অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি বেড়েছে শিশুদের ফোনের প্রতি নেশা। করোনাকালীন সময়ে বেড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা। আর তার অধিকাংশই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার জন্য।
যেহেতু ২০২০ এর মার্চ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো, সেই কারণেই দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হচ্ছিল। দিনের পর দিন তাদের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল। এই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের সরকারের নির্দেশে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
প্রাইমারি স্কুলের ক্লাসগুলোও অনলাইনে হয়েছে। এর প্রভাবে সিলেবাস কভার অনেকটাই করা সম্ভব হয়েছে।
অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা যেহেতু এই দেশে প্রথম তাই বাচ্চাদের এই ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহ জন্মেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- সব শিক্ষার্থী কি সেই সুযোগটা পেয়েছে? যারা সুযোগ পেলো তারা সেখান থেকে কতটুকু পজিটিভ দিক গ্রহণ করেছে? তাছাড়া তাদের শারীরিক ও মানসিক দিকে কেমন প্রভাব পড়লো? সেটাও বিবেচনার বিষয়রুপে গণ্য করা যায়।
একটা জরিপে দেখা গেছে, ৩০-৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করার সুযোগ পায়নি। তবে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা নিসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ, এই বন্ধের মধ্যেও শিক্ষার্থীরা পড়ালেখার সংস্পর্শে ছিলো এই ব্যবস্থায়।
অনলাইন ক্লাসের ফলে ছাত্রছাত্রীদের গৃহবন্দী একঘেয়ে জীবনে বৈচিত্র্যতাও এসেছে। তবে সামনাসামনি পাঠদান ও গ্রহণ যতটা স্বাভাবিক ছিলো শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে, অনলাইনে তা আবার কিছুটা চ্যালেঞ্জিংও হয়ে উঠেছে।
আবার, এই অনলাইন শিক্ষার নেগেটিভ প্রভাবও বেশ নজরে এসেছে। শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখলো তা মূল্যায়ন করার সঠিক পদ্ধতির ব্যবহার নেই।
অনেকে পড়ায় মনোযোগও দিতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে বুঝতে না পারলেও দ্বীতিয়বার প্রশ্ন করতে পারছে না শিক্ষককে।
শারীরিক দিক থেকেও অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। একটানা ২ থেকে ৩ ঘন্টা বসে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ১৮ বয়সীদের নিচে ৮ বছরের বাচ্চাদেরও অনুসরণ করতে হচ্ছে এই পথ। আর ক্ষতি এদেরই বেশি হচ্ছে।
এতে ব্রেইন ও চোখেও ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনেকক্ষণ স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ফলে চোখে চাপ পড়ছে এবং মাথা ব্যাথার মতো অনেক রকমের রোগ দেখা দিচ্ছে।
পৃথিবীর এই পরিস্থিতিতে মন না চাইলেও আমাদের অনেক কিছুই করতে হচ্ছে। তবে জেনে শুনেই আমরা শিশুদের করে দিচ্ছি ইন্টারনেটমুখী।
অনলাইন ক্লাসের সময় হয়ত অনেক শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছে অন্য এপস গুলোতে। যেটা হয়ত তার জন্য মানানসই নয়। ১৮ বছরের নিচে ফোনের প্রতি নেশা থাকাটা একটি শিশুর ভবিষ্যৎ নষ্টের মূল কারণও হয়ে উঠছে।
এমনও দেখা যাচ্ছে- একই স্ক্রিনে ক্লাস চালু রেখে শিক্ষার্থীরা গেইম খেলায় মগ্ন হয়ে পড়েছে। অন্যান্য বন্ধু বান্ধব এর সাথে মেসেজ কিংবা গল্পগুজব করার তথ্যটিও উঠে এসেছে এতে।
অনলাইন ক্লাস এর সুবিধাটা এখন ইন্টারনেট এর প্রতি নেশায় পরিণত করে দিয়েছে। তাই গত এক বছরে করোনার সময়টাতে সোশাল অ্যাপস ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে দ্বিগুণ।
বই পড়ার প্রতি আগ্রহ কমছে বাচ্চাদের। ইন্টারনেটে পড়ার অজুহাতে বাচ্চারা মিটিয়ে নিচ্ছে তাদের মোবাইল ব্যবহারের চাহিদা। এই দিক থেকে বেড়ে যাচ্ছে নানা রকম সাইবার সমস্যাও। বাচ্চারাও শিকার হচ্ছে নানা রকম সাইবার বুলিং এর।
শিক্ষার্থীদের যতটুকু সম্ভব ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে দূরে বসাতে হবে। হাতে দিয়ে দিলে তারা নিজ খুশি মত ডিভাইসটি ব্যবহার করবে। পড়ায় মনোযোগ থাকবে না।
স্কুলে শিক্ষক-পড়ুয়ার উপস্থিতিতে শিক্ষার গভীরতা বাড়িতে বসে সম্ভব নয়। এতে তেমন বিকাশও ঘটছে না৷ মা বাবাকে অবশ্যই এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
যতক্ষণ ক্লাস চলবে ততক্ষণ যেনো সন্তান ও ডিভাইস দুটোই তাদের পর্যালোচনায় রাখা যায়। তবে বাচ্চারাও অন্যদিকে মনোযোগ দিতে পারবে না। তাদের মনোনিবেশ পড়ালেখায়ই সীমাবদ্ধ থাকবে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় যেনো সন্তান বিপথে না যায় তা খেয়াল রাখা শুধু মা-বাবার নয়, রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব।
শিশুদের জন্য অনলাইনে বিশেষ রেস্ট্রিকশন যেনো দেয়া যেতে পারে সেদিকেও লক্ষ্য দেয়া উচিত। মা-বাবার উচিত অন্য অ্যাপস এ যেনো না ঢুকতে পারে সেই প্রয়োজনে তাতে লক এর ব্যবস্থা রাখা।
অনলাইন ক্লাসের আবেশে এসে কোনোভাবেই ১৮ বয়সের নিচে কারো হাতে ব্যক্তিগত ফোন তুলে দেয়া যাবে না। প্রযুক্তি নির্ভর হতে গিয়ে, নিজেকে প্রযুক্তির প্রতি আসক্তিকর করে না তুলার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
Featured Photo by Gabriel Benois on Unsplash
প্রাসঙ্গিক লেখাসমূহ-