আপনি কি সত্যিই সঠিকভাবে ব্লগিং করছেন? নাকি ভুলভাবে? অনেক কষ্ট করা সত্ত্বেও কি ভিজিটর পাচ্ছেন না? কিংবা আপনার ব্লগে ভিজিটররা থাকছে না? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তবে আপনাকে স্বাগতম। আপনি একদম সঠিক আর্টিকেলটি পড়ছেন। এখানে নতুন ব্লগারদের করা সবচেয়ে বড় কিছু ভুল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ব্লগ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে আয় করার জন্য কাউকে কোনো কোর্স করতে হয়না। এজন্য ব্লগিং করার, আর্টিকেল লিখার খুব সাধারণ কিছু নিয়ম সম্পর্কেও ব্লগারদের উদাসীনতা দেখা যায়। এই উদাসীনতাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘কাল’ হয়ে দাড়ায়।
অধিকাংশ ব্লগাররা ঠকার পরে শেখে। কিন্তু যখন আসল শিক্ষাটা পায়, তখন আবিষ্কার করে, ভুলভাবে কাটিয়ে দিয়েছে অনেকগুলো দিন! তাই আফসোস করতে হয়।
আপনি যেহেতু এই আর্টিকেলটি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন, এই আফসোসটা আপনাকে হয়তো আর করতে হবে না। কারন, একজন দিক-নির্দেশনা বিহীন ব্লগার দীর্ঘদিন ব্লগিং করার পর যে শিক্ষাগুলো পায়, সেই শিক্ষাগুলো পরবর্তী পাঁচ মিনিটে আপনি পেতে চলেছেন।
এখানে বেশ কয়েকটি সাধারণ ভুলের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মনযোগ দিয়ে পড়ুন এবং অবশ্যই এগুলো করা থেকে বিরত থাকুন।
নতুন ব্লগারদের করা সবচেয়ে বড় ভুল : কথা বলার মতো করে লেখা
(১) কুশল বিনিময়
এই ভুলটা আমি অনেককেই করতে দেখি। তারা এমন ভাবে লেখে, যেন এটা কোনো আর্টিকেল নয়, এটা হচ্ছে ভাষন! এরা সালাম দিয়ে লিখা শুরু করে এবং পাঠকের পরিবারের সব সদস্যের মঙ্গল কামনার মাধ্যমে লিখা শেষ করে।
দেখুন ভাই, এটা সত্যিকারের দুনিয়া নয়, এটা হচ্ছে ভার্চুয়াল লাইফ। এখানে কেউ আপনাকে চেনে না, চেনার চেষ্টাও করবেনা। তারা আপনার লিখাটি পড়বে তথ্য জানার জন্য। কুশল বিনিময় না করলেও কেউ আপনাকে অভদ্র ভাববে না।
লিখা সালাম দিয়ে শুরু করলেই বিপুল সওয়াব হয়ে যাবে, এমনটাও কিন্তু নয়। বরং পূণ্য লাভের আশা করতে গিয়ে পাপ হবার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। কারণ, ব্লগে লেখার পাশাপাশি বিজ্ঞাপন, ভিডিও, এনিমেশন প্রভৃতি থাকতে পারে যা সম্পূর্ণ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে প্রচার করা অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব নয়। কোনো পেশাদার লেখককে এভাবে লিখতে দেখেছেন?
বড় বড় ইসলামিক আর্টিকেলের লেখকরাও লিখার প্রথমে সালাম দেয় না। কারন, তারা জানে, তারা আর্টিকেল লিখছে, ভাষনের স্ক্রিপ্ট নয়। সালামের ব্যবহার এখানে প্রয়োজনীয় ও সমর্থিত নয়। আপনারা ভালো আছেন, আমি ভালো আছি, টাইপের কথাগুলো খুবই দৃষ্টিকটু, এবং হাস্যকরও বটে। কেউ যখন আপনার সাথে যোগাযোগ করবে, তখন কুশল বিনিময় করুন, লিখার মাঝে নয়।
(২) কথা বলার ভঙ্গিতে লিখা
হাই বন্ধুরা, আপনারা পড়ছেন নতুন ব্লগারদের করা সবচেয়ে বড় কিছু ভুল সম্পর্কে। তো, বন্ধুরা আমরা কিছু জিনিস অলরেডি জেনে ফেলছি। এখন জানব অন্যতম একটা বড় ভুল সম্পর্কে। তো, চলুন বন্ধুরা, শুরু করা যাক, কেমন?
উপরের অংশটুকুর লিখার ধরণ কি ব্যতিক্রম লাগলো? শুধু ব্যতিক্রমই নয়, এটা অনেকটা বিব্রতকর। অনেকে এভাবেই লেখে। প্রযুক্তি সম্পর্কিত বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এটা খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
আপনি যদি ওয়বসাইটে পাঠক ধরে রাখতে চান, তাহলে এমন বিব্রতকর লিখার ধরণ পরিহার করুন। নয়তো ভিজিটর আসবে, আর্টিকেল পড়বে, বিরক্ত হবে এবং দ্রুত ওয়েবসাইট ত্যাগ করে চলে যাবে।
(৩) আঞ্চলিকতা ও মুদ্রাদোষ
যারা কথা বলার মতো করে আর্টিকেল লেখে, তাদের লিখায় আঞ্চলিকতা ও মুদ্রাদোষ খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। যেমন অনেকে বার বার ‘তো’ শব্দটা ব্যবহার করে। অনেকে আবার বার বার ‘যাই হোক’ লিখতে লিখতে নিজের অজান্তেই ফোকাস কিওয়ার্ডই ‘যাই হোক’ করে ফেলে।
(৪) বানান ভুল
বানান ভুলের দিকে সর্বোচ্চ নজর রাখা উচিৎ। কারন গুগল কিন্তু খুব সহজেই ভুল বানান ধরে ফেলতে পারে। গুগলের কাছে প্রতিটি বাংলা শব্দের সঠিক বানানের লিস্ট আছে। আর তাছাড়া ফোকাস কিওয়ার্ড যদি ভুল বানান দিয়ে লিখা হয়, তাহলে লিখা যতই ভালো হোক, সার্চ ইঞ্জিনে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
(৫) একই কথা বার বার বলা
একই কথা বার বার লিখা যদি মুদ্রাদোষ হয়, তবে তা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। আর যদি ভেবে থাকেন, একই কথা বার বার বলে হাজার শব্দের বেশি বানালেই গুগল বেশি দাম দেবে, তাহলে আপনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন। ৫০০ শব্দের মাঝেও যদি যথার্থভাবে টপিক পরিষ্কার করতে পারেন, তাহলেও গুগলে র্যাংক করতে পারবেন, যদি লিখার মান ভালো হয়। অথচ দুই হাজার শব্দের অযথা প্যাঁচাল পেরে গুগল সার্চ লিস্টের প্রথম ৫০ টা কন্টেন্টের মধ্যেও টিকতে পারবেন না।
(৬) কিওয়ার্ড রিসার্চ না করে লিখা
লিখার আগে কিওয়ার্ড রিসার্চ করলে কোন টপিকে লেখা বেশি লাভজনক হতে চলেছে, সে সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোন কিওয়ার্ডে কিরকম প্রতিযোগিতা তা বুঝে উঠতে পারলে গুগলে র্যাংক করা সহজ হয়।
(৭) Long Tail Keyword ব্যবহার না করা
আপনি যদি আম নিয়ে লিখতে চান, তাহলে আপনার কিওয়ার্ড হবে ‘আম’। ভেবে দেখুন, এই কিওয়ার্ডে কি লিখার অভাব আছে গুগলে? কত বড় বড় ওয়েবসাইট, খবরের কাগজ আম সম্পর্কে আগেই লিখে রেখে দিয়েছে। আম সম্পর্কে কেউ সার্চ দিলে সেইসব বাঘা বাঘা ওয়েবসাইটকে টেক্কা দিয়ে আপনার নতুন ওয়েবসাইট কি গুগল সার্চ লিস্টের উপরের দিকে আসতে পারবে? এক কথায় অসম্ভব।
কিন্তু যদি আপনি একটু Specific ভাবে কিওয়ার্ড পছন্দ করেন, মানে ‘আম’ সম্পর্কে না লিখে ‘বাংলাদেশের আম’ নিয়ে লেখেন, তাহলে কিন্তু প্রতিযোগির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরেও অনেকটা প্রতিযোগিতা থেকে যাচ্ছেই।
এবার যদি আপনি আরো Specific করে ‘বাংলাদেশের ফজলী আম’ কে কিওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেন, তাহলে প্রতিযোগিতা আরো কমে আসবে। এখানে এই ‘বাংলাদেশের ফজলী আম’ই হলো Long Tail keyword।
নতুন ব্লগাররা Long Tail keyword নিয়ে না লিখে সাধারন সব কিওয়ার্ডে লেখা শুরু করে। তাই সফলতা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়তে হয়।
(৮) সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখা
আজ রোড এক্সিডেন্টে দুইজন মারা গেছে। এখন আপনি যদি খুব আবেগ দিয়ে এ সম্পর্কে কিছু লিখে ফেলেন এবং গুগল থেকে প্রচুর ভিজিটর আশা করেন, তাহলে আপনাকে হতাশা ছাড়া গুগল আর কিছুই দিবে না। আজ দুইজন মারা গেছে, কাল আবার কেউ মারা যাবে। আজকের এই মৃত্যুর খবর কেউ মনে রাখবে না। ১ বছর পর কেউ এই মৃত্যু নিয়ে গুগলে সার্চ দিবে না। তাই সম সাময়িক বিষয় নিয়ে না লিখে ধ্রুব বিষয় নিয়ে লিখুন, যেটা যুগের পর যুগ মানুষ গুগলে সার্চ করবে। তবে, আপনি যদি লেখাটি সংবাদপত্র বা এ ধরণের কোন ব্লগের জন্য লিখে থাকেন তবে এমনভাবে লিখুন যাতে করে লেখাটি বহুদিন পরও তার আবেদন না হারায়।
Page Structure Maintain না করা
(৯) Heading ব্যবহার না করা
একটা সুগঠিত Structure শুধু পেইজের এসইও এর জন্য নয়, ভিজিটরদের আকর্ষণেরও কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। আর পেইজের Structure ঠিক করার জন্য হেডিং (h1 – h6) একটি বড় ব্যাপার। হেডিং এর মাধ্যমে ভিজিটরদের চোখের সামনে কনটেন্টের বিভিন্ন ভাগ আলাদা আলাদাভাবে বিন্যস্ত করে দেখানো যায়। এতে তাদের বুঝতে সুবিধা হয়।
(১০) লেখার ভেতর বিভিন্ন রঙ ব্যবহার
একটা সুন্দর লেখাকে আজগুবি বানাতে এই একটা জিনিস যথেষ্ট। একাধিক রঙ ব্যবহার করলে খুব বাজে লাগে দেখতে। পেশাদার লেখকেরা থিমের সাথে মিল রেখে মার্জিত রঙ ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন। আর যদি রঙ সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকে, তাহলে ডিফল্ট কালো রঙই ঠিক আছে।
ব্লগারদের করা আরো কিছু ভুল
(১১) অনপেজ এসইও (On-page SEO) না করা
অনপেজ এসইও না করলে সার্চ ইঞ্জিন থেকে অর্গানিক ভিজিটরের আশা বাদ দিয়ে দিতে হবে। অনপেজ এসইও না করা বিশাল বড় ভুল।
অনপেজ এসইও এর ক্ষেত্রে কিছু জিনিস অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়, যেমন-
- একটা Focus Keyword নির্ধারণ করে আর্টিকেল লেখা।
- Post URL এবং Title এ Focus Keyword টা রাখা।
- আর্টিকেলের শুরুর এবং শেষের ২০০ শব্দের মধ্যে Focus Keyword যুক্ত করা।
- প্রতিটি লেখায় অন্তত একটি ছবি যুক্ত করা এবং সেটার AlT যেটা ট্যাগ এর মধ্যে Focus Keyword রাখা।
- প্রতিটি আর্টিকেলের ডেসক্রিপশনে অন্তত একবার Focus Keyword যুক্ত করা।
- সঠিক উপায়ে ব্যাকলিংক তৈরী করা।
প্রাসঙ্গিক লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন-
ব্যাকলিংক তৈরীর সময় ওয়েবসাইটের হোমপেইজের লিংক দেয়া কিন্তু মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়৷ বার বার এমন করলে গুগল এটাকে স্প্যাম হিসেবে নিতে পারে। এক্ষেত্রে কোথায় নিজের ওয়েবসাইটের লিংক দিচ্ছেন, সেখানে কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিলো, সেটার সাপেক্ষে আপনার ওয়েবসাইটের কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ আর্টিকেলের লিংক ঢুকিয়ে দিন।
আরো জানতে পড়ুন-
(১২) রাতারাতি বড়লোক হয়ে যাওয়ার আশা
ব্লগিং করতে আসা বেশিরভাগ মানুষের লজিক হলো- ব্লগ খুলব, কিছু ইনভেস্ট করব, এসইও করব, কয়েকটা কনটেন্ট লিখব, গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আবেদন করে এপ্রুভাল নিয়ে ব্লগে অ্যাড বসাব, ব্যস; এবার টাকা আয় করার পালা শুরু!
আসলে কিন্তু এমনটা না। ভালোমতো ব্লগিং করলে একদিন না একদিন অবশ্যই ইনকাম হবে। এটা ধ্রুব সত্য। কিন্তু কবে টাকা আসতে শুরু করবে এবং সেটার পরিমাণ কেমন হবে– তা কিন্তু কেউ জানে না।
তাই ব্লগিংকে আয়ের উৎস হিসেবে না দেখে শখ হিসেবে দেখলে হতাশ হওয়ার সুযোগ কম।
— পরিশেষে —
ব্লগিং হলো একটা নেশা। সংশয় ও হতাশা পেতে থাকলে নেশা কেটে যেতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু নেশাটাকে যথার্থভাবে কাজে লাগালে, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে বড় কিছু করার প্রেরণা বুকে ধারণ করলে, ভুলগুলো শুধরে এগিয়ে গেলে আর নেশা কাটার ভয় থাকবে না। বরঞ্চ বয়ে আনবে সাফল্য।
এই লেখায় নতুন ব্লগারদের করা সাধারণ ভুলগুলো তুলে ধরা হয়েছে। আপনি যদি এই ভুলগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন, তাহলে অবশ্যই সাফল্যের দিকে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন। সুনিশ্চিত হবে আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ার।