হেয়ার রিবন্ডিং কি? রিবন্ডিং এর প্রকারভেদ ও পূর্বপ্রস্তুতি

অনেকে কার্লি চুল পছন্দ করলেও বেশিরভাগ মানুষেরই স্ট্রেইট চুলের প্রতি আগ্ৰহের শেষ নেই। স্ট্রেটনার ব্যবহারে ঝরঝরে স্ট্রেইট চুল পাওয়া গেলেও তা থাকে খুব অল্প সময়ের জন্য। দীর্ঘস্থায়ী ঝলমলে স্ট্রেইট চুলের জন্য সেরা উপায় হলো হেয়ার রিবন্ডিং। “রিবন্ডিং” শব্দটি অতি পরিচিত হলেও এর বেসিক বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানা আছে কি? জানা না থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। কারণ রিবন্ডিং কি? এর প্রকারভেদ এবং রিবন্ডিং এর আগের প্রস্তুতিগুলো নিয়েই আজকের এই আর্টিকেল।

হেয়ার রিবন্ডিং কি?

“Re-bonding” শব্দটি শুনেই বুঝতে পারছেন এর কাজ হলো পুরাতন বন্ড ভেঙ্গে নতুন বন্ড তৈরি।

আমাদের চুলের প্রকৃতি কেমন হবে তা নির্ভর করে চুলের বন্ডের ওপর। হেয়ার রিবন্ডিং মূলত এমন একটি ক্যামিকেল ট্রিটমেন্ট যেখানে চুলের ন্যাচরাল বন্ড ভেঙ্গে নতুন করে স্ট্রেইট বন্ড তৈরি করা হয়। যার কারণে চুল প্রায় স্থায়ীভাবেই স্ট্রেইট হয়ে যায়। সহজ কথায় হেয়ার রিবন্ডিং হলো রুক্ষ কোঁকড়ানো চুলকে নমনীয় ও সোজা করা যা থাকবে খুব দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। এখানে দীর্ঘ সময় মানে ২০-২২ ঘন্টা নয়, নূন্যতম ৬ মাস!

অবশ্যই পড়ুনঃ

রিবন্ডিং-এ সাধারণত ২ ধরণের ক্যামিকেল ক্রিম ব্যবহার করা হয়।

  • ক্রিম সফটনার
  • নিউট্রালাইজার

ক্রিম সফটনার চুলের পুরাতন বন্ড ভেঙ্গে চুলকে রিবন্ডিং-এর জন্য প্রস্তুত করে । আর নিউট্রালাইজার চুলে তৈরি করে নতুন বন্ড।

নতুন এই বন্ড তৈরিতে বেশ কয়েকটি ধাপে, বেশ কয়েক ধরণের ট্রিটমেন্টের প্রয়োজন হয়।

হেয়ার রিবন্ডিং এ চুলের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন কেন?

অনেকে মনে করেন রিবন্ডিং করা হয়ে গেছে , ব্যাস কাজ শেষ! অথচ কাজের শুরুটা মূলত এখান থেকেই।

রিবন্ডেড চুল আপনার স্বাভাবিক চুল নয়। বেশ জটিল কিছু ট্রিটমেন্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে স্বাভাবিকভাবেই চুলের উপর অনেকটা চাপ পড়ে; যার ফলে রিবন্ডিং-এর পরই শুরু হয় চুলের যত সমস্যা। চুল পড়ে যাওয়া, ড্যামেজ হওয়া সেইসঙ্গে চুল ফেটে যাওয়ার কারণে চুল নিষ্প্রাণ হতে থাকে।

সময় যত বাড়তে থাকে চুলের এই সমস্যাগুলোও তত বেড়ে চলে। এই সমস্যাগুলো এড়াতেই রিবন্ডেড চুলের প্রয়োজন বাড়তি কিছু যত্নের।

অনেকে আছেন যারা নিয়মিত এই বাড়তি যত্ন নিতে চান না। তাদের মতো আপনিও যদি রিবন্ডেড চুলের যত্নে মনোযোগী না হয়ে হাত পা গুঁটিয়ে বসে থাকেন তবে চুলের হাজার রকম সমস্যায় আপনাকেও স্বাগতম!

হেয়ার রিবন্ডিং এর প্রকারভেদ

পূর্বে সব ধরণের চুলের জন্য একই রিবন্ডিং স্টাইল এ্যপলাই করা হতো। কিন্তু রিবন্ডিং নিয়ে দিন দিন সবার আগ্ৰহ বেড়ে চলায় রিবন্ডিং পদ্ধতিসহ চুলের ধরণ অনুযায়ী রিবন্ডিং স্টাইলেও এসেছে নতুনত্ব। বর্তমানে আইস, স্টিফ, শাইনসহ বেশ কয়েক ধরণের রিবন্ডিং স্টাইল থাকলেও হেয়ার রিবন্ডিং স্টাইল সাধারণত ৪ ধরণের।

  • সেমি হেয়ার রিবন্ডিং
  • মিল্ক রিবন্ডিং
  • ভলিউম রিবন্ডিং
  • গ্লোজি রিবন্ডিং

সেমি হেয়ার রিবন্ডিং:

সাধারণত সব ধরনের চুলের জন্যেই এই রিবন্ডিং স্টাইলটি উপযোগী। মোটামুটি সোজা বা কোঁকড়ানো; শুষ্ক বা তৈলাক্ত যেকোন চুলেই সেমি হেয়ার রিবন্ডিং করে ফেলা যায়।

এই রিবন্ডিং স্টাইলে চুল অনেকটাই ন্যাচরাল মনে হয়। যাদের চুল পরিমাণে কম কিন্তু বেশ ফোলা ফোলা তাদের জন্যেও সেমি হেয়ার রিবন্ডিং একদম উপযুক্ত।

সেমি হেয়ার রিবন্ডিং-এ তুলনামূলকভাবে কম খরচ হয়। সেইসঙ্গে তুলনামূলক কম সময়েই রিবন্ডিং সেরে ফেলা যায়।

মিল্ক রিবন্ডিং:

কালার করা বা অন্য যেকোন ক্যামিকেল ট্রিটমেন্ট করা চুলের জন্য মিল্ক রিবন্ডিং সিলেক্ট করা উচিত।

ক্যামিকেল ট্রিটমেন্ট করা চুল আগে থেকেই বেশ দুর্বল থাকে । চুলে ড্যামেজও থাকে প্রচুর। মিল্ক রিবন্ডিং এই ড্যামেজ রিপেয়ারে তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সাহায্য করে।

মিল্ক রিবন্ডিং ফর্মুলার ৭০% ই হলো দুধ। এই দুধের সঙ্গে আবার যোগ করা হয় ভিটামিন এ, বি, ডি ও ই সলিউশন যা চুলে প্রোটিন জুগিয়ে চুলের কিউটিকলকে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। ফলে চুল দেখায় নরম ,কোমল ও ঝরঝরে।

যারা শুষ্ক চুলের অধিকারী বা চুল পরিমাণে অনেক কম তাদের জন্যেও মিল্ক রিবন্ডিং একদম উপযুক্ত।

ভলিউম রিবন্ডিং:

নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এর কাজ হলো চুলে ভলিউম এনে দেওয়া। আপনার চুল যদি পরিমাণে খুব কম হয় তবে স্টিফ ও ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য রিবন্ডিং-এ তা আরো বেশি পাতলা দেখাতে পারে।

এক্ষেত্রে ভলিউম রিবন্ডিং আপনার চুপসে যাওয়া চুলে ভলিউম নিয়ে আসবে। অন্যান্য রিবন্ডিং স্টাইলের তুলনায় এ রিবন্ডিং -এ কার্লার , স্ট্রেইটনার ছাড়াও বিভিন্ন ক্যামিকেল বেশি ব্যবহার করা হয় । তবে এসবের মধ্যে বিভিন্ন ময়েশ্চরাইজ উপাদান থাকে বলে ভলিউম রিবন্ডিং করা চুল স্টিফ বা রাফ হয় না। সেইসঙ্গে এই রিবন্ডিং স্টাইল রিবন্ডেড চুলে ন্যাচরাল ভাব এনে দেয়।

গ্লোজি রিবন্ডিং:

অতিরিক্ত ঘন ও ফোলা চুলের অধিকারী হলে আপনার জন্য গ্লোজি রিবন্ডিং-এর চেয়ে পারফেক্ট অন্য কোন রিবন্ডিং স্টাইল হতেই পারে না।

গ্লোজি রিবন্ডিং এ ব্যবহৃত বিভিন্ন ক্যামিকেল ও হিট ঘন চুলকে পরিমাণমতো চেপে দেয় এবং সেইসঙ্গে চুলের চকচকে ভাবও ফিরিয়ে আনে।

তবে এই রিবন্ডিং-এ তুলনামূলকভাবে চুল বেশি দুর্বল হতে পারে। এজন্য রিবন্ডিং এর ৩ দিনের মধ্যে অবশ্যই চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিতে হবে।

হেয়ার রিবন্ডিং এর আগের প্রস্তুতি

রিবন্ডিং এর আগে প্রয়োজন চুলকে রিবন্ডিং এর জন্য প্রস্তুত করে নেওয়া। এতে যেমন রিবন্ডিং ঠিকঠাক মতো হবে তেমনি রিবন্ডিং এর পর চুলের ক্ষতিও হবে কম। এজন্য হেয়ার রিবন্ডিং এর আগে চুলকে রিবন্ডিং এর জন্য প্রস্তুত করে তুলতে ৩ টি ধাপ অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

  • কাউন্সিলিং
  • পার্লার নির্বাচন
  • ড্যামেজ রিপেয়ার

কাউন্সিলিং:

রিবন্ডিং এর প্রথমেই প্রয়োজন কোন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে কাউন্সিলিং করিয়ে নেওয়া। আপনার চুলের ধরণ অনুযায়ী মিল্ক, আইস, শাইনি, গ্লোজিসহ বিভিন্ন ধরণের রিবন্ডিং এর মধ্যে আপনার জন্য কোন স্টাইলটি উপযোগী তা বিশেষজ্ঞ আপনাকে জানিয়ে দিবেন।

চুলের ধরণ অনুযায়ী উপাদান ব্যবহার করা না হলে চুল পড়ে যাওয়া বা ড্যামেজ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। চুলের ধরণ বুঝে কোন ক্যামিকেলগুলো ব্যবহার করা উচিত এবং রিবন্ডিং এর আগে ও পরে কি কি ট্রিটমেন্ট করে নেওয়া প্রয়োজন তা একজন বিশেষজ্ঞই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন।

এজন্য রিবন্ডিং এর আগে অবশ্যই কাউন্সিলিং করিয়ে নিন।

পার্লার নির্বাচন:

রিবন্ডিং এর জন্য ভালো কোন পার্লারের খোঁজ করুন। হেয়ার রিবন্ডিং-এ কয়েক ধাপে বেশ কিছু ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। এই ক্যামিকেলগুলোও হওয়া চাই খুব ভালো মানের।

যে সে পার্লার থেকে রিবন্ডিং করালে একেতো রিবন্ডিং পারফেক্টলি হবে না তার উপর চুলের ক্ষতির আশঙ্কাও থাকবে খুব বেশি।

এজন্য আগে থেকেই অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সুপরিচিত ও নির্ভরযোগ্য একটি পার্লার সিলেক্ট করে রাখুন।

ড্যামেজ রিপেয়ার:

চুলে আগে থেকে কোন ড্যামেজ থাকা অবস্থায় রিবন্ডিং করানো আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দেওয়া একই কথা!

ড্যামেজ অথবা ভঙ্গুর চুলে রিবন্ডিং এর আগে বেশকিছু ট্রিটমেন্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। প্রো-কেরাটিন ও ইনসেল ট্রিটমেন্ট দিয়ে ড্যামেজ চুলকে মজবুত করে রিবন্ডিং এর জন্য প্রস্তুত করা হয়।

চুলের ধরণ অনুযায়ী রিবন্ডিং এর ৭-৩০ দিন আগে ট্রিটমেন্টগুলো করিয়ে নিন।

সতর্কতা

চুলে কালার করা থাকলে রিবন্ডিং এর জন্য অন্তত ৬ মাস অপেক্ষা করুন। চুলে মেহেদী বা হেনা লাগানো হলে তার অন্তত ২ মাস পর রিবন্ডিং করা উচিত। বেবি হেয়ার গজাচ্ছে এমন সময় রিবন্ডিং না করানোই ভালো।

হেয়ার রিবন্ডিং কী বা কেন তা নিশ্চয় এতক্ষণে জেনে গেছেন। সুন্দর, ঝলমলে , স্ট্রেইট চুলের জন্য আজ থেকেই তবে রিবন্ডিং নিয়ে প্ল্যানিং শুরু করে দিন। কিন্তু শুধু রিবন্ডিং করে নিলেই হবে না। চুলের বারোটা বাজাতে না চাইলে রিবন্ডেড চুলের সঠিক যত্নটাও তো নিতে হবে! রিবন্ডিং এর পর চুলের যত্নে কী কী করা উচিত বা কী কী করা উচিত নয় তা নিয়ে পর্ব – ২ এ আলোচনা করা হবে।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-

    Leave a Comment