পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম (carica payaya)। এই বারোমাসি ফলটি কাঁচা পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম পাঁকা পেঁপেতে আছে শর্করা ৭.২ গ্রাম, আমিষ ০.৬ গ্রাম, ফাইবার ০.৮ গ্রাম, স্নেহ ০.১ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি।
স্বাস্থ্য ও ত্বক ভালো রাখতে পেঁপের ব্যবহার সমূহ
১। পেঁপেতে আছে প্যাপিন ও ভিটামিন-এ। এই উপাদানগুলো মৃত কোষ সরাতে সাহায্য করে। নিষ্ক্রিয় প্রোটিন ভেঙে ফেলে, ত্বককে আদ্র ও ভালো রাখে।
২। পেঁপেতে প্যাপিন এনজাইম থাকে; যা খাদ্য বিপাকে সাহায্য করে। পেঁপেতে তন্তু ও পানির পরিমান বেশি থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। অর্থাৎ যাদের হজমে সমস্যা আছে তারা পেঁপে খেয়ে সুফল পেতে পারেন।
৩। পেঁপে রক্তচাপ কমায়। রক্ত নালিতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। হার্টের রোগীরা উক্ত কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ কমাতে নিয়মিত পেঁপে খেতে পারেন।
৪। পেঁপে চোখের মিউকাস মেমব্রেনকে শক্তিশালী করে ও নানাবিধ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। লুইটেন, বিটা ক্যারোটিন, ক্যারোটিনয়েড ইত্যাদি উপকারী পুষ্টিগুন পেঁপেতে বিদ্যমান; যা চোখের সুরক্ষায় কাজ করে থাকে।
৫। ডায়বেটিস প্রতিরোধকারী উপাদান আছে পেঁপেতে। মূলত এটি খেতে মিষ্টি হলেও চিনির পরিমান খুব সামান্য পরিমানে আছে এতে। তাই ডায়বেটিস রোগীদের কোনো রকমের সমস্যা তো হবেই না বরং ডায়বেটিস কমাতে সাহায্য করবে।
৬। চুল পরা যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী তাদের জন্য পেঁপে হতে পারে ম্যাজিক স্বরুপ। টকদইয়ের সাথে পেঁপের পেস্ট মিশিয়ে প্যাক বানয়ে সেটি লাগাতে পারেন। চুলের গোঁড়া অনেক বেশি শক্ত হবে। ফলে চুল পরবে না এবং চুল অনেক বেশি ঝলমলে ও প্রাণবন্ত হবে। এই প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে হবে।
৭। যাদের বাতের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত পাঁকা পেঁপে খেতে পারেন। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে সুফল পেতে শুরু করবেন।
৮। লিভার ও জন্ডিসের সমস্যায় অবশ্যই খেতে হবে কাঁচা পেঁপে। জন্ডিস ও লিভারের অসুখ আমাদের শরীরকে অনেক বেশি দূর্বল করে দেয়। তাই দুর্বলতা এড়াতে খেতে হবে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ পেঁপে।
৯। পেঁপেতে আছে ভিটামিন-এ’, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই। এই উপাদানগুলো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক, চুল, চোখ ভালো রাখতে উক্ত ভিটামিনের বিকল্প নেই।
১০। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্লেভোনোক্সিড ক্যান্সার কোষ তৈরিতে বাঁধা দিয়ে থাকে। পেঁপেতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফ্লেভোনোক্সিড প্রচুর পরিমানে রয়েছে। এছাড়াও এতে থাকা বিটা ক্যারোটিন প্রোস্টেট ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই ক্যান্সারের মতো মারাত্নক ব্যাধির প্রতিরোধ করতে অবশ্যই দৈনিক খাবার তালিকায় পেঁপে রাখতে হবে।
১১। আধুনিকতার যুগে আধুনিক প্রোডাক্ট ব্যবহার করে ত্বকের নাজেহাল অবস্থা। একটু কষ্ট করলেই হাতের কাছে থাকা উপাদানগুলো দিয়ে খুব সহজেই পেতে পারেন ঝলমলে উজ্জ্বল ত্বক।
পদ্ধতি খুবই সহজ৷ এর জন্য লাগবে পেঁপের পেস্ট, ২ -৩ চিমটি হলুদ, মধু,অলিভ অয়েল। উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে হালকা ঘন পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। সারা মুখে, ঘাড়ে,হাত পায়ে, পেস্টটি লাগিয়ে ২৫-৩০ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন, আর ঝলমলে উজ্জ্বল ত্বকের অধিকারী হোন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার অবশ্যই ব্যবহার করুন।
১২। রেশমি ঝরঝরে চুল পেতে পেঁপের প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য লাগবে- পেঁপের পেস্ট, মধু, অলিভ অয়েল।পরিমান মতো মিশাতে হবে। প্যাকটি লাগানোর আগে চুল ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ঘন করে পেস্টটি মিশিয়ে চুলে লাগান। আধঘন্টা রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। রেশমি চুল পেতে প্যাকটি সপ্তাহে ২-১ বার ব্যবহার করতে হবে।
১৩। যাদের খেতে ইচ্ছা করে না বা খেতে ইচ্ছে করলেও খেতে পারেন না অর্থাৎ যাদের ক্ষুধা মন্দা আছে তারা পেঁপে সিদ্ধ করে খেতে পারেন।
১৪। বিটা ক্যারোটিন হাঁপানি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রঙিন ফলমুল শাকসবজি সব কিছুতেই বিটা ক্যারোটিন থাকে। যাদের এজমা বা হাঁপানি প্রকোপ রূপ ধারন করেছে তারা অবশ্যই রঙিন শাকসবজির খাওয়ার চেষ্টা করবেন বেশি বেশি। আর খাবার তালিকায় পেঁপে তো অবশ্যই রাখবেন।
১৫। যাদের মেদ দূর করতে চান তারা কাঁচা পেঁপে খান। এতে ক্যালরির পরিমান অনেক কম। যারা রোগা হতে চাচ্ছেন বা মেদ কমাতে চাচ্ছেন ডায়েট চার্টে কাঁচা পেঁপের সালাদ রাখতে পারেন।
১৬। ব্রণের দাগ চেহেরার সৌন্দর্য কমিয়ে দেয়, তবে ব্রণের দাগ নিয়ে এখন থেকে আর চিন্তা নেই, ব্রণের দাগ কমাবে পেঁপে। হ্যাঁ নিয়মিত পেঁপে খেলে দাগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ফলে বাজার থেকে টাকা দিয়ে ক্যামিকেল কেনার প্রোয়োজন পরে না, ক্যামিকেল মূলত চামড়া পাতলা ও লাল করে ফেলে। তাই সৌন্দর্য বিচারে এক চুল ও ছাড় না দিয়ে ক্যামিকেলের বদলে গ্যাপ না দিয়ে পেঁপে খান ২৫-৩০ দিন ও পেঁপের বিভিন্ন প্যাক ব্যাবহার করুন, ফলাফল দেখে নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
পেঁপের গুনাবলি বলে শেষ করা যাবে না। তবে সবকিছুরই কম বেশি নেতিবাচক দিক থাকে। এটারও আছে।
আসুন জেনে নেই কারা কারা এই পুষ্টিকর খাবারটি খেতে পারবেন না।
- পেঁপেতে ল্যাটেক্সের পরিমান বেশি থাকে, যা জরায়ুর পথ সংকোচন করে ফেলে। ডাক্তাররা সে জন্য গর্ভবতী মহিলাদের পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন।
- যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা কাঁচা পেঁপে খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। কাঁচা পেঁপেতে যে সাদা তরল আছে সেটা ত্বকে এলার্জির সৃষ্টি করে।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন-