অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য শীর্ষ ২০টি মার্কেটপ্লেস বা নেটওয়ার্ক

যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আয় করতে চান তাদের জন্য প্রচুর অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক আছে ইন্টারনেট জুড়ে। তবে সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে হলে আপনাকে একটু যাচাই বাছাই করতে হবে। এমন কোন প্রোগ্রাম বেছে নেয়া উচিত, যেটি থেকে আয়ের সুযোগ সবচেয়ে বেশী।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য প্রয়োজনীয় শীর্ষ ২০টি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক (Affiliate Network)

এক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করবেন। যেমন- যে কোম্পানী অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামটি চালাচ্ছে তারা কতটুকু স্থিতিশীল। আপনাকে দেখতে হবে তাদের নেটওয়ার্কে কি ধরণের বিজ্ঞাপনদাতা এবং পণ্য রয়েছে। আজকের লেখায় বর্তমান সময়ের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের তালিকা দেয়া হল.

১। অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস (Amazon Associates)

সম্ভবতঃ যারাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে নতুন, তারা প্রত্যেকেই অ্যামাজন দিয়েই শুরু করেন বা করতে চান তাদের অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রম। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম ব্যবহার করলে, আপনার লিংকের মাধ্যমে অ্যামাজনে বিক্রি হওয়া যেকোন পণ্যের জন্য টাকা ইনকাম করতে পারবেন আপনি। শুধু ডিজিটাল কিন্ডেল পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়।

তবে, হাতে স্পর্শ করা যায়, এমন সকল পণ্যের ক্ষেত্রেই আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে অ্যামাজন থেকে কমিশান পাবেন। একেক পন্যের জন্য কমিশনের হার একেক রকম। আপনার অ্যাসোসিয়েট একাউন্ট থেকে কি ধরণের পণ্য বিক্রী হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে আপনার আয়।

কমিশনের হার

অধিকাংশ পণ্যের বেলায়, আপনি মাসের প্রথম যে ছয়টি পণ্য বিক্রী করবেন তার জন্য কমিশন পাবেন ৪ শতাংশ হারে। সপ্তম পণ্য থেকে নিয়ে তিরিশতম পণ্য পর্যন্ত এই কমিশনেট হার আবার ৬ শতাংশ। আপনি যত পণ্য বিক্রী করতে পারবেন, কমিশনের রেটও ততই বাড়তে থাকবে। এই অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামটির গঠনটাই এমন – অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা বেশী পরিমাণ পণ্য বিক্রয়ের জন্য পুরস্কৃত হন। মাসে যত বেশী পণ্য বিক্রী করে দিবেন অ্যামাজনের, আপনার কমিশনের হারও সেই হিসেবে বৃদ্ধি পাবে।

ল্যান্ডিং পেজ (Landing Page)

অধিকাংশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রামের সাথে অ্যামাজনের প্রোগ্রামটির পার্থক্য হল, তাদের পণ্যের জন্য কোন নির্দিষ্ট ল্যান্ডিং পেজ নেই। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে একটি পণ্য বেছে নিতে দেয়। তারপর সেই পণ্যের ‘প্রোডাক্ট পেজটিকেই’ ল্যান্ডিং পেজ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে মার্কেটার।

অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটসের সুবিধা-অসুবিধা

অ্যামাজন আ্যসোসিয়েটসের মাধ্যমে পণ্য বিক্রয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের লিংক ক্লিক করে কেনা যেকোন আইটেমের জন্যই মার্কেটারের কৃতিত্বকে স্বীকার করে অ্যামাজন। অর্থাৎ, আপনি যে পণ্যটি কেনার কথা বলেছেন, সেটাই কিনতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনার লিংক ক্লিক করে অ্যামাজনে এসে কেউ যদি অন্য কোন পণ্য কিনেন, তাহলে সেটির জন্যও আয় করতে পারবেন আপনি। আপনার লিংকে ক্লিক করেছেন এটাই বড় কথা। তারপর ওয়েবসাইট থেকে তিনি যা-ই কিনুন আপনি কমিশন পাবেন।

আপনার অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটসের লিংক ক্লিক করে একজন ব্যাক্তি যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পণ্য কেনার কাজটি সম্পন্ন না করেন, তাহলে আপনি কোন কমিশন পাবেন না। যে ‍’কুকি’ আপনার লিংকের সাথে সম্পর্কিত সেটির মেয়াদ চব্বিশ ঘন্টা। আপনার ক্রেতা যদি কুকির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ চব্বিশ ঘন্টা পর পণ্য ক্রয় করেন, আপনার একাউন্টে কোন ক্রেডিট যোগ হবে না।

এই সমস্যার সমাধানের জন্য আপনি একটি বিশেষ ধরণের লিংক ব্যবহার করতে পারেন আপনার অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটস একাউন্টের জন্য। এই লিংকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যিনি ক্লিক করবেন সেই ক্লিককারীকে আপনা আপনি তার “কার্ট পেজে” নিয়ে যাওয়া হবে (ক্লিকার তার অ্যামাজন একাউন্টে লগ-ইন করার পর)।

আপনি যদি এই ধরণের অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করেন, তাহলে ‘অ্যাফিলিয়েট কুকি-টির’ মেয়াদ হবে নব্বই দিন। আপনার ক্লিকার যদি এই নব্বই দিন পণ্যটি তাদের কার্টে রাখেন, তাহলে বিক্রী হওয়ার পর আপনি কমিশান পাবেন।

তাছাড়া, এই ক্রেতা যদি তাদের কার্টের আইটেম বাদেও অ্যামাজন থেকে অন্য পণ্য কিনেন তাহলে সেই পণ্যগুলি বিক্রীর কমিশনও আপনার একাউন্টে যোগ হবে।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটের সামগ্রিক বাজার বিবেচনায় অ্যামাজনের কমিশনের রেট একটু কমই। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, ভিজিটরের অবস্থান অনুযায়ী অ্যামাজন লিংকগুলোকে আপনার জন্য রিডিরেক্ট করবে না।

আরও পড়ুন-

২। কমিশান জাংশান ডট কম (cj.com)

পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘায়ু অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ‘কমিশান জাংশান’ বা সি-জে। কমিশন জাংশান একটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। সাইটটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাদেরকে বিজ্ঞাপনদাতা বা এডভার্টাইজারদের সাথে যুক্ত করে থাকে। প্রথমে আপনি সি-জে ডটকমে গিয়ে সাইন-আপ করবেন।

তাহলেই ওয়েবসাইটের বিভিন্ন এডভার্টাইজারদের কাছে আবেদন করার সুযোগ পাবেন আপনি। কিছু কিছু বিজ্ঞাপনদাতা আপনি আবেদন করা মাত্রই গ্রহণ করবেন। আবার অনেকেই আছেন যারা সমস্ত অ্যাপ্লিকেশানটি খুঁটিয়ে দেখবেন। তাদের প্রতিষ্ঠানের মানদন্ডের সাথে না মিললে, আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে না।

সি-জে ডটকমের টুলস

আপনার ওয়েবসাইটে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করার জন্য যা যা টুলস প্রয়োজন সবই সরবরাহ করবে সি-জে ডটকম। তাদের ওয়েবসাইট আপনাকে একটি ড্যাশবোর্ড দিবে। সেখানে আপনি দেখতে পারবেন, আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কার্যক্রমে কতগুলি করে ক্লিক পাচ্ছেন। ক্লিক থেকে আপনার রোজগার কিরকম সেটিও এই ড্যাশবোর্ডেই দেখতে পাবেন।

সি-জে ডটকমের কনসোল থেকে আপনি যে লিংকগুলো পাবেন সেগুলি সরাসরি বিজ্ঞাপনদাতার ল্যান্ডিং পেজে নিয়ে যাবে। কোন ল্যান্ডিং পেজটিতে আপনি আপনার ভিজিটরকে পাঠাবেন সেটি ঠিকভাবে বাছাই করা জরুরী। এমন একটি ল্যান্ডিং পেজ বেছে নিন যেটাকে আপনার মনে হয় সবচেয়ে বেশী সংখ্যক ভিজিটরকে ক্রেতায় পরিণত করবে।

কমিশন রেট

সি-জে ডটকমে প্রতিটি অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রমে কমিশানের হার এডভার্টাইজার ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। সবাই এক রকম টাকা দেন না অ্যাফিলিয়েটদের। তবে হ্যাঁ, যেখানে অ্যামাজন অ্যাসোসিয়েটসে কখনই সাড়ে সাত শতাংশের বেশী কমিশন দেয়া হয় না, সেখানে সি-জে ডটকমে অনেক বিজ্ঞাপনদাতা ১০ পার্সেন্ট হারেও কমিশন দিয়ে থাকেন। তাছাড়া, কোন এডভার্টাইজারের কাছে যদি আপনি মার্কেটার হিসেবে আপনার দক্ষতা প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে তাদেরকে বলতে পারেন আপনার কমিশন বাড়িয়ে দেয়ার জন্য।

৩। ক্লিক ব্যাংক (ClickBank)

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কাছে ক্লিকব্যাংক আরেকটি জনপ্রিয় সাইট। তার মূল কারণ এখানকার কমিশন রেট যথেষ্ট বেশী।

পণ্যের ধরণ

ক্লিকব্যাংকে অনেক ধরণের পণ্য এবং সেবা বিক্রয় করা হয়ে থাকে। আর্টস, বিনোদন থেকে শুরু করে ট্রাভেল, অবকাশ সব ধরণের ক্যাটাগরীতেই পণ্য বিক্রী করে থাকেন এরা। ক্লিকব্যাংকে কাজ শুরু করার জন্য তাদের ওয়েবসাইট clickbank.com এ যান। ওখান থেকে যান তাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটপ্লেসে। এই পেজে , তাদের বিভিন্ন ধরণের অ্যাফিলিয়েট অফারগুলো দেখতে পাবেন। এগুলি একেকটি ক্যাটাগরী। আপনার সুবিধা বা পছন্দমত যেকোন একটি ক্যাটাগরীতে ক্লিক করুন। অনেকগুলি পণ্য এবং সেবার তালিকা দেখতে পাবেন। এখান থেকে আপনি প্রমোট করতে চান এরকম যেকোন একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বেছে নিন। “প্রোমট” বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে প্রোগ্রামটিতে সাইন-আপ করুন।

কমিশন রেট

ক্লিকব্যাংকের এডভার্টাইজাররা সাধারণতঃ ডিজিটাল পণ্য এবং অনলাইন সেবা বিক্রী করে থাকেন। যে কারণে, খুবই উচ্চমানের কমিশান রেট দিতে পারেন তারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের। কিছু ক্ষেত্রে এমনও আছে, পন্য বিক্রয়ের ৭০ শতাংশই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারকে দেয়া হবে। শুধুমাত্র অনলাইন পণ্য এবং সার্ভিসের বেলাতেই এরকম কমিশন পাওয়া সম্ভব। উচ্চমানের কমিশন রেটের কারণে, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কাছে ক্লিকব্যাংকের কন্টেন্ট খুবই জনপ্রিয়।

৪। রাকুটেন লিংক শেয়ার (Rakuten Linkshare)

রাকুটেন লিংকশেয়ারও অতি জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোর একটি। এই প্রোগ্রামে সাইন-আপ করার প্রক্রিয়াটি খুব জটিল কিছু নয়। সাধারণ যে তথ্যগুলো সব সাইটেই চাওয়া হয়, সেরকম কিছু ইনফরমেশান ফিল্ড পূরণ করতে হবে। সাথে একটা ট্যাক্স ফর্ম আছে। ওটাতেও লিখতে হবে। এরপর আপনার একাউন্ট হালনাগাদ করা হবে। তখন সাই-আপ করার অনুমোদন পাবেন।

লগ-ইন করার পর আপনি বেশ কিছু ক্যাটাগরী পাবেন। এগুলো থেকে পণ্য বেছে নিতে পারবেন। ওপরে যে তিনটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার তুলনায় রাকুটেন লিংকশেয়ারে পণ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। তবে রাকুটেনের ভাল দিক হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের অ্যাফিলিয়েটারদেরকেও তারা দ্রুত পেমেন্ট করে থাকেন।

পড়ে দেখতে পারেন –

৫। জেভিজু ( JVZoo )

জেভিজু মার্কেট হিসেবে নতুন অন্যদের তুলনায়। তবে এটি অত্যন্ত দ্রুত বাড়ছে। এখানে এমন কিছু ফিচার রয়েছে, যেগুলি সাধারণতঃ অন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলোতে পাওয়া যায় না। যেমন ধরুন, জেবিজু মার্কেটে সময়মত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের টাকা পরিশোধ করা একটা বিশেষ ফিচার। তারা এই বিষয়ে আলাদা ভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন।

অধিকাংশ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের টাকা সময়মত পরিশোধ নিয়ে একটু বিড়ম্বনা হবেই। বিজ্ঞাপনদাতারা প্রথমে সেলস রিপোর্ট তৈরী করবেন। সেটিকে পর্যালোচনা করবেন। কোন ধরণের ফ্রডের ব্যাপার নেই সেটি নিশ্চিত করবেন। তারপর টাকা দেয়া হয়। সুতরাং কিছুটা সময় লেগেই যায়। দীর্ঘদিন ধরে চলমান প্রোগ্রামগুলো যেমন সিজে ডটকম এবং ক্লিকব্যাংকে এখনও কয়েক সপ্তাহ কি কয়েক মাসও লেগে যায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের টাকা দিতে। বিশেষ করে যেসব সদস্যের বিক্রীর পরিমাণ বিপুল, তাদের বেলায় এটি আরও বেশী সত্য।

যে ক’টা প্রোগ্রামের কথা আমরা আলোচনা করেছি এই পর্যন্ত, তন্মধ্যে এই অ্যাভান্টলিংকের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে কম। তবে, এখানে বহু সংখ্যক ক্যাটাগরী রয়েছে বিজ্ঞাপনদাতাদের। তাছাড়া নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করছেন যারা তাদের জন্যও অ্যাভান্টলিংকের ইন্টারফেসটি বেশ সুবিধাজনক। এই সব কারণে অ্যাভান্টলিংক অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হিসেবে ভালোই।

৭। ই’বে (eBay)

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম নিয়ে আলোচনায়, ই-বের নাম প্রথমদিকে আসে না। এই কারণে যে তাদের অনুমোদন প্রদানের প্রক্রিয়াটি খুবই কঠোর। তাছাড়া, ই-বে’তে যে পণ্য বিক্রী হয় সেগুলো তাদের নিজেদের পণ্য নয়। এই পণ্যের মানের কোন দায়ভার ই-বে নেয় না। একারণেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা পণ্য প্রমোটের ক্ষেত্রে এই সাইটটিকে এড়িয়ে চলেন। তবে ব্র্যান্ড হিসেবে ই-বে সুপরিচিত। যেকারণে সাধারণ একজন ক্রেতার কাছে ই-বের নেটওয়ার্কটিকে উপস্থাপন করলে লিংকে ক্লিক পাওয়া সম্ভাবনা বেশী। মূলতঃ দরদাম করে কিনতে চাচ্ছেন, এমন ক্রেতাদের মাঝে ই-বে জনপ্রিয়। আপনার ওয়েবসাইটের ভিজিটররা যদি দরদাম পছন্দ করেন এমন ক্রেতা হন, তাহলে ই-বের অ্যাফিলিয়েট লিংক আপনার কাজে আসতে পারে।

৮। শেয়ারআসেল (Shareasale)

শেয়ারআসেলের নেটওয়ার্কটি বিশাল। এখানে বিভিন্ন ধরণের ক্যাটাগরীতে প্রায় ৪০০০ এর বেশী বিজ্ঞাপনদাতা রয়েছেন। এর ইউজার ইন্টারফেসটিও ব্যবহার করা সুবিধাজনক। অন্য নেটওয়ার্কে পাওয়া যায় না এমন কিছু এনালাইটিক্স ডেটাও এই সাইটটি সংগ্রহ করে থাকে। আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, এখানে মাস হিসেবে টাকা দেওয়া হয়।

৯। আভানগেট (Avangate)

আভানগেটের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সফটওয়্যার বিক্রী থেকে কমিশন পাবেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। সফটওয়্যার ছাড়া আর কিছু সাধারণতঃ বিক্রী হয় না। সফটওয়্যার ডাউনলোড এবং অনলাইন সেবার সবচেয়ে ভাল ব্র্যান্ডগুলো রয়েছে আভানগেটে। অন্য আর সব প্রযুক্তি ভিত্তিক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের মতই এখানেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ উচ্চহারে কমিশন পেয়ে থাকেন।

১০। অ্যাফিব্যাঙ্ক (Affibank)

অ্যাফিব্যাঙ্ক ডটকমও বাজারে নতুন। কিন্তু উচ্চ হারে কমিশান দেয়ার কারণে ইতিমধ্যেই তারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের মাঝে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। অ্যাফিব্যাঙ্কের অনেক অফারেই কমিশনের হার ৭৫ পার্সেন্ট। এর অর্থ যে পন্য আপনি বিক্রী করতে সাহায্য করছেন, সেটি থেকে অর্ধেকেরও বেশী আয় আপনারই। ক্লিকব্যাঙ্কে যেরকম পাওয়া যায়, এখানকার অফারগুলোও সেরকমই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য অ্যাফিব্যাঙ্কে স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য্য, এবং ফিটনেস এসব ক্যাটাগরী রয়েছে।

এই দশটি বাদেও আরও অসংখ্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বিদ্যমান। ওপরের দশটি প্রোগ্রামে যদি আপনার ভাল না লাগে, তাহলে নীচের এই দশটিতে ঘুরে আসতে পারেন। বলা বাহুল্য, এগুলো আগে উল্লেখ করা অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামগুলির তুলনায় কম জনপ্রিয়।

১১। ম্যাক্স বাউন্টি (MaxBounty)

ম্যাক্স বাউন্টি অনেক বড় একটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক।এখানে হাজার হাজার অফার আছে, যেগুলি থেকে আয় করা সম্ভব। ভিজিটরদের দিয়ে আপনার লিংক ক্লিক করাতে পারলেই হল।

ম্যাক্স বাউন্টি একটি কস্ট-পার-একশান (CPA) অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। প্লাটফর্মটি একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এবং বিজ্ঞাপনদাতার মাঝে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে। বিজ্ঞাপনদাতা প্লাটফর্মে তার অফারটি উপস্থাপন করেন। আপনার লিংক থেকে যে পরিমাণ ট্রাফিক বিজ্ঞাপনদাতার সাইটে আসবে, সেই ভিত্তিতে আপনাকে টাকা দেওয়া হবে।

১২। রেভেনিউ-ওয়ায়ার (RevenueWire)

রেভেনিউ ওয়ায়ারের নাম আগে ছিল অ্যাফিলিয়েট ওয়ায়ার। এটি সর্বাঙ্গীন অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম। যারা ডিজিটাল প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করত চান সেসব বিজ্ঞাপনদাতা এবং ব্যবসায়ীদের স্থান এই সাইটে. অ্যাফিলিয়েটদের জন্য উচ্চমানের ডিজিটাল পণ্য রয়েছে এখানে। পণ্য বিক্রয়ের জন্য তিন থেকে পঁচাত্তর পার্সেন্টের মত কমিশন পাওয়া যায়। সেলস ট্র্যাকিং, শক্তিশালী এনালাইটিক্স, রিপোর্টিং সহ অনেক ধরণের টুলস রয়েছে।

এর মধ্যেই দেখেছেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক পণ্য হচ্ছে ডিজিটাল ডাউনলোড করা যায় এমন পণ্য। রেভেনিউ ওয়ায়ার এই ধরণের পণ্য নিয়ে কাজ করে। সুতরাং, প্রযুক্তি বিষয়ক সাইট যাদের রয়েছে তারা এখানে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।

১৩। রেভিমিডিয়া (ReviMedia)

রেভিমিডিয়া মূলতঃ সফটওয়্যার বিক্রী করে থাকে। ২০১৯ সালে তারা তাদের তাদের অ্যাফিলিয়েট ব্যবসাটি মোকাম-অ্যাডস এর কাছে বিক্রী করে দেন। তবে মূল ব্র্যান্ড নেম “রেভিমিডিয়া” এখনও তাদেরই অধীন।

১৪। ফ্লেক্স অফারস (Flexoffers)

ফ্লেক্স অফার্স ডট কম একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক যেখানে বিজ্ঞাপনদাতা এবং বিজ্ঞাপন প্রকাশকারী বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের নানান ধরণের সমস্যগুলোর সমাধানের জন্য বিভিন্ন রকমের মার্কেটিংয়ের অপশান রয়েছে। এই সাইটটি আপনাকে আপনার অ্যাফিলিয়েট কার্যক্রমের সাথে ভিজিটরদের মিথস্ক্রিয়া বিষয়ে আনুপুঙ্খিক তথ্য প্রদানের চেষ্টা করে। বিভিন্ন ধরণের লাভজনক পার্টনারশীপের সন্ধান পাবেন এই সাইটে।

ফ্লেক্স অফার্সে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে জয়েন করলে, আপনি লক্ষ লক্ষ পণ্য এবং সার্ভিসের সংস্পর্শে আসতে পারবেন। বিভিন্ন ধরণের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং চ্যানেলের সাথেও যুক্ত হতে পারবেন। এই পণ্য বা সার্ভিসগুলোকে আপনি ফ্লেক্স অফার ডট কমের কন্টেন্ট ফিড, টেক্সট লিংক, টেমপ্লেট এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশানের মাধ্যমে প্রোমট করতে পারবেন।

ফ্লেক্স অফার্সে সাধারণতঃ সবচেয়ে নতুন পণ্য, প্রমোশান, বিভিন্ন সুপরিচিত ব্র্যান্ডের একান্তই অনলাইন ভিত্তিক অফার রাখা হয়। নিশে ভিত্তিক এডভার্টাইযারদের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য এই সাইটটি চমৎকার। ফ্লেক্স অফার্সের মার্কেটিং কন্টেন্টগুলো যেকোন ওয়েবসাইটেই খুব সহজে ব্যানার এ্যাডস বা টেক্সট লিংক হিসেবে যুক্ত করা যায়। এছাড়াও ফ্লেক্স অফার্সে কাস্টমাইযযোগ্য “টেমপ্লেট” রয়েছে। এই টেমপ্লেট ব্যবহার করে সহজেই একটি অনলাইন স্টোর তৈরী করা সম্ভব।

১৫। কমিশন ফ্যাক্টরী (Commission Factory)

কমিশন ফ্যাক্টরী একটি অস্ট্রেলিয়ান অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক। কাস্টমার সার্ভিস, প্রযুক্তি, অটোমেশান এই বিষয়গুলো নিয়েই তারা মূলতঃ কাজ করে থাকেন। ক্লাইড ফেয়ার, ভি ই ইন্টার্যাকটিভ, ভিসা, পেপ্যালের মত কোম্পানী তাদের পার্টনার। সাইটে থাকা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা এই পার্টনারশীপের সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

সপ্তাহে নূন্যতম একশ ডলারের মত পণ্য বিক্রয় করতে পারলেই কমিশন ফ্যাক্টরী মার্কেটারের টাকা পরিশোধ করে থাকে। এটি খুবই অনন্য একটি বিষয়। এমন হলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে মাসিক আয়ের একটি নিশ্চিত মাধ্যম হিসেবে নিতে পারবেন অনেকেই। আরেকটি নতুন জিনিস হচ্ছে তাদের সুরক্ষিত মেসেজিং সিস্টেম। এই সিস্টেম ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এবং বিজ্ঞাপনদাতাগণ পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

কমিশন ফ্যাক্টরীর একটি নিজস্ব গ্রাফিক্স ডিজাইন টীম এবং প্রোগ্রামিং টীম রয়েছে। এরা সবসময়ই তাদের অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কটিকে আরও বেশী স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার চেষ্টা করছেন ব্যবহারকারীদের জন্য।

এগুলো ছাড়াও,

আরও পাঁচটি জনপ্রিয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নেটওয়ার্ক

১৬। পিয়ার ফ্লাই (PeerFly)
১৭। ক্লিকফানেলস (ClickFunnels)
১৮। ট্রেড ডবলার (Tradedoubler )
১৯। অ্যাফিলিয়েট উইন্ডো (AffiliateWindow)
২০। ব্যাঙ্ক অ্যাফিলিয়েটস (BankAffiliates)

এই বিশটি মার্কেটপ্লেস অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে তা-বাদেও আপনি নির্দিষ্ট কোন কোম্পানীর অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তাদের সাথে কাজ করার প্রস্তাব দিতে পারেন।

অনেক অনলাইন কোম্পানীই রয়েছে যারা কোন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে না। কিন্তু তাদের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রোগ্রাম ঠিকই রয়েছে। এমন যদি কোন কোম্পানী থাকে যাদের পণ্য আপনি প্রমোট করতে চান, আপনি তাদের কোম্পানীর সাথে কী-ফ্রেজ “ অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম” যোগ করে সার্চ করে দেখতে পারেন।

যদি কোম্পানীটির অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম থেকে থাকে, তাহলে অবশ্যই রেজাল্টে সেটি দেখাবে। আপনি অতীতে যে পণ্য এবং সার্ভিস ব্যবহার করতেন, সে বিষয়ে ভাবুন। অনলাইনে চেক করে দেখুন তাদের কোন অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম কার্যক্রম রয়েছে কি না। এভাবে একটু গবেষণা অনুসন্ধান করলে অনেক কিছুই পাবেন, যেটি গৎবাধা পথে হেঁটে পাওয়া যাবে না।

আজ এই পর্যন্তই। সততা ও শ্রমের মাধ্যমে এই দেশে স্বাবলম্বী হতে চাচ্ছেন, এমন প্রতিটি উদ্যোক্তার জয় হোক।

Leave a Comment