কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য সঠিকভাবে কন্টেন্ট তৈরি করা যায়? এ প্রশ্নটির সঠিক উত্তরটি জানার জন্য এই লেখাটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিন। কেননা, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হতে হলে আপনার পণ্যটি সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রচার করতে হবে।
আর এই প্রচারের কাজটি সফল ও স্বার্থকভাবে করার জন্যই আপনাকে কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য কার্য়কর কন্টেন্ট লিখা যায় তা ভালোভাবে জানতে হবে। এবং কার্যক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করতে হবে। তবেই না আসবে কাংক্ষিত সাফল্য।
যারা কন্টেন্ট তৈরী করেন (যেমন লেখালেখি, ভিডিও বানানো ইত্যাদি) তাদের জন্য নিজেদের কাজ থেকে নিয়মিত অর্থ উপার্জনের একটি উপায় হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
আপনার যদি একটি ব্লগ থাকে, বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধু ও অনুরাগীর সংখ্যা যথেষ্ট হয়, সেক্ষেত্রে মাত্র একটি অ্যাফিলিয়েট প্রমোশন সঠিক ভাবে করতে পারলেই আপনি আপনার একাউন্টে টাকার অংকটিকে প্রতিদিনই অল্প অল্প করে হলেও বাড়াতে পারবেন।
আর সেজন্য আপনার কাজ একটাই – চমৎকার অ্যাফিলিয়েট কন্টেন্ট, আর্টিকেল তৈরী করা। আসলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিঙের পণ্য প্রমোট করার চেয়েও জরুরী হল উন্নত কন্টেন্ট নির্মাণ করা।
আজকের লেখায় আমরা আলোচনা করেছি –
কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য কার্য়কর কন্টেন্ট লিখা যায়?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে অনেকেই ভাবেন একটি প্রোগ্রামে সাইন আপ করে তারপর অন্ধভাবে অ্যাফিলিয়েট লিংকটির প্রচার প্রচারণা করেই গেলেই হল। বিষয়টি যদি অতটাই সহজ হত তাহলে পৃথিবীর প্রত্যেককেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে টাকা ইনকাম করতেন।
কিন্তু বিষয়টি তো আরও জটিল। আপনার সাফল্য পুরোটাই নির্ভর করে আপনি কি ধরণের কন্টেন্ট তৈরী করেন, এবং সেই কন্টেন্টকে কতটা মানুষের কাছে উপকারী বা চিত্ত্বাকর্ষক হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন।
শেষ হিসেবে, বিষয়টা এমন যে, আপনার কন্টেন্ট কতটা মানুষের হৃদয় হরণ করল, তার ওপরই নির্ভর করবে যে, কতজন মানুষ আপনার পণ্য কিনবেন।
জনপ্রিয় ফরম্যাটের কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করুন
আপনি চাইলে নিজের ইচ্ছে খুশি মত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর কন্টেন্ট তৈরী শুরু করে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে সাফল্য কতটুকু পাবেন বলা মুশকিল।
কারণ, যে জনপ্রিয় ফরম্যাটে কন্টেন্ট দেখে মানুষ ইতিমধ্যে অভ্যস্ত, তার ব্যতিক্রম কিছুকে হয়তো তারা সহজে গ্রহণ করবেন না। সুতরাং আপনি যদি প্রমাণিত কন্টেন্ট ফরম্যাটগুলো নিয়ে কাজ করেন তাহলেই বেশী সফল হবেন বলে আশা করা যায়।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর এই কন্টেন্ট ফরম্যাটগুলো একবার ব্যবহার করলেই আপনি বুঝতে পারবেন, সেগুলো কি অসম্ভব রকমের কার্যকর। এখানে প্রতিটি ফরম্যাটকে সংক্ষেপে বর্ণণা করা হল।
১। সাধারণ প্রোডাক্ট রিভিউ
আপনার পণ্য বিক্রী বাড়ানোর একটি খুব ভাল উপায় হচ্ছে প্রোডাক্ট রিভিউ লেখা। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এটি খুবই সুপরিচিত একটি কন্টেন্ট ফরম্যাট।
এখানে প্রথমে একটি পণ্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়। তারপর সেই পণ্য কিরকম কাজ করে সেই বিষয়ে লেখক তার নিজস্ব মতামত দেন।
এই রিভিউয়ে আরও থাকে, পণ্যটি ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা। রিভিউ লেখক তার দৃষ্টিকোণ থেকে পন্য বিষয়ে মন্তব্য ও সুপারিশ প্রদান করেন।
প্রোডাক্ট রিভিউ-এর বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে পণ্য বিষয়ে একটি সৎ মতামত পাওয়া যায়। খেয়াল রাখা দরকার যে, শুধু পণ্য বিষয়ক ভালো কথাগুলো বললেই চলবে না, সমস্যাগুলোর কথাও জানাতে হবে।
তাহলেই লোকজন বুঝবে যে আপনার রিভিউটি বিশ্বাসযোগ্য ও ভরসা করার মত। প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে যেভাবে পণ্য বিক্রী করা হয়, তেমন যে নয় এই রিভিউ -সেই পার্থক্যটি যেন বোঝা যায়।
বরঞ্চ, আপনি পণ্যের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো উপস্থাপন করবেন। তারপর পাঠকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে দিন, এই পণ্য তারা ব্যবহার করবেন কি না। আপনি যদি ভাল রিভিউ লিখতে পারেন।
তাহলে কোম্পানীগুলি আপনার রিভিউয়ের জন্য তাদের পন্য আপনাকে পাঠিয়েও দিতে পারেন। অর্থাৎ, রিভিউ লেখা আপনার ফ্রি পণ্য পাওয়ার একটা উপায় হতে পারে।
যেহেতু, আপনি আপনার পন্যের ইতিবাচক, নেতিবাচক দুটো দিকই তুলে ধরছেন, সুতরাং পাঠকের কাছে আপনার অ্যাফিলিয়েট কন্টেন্টটিকে অকৃত্রিম ও নির্ভরযোগ্য মনে হবে।
কারণ, এখানে স্পষ্ট যে আপনি আপনার সাইটের পাঠকের কথা ভেবেই লেখাটি লিখেছেন। আপনি পণ্য বিক্রীর চেয়েও পাঠকের কল্যাণকে বেশী গুরুত্ব দেন।
আপনার পণ্যের অসুবিধা তুলে ধরলে প্রোডাক্ট রিভিউটি কি বিক্রীর ক্ষেত্রে খুব বেশী ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে? এর উত্তর হচ্ছে- না।
আপনি পণ্যের সুবিধাগুলোকেও এমন ভাবে উপস্থাপন করবেন যে মনে হবে পণ্যের যে সমস্যাগুলো আছে সেগুলি তেমন কোন গুরুতর বিষয়ই নয়। কিভাবে এসব সমস্যা নিয়েও পণ্যটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারী উপকৃত হতে পারেন সেটি আপনি দেখাতে পারেন।
২। ভিডিও রিভিউ
প্রোডাক্ট রিভিউর একটা দুর্বলতা হচ্ছে সমস্তটাই একটি লেখা। এই প্রজন্মের অধিকাংশ মানুষই একটি লেখা পড়ে তথ্য গ্রহণ করতে আগ্রহী নন। তারা এমন কিছু চান যেটাতে চোখ রাখলেই তাদের কাজ হয়ে যায়।
আর এইজন্য আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট পণ্যের কিছু ভিডিও রিভিউ তৈরী করলে ভালো করবেন।
ভিডিও রিভিউতে একটি পণ্য ও সেটি দিয়ে কি কি কাজ করা যায় তা তুলে ধরেন দর্শকের কাছে রিভিউয়ার। দর্শক পন্যটিকে দেখে, এবং ব্যবহারও করতে শেখেন।
এই ধরণের কন্টেন্টে পণ্যটি দিয়ে কি করা যায় বা পণ্যটি কেমন সেটির বিশদ দীর্ঘ ব্যখ্যা দেয়ার প্রয়োজন হয় না। একটি ছোট-খাট ভিডিওর ভেতরেও আপনাতেই এরকম বিষয়গুলো চলে আসে।
আরও পড়ুন –
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে মাসে লাখ-লাখ টাকা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ ১০টি ধাপ
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য শীর্য ২০টি মার্কেটপ্লেস বা নেটওয়ার্ক
ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
ভিডিও রিভিউটি আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার নিজে করতে পারেন। তবে আরও ভাল হয় যদি কোন পরিচিত ইনফ্লুয়েন্সারের সাহায্য নেন। পণ্যর ভিডিও রিভিউ’র ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং একটি বেশ সাধারণ প্রচলিত বিষয়। এখানে আপনি একজন ইনফ্লুয়েন্সারকে নিয়োগ দিবেন, বা তাকে বলবেন আপনার জন্য একটি প্রোডাক্ট রিভিউ করে দিতে। এখানে যেটা হবে, ইনফ্লুয়েন্সার তাদের অনুরাগী ও অনুসারীর দলকে এই পণ্যটি দেখাবেন, এবং ফলশ্রুতিতে আপনার পণ্যের বিক্রী বহুগুণে বেড়ে যাবে।
ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে ফলোয়ারদের বিদ্যমান সম্পর্কটির গুণেই এই পদ্ধতি কাজ করে থাকে। কারণ অনুসারী-অনুরাগীগণ যেহেতু তাদের ইনফ্লুয়েন্সারটিকে বিশ্বাস করেন, সুতরাং সম্ভাবনা প্রবল যে তার সুপারিশকৃত পণ্যটিও তারা কিনতে আগ্রহী হবেন।
এছাড়াও, আপনি যদি ইন্সটাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে বলুন আপনার ভিডিওটির একটি ক্ষুদ্র অংশ তাদের একাউন্টে শেয়ার করতে। সাথে থাকবে আপনার ভিডিওটির ইউটিউব লিংক। এই লিংক ব্যবহার করে ইউটিউবে এসে সম্পূ্র্ণ ভিডিও দেখার আমন্ত্রণ জানাবেন ইনফ্লুয়েন্সাররা।
৩। টিউটোরিয়াল
ভিডিও যদিও কার্যকর, তবে অনেকে ভিজিটরই থাকবেন যারা একটি বিষয়ে পড়ে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে চান। এরকম মানুষদের বেলায়, একটি “টিউটোরিয়াল” ধরণের আর্টিকেল ভাল কাজ করবে।
তবে আর্টিকেলে শুধুমাত্র আপনি বিভিন্ন পয়েন্ট বয়ান করে যাওয়াই যথেষ্ট নয়। যথাসম্ভব আনুষাঙ্গিক তথ্য প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বক্তব্য পরিষ্কার করে বোঝানোর জন্য বিভিন্ন ধাপগুলোকে স্ক্রীণশট সহকারে বর্ণণা করুন।
পণ্যটি কিভাবে কাজ করে সেটিকে সম্পূর্ণরূপে তুলে ধরা একটি টিউটোরিয়াল তৈরীর অন্যতম দিক।
সাধারণতঃ আত্ম-উন্নয়নমূলক নিশের ক্ষেত্রে টিউটোরিয়াল জাতীয় লেখা তৈরীর কথা চিন্তা করা যেতে পারে। যেমন, আপনি যদি বিভিন্ন রাইটিং টুলস বা সফটওয়্যার পণ্যের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে থাকেন তাহলে এরকম একটি আর্টিকেল লিখতে পারেন যে “কিভাবে লেখক হিসেবে নিজের দক্ষতা বাড়াবেন?”
আবার ধরা যাক আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের পণ্য নিয়ে কাজ করেন। সেক্ষেত্রে অ্যাফিলিয়েট লিংক প্রমোট করার জন্য আপনি টিউটোরিয়াল লেখা লিখতে পারেন “সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পাতার স্থান করে নেয়ার বিভিন্ন ধাপ।”
৪। শীর্ষ তালিকা
“শীর্ষ তালিকা” আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংককে প্রমোট করার আরেকটি উপায়। ধরুন আপনি যে নিশে নিয়ে কাজ করছেন তার সবচেয়ে জরুরী দশটি টুলস বা পণ্য নিয়ে একটি তালিকা তৈরী করলেন।
আপনার নিশে হয়তো এসইও সফটওয়্যার। আপনি আর্টিকেল লিখলেন “ এসইও করার শীর্ষ দশটি টুলস”। এখানে আপনি একই সাথে একাধিক পণ্যকে প্রমোট করলেন। আবার আপনার পাঠককেও কেনার জন্য অতিরিক্ত জোরাজুরি করলেন না।
শীর্ষ তালিকাগুলোর সুবিধা হচ্ছে আপনি আপনার পাঠক বা ভিজিটরদেরকে একাধিক পণ্যের বিষয়ে আপনার মতামত জানাতে পারছেন। যেহেতু আপনি বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আলেচনা করছেন, তাই বহু সংখ্যক অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহারের সুযোগও আপনার রয়েছে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটং-এ সাহায্য করার পাশাপাশি লিস্ট জাতীয় আর্টিকেলগুলো এসইও’র জন্যও ভালো।
তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার পাঠকরা যেন জানেন যে, আপনি আপনার কন্টেন্টে অ্যাফিলিয়েট লিংক জুড়ে দিয়েছেন।
কন্টেন্টের শুরুতেই এই বিষয়ে একটি নোট দিতে পারেন। সেখানে উল্লেখ করা থাকবে যে এই কন্টেন্টে অ্যাফিলিয়েট লিংক রয়েছে।
৫। কেস স্টাডিমূলক লেখা
রিভিউয়ের চেয়েও অনেক বেশী গভীর হচ্ছে একটি কেস স্টাডি। এখানে আপনি পণ্যের বিবরণ ও ব্যবহারের উপায়ের চেয়েও আরো বেশী কিছু দিয়ে থাকেন পাঠককে। এধরণের লেখায় সময়ের একটি প্রসঙ্গ থাকে।
আপনি একটি নির্দিষ্ট সময় যাবত একটি পণ্যকে ব্যবহার করবেন। তারপর সেটির উপকার এবং সমস্যাগুলোর বিষয়ে রিপোর্ট করেন। যেসব পণ্য ব্যবহার করে ফলাফল পেতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়, তাদের বেলায় এই কেস স্টাডিমূলক লেখাগুলো কার্যকর।
যেমন ধরুন- স্কিন কেয়ারের বিভিন্ন পণ্য। একটি স্কিন কেয়ারের পণ্য শুধু ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়। ওটার ফল পেতে হলে আপনাকে কয়েক সপ্তাহ, কি মাস অপেক্ষা করতে হবে।
বিভিন্ন ডিজিটাল পণ্য এবং কোচিঙের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। একটি কোচিং করে একদিনেই সব শিখে নেয়া যায় না। শিক্ষাটি আত্মস্থ্য করতে কিছু সময় লাগে।
তারপর আবার যা শিখলেন সেটিকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানোরও ব্যাপার থাকে। এই কাজে লাগানোর পর্বটিকে কেস স্টাডিতে তুলে আনা যায়।
কেস স্টাডিমূলক লেখা কার্যকর, কারণ এখানে পণ্যের আরও আনুষঙ্গিক একটি রিভিউ পাওয়া যায়। সময়ের পরিক্রমায় একটি পণ্য কতটা কার্যকারিতা প্রদর্শন করতে পারে, সেটি বুঝতে পারেন পাঠক।
লেখার ক্ষেত্রে আপনার ব্যাক্তিগত মতামতের ওপর জোর দিন
অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারই একটি প্রোডাক্টের রিভিউ করার সময় নিজের ব্যক্তিগত মত প্রকাশে শঙ্কিত বোধ করেন। তারা সাধারণতঃ তাদের রিভিউকে পণ্যের বর্ণণা এবং গতানুগতিক সুবিধা-অসুবিধার একটি তালিকায় সীমিত করতে চান।
এই ধরণের রিভিউ-এর সমস্যা হচ্ছে, ইতিমধ্যেই আপনার প্রতিযোগী মার্কেটারগণ এই ধরণের রিভিউ করে ফেলেছেন। সুতরাং এধরণের কন্টেন্ট থেকে আপনি খুব বেশী ফলাফল পাবেন না।
তাই মূল লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে- ভিন্নধর্মী পথে অগ্রসর হওয়া। আজকের দিনে ইন্টারনেটের মানুষের অভিরুচি অনেক পরিবর্তিত। তারা এমন রিভিউ পড়তে চান যেটি অকৃত্রিম এবং আন্তরিক।
আর এধরণের রিভিউ তখনই সম্ভব, যখন লেখক পণ্যটি নিজে ব্যবহার করে সততার সাথে হুবহু তার বাস্তব অভিজ্ঞতাটি তুলে ধরবেন। আপনি আপনার প্রকৃত মতামত ব্যক্ত করুন। এবং সত্য করে বলুন- ব্যবহার করে আপনি সন্তুষ্ট কি না।
আপনার পাঠকের বা ক্রেতাদের মনের কথা সরাসরি জানতে চান
কন্টেন্টে তৈরী শুরু করার আগে আপনার ক্রেতা সমাজটির বিষয়ে ধারণা রাখা জরুরী। তা না হলে আপনি অনেক পরিশ্রম করে কন্টেন্ট তৈরী করেও প্রত্যাশিত ফল পাবেন না।
অনলাইন বাণিজ্য ক্ষেত্রটিতে যারা কাজ করেন সেই ব্যবসায়ীদের অধিকাংশেরই একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে তারা মূলতঃ নিজেদের পছন্দ, অভিরুচি অনুযায়ী কন্টেন্ট বানিয়ে থাকেন।
তারা মনে করেন, তারা যদি পণ্যের গুণকীর্তণ করে কন্টেন্ট তৈরী করতে পারেন, তাহলেই কাজ হয়ে যাবে।
কিন্তু একটি বিষয় একটু ভেবে দেখুন। যে ক্রেতা বা পাঠককে উদ্দেশ্য করে আপনি কন্টেন্ট বানাচ্ছেন তিনি কিন্তু প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপনধর্মী বার্তা পেয়ে থাকেন।
বিভিন্ন ব্র্যান্ড নিরন্তর শুধু বলে যান – তাদের পণ্য কত ভালো। এই বিষয়টি নিয়ে ক্লান্ত ক্রেতাগণ। আপনি একটি অ্যাফিলিয়েট অ্যাপ বা পডকাস্ট ব্যবহার করে খুব বেশী সুবিধা পাবেন না।
যেকোন ব্যবসায়ই একটি রেফেরাল মার্কেটিং সফটওয়্যার ব্যাবহার করে কিছু ক্রেতা আকর্ষণ করতে পারে। কিন্তু বৃহত্তর হিসেবে গিয়ে তাতে খুব বেশী সুবিধা পাওয়া যায় না প্রতিদ্বন্দী প্রতিষ্ঠানদের তুলনায়।
সৌভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, আপনার ক্রেতাদেরকে বোঝা তেমন জটিল কিছু নয়। আপনাকে আন্দাজে কিছু করার দরকার নেই।
ক্রেতাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করুন। বিভিন্ন শীর্ষ ব্র্যান্ডগুলো একারণেই কাস্টমার জরিপ পরিচালনা করে থাকেন। তারা তাদের ক্রেতাদের আরও ভাল করে বুঝতে চান।
আপনি যদি এই কাজটি করতে পারেন, তাহলে আপনার তৈরী করা কন্টেন্ট প্রকৃতই আপনার পাঠক ও ক্রেতাদের কাজে আসেবে। এরকম কন্টেন্ট পণ্য বিক্রীতেও অধিক কার্যকরী।
অধিক চাহিদা সম্পন্ন পন্য নিয়ে কন্টেন্ট বানান
আপনি যদি চাহিদাসম্পন্ন পণ্য প্রমোট না করেন তাহলে কখনই সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন না। কম জনপ্রিয় পণ্য প্রমোট করলে, ক’দিন পরই দেখবেন কেউ আর আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে কিছু কিনছেন না।
একটা পণ্যকে আপনার কাছে হয়তো খুব চমৎকার বা উপকারী বলে মনে হয়। কিন্তু আপনার পাঠকদের ভেতরে একইরকম অনুভূতি ঐ পণ্য বিষয়ে না-ও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে এই পণ্য নিয়ে লেখালেখি করে আপনার সময় নষ্ট হবে।
সেক্ষেত্রে, যে অ্যাফিলিয়েট পণ্য আপনি মার্কেটিং করার কথা চিন্তা করছেন সেটি নিয়ে ভালোভাবে রিসার্চ করা জরুরী।
সে জন্য আপনি গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানারে গিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পারেন এই পণ্যের কিরকম চাহিদা অনলাইন ক্রেতা সমাজে।
সাধারণতঃ একটি লাভজনক পণ্যের বিপরীতে কমপক্ষে ১০০ টি সার্চ থাকবে। এই পণ্যের নামের বিভিন্নতাগুলোও সার্চ করতে ভুলবেন না।
তাছাড়া গুগল সার্চ করলে বুঝতে পারবেন একটি প্রোডাক্ট কিরকম আলোচনা হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মাঝে। কিছু ব্লগ বা ফোরামে পণ্যের রিভিউ আপনার চোখে পড়বে।
একটি পণ্যের প্রকৃত চাহিদা নির্ধারণের সময় এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। যদি দেখেন প্রকৃতই এর চাহিদা আছে, একমাত্র তাহলেই সেটিকে প্রমোট করবেন।
রিভিউয়ের ভেতরে আপনার পণ্যকে স্বাভাবিকভাবে যুক্ত করুন
প্রোডাক্ট রিভিউয়ের ক্ষেত্রে প্রায় সময়ই একটি সমস্যা হয়। ক্রেতা বা পাঠক আর্টিকেলটির দিকে এক নজর দেখলেই বুঝতে পারেন যে, এখানে একমাত্র উদ্দেশ্য পণ্যটিকে যেকোন প্রকারে গছিয়ে দেয়া।
এটি মোটেও সুবিধাজনক অবস্থা নয়। জোর করে বিক্রী করার বিষয়টি সাধারণতঃ কোন পাঠকই পছন্দ করবেন না।
এখন, সুনির্দিষ্ট পণ্য বিষয়ে এরকম সুনির্দিষ্ট রিভিউ কার্যকর নয়, এমনটা বলছি না। বিশেষ করে লং-টেইল-কিওয়ার্ডসের ক্ষেত্রে এধরণের রিভিউ আসলে খুব ভালোই কাজ করে।
কারণ যেসব পাঠক লং-টেইল কিওয়ার্ড ব্যবহার করছেন কোন পণ্য খোঁজার জন্য, তারা ইতিমধ্যেই পণ্যটি কেনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন বলে ধারণা করা যায়।
তবে একটি গভীর তথ্যসমৃদ্ধ গাইড, একটি টিউটোরিয়াল বা একটি কাহিনী বর্ণণার ভেতরে একটি প্রোডাক্ট রিভিউ অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া আরও বেশী ভালো। সেক্ষেত্রেই আপনার কন্টেন্টের কার্যকারিতা আরও বেশী হবে।
ক্রেতাদেরকে পন্যের সাথে বাড়তি কিছু দিন
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের মাঝে একটি সাধারণ চর্চা হচ্ছে তারা নানান ধরণের বোনাস অফার দিয়ে থাকেন। এর ফলে পাঠক আপনার মাধ্যমে পন্য কেনার একটি কারণ খুঁজে পান।
সাধারণতঃ, যেসব পণ্য নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়, সেগুলির ইতিমধ্যেই শত শত হাজার রিভিউ থাকে। কিন্তু ক্রেতারা বেশীরভাগ সময়ই, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির মূল সাইটে গিয়ে পণ্য কিনে থাকেন।
তাহলে আপনার মাধ্যমে পণ্যটি কিনতে তাদের প্ররোচিত করার উপায় কি? সরল উত্তরটি এমন- বাড়তি কিছুর ব্যবস্থা করুন যেটি মূল সাইট থেকে কিনলে পাওয়া যাবে না।
খেয়াল রাখতে হবে এই বোনাসটি যেন এই পরিমাণে চিত্তাকর্ষক হয় যে ক্রেতা আপনার থেকে কিনতে উৎসাহিত থাকেন।
কন্টেন্ট তৈরীর ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিশেতে স্থির থাকুন
যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে সফলতার সাথে কাজ করতে চান, তাহলে অবশ্যই একটি নিশেতে স্থির থাকবেন। আপনি একদিন সফটওয়্যার, গেমস আরেকদিন প্রেশার কুকারের রিভিউ লিখলে, নিজেকে কখনই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন না।
মানুষের মনে এই ধারণা জন্মাতে হবে যে এই ওয়েবসাইটটি বা এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার বা ব্লগারটি এই নির্দিষ্ট পণ্যটি নিয়ে কাজ করেন। পাঠকের কাছে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের লেখক হিসেবে পরিচিতি পেতে হবে।
কারণ পাঠক মূলতঃ নিজের প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আপনার লেখা পড়বে। যারা পড়বেন, তাদের একটি অংশই আপনার ক্রেতা হবেন। সুতরাং, নির্দিষ্ট নিশে নিয়ে না লিখলে, বা ওয়েবসাইট না বানালে তাদের কাছে আপনার অ্যাফিলিয়েট সাইটের গুরুত্বই থাকবে না।
তাছাড়া নির্দিষ্ট নিশে নিয়ে লেখালেখি করলে আপনার ওয়েবসাইটের এসইও’র জন্য সেটি ভালো। কারণ সার্চ ইঞ্জিনগুলো নিশের ভিত্তিতেই আপনার সাইটকে চিনবে এবং র্যাঙ্ক করবে।
সুতরাং একটি মাত্র টপিক বা কিওয়ার্ড নিয়ে যদি আপনি কন্টেন্ট তৈরী করেন তাহলে প্রথম পাতায় শীর্ষ দশে স্থান করে নেয়া সহজ হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে কন্টেন্ট সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ কন্টেন্ট ছাড়া পণ্য প্রমোট করার কোন সুযোগ নেই আপনার। একটি উন্নতমানের উপকারী কন্টেন্ট পড়তে গিয়ে বা দেখতে গিয়েই আপনার পাঠক লিংকে ক্লিক করার সিদ্ধান্তটি নিবেন।
সুতরাং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হতে চাইলে পণ্য প্রমোট করার চেয়েও বেশী মনযোগী হোন কন্টেন্ট নির্মাণের বিষয়ে।