অনপেজ এসইও; সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন জেনে নিই- অনপেজ এসইও কি এবং কিভাবে খুব সহজে একটি ওয়েবসাইটে অনপেজ এসইও করা যায়? আশা করছি যারা অন পেজ এসইও সম্পর্কে একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জানতে চান তারা প্রত্যেকে উপকৃত হবেন।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কিংবা এসইও সম্পর্কে তো আজকাল কমবেশি সবাই জানেন। তাও যারা এখনো জানেন না তাদের জন্য বলছি- কোনো একটি ওয়েবসাইটকে ওয়েব ব্রাউজারের সার্চ রেজাল্টের শুরুর দিকে নিয়ে আসার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় সেটিকেই এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বলা হয়।
এসইও করার মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইটটিতে অধিক পরিমাণ ভিজিটর পাওয়া সম্ভব হয়। পাশাপাশি ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীদের কাছে পরিচিতি পায়। বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে এসইও এর প্রকারভেদে ভিন্নতা রয়েছে। এ প্রকারভেদগুলোর মধ্যে অনপেজ এসইও অন্যতম।
এখানে যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে –
তাহলে চলুন শুরু করা যাক ।
অনপেজ এসইও কি? (what is on-page SEO)
কখনো ভেবে দেখেছেন কোনো একটি টপিকে ওয়েব ব্রাউজারে সার্চ দিলে কিছু নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট কেন সার্চ রেজাল্টের প্রথম দিকেই থাকে? কিংবা এ প্রশ্নটি কি কখনো মাথায় এসেছে যে- কিছু ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের মান যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও সেগুলো কেনো সার্চ রেজাল্টের শুরুর দিকে থাকেনা?
চলুন, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার মধ্য দিয়েই অনপেজ এসইও কি তা জেনে নেয়া যাক!
সাধারণত একটি ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম দিকে অবস্থান করবে কিনা তা নির্ভর করে সে ওয়েবসাইটটির কন্টেন্টগুলো কতটুকু সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজড তার ওপর।
অনপেজ এসইও হলো এমন একটি এসইও প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোন একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করানোর উপযোগী করে তোলা হয় কিংবা এসইও এর ভাষায় অপটিমাইজ করা হয়। অনপেজ এসইও এর মূল উদ্দেশ্যই হলো কোনো একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করতে সহায়তা করা।
এসইও সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন-
কেন অনপেজ এসইও করা প্রয়োজন?
অনপেজ এসইও একটি ওয়েবসাইট র্যাংক করাতে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা একটি ছোট্ট উদাহরণের মাধ্যমে বলছি। ধরা যাক, মি. রহিমের একটি ব্লগসাইট আছে। সেখানে সে নিয়মিত লাইফস্টাইল বিষয়ক বিভিন্ন আর্টিকেল আপলোড করে থাকেন। সে ব্লগিংয়ে একেবারেই নতুন।
তাই অনপেজ এসইও সম্পর্কে পর্যাপ্ত কোনো ধারণা না থাকায় সে তার মতো করে আর্টিকেলগুলো লিখে সেগুলো তার ব্লগসাইটে আপলোড করে। এভাবে দুই তিন মাস অনেকগুলো আর্টিকেল আপলোড করার পর মি. রহিম লক্ষ্য করলেন- তার আর্টিকেলগুলোর মান যথেষ্ট ভালো হওয়া সত্ত্বেও তার ওয়েবসাইটটি ব্রাউজারের সার্চ রেজাল্টের শুরুর দিকে নেই।
সে ওয়েবসাইটটি থেকে আশানুরূপ ট্রাফিকও পাচ্ছেনা। বলতে পারবেন মি. রহিমের ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের মান ভালো হওয়া সত্ত্বেও কেন এমনটি হলো?
সত্যি বলতে, বর্তমানে ওয়েবসাইট এবং ভালো কন্টেন্ট এ দুটির সংখ্যাই অনেক বেশি৷ তাই যদি অনপেজ এসইও না করে শুধুমাত্র উন্নত মানের কন্টেন্ট তৈরি করে সেগুলো ওয়েবসাইটে আপলোড করেন তাহলে কখনোই ওয়েবসাইট সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করবেনা। এবং ওয়েবসাইটে আশানুরূপ ট্রাফিক পাওয়াও সম্ভব হবেনা। যেটি মি. রহিমের ক্ষেত্রে হয়েছে। যেহেতু সে তার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো অন পেইজ এসইও না করেই আপলোড করেছে।
এ কারণে তার তৈরি করা কন্টেন্টের মান ভালো হওয়া সত্ত্বেও সে আশানুরূপ ফল পায়নি। এখন বুঝতে পারছেন তো- কেন অনপেজ এসইও করা প্রয়োজন?
একটি ওয়েবসাইটে অনপেজ এসইও করার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনকে কোনো ওয়েবসাইটের কনটেন্টের মান বোঝাতে হয়। পাশাপাশি একজন সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীর করা সার্চের সাথে কন্টেন্টগুলো কতটুকু সম্পর্কিত সেটিও বুঝতে পারে।
বলা যেতে পারে- অনপেজ এসইও একটি ওয়েবসাইটের মার্কেটিং এর কাজ করে। সাধারণত যারা ব্রাউজারে কোনো বিষয়ে জানার জন্য সার্চ করেন তারা সার্চ রেজাল্টের প্রথমদিকে যে ওয়েবসাইটগুলো থাকে সেগুলো থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খুঁজে নেন।
যেহেতু সঠিকভাবে অনপেজ এসইও করা হলে একটি ওয়েবসাইট সার্চ রেজাল্টের শুরুর দিকে থাকে; সুতরাং ব্যবহারকারীরা সহজেই সে ওয়েবসাইটটি সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
উপরন্তু, তাদের সে ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো ভালো লাগলে তারা বারবার সে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে এবং নিজের ওয়েবসাইটের পরিচিতি বাড়াতে অনপেজ এসইও আপনাকে করতেই হবে!
কিভাবে অনপেজ এসইও করা যায়?
একটি ওয়েবসাইটে অনপেজ এসইও করার জন্য কয়েকটি ধাপ অবশ্যই অনুসরণ করতে হয়। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক- সে ধাপগুলো কি কি?
১। সঠিকভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করা এবং তা প্রয়োগ করা
অনপেজ এসইও এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং শুরুর দিকের একটি ধাপ কিওয়ার্ড রিসার্চ ৷ কিওয়ার্ড রিসার্চের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীরা কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি সার্চ করে থাকেন সেটি বের করা হয়৷ একটি ওয়েবসাইট র্যাংক করানোর জন্য কিওয়ার্ডের সার্চ ভলিউম হতে হয় বেশি এবং কম্পিটিশন হতে হয় কম।
কিওয়ার্ড রিসার্চ করার সময় অবশ্যই এ বিষয়টি মাথায় রেখে কিওয়ার্ড নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
তবে এক্ষেত্রে অনেকের একটি ভুল ধারণা রয়েছে৷ সেটি হলো ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে যত বেশি কিওয়ার্ড ব্যবহার করা হবে ততই ভালো। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণাটি সঠিক নয়। বরং ফোকাস কিওয়ার্ড অর্থাৎ যে কিওয়ার্ডের ভিত্তিতে কন্টেন্ট তৈরি করবেন সেটি যত ন্যাচারালি আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে ব্যবহার করবেন ততই ভালো।
ফোকাস কিওয়ার্ড কন্টেন্টের টাইটেলে, ভূমিকায়, মেইন কন্টেন্টে, পারমালিংকে ইত্যাদি স্থানে ব্যবহার করবেন। এতে করে আপনার কন্টেন্ট এসইও ফ্রেন্ডলি হিসেবে অপটিমাইজড হবে।
২। টাইটেল ট্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৌশলি হওয়া
অনপেজ এসইও এর ক্ষেত্রে টাইটেল ট্যাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি পেজ টাইটেল নামেও পরিচিত। টাইটেল ট্যাগ দেয়ার সময় সেটি যেনো কনটেন্টের বিষয়বস্তুর সাথে পুরোপুরি রিলেটেড হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি আপনার কন্টেন্টের ফোকাসড কিওয়ার্ডটিও যেনো টাইটেল ট্যাগে উপস্থিত থাকে এটিও মনে রাখতে হবে।
টাইটেল ট্যাগ যেনো আকারে খুব বেশি বড় না হয় সেদিকেও দৃষ্টি রাখতে হবে। মনে রাখবেন, একটি আকর্ষণীয় টাইটেলই পারে ওয়েবসাইট ভিজিটরদের আপনার সাইটের কন্টেন্টের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে। তাই এ ব্যাপারে যত্নশীল হতেই হবে।
৩। মেটা ডেসক্রিপশনের সঠিক ব্যবহার করা
অনপেজ এসইও এর ক্ষেত্রে মেটা ডেসক্রিপশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেটা ডেসক্রিপশন থেকে কোনো ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের ধরণ সম্পর্কে বোঝা যায়৷ এছাড়াও মেটা ডেসক্রিপশন ওয়েবসাইটের সিটিআর বাড়াতেও সহায়তা করে। মনে রাখবেন মেটা ডেসক্রিপশনটি অপটিমাইজ করার জন্য এটিতে অবশ্যই ফোকাস কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে।
আরও পড়ুন –
- মেটা ট্যাগ কি? মেটা ট্যাগ তৈরির নিয়ম
- অফ পেজ অপটিমাইজেশন : সার্চ ইঞ্জিন র্যাংকিং বৃদ্ধি করার পদক্ষেপসমূহ
৪। হেডার ট্যাগ ব্যবহার করা
হেডার ট্যাগ হলো এমন একপ্রকার এইচটিএমএল ট্যাগ যেটি কোনো কন্টেন্টের হেডিং এবং সাব হেডিংগুলোকে মূল কন্টেন্ট থেকে আলাদা করতে সহায়তা করে।
এটি অনপেজ এসইও করে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের শুরুর দিকে অবস্থান করতে সরাসরি সহায়তা না করলেও ভিজিটরদের কাছে কন্টেন্টকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তাই কন্টেন্টে হেডার ট্যাগ ব্যবহার করবেন।
৫। এসইও ফ্রেন্ডলি সহজবোধ্য কন্টেন্ট তৈরি
বলুন তো আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইট কন্টেন্টগুলো কাদের জন্য? এটির উত্তর হিসেবে এক কথায় সবাইই বলবেন- যারা ওয়েবসাইট ভিজিট করেন তাদের জন্য।
তাহলে আপনার তৈরি কন্টেন্ট যদি সহজবোধ্য এবং এসইও ফ্রেন্ডলি না হয়, তাহলে ওয়েবসাইট র্যাংক করলেও সে ওয়েবসাইটে আশানুরূপ ভিজিটর কখনোই পাওয়া যাবেনা।
তাই অনপেজ এসইও এর ক্ষেত্রে একটি আবশ্যক ধাপ হলো এসইও ফ্রেন্ডলি সহজবোধ্য কন্টেন্ট তৈরি করা।
মনে রাখবেন, ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট আর সাহিত্য রচনা এ দুটি এক বিষয় নয়। কাজেই ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট তৈরির সময় সহজবোধ্য ভাষা ব্যবহার করুন। যেনো আপনার কন্টেন্ট ভিজিটরদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয় এবং তারা সেটি পড়ে দেখার আগ্রহ বোধ করে।
৬। এসইও ফ্রেন্ডলি ইউআরএল রাখা
সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি ইউআরএল এর ক্ষেত্রে ইউআরএলটিতে ফোকাস কিওয়ার্ডটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ইউআরএল যেনো আকারে ছোট হয় পাশাপাশি যেনো অতিরিক্ত বিরামচিহ্নের ব্যবহার না থাকে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
৭ । ইমেজ অল্টার টেক্সট ব্যবহার করা
যারা কনটেন্টে ইমেজ ব্যবহার করেন তাদের জন্য অন পেজ এসইওর এ ধাপটি অনুসরণ করা আবশ্যক। এতে করে যেসব ব্যবহারকারী ইমেইজ সার্চ এর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে তারা আপনার কন্টেন্ট থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।
৮। ইন্টারনাল লিংকি বিল্ডিং করা
অনপেজ এসইও এর ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক একটি ধাপ হলো ইন্টারনাল লিংকিং৷ ওয়েবসাইটের একটি কন্টেন্টের সাথে একই ধরণের অন্যান্য সহায়ক কন্টেন্ট লিংক করে দেয়াকেই ইন্টারনাল লিংকিং বলা হয়৷ ইন্টারনাল লিংকিং ওয়েবসাইট র্যাংক করার সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে।
৯। মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট তৈরি করা
বর্তমানে যারা ওয়েবসাইট ব্যবহার করেন তাদের বড় একটি অংশই ব্রাউজিংয়ের কাজে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তাই সঠিকভাবে অন পেইজ এসইও করতে আপনার ওয়েবসাইটটি যেন মোবাইল ফ্রেন্ডলি হয় সেদিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেবেন৷ সাইটের লোডিং স্পিড যেনো ভালো হয়, কন্টেন্টে ব্যবহারকৃত ছবিগুলো যেনো যেকোনো ডিভাইসেই খুব তাড়াতাড়ি লোড হয় সেদিকেও খেয়াল রাখবেন ৷
১০। কন্টেন্ট অডিট করা
একটি ওয়েবসাইটে অন পেইজ এসইও করার জন্য কন্টেন্ট অডিটের গুরুত্ব অপরিসীম৷ কন্টেন্ট অডিট হলো কোনো একটি ওয়েবসাইটের কন্টেন্টে ব্যবহৃত তথ্য ঠিক আছে কিনা, সে কন্টেন্ট থেকে টার্গেটেড ট্রাফিক আসছে কিনা, পাশাপাশি কন্টেন্টের ধরণে কোনোরকম পরিবর্তন আনা উচিত কিনা তা খতিয়ে দেখা। অনপেজ এসইও তে এ ধাপটির সরাসরি ভূমিকা না থাকলেও পরোক্ষভাবে এটি ভূমিকা রাখে৷
মূলত এগুলোই ছিলো একটি ওয়েবসাইটে অনপেজ এসইও করার গুরুত্বপূর্ণ ধাপসমূহ। এ ধাপগুলোই কোনো ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাতে র্যাংকিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।
তবে এটিও জেনে রাখা জরুরি যে অনপেজ এসইও এর পুরো প্রক্রিয়াটি পরিবর্তনশীল। কেননা বিভিন্ন সময়ে এ র্যাংকিং ফ্যাক্টরগুলোতে বিভিন্ন আপডেট দেখা যায়। তাই সবসময় এ আপডেটগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।
পরিশেষে এটুকুই বলতে চাই, যদি নিজের ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করিয়ে টার্গেটেড ভিজিটর বা ট্রাফিক পেতে চান, তাহলে অবশ্যই অনপেজ এসইও কি এবং কেন প্রয়োজন এই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখুন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন –