৫টি কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর উপায়

কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা বর্তমানে অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি দক্ষতা। শুধু বর্তমান বললে ভুল হবে, এটি প্রাচীনকালেও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কমিউনিকেশন স্কিল চাকুরী, ব্যবসা তথা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। তাই আজ এ লেখাতে কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

লিংকড’ইনের একটি জরিপে দেখা গেছে, বেশি চাহিদা সম্পন্ন সফট স্কিলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ দক্ষতা সবার ওপরে রয়েছে। কমিউনিকেশন স্কিল যে কোনো ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ। যার কমিউনিকেশন স্কিল যতো বেশি কার্যকর, তার সফল হওয়ার পার্সেন্টে’জও ততো বেশি।

এই দক্ষতাটি অপরের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে আমাদের কাঙ্খিত উদ্দেশ্যটি হাসিল করা সহজতর হয়ে যায়।

যোগাযোগ দক্ষতার মুখ্য উদ্দেশ্যই হলো- অন্যের কথা ভালোভাবে বুঝতে পারা ও অন্যকে নিজের কথা পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারা। এবং, অপরপক্ষের কাছে নিজের সম্পর্কে ভালো মনোভাব তৈরি করতে পারা।

যোগাযোগ দক্ষতা কথা বলে বা লেখার মাধ্যমে, দুইভাবেই হতে পারে। আশাকরি এতক্ষণে যোগাযোগ দক্ষতার গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা পেয়ে গেছেন।

তাই চলুন দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক-

৫টি যোগাযোগ দক্ষতা বা কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর উপায়


০১। সম্মান ও সহানুভূতিশীলতা প্রদর্শন করুন

কমিউনিকেশন স্কিলে সম্মান ও সহানুভূতিশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অপরপক্ষের কাছে সহজেই নিজের সম্পর্কে ভালো মনোভাব তৈরি করা যায়। যেমনঃ- কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র যারা আছেন তাদেরকে অবশ্যই অবশ্যই সালাম দেওয়া। “কেমন আছেন” তা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করা।

এই বেসিক বিষয়টা আমরা সবাই জানি তাই না? তবে কতোজন এটা মেনে চলি বলুন তো? অপরপক্ষের অবস্থা হয়তো মাঝেমধ্যে আমরা জানতে চাই। তবে ৯০-৯৫% মানুষই সালামটা মিস করে যাই। আর এখানেই সুযোগ নিজেকে অন্যদের থেকে একটু আলাদা করার।

জুনিয়রদের সাথে সবসময় তুমি করে ও হেসে হেসে কথা বলুন। এ জায়গায় অনেকেই যে ভুলটা করে সেটা হলো জুনিয়র যারা আছে বা আসে তাদেরকে ভদ্রতাস্বরূপ আপনি করে সম্বোধন করে। যেটা কখনোই করা উচিত না।

তুমি সম্বোধন করলে মানুষটাকে অনেকবেশি কাছের মনে হয়, সংকোচ কেটে যায়, কথা বলা সহজ হয়। তবে অবশ্যই জুনিয়রদের সাথে কথা বলার আগে, কি বলে সম্বোধন করলে সে খুশি হবে সেটা জেনে নিবেন।

অনেকে আবার একান্ত আপনজন ছাড়া কেউ তুমি সম্বোধন করলে সেটা পছন্দ করে না বা ভালো চোখে দেখে না। ব্যতিক্রম থাকতেই পারে, তাই আগে থেকেই জেনে নেওয়া ভালো।

কথা বলার সময় অপরপক্ষ যখন ভালো কথা বলে তখন মুখে একটা হাসি হাসি ভাব রাখা, যখন হাসির কথা বলে তখন খানিকটা হাসা, যখন দুঃখের কথা বলে তখন আপনার’ও উচিত দুঃখ প্রকাশ করা এবং অপরপক্ষ যখন কিছু বলতে না চায় তখন ভুলেও জোর করতে যাবেন না।

এ বিষয়গুলো মেনে চললে সিনিয়র / জুনিয়র সবাই আপনাকে পছন্দ করবে। পাশাপাশি অন্যরাও আপনাকে নিয়ে ভালো ভালো কথা বলবে।

০২। অন্যদের কথা মনোযোগ সহকারে শুনুন

বক্তার কথা মনোযোগ দিয়ে না শুনলে সে কথা বলতে নিরুৎসাহিত হবে এবং দ্বিতীয়বার আপনার কাছে কিছু বলতে চাইবে না। এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে আপনি বঞ্চিত হতে পারেন। তাই কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ভালো শ্রোতা হতে হবে।

ভালো শ্রোতা হতে পারলে অপরপক্ষের কাছে খুব সহজেই আপনি সমাদৃত ও পছন্দনীয় হবেন। ভালো শ্রোতা হওয়ার প্রথম শর্তই হলো মনোযোগ সহকারে অপরপক্ষের কথা শোনা। তা-ই বলে শুধু শুনে গেলেই হবে না, বক্তার কথায় সহানুভূতি প্রদর্শন করতে হবে।

বক্তার কথার ধরণ অনুযায়ী মাঝে মাঝে সম্মতি (হ্যাঁ)  ও অসম্মতি (না) প্রকাশ করুন। বক্তা যা বলছে তা মনে রাখার চেষ্টা করুন। যাতে পরবর্তীতে সহজেই তার খোঁজখবর নিতে পারেন বা সে-বিষয়ক কিছু বললে সহজেই বুঝতে পারেন।

বক্তা খারাপ সময় পার করলে বা বিপদে পড়লে যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করুন। সাহায্য করতে না পারলে’ও পরে একবার তার অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখুন। ফলে পরবর্তীতে আপনার বিপদে তাকে পাশে পাবেন।

বক্তা কথা বলার সময় কখনোই তাকে কথার মাঝে থামিয়ে দিবেন না। এতে সে বিরক্তিবোধ করবে। তার কথার সাথে কিছু যুক্ত করার হলে বা কোনো প্রশ্ন থাকলে তার কথা শেষ হওয়ার পর ধীরেসুস্থে বলুন। এবং, কখনোই বক্তার সাথে আরগুমেন্ট’ (তর্কে) এ যাবেন না।

তর্কে আপনি যতোই যুক্তিবাদী হোন’না কেনো সে যদি তর্কে জেতে তাহলে আপনি তার কাছে খারাপ হবেন, কারণ আপনি তার সাথে তর্ক করেছেন। এবং, সে যদি হারে তাহলেও আপনি তার কাছে খারাপ হবেন, কারণ তাকে আপনি তর্কে হারিয়ে দিয়েছেন।

আরগুমেন্ট সবসময় অপরপক্ষের কাছে আমাদের সম্পর্কে খারাপ ইম্প্রেশন তৈরি করে। তাই এটা থেকে সবসময় দূরে থাকবেন।

০৩। আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখুন

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও ব্যর্থতার পেছনে সহকর্মীদের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্ক বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। সহকর্মীদের সাথে আন্তঃসম্পর্ক বা সুসম্পর্ক বজায় রাখলে সবাই আপনাকে পছন্দ করবে। ফলে আপনার অপরদের থেকে সহায়তা পাাওয়া সহজতর হয়ে যাবে। পাশাপাশি খুব সহজেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রিয় পাত্র হতে পারবেন।

তাই সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা আমাদের ব্যক্তিগত দক্ষতার মধ্যে পরে। সবসময় সহকর্মীদের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। তাদের অবস্থা জানতে চান। যেমনঃ- কেমন আছে বা দিনকাল কেমন যাচ্ছে, ইত্যাদি বিষয়গুলো।

তর্ক এড়িয়ে চলুন। একজনের কথা আরেকজনের কাছে বলা থেকে বিরত থাকুন। একের কথা অপরকে বলে বেড়ালে আপনার ওপর থেকে সবার বিশ্বাস উঠে যাবে। ফলে কেউ আপনার কাছে কিছু বলতে চাইবে না। পাশাপাশি অপছন্দ করার বিষয়তো আছেই।

কোনো সহকর্মী অনুপস্থিত থাকলে পরবর্তীতে তার খোঁজ-খবর নিন। তাদের ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করুন। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন। এই বিষয়গুলো ঠিক রাখলে সবার সাথে আপনার সুসম্পর্ক বজায় থাকবে।

০৪। আপনার কথা অন্যদের কাছে সহজ ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন

নিজের কথা অন্যদের পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারা’ও কমিউনিকেশন স্কিল’এর গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। কারণ যোগাযোগ দক্ষতা মানেই অন্যের কথা ভালোভাবে বুঝতে পারা ও অন্যকে নিজের কথা পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারা।

এর জন্য ভালো বক্তা হওয়া বাঞ্চনীয়। ভালো বক্তা হতে গেলে দ্রুত কথা বলার অভ্যাস পরিহার করতে হবে। দ্রুত কথা বললে অপরপক্ষের কথা বুঝতে যেমন অসুবিধা হয়, তেমনি কথার মাঝে ভুল হওয়ার সম্ভবনাও থাকে।

তাই কথা বলার সময় ধীরে ধীরে কথা বলুন। এতে করে শব্দ খুঁজে পাওয়ার ও গুছিয়ে কথা বলার জন্য যথেষ্ট সময় পাবেন। কথা বলার সময় মুখে একটা হাসি হাসি ভাব রাখুন।

কথা বলার সময় সোজা হয়ে দাড়ান ও শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সোজা হয়ে দাড়ালে ও শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললে তার কাছে আপনাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী মনে হবে। এবং, ভাববে আপনি  যা বলছেন তা সম্পর্কে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান আছে। এতে করে তার কাছে আপনার কথার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

শ্রোতা একাধিক হলে একজনের দিকে তাকিয়ে কথা না বলে, সবার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে। এবং মাঝে মাঝে তাদের তাদের সম্মতি অসম্মতি বা পরামর্শ জানতে চাইতে হবে। এতে করে তারা আরো বেশি মনোযোগী হবে এবং আপনি আপনার কথা তাদেরকে পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারবেন।

০৫। বাচনভঙ্গি ও ভাষাগত বিষয়গুলো ঠিক রাখুন

বাচনভঙ্গি ঠিক না থাকলে শ্রোতা বা বক্তা উভয়ই বিরক্ত হয়। তাই বাচনভঙ্গিমার দিকে বিশেষ নজর দিন।

কথা বলার সময় উচ্চস্বরে কথা বলা পরিহার করুন। ধীরে ধীরে কথা বলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। খেয়াল রাখবেন, কথা বলার সময় আপনি অযথা হাত-পা নাড়াচ্ছেন কি-না। এটা খুবই বিরক্তিকর পাশাপাশি উপহাসের পাত্র হওয়ার জন্য দায়ী।

দাড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাড়াবেন এবং বসে থাকলে সোজা হয়ে বসবেন। এটা বেসিক বিষয় হলেও বেশিক্ষণ বসে থাকতে থাকতে মনের অজান্তেই আমরা কিছুটা অলস ও  কুঁজো হয়ে যাই। তাই সোজা হয়ে দাড়ানোর ও বসার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার মেরুদণ্ড ভালো রাখার পাশাপাশি আপনাকে আত্মবিশ্বাসী ও অধিক মনোযোগী করে তুলবে।

কথার মাধুর্য বাড়াতে কথা বলার সময় শুদ্ধ, সুন্দর ও স্পষ্টভাবে শব্দ উচ্চারণ করতে হবে। খেয়াল রাখবেন আপনার কথায় যেনো আঞ্চলিকভাব না থাকে।

নির্ভুল বাংলা ও ইংলিশ  বলা আয়ত্ত করুন। আরো ভালো হয় যদি বাংলা ও ইংলিশ একত্রে জগাখিচুড়ি বানিয়ে বলা বা বাংলিশ ভাব পরিহার করতে পারেন।

বাংলায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করলে শুধুমাত্র বাংলাতেই বলুন। ইংলিশ’ এ বলতে চাইলে শুধুমাত্র ইংলিশ’ই বলুন। একটু পরপর বাংলা, ইংলিশ একত্রে মিশিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে বললে শুনতেও শ্রুতিকটু লাগে।

উপরোক্ত বিষয়গুলো সঠিকভাবে মেনে চললে আশাকরি আপনার কমিউনিকেশন স্কিল বাড়ানোর উপায় সমূহ আয়ত্ব করার ক্ষেত্রে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।

আরও পড়ুন-

Leave a Comment