বা অডিও শুনলেন। কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের সময় এই জিনিসটিই পাওয়ার চেষ্টা থাকেন একজন মার্কেটার : আপনার সম্ভাব্য ভিজিটরের সময় এবং মনযোগ। আপনার কন্টেন্টে আপনি তাদের আকর্ষিত করে রাখবেন। তাহলেই একসময় আপনার পণ্যের প্রচারণা দেখতে এবং শুনতে পাবেন তারা।
বিভিন্ন কৌশলগুলোকে কার্যে পরিণত করুন : একটি থট-এক্সপেরিমেন্ট
কন্টেন্ট মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে তার মূল বিষয়গুলো এখন তাহলে জানা হয়ে গেছে আপনার। সবগুলোর মাঝে সমন্বয় ঘটিয়ে কিভাবে একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের জন্য একটি সফল কন্টেন্ট মার্কেটিং ক্যাম্পেইন করা যায়, তা একটি উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হল।
ধরা যাক, শফিকুল একজন ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সে কিছু ইনকাম করতে চায়। পড়াশোনার বাইরে অবসর সময়টুকু শফিকুল মূলতঃ তথ্যপ্রযুক্তি ও গেম এসব বিষয়ে আগ্রহী। শফিকুলের পরিচিতরা তার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চায়। তার পরামর্শ নিয়ে তাদের উপকারও হয়। সুতরাং শফিকুল ঠিক করল এটাই হবে তার নিশে।
প্রথমেই শফিকুল যে কাজটা করল, তার এই নিশে – তথ্যপ্রযুক্তি এবং গেমিং বিষয়ে কি ধরণের তথ্য বাজারে আছে তা নিয়ে একটি বিশদ গবেষণা করল। দেখা গেল এই নিশে নিয়ে অনেকেই অনেক লেখালেখি, ভিডিও তৈরীর কাজ করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে।
শফিকুল তখন তার নিশেটিকে আরও একটু সুনির্দিষ্ট করে আনল। সে ঠিক করল শুধুমাত্র অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গেম নিয়ে সে কন্টেন্ট বানাবে। দেখা গেল, এই বিষয়ে অনলাইনে আর্টিকেল, ভিডিওর অভাব নেই। তা সত্ত্বেও, শফিকুল ভেবে দেখল যে, তার মাথায় এমন কিছু কন্টেন্টের আইডিয়া আছে, যেমনটা আর কোথাও নেই অনলাইনে। সুতরাং সেগুলো নিয়ে কাজ করা যেতে পারে।
নিশে মার্কেট বিষয়ে সিদ্ধান্তে স্থির হওয়ার পর, এবার শফিকুলকে ভাবতে হবে কিভাবে তার কন্টেন্টকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। বলা বাহুল্য, তাকে একটা ওয়েবসাইট বানাতে হবেই। ওয়েবসাইট তৈরীর প্রথম দিকে খুব বেশী ট্রাফিক পাওয়া যাবে না।
কারণ মানুষ তখনও শফিকুলের ওয়েবসাইটটির অস্তিত্ব বিষয়ে জানে না। এর ফলে শফিকুল তার কন্টেন্ট তৈরী ও সেটিকে আরও উন্নত করার সুযোগ পাচ্ছে। সে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের বিভিন্ন ট্রাবলশুটিং বা সমস্যাগুলোর অগতানুগতিক ও তুলনামূলক সরল সমাধান নিয়ে পর পর বেশ কয়েকটি পোস্ট তৈরী করল। সে প্রচলিত কন্টেন্ট রিসার্চ করে নিজের কন্টেন্ট এমন ভাবে তৈরী করল, যেন মানুষের জন্য তার পোস্টগুলোকে বোঝা ও অনুসরণ করা সহজ হয়।
রিসার্চ করার সময়, শফিকুল বিভিন্ন অ্যান্ড্রয়েড গেম এবং সফটওয়্যারের একটি তালিকাও তৈরী করে ফেলল। এসব ডিজিটাল পণ্যের কিছু সে নিজে সরাসরি ব্যবহার করেছে। আবার কতগুলো সে ব্যবহার না করলেও সেগুলো বহুল পরিচিত মানুষের কাছে , অর্থাৎ জেনেরিক প্রোডাক্ট। এরপর ডিজিটাল পন্যের অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর কোন একটির থেকে, সে তার তালিকার পণ্যগুলোর জন্য লিংক জেনারেট করল।
শফিকুলের কন্টেন্টের প্রাথমিক কাঠামো প্রস্তুত। এবার সে কন্টেন্ট সৃষ্টি করতে শুরু করে। এই জন্য সে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে কোন একটি নির্দিষ্ট কাজ বা গেম খেলার পুরো সময়টা মোবাইলের স্ক্রীণকে ভিডিও হিসেবে রেকর্ড করল। শফিকুলের পরিকল্পনা এই ভিডিওগুলো সম্পাদনা করে সে ইউটিউবে পোস্ট করবে। একই সাথে সে পণ্যের ছবি তুলবে, এবং সংক্ষিপ্ত ভিডিও তৈরী করবে, এবং সেগুলিকে শেয়ার করবে ইনস্টাগ্রামে, পিন্টারেস্ট, টুইটারে আর ফেসবুকে।
এই সময়, শফিকুলের যেসব বন্ধুরা তার কাছ থেকে অ্যান্ড্রয়েড এবং মোবাইলে গেমিং বিষয়ে পরামর্শ নিত, তারা সোস্যাল মিডিয়ায় শফিকুলের কন্টেন্টের প্রতি উৎসাহী হল। তারা বিষয়গুলো বুঝতে চায়। শফিকুলও বুঝিয়ে বলল যে, তার অ্যান্ড্রয়েড বিষয়ক জানাশোনাগুলোকে সে গুছিয়ে মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে চায়। মানুষকে সাহায্য করতে চায়। এই বন্ধু-বান্ধব পরিচিতগণ শফিকুলের প্রাথমিক ও স্বতঃস্ফূর্ত অডিয়েন্সে পরিণত হল।
তো, শফিকুল অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের ট্রাবলশুটিং নিয়ে পাঁচটি আর্টিকেল, অ্যান্ড্রয়েডের ফাইল ম্যানেজমেন্ট কৌশল নিয়ে একটি ভিডিও এবং এই বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট বানিয়ে ফেলেছে। এগুলোই তার ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলের প্রথম কন্টেন্টে পরিণত হল।
কন্টেন্টে বিভিন্ন বিষয় ও সমস্যা নিয়ে আলোচনার সময় স্বাভাবিক ভাবেই কোন সব সফটওয়্যার, অনলাইন সার্ভিস বা ডিজিটাল পণ্য ব্যবহার করে বা গেম খেলার জন্য অথবা বিশেষ কোন অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ্লিকেশান পাঠক তাদের অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারের কাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা পেতে পারেন, সেই প্রসঙ্গ চলে আসত। আর এই জায়গাগুলোতেই শফিকুল বিভিন্ন ডিজিটাল ও হার্ডওয়্যার পণ্যের অ্যাফিলিয়েট লিংক জুড়ে দিতে শুরু করল।
একই সাথে সোশ্যাল মিডিয়াতেও নিয়মিত দেখা দিতে লাগল শফিকুল। লেখালেখি, ভিডিও নির্মাণের মাধ্যমে সে মোটামুটি পরিচিতি অর্জন করে ফেলে। সব ভিডিওতে যে শফিকুল নিজেই হাজির হয়েছে এমন নয়। তার অভিনয় ও উপস্থাপনায় আগ্রহী বন্ধুবান্ধবদেরকে গিফটের বিনিময়ে তার ভিডিওতে কাজ করিয়েছে। শফিকুলের ভিডিও অনেকেই দেখছিলেন। লেখাও পড়ছিলেন।
শফিকুল তার অ্যাফিলিয়েট লিংকের প্রতি পাঠক দর্শকদের সরাসরি আহ্বান করতে লাগল। কারণ তার বিশ্বাস তার পরামর্শগুলোর মত, প্রমোটকৃত পণ্যগুলোও সাইটে ভিজিটরদের জন্য উপকারী। দর্শক পাঠকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ কোন লিংকে ক্লিক করে হয়তো কোন একটি গেম ডাউনলোড করেছেন, বা সফটওয়্যার নামিয়েছেন। আর এভাবেই অল্প অল্প করে অর্থ আয় শুরু করে শফিকুল।
শফিকুলের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি থট এক্সপেরিমেন্ট। এখানে শফিকুলের সাফল্যের বেশ কিছু কারণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
এমন একটি টপিক নিন যেটি নিয়ে কাজ করাকে আপনি উপভোগ করবেন
যতক্ষণ না সাফল্য পাচ্ছেন, ততক্ষণ কিন্তু আপনার বাছাইকৃত টপিকটিকে আপনি পরিত্যাগ করতে পারছেন না। কারণ সাফল্য আসার আগেই যদি আপনি টপিক বা নিশেটি ছেড়ে দেন, তো আপনাকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-ই ছেড়ে দিতে হয়।
তাছাড়া এই একটি টপিক নিয়েই আপনাকে একটি দুটি নয়, অজস্র কন্টেন্ট তৈরী করতে হবে। সুতরাং, আপনি যেন একই বিষয় নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করতে করতে বিরক্ত না হয়ে যান, সেজন্য প্রথমেই এমন কন্টেন্ট নিন যেটির প্রতি আপনার প্রচুর আগ্রহ আছে।
অর্থাৎ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং না করলেও আপনি সেই বিষয়ে জানার চেষ্টা করেন, এমন কিছু। শফিকুলকে দেখুন। সে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করে। সুতরাং, সেটিকেই নিজের নিশে বানিয়েছে। আপনার এরকম দীর্ঘ দিনের কোন শখ থাকলে সেটিকেই বেছে নিন।
আপনার মার্কেটিং প্লাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট ধরণের কন্টেন্ট বানান
এই মুহুর্তে, ওয়েবসাইট ভিজিটরের সবচেয়ে বড় দুটি প্লাটফর্ম ফেসবুক এবং গুগল। বিশ্বের মানব সমাজের ওপর গুগল-ফেসবুকের প্রভাব এতই প্রবল যে বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলেও এরা তারতম্য ঘটাতে পারে। এ দুটো কন্টেন্ট শেয়ার করার জন্য চমৎকার জায়গা।
কিন্তু সব ধরণের কন্টেন্ট কিন্তু প্লাটফর্মগুলোতে কাজ করবে না। গুগলের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ, নির্দেশনামূলক কন্টেন্ট তৈরী করা। কারণ মানুষ গুগলের শরনাপন্ন হয়, যখন তারা কোন বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়ে বা সুনির্দিষ্ট তথ্যের প্রয়োজন হয়।
অন্যদিকে ফেসবুকের ক্ষেত্রে, পাঠকের ভেতরে অনুভূতি জাগ্রত করতে পারে এমন কন্টেন্টই সবচেয়ে ভালো। এখানে গুগলের মত, নিতান্তই তথ্যবান কন্টেন্ট জরুরী নয়। সত্য বলতে, ফেসবুকের সিংহভাগ কন্টেন্টই মূলতঃ বিনোদনমূলক। ফেসবুকে একটি কন্টেন্ট জনপ্রিয় হয় যখন মানুষ সেই কন্টেন্টে অংশগ্রহণ করে।
ফেসবুকে একটি “লাইক” যেমন মানুষের আপনার কন্টেন্টের সাথে অংশগ্রহণ, “কমেন্ট”, “শেয়ার” এগুলোও তেমনি (শেষ দুটির প্রভাব আরও বেশী)। আপনার কন্টেন্টটি পোস্ট হওয়ার প্রথম একটি ঘন্টার মাঝে যদি এরকম অনেকগুলো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়, তাহলে ফেসবুকের এলগরিদাম, আরও বেশী বেশী মানুষের কাছে আপনার কন্টেন্টটিকে দেখাবে।
ফলোয়ারদেরকে আপনার কন্টেন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট করুন
শফিকুলের উদাহরণটিতে , আমরা দেখলাম কন্টেন্টের সাথে অন্য মানুষদের মিথস্ক্রিয়া কত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে। আপনার কন্টেন্টে মানুষের ভাল মন্দ সব ধরণের কমেন্টকেই স্থান ও সুযোগ দিন। আপনার কন্টেন্টে যত বেশী কমেন্ট এবং রিঅ্যাকশান হবে, ততই বেশী মানুষ দেখবেন কন্টেন্টটি। তাছাড়া মানুষকে কন্টেন্ট শেয়ার করতেও উৎসাহী করুন।
অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইটে যাওয়ার জন্য কল-টু-একশানকে সুনির্দিষ্ট করুন
আপনি আপনার কন্টেন্টে অ্যাফিলিয়েট লিংক যোগ করেছেন বলেই মানুষ সেখানে ক্লিক করবেন এমন কিন্তু নয়। তারা তখনই ক্লিক করবেন, যদি আপনি তাদেরকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানান। শফিকুল, তার কাছ থেকে যারা অ্যান্ড্রয়েড বিষয়ক পরামর্শ নিতেন, তাদেরকে সরাসরি আমন্ত্রণ জানিয়েছে তার অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে ঘুরে আসার জন্য।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আসলে শুধু একটি ব্যবসাকে বিক্রয় করাই নয়। আপনার সমাজকে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনাকে কন্টেন্ট বানাতে হবে। অ্যাফিলিয়েট পণ্য বিক্রয় করা হবে আপনার এই কার্যক্রমটির একটি পার্শ্বক্রিয়া। আপনি তখনই আয় করবেন, যখন মানুষ দেখবে আপনি তাদের সমস্যার উত্তম সমাধান দিতে পারছেন। তা ব্যাতীত তারা আগ্রহী হবেন না, বা ভরসা পাবেন না।
আপনার কল-টু-একশান স্টেটমেন্টে এবং বাটনগুলো বেশী বেশী ব্যবহার করতে কুন্ঠিত হবেন না। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যাবসার মূল বিষয়টাই হচ্ছে অডিয়েন্সের মনযোগ আপনার লিংকগুলোর প্রতি ধাবিত করা।
আপনি যদি, মানুষকে আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংকের প্রতি আহ্বান করতেই দ্বিধাগ্রস্থ থাকেন, তাহলে নিজের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবেন না। আপনার নিজের মনে যদি বিশ্বাস থাকে, যে পণ্য আপনি বিক্রী করছেন সেগুলি মানুষের উপকারে আসবে, তাহলে দ্বিধাগ্রস্থতার কারণও নেই।
আজ এই পর্যন্ত। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হোক সব মার্কেটার।