বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে ইংরেজির বিকল্প নেই। ভালো একটা চাকরি পাওয়া হোক বা বিদেশে পড়ার স্বপ্ন অথবা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক মানুষদের সাথে কথোপকথন বা অস্কার প্রাপ্ত কোনো মুভি দেখা অথবা বিলিয়ন ভিউ পাওয়া ইংরেজি গানের লিরিক্স বোঝা, সকল ক্ষেত্রেই ইংরেজি শেখা ও বুঝতে পারার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়াতে ইংরেজির জ্ঞান ছাড়া ভালো শিক্ষার্থী বা সফল চাকুরীজীবি হওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না।
ছাত্রাবস্থা থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ইংরেজি শেখার গুরুত্ব সম্পর্কে কমবেশি আমরা সবাই জানি। কিন্তু অধিকাংশেরই ইংরেজিতে ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা! স্কুল জীবনের শুরু থেকেই ইংরেজি গ্রামার নামক একটা বই আমাদের ধরিয়ে দেওয়া হয়।
গ্রামারের এই গোলা ভরা রুলস, আবার একটু ভুল হলেই মার্কস কাটা, এই বিষয়গুলো ছোট থেকে আমাদের মধ্যে ইংরেজি ভীতি সৃষ্টি করে। ফলে বাংলা যেমন আমরা অনর্গল বলতে ও লিখতে পারি, ইংরেজির ক্ষেত্রে তেমনটা হয়ে উঠে না।
আজকে এই ভয়ভীতি দূর করার ও ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হওয়ার কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো মেনে চললে আপনিও হতে পারবেন ইংরেজিতে খুবই দক্ষ ও আত্নবিশ্বাসী একজন।
আরও পড়ুন –
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক কৌশলগুলো –
১. শব্দভান্ডার বৃদ্ধি করা
একটি শিশুর কোনো কিছু সম্পর্কেই ধারণা থাকে না। সে শেখে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে। অভিভাবকরা তাকে ছোট ছোট শব্দ শেখানোর চেষ্টা করে। সে শোনে, দেখে, বলে এবং একটা পর্যায়ে মাতৃভাষায় সে অনর্গল কথা বলতে পারে।
আমরা যেহেতু বাঙালি, ছোটবেলা থেকে বাঙলা শুনে আমরা অভ্যস্ত এবং এখন অবলিলায় বাংলা বলতে পারি। কিন্তু ইংরেজির ক্ষেত্রে সেই সুযোগটি কিন্তু নেই। তাই ইংরেজি ভোকাবুলারি বা শব্দার্থ প্রচুর পরিমানে বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য সবার আগে একটি ভালো মানের ডিকশনারি কিনুন।
বেশির ভাগ মানুষই বার বার পড়ার মাধ্যমে ভোকাবুলারি শিখে থাকেন। তাই ভোকাবুলারি শেখা অধিকাংশ মানুষের পক্ষে বিরক্তিকর। কারন একটা শেখলে আরেকটার খেয়াল থাকে না। এমনটা হওয়ার প্রধান কারণ হলো আমরা ২/১ বার পড়ে রেখে দেই।
একটা বিষয় মনে করিয়ে দেওয়া দরকার- মানব মস্তিষ্ক সর্বোচ্চ ৭২ ঘন্টা কোনো কিছু মনে রাখতে পারে। তাকে যদি পুনরায় সে বিষয় সম্পর্কে না জানানো হয় তাহলে সেটা তার মনে থাকে না । এই বাস্তবতা লক্ষ্য করলেই আমাদের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। আমরা পড়ে রেখে দেই। সেটার আর রিভাইস দেই না। এবং একটা পর্যায়ে ভুলে যাই।
ভোকাবুলারি ভুলে যাওয়ার আরো একটি কারণ হলো বাংলা শব্দটির সাথে সম্পর্ক স্থাপন না করা। অর্থাৎ বাক্য না বানানো ছোট বাক্যের থেকে দীর্ঘ বাক্য আমাদের মাথায় প্রভাব ফেলে বেশি এবং মনে থাকেও দারুন। সকল ক্ষেত্রে বাক্য বানিয়ে না পড়লেও কঠিন কোনো শব্দ মনে রাখতে হলে অবশ্যই বাক্য বানিয়ে পড়তে হবে।
কী পয়েন্ট গুলো হলোঃ-
- প্রতিদিন ইংরেজি শব্দার্থ বা ভোকাবুলারি শেখা।
- প্রতি ৩ দিনের মাথায় সেগুলো রিভাইস দেওয়া।
- কঠিন ভোকাবুলারিগুলো বাক্য বানিয়ে পড়া।
২. ইংরেজিতে কথা বলার অভ্যাস তৈরি করা
বাংলা শুনতে ও বলতে আমরা অভ্যস্ত তাই অনায়াসেই বাংলা বলতে পারি অথচ ইংরেজিতে ২/১ টা বাক্য বলতেও হিমশিম খাই অনেকেই। এর মূল কারণ আমরা ইংরেজি বলতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগি। ভুল হলে লজ্জ্বাজনক পরিস্থিতে পরতে হবে এই ভয়ে ভীত হয়ে থাকি।
ফলে ইংরেজিতে কথা বলা আর হয়ে উঠে না। ইংরেজি শিখতে হলে এই অভ্যাসটি পরিহার করতে হবে। যত ইচ্ছে ইংরেজি বাক্য বলুন। ভুল হয় হোক, কেননা ভুল থেকেই মানুষ শেখে। আর যদি একান্তই অনীহা থাকে অন্যদের সামনে ইংরেজিতে কথা বলার, তাহলে নিজে নিজে বলুন।
দাঁড়িয়ে যান আয়নার সামনে। তারপর কেমন আছেন, সারাদিন কি করলেন, কি করবেন ইত্যাদি যা ইচ্ছে বলুন। অথবা কোনো কিছু করার সময় সেটা নিজের কাছেই বর্ননা করুন ইংরেজিতে, বা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা ইংলিশ স্পোকেন সার্কেল গড়ে তুলুন।
তারপর নির্দিষ্ট একটা টাইম ফিক্স করে ওই সময়টুকু ইংরেজিতে কথা বলুন। অথবা সোশ্যাল মিডিয়া তো আছেই, প্রতিনিয়ত সেখানে সময় নষ্ট না করে কয়েকজন ফ্রেন্ড মিলে ইংলিশ স্পোকেন গ্রুপ বানিয়ে নিন, যেখানে কথা হবে শুধুমাত্র ইংরেজিতে। অর্থাৎ কথায় কথায় ইংরেজি বলুন।
কী পয়েন্ট হলোঃ-
তোতাপাখির মতো শুধু মুখস্থ করলেই হবে না! সেটাকে বাস্তবিকক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্য যতো সম্ভব বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি বাক্য বলুন ও অন্যদের সাথে প্রাকটিস করুন।
৩. ইংলিশ কার্টুন ও মুভি দেখা
চলচ্চিত্র মস্তিষ্ককে অনেক বেশি প্রভাবিত করে। খেয়াল করলেই দেখতে পারবেন আমাদের দেশের শিশুরা ভারতীয়দের মতো ফুল স্পিডে হিন্দি বলতে পারে। কারন কি? কারণ বাচ্চার কান্না থামানো থেকে শুরু করে ভাত খাওয়ানো পর্যন্ত তার সামনে কার্টুন ছেড়ে দেয়া হয়। ফলে ভাষা সমন্ধে কিছু না জানা সত্ত্বেও একটা সময় দেখতে দেখতে কখন কি বলছে, কিভাবে কি হচ্ছে, বিনোদনের সবকিছু তার মাথায় গেঁথে যায়।
তাকে যদি হিন্দি কার্টুনের পরিবর্তে ইংলিশ কার্টুন সবসময় দেখানো হয়, তাহলে একটা ছোট শিশুও অনর্গল ইংলিশ বলতে পারবে। বাচ্চার ক্ষেত্রে বুঝতে সময় নিলেও আপনি যেহেতু বড় আপনার ক্ষেত্রে চট করেই বুঝে ফেলা সম্ভব হবে। কার্টুন ও মুভি নানা ধরনের বিনোদনে ভরপুর। এগুলো দেখতে দেখতে কোনো একসময় আপনিও সেগুলো বুঝতে পারবেন এবং নিজেও বলতে পারবেন।
এদিক-ওদিক সময় নষ্ট না করে যদি প্রতিদিন ৩০ মিনিট করেও কার্টুন দেখেন তাহলে ৩ মাসে সেটা দাঁড়াবে ২৭০০ ঘন্টায়! এখন কোনো একটা বিষয়ের উপর অতি নিষ্ঠার সাথে নিয়মিত ২৭০০ ঘন্টা ব্যয় করলে সেটা আত্তস্থ করা শুধু সম্ভবই না, ১০০% সম্ভব।
কার্টুন দেখে ইংরেজি শেখা লজিক্যালি পসিবল। এক্ষেত্রে আপনি যদি খুবই বিগেনার লেভেলের হন তাহলে প্রথম প্রথম কিছু কিছু শব্দ হয়তো বুঝবেন না। কিন্তু তাই বলে ছেড়ে দিলে ইংরেজি শেখা কিন্তু আর হয়ে উঠবে না। কার্টুন দেখতে দেখতে কোনো একটা সময় সবকিছু বুঝতে পারবেন। একটু একটু বলাও শিখে যাবেন। ঠিক তখন থেকেই সপ্তাহে ২-৩ টা ইংলিশ মুভি দেখার অভ্যাসও গড়ে তুলুন। এতে করে দ্রুত কথা বলাটাও শিখে যাবেন।
কী পয়েন্ট হলোঃ-
ইংরেজি শিখতে নিয়মিত অন্তত ৩ মাস আধঘন্টা করে কার্টুন ও সপ্তাহে ২-৩ টি ইংলিশ মুভি দেখুন।
৪. সংবাদপত্র পড়া
রাতারাতি কোনো কিছুই হয় না। লাগে অদম্য ইচ্ছাশক্তি, হতে হয় নিষ্ঠাবান। উপরোক্ত কাজগুলো করার পাশাপাশি দৈনিক ইংরেজি সংবাদপত্র পরুন। এতে করে পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে আপডেট তো থাকবেনই, পাশাপাশি শিখতে পারবেন নতুন নতুন শব্দ। যা আপনার শব্দভান্ডারকে করে তুলবে আরো শক্তিশালী।
নিউজ পেপার পড়ার মূল উদ্দেশ্য রাখবেন যে টপিকে লিখা হয়েছে, যা লিখা হয়েছে অর্থাৎ সংবাদ বোঝার জন্য। শুরুতেই যদি নিউজ পেপার পড়ে ইংলিশ শিখতে চান ২/১ দিন পরই বোরিং লাগা শুরু করবে। তাই সংবাদ জানার জন্য সংবাদপত্র পরুন। কোনো একটা অচেনা শব্দ দেখলেই চটপট সার্চ দিয়ে শব্দার্থ জেনে নিন। এক্ষেত্রে জানা অজানা বিভিন্ন শব্দ আপনার সামনে আসবে, তা দেখে ঘাবড়ে যাবেন না।
হাতে একটা কালারের মার্কার নিয়ে খবরের কাগজ পড়তে বসুন। না জানা শব্দগুলো মার্ক করে নিন। তারপর এক এক করে সবগুলো শব্দের অর্থ জেনে নিন। এরপর, পুনরায় খবরের কাগজ পড়ুন। দেখবেন এ পর্যায়ে খুব সহজেই সব বুঝে ফেলছেন এবং পড়তেও আনন্দ লাগছে।
দৈনিক কম করে হলেও একটি ইংরেজি খবরের কাগজ শুরু থেকে শেষ অব্দি পড়ুন। বাংলাদেশে ইংরেজি অনেক ধরনের খবরের কাগজ আছে। যেমনঃ- Asian Age, Bangladesh Today, Daily Sun, Daily Star, Dhaka Tribune, Energy Bangla, Financial Express, Good Morning, Holiday, Independent, New age, News Today, New Nation, News From Bangladesh, Prothom Alo English, প্রভৃতি। ইংরেজি শিখতে পছন্দমতো যেকোনো একটি সংবাদপত্র নিয়মিত পড়ুন।
দৈনিক ইংরেজি সংবাদপত্র পড়ুন শুধুমাত্র সংবাদ জানার জন্য। যখন সংবাদ জানার জন্য পড়বেন তখন আপনার মধ্যে শব্দার্থ জানার তাগিদ আপনা আপনি তৈরি হবে। না জানা শব্দগুলো দাগিয়ে নিয়ে সেগুলো একেক করে সার্চ দিয়ে পড়ে নেওয়ার পাশাপাশি লিখে নিন। যখনই অবসর পাবেন সেগুলোর উপর চোখ বুলাবেন। এগুলোই মূলত আপনার শেখার বিষয়।
Featured Photo by Clarissa Watson on Unsplash
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-