প্লাটফর্ম, ডোমেইন এবং ইউআরএল অপটিমাইজেশন

কোন একটি ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং বাড়ানোর প্রচেষ্টা খোঁদ সেই ওয়েবসাইটটিকে দিয়েই শুরু হতে হয়। আপনার ওয়েবসাইট নিজে যদি শোচনীয় অবস্থায় থাকে, সেক্ষেত্রে দুনিয়ার সবচেয়ে ভালো লিংকগুলো দিয়েও আপনার কোন উপকার হবে না। অন্যদিকে পূর্ণ রূপে অপরিমাইজডকৃত একটি ওয়েবসাইট আপনার অভীষ্ট র্যাঙ্কিঙ দখল করে নিবে, অথচ আপনি হয়তো তখনও লিংকের কাজ শুরুই করেননি।

আপনার ওয়েবসাইটের গঠন, প্রতিটি পেজের টেক্সট, টাইটেল এবং মেটা ট্যাগগুলোর অপটিমাইজেশান, সাইটে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে সরাসরি প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো যেমনঃ সাইটের স্পীড, মোবাইলে ব্যবহারের উপযোগিতা; এই সব কিছুই আপনার ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিঙে ইতিবাচক, না হয় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রভাবগুলো বেশ গুরুতর এবং দ্রুতই ফলাফল দেখায়। অপরিমাইজেশানের প্রধান শর্তগুলো পূরণ করা হয় নি এমন একটি ওয়েবসাইটকে প্রমোট করতে চাওয়া হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে নৌকা চালানোর মত। অন্যদিকে সঠিক ভাবে অপটিমাইজ করা থাকলে, স্রোত আপনার অনুকূলেই নিশ্চিতভাবে প্রবাহমান থাকবে।

অপটিমাইজেশানের বিভিন্ন দিক নিয়ে এই ব্লগে বিভিন্ন সামগ্রিক আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন উপাদানগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ বিবিধ প্রকারে উপস্থাপন করা হয়েছে, বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে আমরা একাধিক নয়, একটি মাত্র বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সেটি হচ্ছে- ডোমেইন এবং ইউআরএল অপটিমাইজেশান। ডোমেইন এবং ইউআরএল অপটিমাইজেশান আপনার সাইটের এসইও’তে কিভাবে ভূমিকা রাখে দেখে নেয়া যাক।

নিজের ওয়েবসাইট বিষয়ে সবসময়ই একটি প্রশ্ন নিজেকে করুন। এই প্রশ্নটি সরল, কিন্তু আপনার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে অত্যন্ত সহায়ক-

“আমার ওয়েবসাইটটিকে গুগলের শীর্ষে থাকা অন্য ওয়েবসাইটগুলোর মত মনে হয় কি?” যদি উত্তরে “না” বলতেই হয়, তাহলে ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশান নিয়ে ভালোমত পড়াশোনা শুরু করুন।

ওয়েবসাইট প্লাটফর্ম বিষয়ে কিছু কথা-

ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করার সেরা মাধ্যম – ওয়ার্ডপ্রেস

বিভিন্ন ওয়েবমাস্টার যারা গুগলের শীর্ষে অবস্থান করে নিচ্ছেন, তাদের বিশাল একটি অংশ “ওয়ার্ডপ্রেস” দিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটগুলো তৈরি করে থাকেন।

ওয়ার্ডপ্রেস একটি চমৎকার প্লাটফর্ম। আরও মজার বিষয়, এটি একটি বিনামূল্যে প্রাপ্ত ওয়েব এপ্লিকেশন সফটওয়্যার। এই প্লাটফর্ম থেকে আপনার ওয়েবসাইট পরিচালনা করা খুবই সহজ কাজ।

আপনি যদি সম্পূর্ণ শুন্য থেকে, রিক্ত হস্তে আপনার ওয়েবসাইট নির্মাণ শুরু করে থাকেন, তাহলে ১০০ ভাগের মাঝে ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই আপনাকে বলব, ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিন।

ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা সহজ তো বটেই। তাছাড়াও, গুগলও ওয়ার্ডপ্রেস সাইট খুব পছন্দ করে। ওয়ার্ডপ্রেস সাইটকে পাঠ করা সার্চ ইঞ্জিনগুলোর জন্য সুবিধাজনক। ওয়ার্ডপ্রেসে বিভিন্ন ধরণের প্লাগইনস রয়েছে। এগুলোও ফ্রী। এসব ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইনস ব্যবহার করে, কোন ধরণের অতিরিক্ত খরচ না করেই, আপনি সাইটে নানান ধরণের “ফাংশানালিটি” যোগ করতে পারবেন।

আর সাথে যদি একজন পেশাদার ডিজাইনার এবং একজন ডেভেলপারকে নিয়েই ফেলেন, তাহলে সাইটের ডিজাইন নিয়েও আপনি পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হতে পারবেন, আশা করা যায়। আসলে, আপনি যদি অ্যামাজন বা এই জাতীয় বড়-সড় কোন ইকমার্স ব্যবসার মালিক বা পরিচালনাকারী না হয়ে থাকেন, তাহলে বলব – ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েই আপনার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ হয়ে যাবার কথা।

আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ওয়ার্ডপ্রেসের মত একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করার স্বপক্ষে তিনটি কারণ দেখানো যায়-

১। সাইটের কন্টেন্টের ওপর আপনার অনেক বেশী নিয়ন্ত্রণ থাকবে। যখন ইচ্ছা আপনি কন্টেন্ট আপডেট করতে পারবেন। যেমন ধরুন, ইচ্ছা হল, একটি ব্লগ লিখে ফেললেন। এসইও’র ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব ও লাভ ব্যাপক।
২। সাধারণতঃ এই ব্লগে ও অন্যান্য জননন্দিত এসইও পরামর্শের সাইটগুলোতে যে অনপেজ এসইও’র পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো ওয়ার্ডপ্রেসের মত একটি কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করলে, পালন করা অধিক সহজ ও দ্রুততর।
৩। আপনার যদি পরবর্তীতে নিজের ওয়েবসাইটের লে-আউট, নকশা, বিন্যাস এসব পছন্দ না হয়, তাহলে পরিবর্তন করে নিতে পারেন নিজের ইচ্ছানুযায়ী। এই কাজটি ওয়ার্ডপ্রেসে খুব সহজেই করা যায়। আপনার কন্টেন্টেরও কোন ক্ষতি হবে না।

ডোমেইন এবং ইউআরএল অপটিমাইজেশান

আপনার সাইটের এড্রেস বা “ইউআরএল” ওয়েবসাইটটির সাফল্যের ওপর একটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনস্বীকার্য প্রভাব ফেলে। সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্ক পাওয়া, কি জনসমাজে আপনার ব্যবসায়িক সুনাম প্রতিষ্ঠা – দুই ক্ষেত্রেই ডোমেইন ও ইউআরএল’র ভূমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী।

ই-এম-ডি বা এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন

প্রথমে র্যাঙ্কের বিষয়টা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক। ২০১২ সালে গুগল “ ই-এম-ডি” বা এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন (যেসব ওয়েবসাইটের এড্রেস সার্চ টার্মের হুবহু অনুরূপ) বিষয়ে একটি আপডেট প্রদান করে। এই আপডেটের আগ পর্যন্ত ইএমডি ব্যবহার করে চাইলেই যে কেউ গুগলের র্যাঙ্ক করে ফেলতে পারত।

ধরুন, আপনি একটি শার্টের দোকান দিলেন। আপনার দোকানটি পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে। আপনি সেক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট বানালেন “www.nazimuddinshirtshop.com”। ব্যস , কাজ শেষ আপনার। এখন শুধু বসে থাকুন। এক কি দু’দিনের মাঝেই নাজিমুদ্দির রোডের সকল মানুষ গুগলে শার্ট লিখে সার্চ করলে আপনার সাইটই দেখতেন এবং বেশুমার টাকাও আপনার আসতে শুরু করে দিত।

এটি কোন রসিকতা নয়। গুগলের ই-এম-ডি আপডেটের পূর্বে সাইট বানানো এবং র্যাঙ্ক করা এমনই মজার বিষয় ছিল। শুধুমাত্র ডোমেইনের নাম দেখিয়েই আপনি সবার ওপর চলে যাবেন। কন্টেন্ট, লিংক তথা মান নিয়ন্ত্রণের অন্যান্য ঝামেলাগুলো নিয়ে ভাবতেও হত না।

এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন ছিল একটি লুপ-হোল বা সিস্টেমের ফাঁক। অন্যসব ফাঁকের মতই একেও সারিয়ে তোলে গুগল। তবে সেই আমলে ই-এম-ডির গুণে যেসব সাইট শীর্ষে স্থান করে নিয়েছিল, তাদের অনেকেরই অবস্থানই পরবর্তীতে কমিয়ে দেয়নি গুগল।

কারণ দেখা গেল, সাইটগুলো তাদের বিষয়বস্তু অনুসারে ভালোই করছে। অন্য মানদন্ডগুলোর সমস্তই পূর্ন করছে। ইউজাররা তাদের নিয়ে সন্তুষ্ট। সুতরাং, অবস্থান কমিয়ে দেয়ার কোন কারণ দেখেনি গুগলের এলগরিদাম।

তবে সার্চ টার্মের নামে ডোমেন হওয়ার এখন আর কোন বাড়তি সুবিধা যে তারা পাচ্ছে না, সেটি মাথায় রাখবেন।

তাহলে, ই-এম-ডি সুবিধা এখন আর নেই। তথাপি, সাইটের জন্য একটি অধিক বর্ণণাক্ষম ডোমেইন ব্যবহার করা যে কারুরই কাজে আসতে পারে।

ধরা যাক, একজন প্রসিদ্ধ বাবুর্চীর নাম জামাল। তার দুই ভাই আছে। সেই ভাইদের নিয়ে তিনি একটি বিরিয়ানির দোকান দিলেন ধানমন্ডিতে। এখন তিনি একটি ওয়েবসাইট বানাবেন নিজের ব্যবসার জন্য। তার ছোটভাই বলল, দুই ভাবে জামাল দোকানের নাম রাখতে পারেন-

www.jamalandbrothers.com
বা,
www.jamalbiriyani.com

এখানে যে ডোমেইনটিতে চোখে পড়া মাত্র জামালের দোকান সমন্ধে ক্রেতা সবচেয়ে জরুরী জিনিসটি জানতে পারেন সেটিকেই বেছে নেয়া উচিত। একজন লোক হয়তো জামালের বিরিয়ানির দোকানটি নেটে খুঁজছেন। তিনি নিশ্চই জামালের ভাইদের কথা লিখে সার্চ করবেন না। তিনি “জামাল বিরিয়ানি” এগুলো লিখে সার্চ করবেন। সুতরাং, দ্বীতিয় ওয়েবসাইট এড্রেসটিই অধিক উপযোগী। সাইটের এড্রেস এভাবেই তৈরী করা দরকার।

এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন বিষয়ক ভ্রান্ত ধারণাগুলো

প্রথম ভ্রান্ত ধারণা- একের অধিক ইএমডি কেনা: অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই আকারে বৃদ্ধি পাওয়ার পর একটি কাজ করে থাকেন। তাদের ব্যবসা ক্ষেত্রটির সাথে সম্পর্কিত বিপুল পরিমাণ এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন কিনে ফেলেন তারা।

এই সব ডোমেইনে কোন সাইট থাকে না। আপনি যদি ক্লিক করেন, দেখবেন ঐ মালিকরা নিজেদের ওয়েবসাইটে যাওয়ার একটি নির্দেশনা প্রদান করছেন। আর কিছুই নেই সেখানে।

প্রশ্ন হচ্ছে এই কষ্ট ও অর্থ ব্যয় যে তারা করছেন, তার কি কোন লাভ আছে? উত্তর হচ্ছে, “না”। এই ই-এম-ডি’গুলো তখনই কাজে লাগতে পারে যদি আপনি প্রতিটির ভেতরে আলাদা আলাদা পূর্ণ রূপে কার্যকর, স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট নির্মাণ করতে পারেন।

প্রতিটির জন্য স্বতন্ত্র কন্টেন্ট বানাতে হবে, সাইটগুলোকে মার্কেটিং করতে হবে, এবং প্রতিটি সাইটকে স্ব-স্ব সার্চ টার্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

এসব যদি কেউ করতে পারেন, তো খুবই ভালো। কিন্তু যে সময় লেগে যাবে এসব কাজে, সেই সময়, শ্রম ও অর্থ দিয়ে আপনি আমার মূল ওয়েবসাইটটিকেই অনেক বেশী উন্নত করতে পারতেন।

বহু সংখ্যক নতুন ডোমেইনকে শুধুমাত্র আপনার সাইটের প্রতি রিডিরেক্টিং করার সাথে কোন এসইও সম্পর্কিত উপকারের যোগ নেই। এত সহজ হলে তো হতই।

দ্বীতিয় ভ্রান্ত ধারণা- ইএমডি আপনার র্যাঙ্কিঙের ক্ষতি করে: মানুষের আরেকটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, তারা ভাবে একটি ই-এম-ডি আপনার র্যাঙ্কিঙের ক্ষতির করবে। তারা ভাবেন গুগলের ই-এম-ডি এলগরিদাম আপডেটটি আসলে “পেনাল্টি” বা শাস্তি প্রদানের মত বিষয়। ঠিক যেভাবে গুগলের অন্য আপডেটগুলোও বিভিন্ন সাইটকে দুই নম্বরী সাব্যস্ত করেছে, ই-এম-ডি আপডেটও তেমনি।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ই-এম-ডি আপডেট সার্চ টার্মের নামে ডোমেইন থাকার কিছু অন্যায় সুবিধাকে বিলুপ্ত করেছে ঠিকই, কিন্তু নতুন কোন ‘অসুবিধা’ যোগ করে দেয়নি। শাস্তির ধারণাটি প্রচলনের কারণ, যেসব সাইট আগে ই-এম-ডির সুবিধা পেত, এখন তারা পায় না। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে র্যাঙ্কিঙের একটি উল্লেখযোগ্য পতন লক্ষ্য করেছে তারা।

বিভিন্ন টপ লেভেল ডোমেইনগুলোর মাঝে পার্থক্য

বিভিন্ন টপ লেভেল ডোমেইন ( অর্থাৎ .com, .co.,uk, .org) বা টি-এল-ডি’গুলের মাঝে পার্থক্য নিয়ে একটি জিজ্ঞাসা প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়- “কোনটি বেশী ভাল বা কোনটিকে গুগল বেশী প্রাধান্য দেয়?” ডট কম কি ডট সিও বা ডট ইউকে’র চেয়ে ভাল? ডট আইও ব্যবহার করলে কি হবে?

এখানে কথা হচ্ছে, গুগলের নিয়মানুসারে তার চোখ সকল টিএলডি’ই সমান। অন্য কথায়, শুধুমাত্র একটি ডট কম ব্যবহার করার কারণে আপনি ডট বিয -এর ওপর র্যাঙ্কিঙ পাবেন না।

যদিও বহু স্প্যাম ও আজেবাজে সাইটগুলো প্রচলতি টি-এল-ডি’র বদলে ডট বিয ব্যবহার করছে, এমন দেখা যায়। তারপরও ডট বিযের ব্যবহারের কারণেই শুধুমাত্র গুগল কোন সাইটকে পিছিয়ে দিবে -এমন হবে না।

গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানী যে অ্যালফাবেট – তারা নিজেরাই একটি ডট এক্সওয়াইজেড (.xyz) ডোমেইন ব্যবহার করে থাকেন।

তাই বলেই, আপনি আবার এখন অপ্রচলিত ডোমেইন ব্যবহার করা শুরু করবেন না। একটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত যে, সাধারণ মানুষ এই কম পরিচিত টিএলডি’গুলোর সাথে পরিচিত নন। তারা আপনার ওয়েবসাইটের ইউআরএল স্মরণই রাখতে পারবেন না।

তাছাড়া জনসমাজে একপ্রকার মনোভাব তো প্রচলিত রয়েছে যে, ডট কম ওয়ালা একটি সাইট যতটা ভাল নির্ভরযোগ্য, ডট বিয ওয়ালা একটি সাইট তেমন নয়। মানুষে ভাবেন ডট বিয সাইটটি দুই নম্বরী, বা তারা চেষ্টা করেও ডট কম পাননি।

সবচেয়ে ভালো হচ্ছে, আপনার সাইট বা ব্যবসার বিষয় অনুসারে, যে ধরণের ডোমেইনে সবচেয়ে বেশী মানায় সেটিই নেয়ার চেষ্টা করুন। আপনাকে যদি ডট কম এবং আপনার দেশের লোকাল-ডোমেইনের মাঝে বেছে নিতে হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তি মাত্র একটিই- আপনার অভীষ্ট ভিজিটরগণ কোনটি পছন্দ করবেন। গুগলে র্যাংকিং এর সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।

হাইফেন এবং আন্ডারস্কোর

ডোমেইনে হাইফেনের ব্যবহার কম করাই ভালো। হাইফেন বসালে, ডোমেইনের নাম মনে রাখায় মানুষের কিছু সমস্যা হয়। আবার হাইফেন ওয়ালা ডোমেইন দেখলে সার্চ ইঞ্জিনগুলো স্প্যাম ভেবে থাকে।

ইউআরএল’এ হাইফেনের ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সমস্যা নেই। যেমন এখানে, https://ictbdtips.com/অন-পেজ-এসইও-কি/ হাইফেন ব্যবহারই ভালো, আন্ডারস্কোরের তুলনায়। ইউ-আর-এল’র ভেতরে, হাইফেন এবং আন্ডারস্কোরকে, গুগল কিভাবে দেখে থাকে তার ভিত্তিতে এই পরামর্শটি দেয়া হচ্ছে।

হাইফেন দিলে গুগল বুঝবে আলাদা আলাদা শব্দ। কিন্তু আন্ডারস্কোরের ক্ষেত্রে তেমন নয়। হাইফেন দেয়া থাকলে গুগল পড়বে “অন পেজ এসইও কি”। কিন্তু আন্ডারস্কোর দেখলে সে পড়বে “অনপেজএসইওকি”।

ডোমেইনের দৈর্ঘ্য

ডোমেইনের দৈর্ঘ্য এসইও’র ক্ষেত্রে কোন প্রত্যক্ষ উপকারে আসছে, এমনটা বলা যায় না। তারপরও ডোমেইনের নাম ১৪ থেকে ১৬ টি ক্যারেক্টারের মাঝে রাখাই যৌক্তিক।

প্রথমতঃ ডোমেইনের নাম ছোট হলে সেটি মনে রাখা সহজ। টাইপ করা সহজ। সুতরাং বানান ভুলের ফলে সাইটের ট্রাফিক হারাবেন এমন সম্ভাবনা কম।

দ্বীতিয়তঃ, লম্বা ডোমেইন নাম “এডওয়ার্ডস এডসে”র ক্ষেত্রে একটি সমস্যার সৃষ্টি করে। কারণ একটি এডের ডিসপ্লে অংশে প্রমাণ সাইজের একটি ডোমেইন নাম এঁটে দেয়া একটু সমস্যাই।

ডোমেইনের বয়স

আপনার ডোমেইনের বয়স র্যাঙ্কিঙের ওপর একটি প্রভাব ফেলতে পারে বটে। তবে সেটি স্বল্প পরিমাণেই অবশ্য। একটি বয়স্ক ডোমেইনকে দেখলে গুগল এমন একটা ধারণা পায় যে- এই ওয়েবসাইটটি বহুদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। সুতরাং সম্ভাবনা এমনটাই বেশী যে এটি একটি মানসম্পন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কোন ধোঁকাবাজ স্প্যামি সাইট নয়। কারণ স্প্যামি সাইটগুলোর সবসময়ই ক্ষণকালের জন্য তৈরী করা হয়।

দ্বীতিয় একটি ব্যাপার হচ্ছে, ওয়েবসাইটগুলোর বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের প্রাপ্ত লিংকের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে একটি আনকোড়া নতুন ডোমেইনের তুলনায় পুরাতন একটি ডোমেইনকে বেশী নির্ভরযোগ্য মনে হয়।

একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, আপনি কতদিনের জন্য ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান করলেন সেটি আপনার র্যাঙ্কিঙের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, আপনি যদি পাঁচ বছর মেয়াদী একটি রেজিস্ট্রেশানের জন্য টাকা দেন, তাহলে আপনার সাইটের র্যাঙ্ক যত ভালো হবে, আপনি এক বছরের জন্য রেজিস্ট্রি করলে তত ভালো হবে না।

এমন ধারণার পেছনে যুক্তি হচ্ছে, আপনি বেশী দিনের জন্য রেজিস্ট্রি করছেন অর্থ আপনার স্প্যামার হওয়ার সম্ভাবনা কম। এটি যুক্তি বটে। কিন্তু গুগল নিশ্চিত করেছে, র্যাঙ্কিঙের ক্ষেত্রে এমন কোন বিষয় নেই।

ক্যাপিটাল লেটার

ডোমেইনের নামগুলো কেস সেনসিটিভ নয়। সুতরাং, ictbdtips.com, আর ICTBDTips.com একই জিনিস।

তারপরও একটি বিষয় মনে রাখবেন- ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন যে মানুষরা, তাদের অনেকেই ডোমেইন ও অন্যান্য প্রযুক্তিঘেঁষা বিষয়গুলো অত বোঝেন না।

আপনি বড় হাতের অক্ষরে লিখলে তারা ঘাবড়ে যেতে পারেন, কারণ বরাবর ছোট অক্ষরের নাম দেখেই তারা অভ্যাস্ত। সুতরাং ছোট হাতের অক্ষরেই লিখুন।

পেজ ইউআরএল

পেজ ইউআরএল একমাত্র জায়গা যেখানে কিওয়ার্ড ব্যবহার করে আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানে কিছু ফল পেতে পারেন।

ধরুন আপনি নিজেই একটি সার্চ ইঞ্জিন। “টয়োটা কার” কিওয়ার্ডটির জন্য আপনাকে এই দু’টো পেজকে র্যাঙ্ক প্রদান করতে হবে-

প্রথম পেজ : www.rafikautos.com/d/1GHvQwaejk
দ্বীতিয় পেজ : www.rafikautos.com/cars/toyota-cars

“টয়োটা কার” কিওয়ার্ডটির সাথে কোনটিকে অধিক প্রাসঙ্গিক দেখায়? নিশ্চয়ই দ্বীতিয় পেজের ইউআরএল’টিকে।

আপনার ইউআরএল হবে সংক্ষিপ্ত, বর্ণণা প্রধান এবং শব্দ আলাদা করার জন্য হাইফেন ব্যবহার করতে পারেন। মানুষ সাধারণতঃ ডোমেইনের নাম মনে রাখে, পেজ ইউআরএল’ অত মুখস্থ রাখে না। সুতরাং আপনি হাইফেন ব্যবহার করে ইউআরএল তৈরি করতেই পারেন।

আপনি কি ধরণের প্লাটফর্ম ব্যবহার করছেন তার ওপর নির্ভর করে আপনি আপনার পেজের ইউআরএল তৈরি করবেন। যেমন, ওযার্ডপ্রেসের ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখে নেবেন আপনার “পার্মালিংক”গুলো সব পোস্ট নেম’এ সেট করা আছে কি না। এরপর আপনি পেজ এডিট করার সময়ই প্রতিটি পেজের ইউআরএল সম্পাদনা করতে পারবেন।

মানুষ যখন প্রথম বুঝল যে, ইউআরএল’এ কিওয়ার্ড জুড়ে দিলে র্যাঙ্কের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়, অনেকের ভেতরেই তখন ইউআরএল’র ভেতের সম্ভব সমস্ত কিওয়ার্ড ভরে দেয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হল। এই চর্চাটিকে বলা হত ‘কিওয়ার্ড স্টাফিং’। এটি ধোঁকাবাজি কৌশল। একসময় কাজ করত হয়তো।

কিন্তু বর্তমানে গুগল এটিকে ভাল চোখে দেখে না। গুগলের এলগরিদম ইউআরএল’এ কিওয়ার্ড স্টাফিং করা পেজকে র্যাঙ্কে পিছিয়ে দেবে।

সুতরাং অন্যান্য উচ্চ মানসম্পন্ন সাইটগুলো যেরকম ইউআরএল লিখেছে, সেরকমই লিখুন আপনার ইউআরএল; সংক্ষিপ্ত, বর্ণণায় সমৃদ্ধ, এবং জটিলতাহীন।

ইউআরএল’এ ক্যাপিটাল লেটারের ব্যবহার

এক্ষেত্রে ডোমেইনের তুলনায় ইউআরএল ভিন্ন। পেজ ইউআরএল’গুলো কেস সেন্সিটিভ। অর্থাৎ বড় হাতের অক্ষরে লেখা ইউআরএল এবং ছোট হাতের অক্ষরে লেখা ইউআরএল ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করবে।

তবে ক্যাপিটাল লেটার পারলে এড়িয়ে যাবেন। কারণ , ইউজাররা এক্ষেত্রে কিছু বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। তারা ইউআরএল টাইপ করতে গিয়ে ক্যাপিটাল এবং স্মল লেটার ওলট পালট করে ফেললে সাইটে এরর দেখবে। আবার আপনি ধরুন কোন জায়গায় লিংক পোস্ট করতে গিয়ে সব ছোট হাতের অক্ষরে লিখে ফেললেন। সেই লিংকেও ক্লিক করে গুগলের ইউজার এরর দেখবেন।

এই ফোর-ও-ফোর এরর বা “ পেজ নট ফাউন্ড” ইউজারদের জন্য একটি বাজে অভিজ্ঞতা। সুতরাং, আপনার পেজ যতবার এই ধরণের এরর প্রদান করবে, সার্চ ইঞ্জিনের র্যাঙ্কিঙেও ততবার একটি সূক্ষ হলেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।

অন্যদিকে মানুষ বিরক্ত হলে আপনার সাইটে ভিজিটরও কমে যাবে এমনিতেই।

ডোমেইন এবং ইউআরএলের সাথে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার এখানে ইতি টানছি। সততা ও পরিশ্রম আমাদের সবাইকে সাফল্য এনে দিক।

সম্পাদকের বাছাই –

Leave a Comment