মানুষের সুস্থভাবে বেচে থাকতে হলে অবশ্যই হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখা উচিত। কেননা মানুষের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো হৃৎপিণ্ড। কিন্তু হৃৎপিণ্ড কি? এর কাজ কি? হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে করণীয় কি? ভালো না রাখলে কি হবে? এসব প্রশ্ন অনেকের মনে আসে। মনের মধ্যে থাকা এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উওর পেতে চান? তাহলে এই লেখাটি সম্পূর্ণ আপনার জন্য।
হৃৎপিন্ড কি?
রক্ত সংবহনতন্ত্রের যে অঙ্গটি পাম্পের মতো সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সংবহন করে সেটি হলো হৃৎপিন্ড।
জীবন্ত এ পাম্প যন্ত্রটি দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে শিরার মাধ্যমে আনীত রক্ত ধমনীর সাহায্যে শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে থাকে।
একজন সুস্থ মানুষের জীবদ্দশায় হৃদপিন্ড গড়ে ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়। একটি হৃদপিন্ডের ওজন প্রায় ৩০০ গ্রাম। স্ত্রীদের হৃৎপিণ্ড পুরুষের চেয়ে এক – তৃতীয়াংশ কম। হৃদপিন্ড চার প্রকোষ্ঠ বিশিষ্ঠ। উপরের দুটিকে ডান বা বাম অ্যাক্টিয়াম, নিচের দুটিকে ডান বা বাম ভেক্টিকল বলে। হৃদপিন্ডের স্বতঃস্ফুত প্রসারণকে ডায়াস্টোল এবং স্বতঃস্ফুত সংকোচনকে সিস্টোল বলে ।
হৃৎপিণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত শব্দ হচ্ছে হার্টবিট।
হার্টবিট কি?
হৃদপিন্ডের একবার সংকোচন (সিস্টোল) ও একবার প্রসারণ (ডায়াস্টোল) কে একত্রে হার্টবিট বা হৃদস্পন্দন বলে । একজন পূর্ণবয়স্ক সুস্থ ব্যক্তির হৃদস্পন্দনের হার প্রতি মিনিটে ৭০ – ৮০ বার। প্রতি ০.৮ সেকেন্ডে একটি হার্টবিট চক্র সম্পন্ন হয়।
হৃৎপিণ্ডের আকৃতি
মানৃষের হৃদপিন্ড বক্ষগহ্বরের মধ্যচ্ছদার উপরে ও দুই ফুসফুসের মাঝ বরাবর বাম দিকে একটু বেশী বাঁকা হয়ে অবস্থিত। এটি বুকের বাঁমপাশে প্রায় ৬০% অবস্থান দখল করে থাকে। লালচে – খয়েরি রঙের হৃদপিন্ডটি ত্রিকোণা মোচার মত।
একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির হৃদপিন্ডের দৈর্ঘ্য ১২ সে .মি প্রস্থ ৯ সে .মি। এটি একটি দ্বিস্তরী পেরিকার্ডিয়াম নামক পাতলা ঝিল্লিতে আবৃত।
হৃদপিন্ডের প্রাচীর অনৈচ্চিক পেশী দিয়ে গঠিত। এসব পেশি হৃদপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি নামে পরিচিত।
মানুষের হৃৎপিণ্ডে মোট চারটি প্রকোষ্ঠ রয়েছে। হৃৎপিণ্ডকে মূলত ডান ও বাম -এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
হৃৎপিণ্ড কিভাবে কাজ করে?
হৃদপিণ্ডের চারটি প্রকোষ্ঠ হচ্ছে- ডান নিলয়, বাম নিলয়, ডান অলিন্দ, বাম অলিন্দ। উপরের দুটি অলিন্দ ও নিচের দুটি নিলয়।
ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ হল উপরের প্রকোষ্ঠ, যা রক্ত সংগ্রহ করে এবং নিচে অবস্থিত ডান নিলয় ও বাম নিলয়ে প্রেরন করে। ডান নিলয় রক্তকে পালমোনারী ধমনীর সাহায্যে ফুসফুসে এবং বাম নিলয় মহা ধমণীর সাহায্যে সমগ্র শরীরে সঞ্চারিত করে।
ডান অলিন্দ ও বাম অলিন্দ এবং ডান নিলয় ও বাম নিলয় একটি দেয়াল দ্বারা পৃথক থাকে।
এই দেয়ালকে ‘সেপটাম’ বলে। ডান অলিন্দে কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত রক্ত মহাশিরা থেকে প্রবেশ করে।
অপরদিকে বাম অলিন্দে অক্সিজেন যুক্ত রক্ত পালমোনারী শিরা হতে প্রবেশ করে।
ডান ও বাম অলিন্দের মাঝে যে দেয়ালটি দুই ধরনের রক্তকে অলাদা রাখে তাঁর নাম ‘অ্যাটারিয়াল সেপ্টাম’।
তদ্রুপ ডান নিলয় ও বাম নিলয়ের মাঝের দেয়ালটি ‘ভেন্টিকুলার সেপ্টাম’ নামে পরিচিত।
হৃদপিন্ডের মাংসপেশি সংকোচন ও প্রসারণের জন্য সিগন্যাল তৈরী হয় পেসমেকার নামক বিশেষায়িত টিস্যুতে।
এই পেসমেকার এর সিগন্যাল অনুযায়ী হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ঠসমূহের প্রযায়ক্রমিক সংকোচন ও প্রসারন হয়। এতে করে রক্ত শরীর থেকে হৃদপিন্ডে, হৃদপিণ্ড থেকে ফুসফুসে, ফুসফুস থেকে পুনরায় হৃদপিণ্ডে এবং এরপর হৃদপিন্ড থেকে সমগ্র শরীরে পর্যায়ক্রমিকভাবে সংবহিত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন-
সুস্থ না রাখলে কি হবে?
হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর, অ্যানজাইনাসহ নানা রকম রোগ, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
হার্ট সুস্থ রাখতে বা হার্টের সমস্যা থাকলে যেসব খাবার খাওয়া যাবে না?
কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা
কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা -এই অংশগুলোতে বেশি পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে। তাই কলিজা, মগজ বা নেহারি জাতীয় খাবার বর্জন করা উচিত।
চিংড়ি
হৃদরোগীদের জন্যে আরেকটি বর্জনীয় খাবার হলো চিংড়ি। দেখা গেছে, ক্যালরি এবং ফ্যাট কম থাকলেও চিংড়িতে আছে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল।
সাড়ে তিন আউন্স ওজনের একপিস রান্না করা স্যামন মাছে যেখানে মাত্র ৬২ মিগ্রা কোলেস্টেরল, সেখানে একই পরিমাণ চিংড়িমাছে পাওয়া গেছে ১৮৯ মিগ্রা কোলেস্টেরল।
মাছের মাথা, ডিম
রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যে উপাদানগুলো, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস হচ্ছে মাছের মাথা বা মাছের ডিম।
ফাস্টফুড
নিয়মিতভাবে যারা ফাস্ট ফুড খায়, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মারা যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের চেয়ে ২০% বেশি।
যারা একের বেশি অর্থাৎ দুই থেকে তিন বার খায়, তাদের হার আরো বেশি- প্রায় ৫০%।
শুধু তা-ই নয়। সপ্তাহে যারা চার বা তার চেয়েও বেশি বার ফাস্ট ফুড খায়, তাদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৮০% এরও বেশি।
ডিমের কুসুম
ডিমের সাদা অংশ খাওয়া গেলেও হৃদরোগীদের জন্যে ডিমের কুসুমটা এড়িয়ে চলাই উত্তম। কারণ ডিমের কুসুমে আছে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল।
দেখা গেছে, একটি বড় আকারের মুরগির ডিমে যে ১৮৬ মিলিগ্রাম পরিমাণ কোলেস্টেরল থাকে, তার পুরোটাই আছে কুসুমে।
আর একজন হৃদরোগীর দিনে ২০০ মিগ্রা-র বেশি কোলেস্টেরল গ্রহণ করা উচিত নয়।
ঘি-মাখন-ডালডা
প্রাচ্যের অভিজাত খাবারের তালিকায় ঘি-মাখন এক অনিবার্য অনুষঙ্গ হলেও এতে আছে উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট।
সেইসাথে আছে পালমিটিক এসিড, যা আর্টারি ব্লকের কারণ হতে পারে -বলেছেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞানী ওয়াহিদা কর্মালি।
এর বদলে অলিভ অয়েল, সান ফ্লাওয়ার অয়েল বা মার্জারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
নারিকেল
নারিকেল তেলের ৮৫ থেকে ৯০ ভাগই হলো স্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা হৃদরোগীদের জন্যে ক্ষতিকর।
অতিরিক্ত ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার
ডিপ ফ্রাই খাবার মুখরোচক তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু খাবার যত ভাজা হয়, তার খাদ্যমান তত কমতে থাকে। তত তাতে যুক্ত হতে থাকে ক্ষতিকারক ফ্যাট।
এমনও দেখা গেছে, একটা পর্যায়ে খাবারে আর কোনো ক্যালরিই অবশিষ্ট থাকে না।
যেমন, মাংস বা কোনো কিছু ভাজার সময় দেখবেন তেলের মধ্যে প্রচুর বুদবুদ উঠছে। এর কারণ হলো খাবারটার ভেতরে যে পানিটা আছে, তেলে ছেড়ে দেয়ার ফলে তা বেরিয়ে এসেছে এবং তেলের তাপ এবং চাপে তা শুকোতে শুরু করেছে।
ডিপ ফ্রাই হতে হতে পানি যখন পুরোপুরি শুকিয়ে যায়, বুদবুদ ওঠাও তখন বন্ধ হয়ে যায়। খাবারের ভেতরে পানির বদলে তখন ঢুকে যায় তেল। তো এমনিতেই মাংস বা এই জাতীয় খাবারগুলোতে আছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট। তার ওপর তেল যুক্ত হয়ে তার ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ে আরো।
রেড মিট বা লাল মাংস
অতিমাত্রায় রেডমিট হৃদরোগের কারণ -এটা নতুন তথ্য নয়। তবে সেটা যে কেবল রেডমিটের ফ্যাট বা কোলেস্টেরলের কারণে তা কিন্তু নয়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে।
আর এথেরোসক্লেরোসিস বা আর্টারিতে ব্লক সৃষ্টিতে এই ট্রিমাথাইলেমাইনের একটা সক্রিয় ভূমিকা আছে।
কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, আইসক্রিম
এর প্রতিটি খাবারই চিনিযুক্ত। আর চিনি হার্ট এটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি মানুষটি দেখতে মোটাসোটা না হলেও।
জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের এক রিপো্র্টে বলা হয়, হৃদরোগের সাথে চিনির সম্পর্কটা ঠিক কোথায় তা বোঝা না গেলেও এটা দেখা গেছে যে, মিষ্টিজাতীয় পানীয় ব্লাড প্রেশারকে বাড়িয়ে দেয়। বাড়িয়ে দেয় লিভারের তৎপরতা, যা রক্তে ক্ষতিকর ফ্যাট নিঃসরণ করে। আর এ দুটো কারণই হৃদরোগের নেপথ্য অনুঘটক।
এমন অনেক প্রকারের খাবার আছে যা হৃদরোগের বা হৃৎপিন্ডের ঝুঁকি কমায়। যেমন–
গ্রীন টিঃ গ্রীন টিতে ক্যাটেচিন নামক এন্টি অক্সিডেন্টের পরিমান বেশি পরিমানে থাকে যা হৃদরোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। নিয়মিত গ্রীন টি পান করলে হৃৎপিন্ড সুস্থ থাকে।
রসুনঃ রসুন হার্টের জন্য অনেক ভাল। নিয়মিত রসুন ব্লাঞ্চিং (গরম পানিতে ২ মিনিট ফুটানো) করে খেলে অথবা তরকারিতে আস্ত রসুন খেলে হার্ট সতেজ থাকে।
ডার্ক চকলেটঃ ডার্ক চকলেট মস্তিষ্কের নার্ভ সিস্টেমকে সতেজ রাখে। যার ফলে হাইপারটেনশন বা হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
সবুজ শাক-সবজি ও সালাদঃ সবুজ শাক-সবজি ও সালাদে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, মিনারেলস, এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা হার্টের জন্য ভাল।
মাশরুমঃ মাশরুমে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট। এতে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন জাতীয় উপাদান থাকে যা হার্ট এট্যাকের পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ এবং ভিটামিন ডি ইত্যাদি আছে। নিয়মিত সামুদ্রিক মাছ গ্রহণে হার্ট সুস্থ থাকে।
ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ যুক্ত ওয়েলঃ যেকোন ভেজিটেবল তেল বিশেষ করে যেসব তেলে ওমেগা ৩ আছে সেসব তেল হার্টের জন্য ভাল। যেমন- অলিভ ওয়েল, ক্যানোলা ওয়েল, সানফ্লাওয়ার ওয়েল, সরিষার তেল।
এগুলোতে PUFA আছে অর্থাৎ পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড; যা হার্টের সুস্থতার জন্য ফলদায়ক।
কাঠবাদামঃ কাঠবাদাম মস্তিষ্কের বুদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি হার্ট ভাল রাখে।
ব্ল্যাক কফিঃ ব্ল্যাক কফিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা নার্ভ সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি হার্ট সতেজ রাখে।
আদাঃ আদাতেও এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা হার্টকে সুস্থ রাখে। নিয়মিত আদা চা, আদা পানি খাওয়া যেতে পারে।
ডিমের সাদা অংশঃ ডিমের সাদা অংশে ওমেগা ৩ আছে যা হার্টের জন্য ভাল। তবে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা আছে যে ডিমের কুসুম হার্টের জন্য অত্যধিক খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। ব্যাপারটি মোটেও অতটা খারাপ নয়।
একজন হৃদরোগী সপ্তাহে অন্ততপক্ষে ৪ দিন সকালে কুসুমসহ ডিম সিদ্ধ খেতে পারবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করলে এতে স্বাস্থ্যঝুকি তুলনামূলক বিচারে অনেক কম।
তরল ও নরম খাবারঃ কম তেল ও মশলাযুক্ত যেকোন তরল খাবার, যেমন- ভেজিটেবল স্ট্যু, স্যুপ, ব্ল্যাক চা, ঝোলের তরকারি, লাল চিড়া, ওটমিল ইত্যাদি হার্টকে সুস্থ রাখে।
টক ফলঃ যেকোন টক জাতীয় ফল বিশেষ করে আমলকী, লেবু, মালটা ইত্যাদি হার্টএট্যাকের ঝুঁকি কমায়।
সুস্থ, স্বাভাবিক ও আনন্দপূর্ণ জীবনের জন্য দরকার একটি সুস্থ হার্ট বা হৃৎপিণ্ড।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-
- কিডনিকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে?
- সুস্বাস্থ্য লাভের জন্য করণীয় কি? জেনে নিন বিস্তারিত সবকিছু
- প্রতিদিন সকালে করণীয় কিছু কাজ; যা আপনার দিনটিকে করবে আরো মোহনীয়
হার্ট সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় টিপস
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণঃ ডায়াবেটিস রোগীদের এ্যাথারোস্কেরোসিস বেশি হয়। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। তাই এই ধরণের রোগীদের অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণঃ জীবন যাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।
যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ধূমপান বর্জনঃ হৃদযন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু ধূমপান।
ধুমপায়ীদের শরীরে তামাকের নানা রকম বিষাক্ত পদার্থের প্রতিক্রিয়ায় উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
ধূমপান অবশ্যই বর্জনীয়। ধূমপায়ীর সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন। তামাক পাতা, জর্র্দা, গুল লাগানো ইত্যাদিও পরিহার করতে হবে।
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হ্রাসঃ যথেষ্ট পরিমাণে ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম না করলে শরীরে ওজন বেড়ে যেতে পারে। এতে হৃদযন্ত্রকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়, ফলে অধিক ওজন সম্পন্ন লোকদের উচ্চ রক্তচাপসহ ধমনী, শিরার নানা রকম রোগ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
ভারসাম্যপূর্ণ ওজনঃ ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
স্থূলতায় হৃদরোগ থেকে শুরু করে নানা সমস্যা হতে পারে। ফলে ভারসাম্যপূর্ণ ও সঠিক ওজন বজায় রাখতে মনোযোগী হতে হবে।
নিয়মিত ব্যায়ামঃ হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য ব্যায়ামের মতো কার্যকর অন্য কোনো পথ নেই।
সকাল-সন্ধ্যা হাঁটা, সম্ভব হলে দৌড়ানো, হালকা ব্যায়াম, লিফটে না চড়ে সিঁড়ি ব্যবহার ইত্যাদি। জিমে যেতে হবে এমন নয়। ঘরেই ব্যয়াম করা যায়। তাও না করতে পারলে প্রতিদিন অবশ্যই হাঁটতে হবে।
অতিরিক্ত লবণ নিয়ন্ত্রণঃ খাবার লবণে সোডিয়াম থাকে, যা রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়। এতে রক্তের আয়তন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপও বেড়ে যায়। ফলে হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
তরকারিতে প্রয়োজনীয় লবণের বাইরে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। অনেকেই খাবারের সঙ্গে কাঁচা লবণ খান। এটা অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
বেশি লবণ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। এ থেকে হৃদযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চর্বিযুক্ত খাবার বর্জনঃ রক্তে উচ্চ চর্বি, অতিরিক্ত চর্বি জাতীয় খাবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে।
রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হলে রক্তনালীর দেয়াল মোটা ও শক্ত হয়ে যায়। এর ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
কম চর্বি ও কম কোলেষ্টেরল যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন খাশি বা গরুর গোসত, কলিজা, মগজ, গিলা, গুর্দা, কম খেতে হবে।
কম তেলে রান্না করা খাবার এবং ননী তোলা দুধ, অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন সয়াবিন, ক্যানোলা, ভুট্টার তেল অথবা সূর্য্যমুখীর তেল খাওয়া যাবে।
মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবেঃ অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণেও রক্তচাপ ও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে।
নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে হবে।
মদ্যপান পরিহারঃ অতিরিক্ত মদ্যপান পরিহার করতে হবে। বেশি এ্যালকোহল গ্রহণ মানে রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়া।
এতে হৃদস্পন্দনের উপরও প্রভাব পড়ে। সুস্বাস্থ্য ও সবল হৃদযন্ত্রের জন্য ধূমপানের মতো মদ্যপানও ছাড়তে হবে।
সুস্থভাবে বেচে থাকার জন্য সুস্থ হার্টের বিকল্প নেই। আমরা যদি কিছু নিয়ম মেনে খাবার গ্রহণ করি, সময় মতো ব্যায়াম করি ও রুটিন অনুসারে চলি তাহলে কঠিন অসুখ হৃদরোগ থেকে সহজেই মুক্ত থাকতে পারি। আর একটি কথা কে না জানে- প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম।
সম্পাদকের বাছাই-