কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে শীতকাল। একা নয়, সাথে নিয়ে এসেছে শুষ্ক আবহাওয়া ও ত্বকের হাজারো রকম সমস্যা। ঋতুভেদে ত্বকের নমনীয়তায় কম বেশি তফাৎ দেখা যায়। শীতকালে সে তফাৎ যেন একটু বেশিই। তাই ত্বকের উপর এই ধকল সামলাতে প্রয়োজন শীতকালে ত্বকের যত্ন নিয়ে বাড়তি ভাবনা।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিয়ে আলাদাভাবে কেন ভাববেন?
শীতকালে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ অনেক কমে যায়। যার প্রভাব পড়ে ত্বকে। বাতাসের আর্দ্রতা কম হওয়ায় ত্বকের আদ্রর্তাও কমে যায়। পরিণতিতে ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ, শুষ্ক ও প্রাণহীন। ত্বকের উজ্জ্বলতা খুব দ্রুত হারে কমে যেতে থাকে। চুলকানি, লালচে ভাব, ত্বকে টানটান ভাব, চামড়া উঠে যাওয়া, ঠোঁট ফাঁটা, পায়ের গোড়ালি রুক্ষ হয়ে ফেটে যাওয়া, হাতের নমনীয়ভাব চলে যাওয়াসহ দেখা দেয় ত্বকের নানান বাড়তি সমস্যা। শীতের সমস্যাগুলো যখন নানা সমস্যা সৃষ্টি করে তখন ত্বকের জন্য আলাদা করে বাড়তি যত্নও প্রয়োজন।
শীতল আবহাওয়ার জন্য এ ঋতুতে ত্বকের উপর একটু বেশিই চাপ পড়ে। ত্বক হয়ে পড়ে মলিন ও খসখসে। এজন্য পোশাক নির্বাচন থেকে শুরু করে বাইরে ঘোরাফেরা সবকিছুতেই প্রয়োজন হয় বাড়তি যত্নের।
এই শীতে ত্বকের যত্নে যেমন কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে তেমনি বাদ দিতে হবে কিছু ক্ষতিকর বদঅভ্যাস। তাই শীতের শুরুতেই তালিকা করে ফেলুন শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে আপনি কখন কি করবেন বা কি করবেন না।
শীতের পোশাক নির্বাচন ও পরিধানে সতর্কতা
উল বা বিভিন্ন সিন্থেটিক ফাইবার, রাসায়নিক রং, পোশাকের ফিনিশিং এ গোলযোগসহ বিভিন্ন কারণে শীতের পোশাকে ত্বকে লালচে ভাব বা চুলকানি হতে পারে। শীতকালে ত্বকের যত্নে যে সকল পোশাকে ত্বকে অস্থস্তি হয় যেসব পরা বাদ দিতে হবে। যেকোন ফাইবারে তৈরি শীতের পোশাক পরার আগে নিচে লাইট ফেব্রিক যেমন সুতি কাপড়ের কোন ফুলহাতা পোশাক পরে নিন।
যেহেতু শীতের পোশাক প্রায় এক বছর আগে তুলে রাখা হয় তাই আলমারি থেকে বের করেই পরা শুরু করবেন না। পরিধানের আগে কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে নিন। উলের কাপড় হলে আগে ব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে তারপর রোদে দিন।
শীতের পোশাক ময়লা হলে তা না ধুয়ে ব্যবহার করবেন না। পরিষ্কারের জন্য কম ক্ষারযুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ভারী হলেও ধোয়ার পর পানি ঝরাতে পোশাক নিংড়ানো যাবে না।
আরও পড়ুন-
- শীতকালে ফুল চাষ করার পদ্ধতি
- জেনে নিন ভালো শ্রোতা হওয়ার ১০টি কার্যকর উপায়
- যেভাবে সবার কাছে প্রিয় হতে পারবেন?
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শীতের রুক্ষ ত্বককে সিক্ত রাখতে প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। এতে ত্বক আর্দ্র থাকবে, দ্রুত শুষ্ক হবে না। যার ফলে ত্বক থাকবে সতেজ ও প্রাণবন্ত। শীতকালেও দিনে অন্তত ৬-৮ গ্লাস পানি পান করুন।
আর হ্যাঁ, কখনোই একবারে খুব বেশি পরিমাণ পানি পান করবেন না। দিনের বিভিন্ন সময় আধ গ্লাস করে কিছুক্ষণ পর পর পান করুন। একবারে খুব বেশি পানি পান করলেও আপনার শরীর কিন্তু সবটুকু পানি ধরে রাখতে পারবে না। তাই অল্প করে পান করুন যেন যেটুকু পান করা হলো সেটুকু ঠিকমতো কাজে দেয়। প্রতিবার খাবার খাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পর পানি পান করা আপনার স্বাস্থ্য ও ত্বক দুটোর জন্যই ভালো।
গোসলে ভুলভ্রান্তি
শীতের জন্য নিয়মিত গোসল করতে চান না অনেকেই। ত্বক সুস্থ্য ও সতেজ রাখতে চাইলে এ ভুল করবেন না। শীতকালেও প্রতিদিন গোসল করা জরুরী। অনেকে আবার মনে করেন এসময় প্রতিদিন গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু তা পুরোপুরি ভুল। গোসলের মাধ্যমেই আমাদের ত্বক সবচেয়ে বেশি আর্দ্র হওয়ার সুযোগ পায়। এ সুযোগকে ক্ষতিকর মনে করে হাতছাড়া করা বোকামি। শীতকালে একদিন গোসল না করলেই বোঝা যায় ত্বক কতটা রুক্ষ ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকে সত্যি, তাই বলে গোসলে ঘন্টা খানেক সময় কাটিয়ে দেবেন না। কম সময়ে গোসল সেরে নিন। চেষ্টা করুন ১০ মিনিটের মধ্যেই সেরে নেওয়ার। সেইসাথে চেষ্টা করুন ত্বকে সাবানের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার। শীতকালে ত্বকের রক্ষতার জন্য সাবানও কিছুটা দায়ী।
গরম পানিতে গোসল করতে পছন্দ করেন নিশ্চই? কিন্তু শীতকালে গোসলকে আরামদায়ক করতে গিয়ে ত্বকের ক্ষতি করছেন না তো? গোসলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহারের অভ্যাস বাদ দিন। পানিটা স্বাভাবিক বা কুসুম গরম পর্যায়ে রাখুন। অর্থাৎ শীতের জন্য পানির স্বাভাবিক তাপমাত্রা যতটা কমে যায় গরম পানি ঢেলে সে তাপমাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
শীতকালে ত্বকের যত্নে স্ক্রাবিং
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে স্ক্রাবিং খুবই প্রয়োজনীয়। আমাদের ত্বকে প্রতিনিয়ত মৃতকোষের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এসকল মৃতকোষ ত্বকের লোমকূপ বন্ধ করে ফেলে যার ফলে ব্রণ বা ইনফেকশন হয়। স্ক্রাবিং ত্বকের মৃতকোষ দূর করে ত্বককে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে। একইসাথে স্ক্রাবিং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিসহ ব্রণ ও ব্ল্যাক হেডস প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে।
দু’সপ্তাহে একবার স্ক্রাব করাই যথেষ্ট। যাদের খুব বেশি ধুলাবালির সম্মুখীন হতে হয় তারা সপ্তাহে একবার করে স্ক্রাব করতে পারেন। সাধারণ স্ক্রাবের সঙ্গে সামান্য গ্লিসারিন মিশিয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে কয়েকটি ঘরোয়া স্ক্রাবার
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে মধু খুবই উপকারী একটি অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। মুখের স্ক্রাবিং এর জন্য মধুর সাথে সামান্য টকদই মিশিয়ে স্ক্রাবার তৈরি করে নিন। প্যাকটি সারা মুখে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন এবং ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
মুখ স্ক্রাব করতে ব্যবহার করতে পারেন অলিভ অয়েলও। পরিমাণ মতো অলিভ ও কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেলের সাথে ১ চামচ চিনি মিশিয়ে মুখে স্ক্রাব করুন। চিনি গলে না যাওয়া পর্যন্ত ম্যাসাজ করতে থাকুন। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
বডি স্ক্রাবিং এর জন্য পরিমাণ মতো আমন্ড গুঁড়ো, দুধ ও টমেটোর রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে গোসলের আগে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর গোসলের সাথে ধুয়ে ফেলুন।
শীতকালে শক্ত হয়ে ফেটে যাওয়া হাত পায়ের ত্বকের যত্নে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েলের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে হাত ও পায়ে স্ক্রাব করুন। ৮-১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। মাসে দুবার ম্যানিকিউর ও পেডিকিউরও করলে ভালো ফল পাবেন।
শীতে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার
ত্বকে ময়েশ্চার আনতে গোসলের আগে ত্বকে অলিভ অয়েল লাগিয়ে নিন। সরিষা বা নারিকেল তেল হলেও হবে। গোসলের পর আধভেজা ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এটি আপনার ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখবে। যারা শুষ্ক ত্বকের অধিকারী শীতকালে ত্বকের যত্নে তাদের তুলনামূলক ভারী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত।
দিনে অন্তত দুবার মুখ ধোয়ার অভ্যাস করুন। শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ায় চারপাশে ধুলোবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই প্রত্যেকবার বাইরে থেকে আসার সাথে সাথে ত্বক ক্লিঞ্জার বা ফেসওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্লিঞ্জার / ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন ময়েশ্চার সমৃদ্ধ। এরপর অবশ্যই ত্বকে ভালো মানের টোনার ও ময়েশ্চরাইজার লাগান। টোনারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপজল।
যদি আপনার ত্বকে ব্রণ ও ব্রেকআউটের প্রকোপ বেশি থাকে তবে টোনারের পর সিরাম ব্যবহার করলে ভালো হয়। শীতকালে ত্বকের যত্নে হাইড্রেশন সিরাম ভালো কাজ করে।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার কোনমতেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। মেকআপে ফাউন্ডেশন বেছে নিন লিকুইড বেসড। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা মনে করতে পারেন তাদের ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তেমনটা নয়। যদি ময়েশ্চরাইজার ব্যবহারে ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে মনে হয় তাহলে ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তবুও শীতকালে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার বাদ দেওয়া যাবে না।
ত্বকের যত্নে সঠিক পণ্য
ত্বকের যত্নে সঠিক স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট বাছাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঋতুভেদে প্রায় সকল পণ্যের গুণাগুণ কম বেশি বদলে যায়। অন্যান্য ঋতুতে যে পণ্যটি আপনার উজ্জ্বল ত্বকের রহস্য শীতকালে তা আপনার ত্বকের সৌন্দর্য নষ্টের কারণ হতে পারে।
তাই শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে ডেইলি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট পরিবর্তন করুন এবং সঠিক পণ্য বাছাই করুন।
শীতের জন্য বেছে নিন ক্রিম বেসড ফেসওয়াশ / ক্লিঞ্জার। বেশি ফেনা হয় এমন ক্লিঞ্জার বা ফেসওয়াশ বাছাই করার প্রয়োজন নেই। যেহেতু শীতে ঘামের সমস্যা নেই তাই ধুলোবালি ও ময়লা পরিষ্কার করতে ক্রিম বেসড জেন্টল ক্লিঞ্জার বা ফেসওয়াশই যথেষ্ট হবে।
যতটা সম্ভব কম ক্যামিকেলযুক্ত পণ্য বাছাই করুন। শীতে ক্যামিকেল ত্বকের রুক্ষতা আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই কড়া সুগন্ধযুক্ত সাবান বা পারফিউম ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। সেইসাথে অ্যালকোহলিক উপাদান আছে এমন পণ্যগুলোও ব্যবহার না করাই ভালো।
প্রয়োজনে পারফিউমের পরিবর্তে বডি মিস্ট ব্যবহার করতে পারেন। বডি মিষ্টে সুগন্ধি তেলের পরিমাণ কম থাকায় এটি তুলনামূলক নিরাপদ।
শীতকালে গ্লিসারিন সমৃদ্ধ বা ময়েশ্চারাইজিং সাবান ব্যবহার করুন। সাধারণ সাবানে ক্ষারের পরিমাণ বেশি থাকে বলে ত্বক দ্রুত শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। ময়েশ্চার সমৃদ্ধ সাবানে ক্রিম, কোকো বাটার, নিউট্রাল ফ্যাট, ল্যানোলিনসহ বেশ কয়েক ধরণের তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই শীতকালে এ সাবানগুলো ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে পারে। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এ ধরণের সাবান খুবই উপকারী।
শীতকালে ত্বকের যত্নে সানস্ক্রিণ
অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন শীতকালে সানস্ক্রিমের কি প্রয়োজন? শীতকালে তো সূর্যের আলোর দেখাই মেলে না! আসলে সানস্ক্রিম আমাদের ত্বককে সূর্যের আলো থেকে নয়, সূর্যের আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে রক্ষা করে। শীতকালে আলো না পৌঁছালেও অতিবেগুনি রশ্মি আমাদের কাছে ঠিকই পৌঁছে যায়। এজন্য শীতকালে ত্বকের যত্নে বাইরে বেরোনোর ৩০ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিম লাগিয়ে নিন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য সানস্ক্রিম পাউডার ও শুষ্ক ত্বকের জন্য সানস্ক্রিম ক্রিম ব্যবহার করা হয়। তবে শীতকালে সবার জন্যই সানস্ক্রিম ক্রিম ব্যবহার করা ভালো।
মুখ ও হাত পায়ের জন্য আলাদা সানস্ক্রিম ব্যবহার করুন। মনে রাখবেন আপনার মুখের ত্বক দেহের ত্বকের চেয়ে সেনসেটিভ। তাই দেহের ত্বকের জন্য উপযোগী সানস্ক্রিম কোনমতেই মুখের জন্য উপযোগী হবে না।
সানস্ক্রিম কেনার আগে এসপিএফ এর বিষয়টি মাথায় রাখুন। এসপিএফ হলো সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর। কোন সানস্ক্রিম আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে কতটা সুরক্ষা দিতে পারে এসপিএফ হলো তার পরিমাপ।
সাধারণত এসপিএফ ৩০ বা এর কাছাকাছি মান ব্যবহার করা হয়। আপনার যদি দীর্ঘসময়ের জন্য বাইরে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে বেশি এসপিএফ দেখে কিনুন।
ঠোঁটের যত্ন
শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজন আলাদা করে ঠোঁটের যত্ন নেওয়া। শীতে ঠোঁট ফেটে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অনেকের আবার ঠোঁট ফেটে রক্ত ঝরতে দেখা যায়।
ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধে প্রয়োজন ঠোঁট সবসময় ময়েশ্চারাইজ রাখা, ঠোঁট শুষ্ক হতে না দেওয়া।
শীতকালে ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়ার আগেই কিছুক্ষণ পর পর ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন লাগাতে হবে। রাতে ঘুমানোর আগেও ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। সেইসাথে প্রতিরাতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। ঠোঁট ফাটার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যাবে।
ঠোঁট শুকিয়ে এলে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না। এক টুকরো তুলা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ঠোঁটে আলতো করে ৩-৪ বার চাপ দিন। ঠোঁটের নমনীয়তা ফিরে আসবে। এরপর ঠোঁটে লাগিয়ে নিন পেট্রোলিয়াম জেলি।
ঠোঁটের ডেডসেল দূর করতে ঠোঁটে অলিভ ওয়েল বা গ্লিসারিন ম্যাসাজ করুন। শুষ্ক চামড়া কখনো টেনে তুলবেন না। শীতের জন্য লিপস্টিকও বেছে নিন ময়েশ্চার সমৃদ্ধ।
হাত ও পায়ের যত্ন
শীতকালে মুখ ও ঠোঁটের পাশাপাশি হাত পায়ের ত্বকেরও প্রয়োজন বিশেষ যত্ন। হাত মোজা পা মোজা তো অবশ্যই, সেইসঙ্গে প্রয়োজন হাত ও পায়ের ত্বক ময়েশ্চারাইজ রাখা।
গোসলের পর আধভেজা ত্বকে লোশন লাগান। লোশনের ব্যবহার কখনোই এড়িয়ে যাবেন না। লোশনের পরিবর্তে গ্লিসারিনের সাথে সামান্য পানি মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এটিও ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করবে। অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেলও ব্যবহার করতে পারেন ত্বকের সুরক্ষায়।
প্রতিবার হাত ধোয়ার পর হাতে ময়েশ্চরাইজার বা পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান। ডিটারজেন্টের কারণে হাতে রুক্ষতা বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। রুক্ষতা দূর করতে ভিনেগারের সাথে পানি মিশিয়ে হাত ধুয়ে নিন। কাজ করার সময় গ্লাভস পড়ার অভ্যাস করুন। সেইসাথে ঘুমানোর আগে ময়েশ্চরাইজার লাগিয়ে হাতমোজা পরার কথা ভুলবেন না।
প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন বেসড ময়েশ্চারাইজার লাগান। পা উষ্ণ ও সফট রাখতে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পর মোজা পরে নিন। ঠান্ডা মেঝেতে খালি পায়ে হাঁটবেন না। ঘরে ব্যবহারের জন্য একজোড়া আলাদা স্যান্ডেল রাখুন অথবা মেঝেতে ম্যাট বেছানোর ব্যবস্থা করুন।
শীতে পায়ের গোড়ালি ফেটে যায় অনেকের। সমস্যা সমাধানে রাতে ফাটা গোড়ালিতে এক পরত পেট্রোলিয়াম জেলি বা নারিকেল তেল লাগিয়ে মোজা পরে নিন।
শীতকালে সঠিক খাদ্যাভ্যাস
শীতকালে খাদ্যাভাসেও দিতে হবে বিশেষ নজর। শীতকালীন ফলমূল ও শাকসবজি ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই বেশি বেশি রঙিন শাক সবজি ও ফল খাওয়া উচিত। এগুলো দেহে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে। সেইসাথে ‘ভিটামিন এ’ ও মিনারেলের অভাব পূরণ করে যা ভেতর থেকে ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে সাহায্য করে।
শীতে দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। সেইসাথে নিয়মিত গ্ৰিন টি পান ত্বকের সতেজতা ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মধু স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। বিশেষ করে শীতকালে। ঘুমানোর আগে বা সকালে ঘুম থেকে উঠে দুধের সাথে মধু মিশিয়ে পান করলে ভালো ফল পাবেন।
ত্বকের যত্নে নিয়মিত শরীরচর্চা
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে নিয়মিত শরীরচর্চাও জরুরী। এতে দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিক থাকবে ও দেহের প্রতিটি কোষে রক্ত ঠিক মতো পৌঁছবে। যার ইতিবাচক প্রভাব স্বাস্থ্যের পাশাপাশি পড়বে ত্বকেও।
ব্লাড সার্কুলেশন ঠিকমতো হলে শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্রুত হারিয়ে যাবে না।
তাই শীতের সকালে কাঁথার উষ্ণতা ছেড়ে শরীরচর্চায় লেগে যান। ব্যায়ামের আগে শরীর ওয়ার্ম আপ করতে ৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে নিন।
শীত আসতে না আসতেই শুরু হয়ে যায় ত্বকের নানান সমস্যা। ত্বকের কোন প্রদাহ যেমন: অ্যালার্জি, পাঁচড়া, দাদ বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে দেরি না করে সাথে সাথে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি এসব সমস্যা ও ত্বকের রুক্ষতা এড়াতে প্রথম থেকেই শীতকালে ত্বকের যত্নে মনোযোগী হোন এবং ত্বক রাখুন সুস্থ, সতেজ ও প্রাণবন্ত।
প্রাসঙ্গিক লেখাসমূহ পড়ে দেখতে পারেন-