স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটির বিষয়েও হতে হবে সচেতন

চাপ নেই এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া বিরল। সবাই কম বেশি চাপের মধ্যে থাকে। কিন্তু সেই চাপকে স্ট্রেস এ গুলিয়ে ফেলা যাবে না। আবার অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার হলো উদ্বেগ জনিত ব্যাধি। একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে উদ্বেগ কাজের গতি বাড়ায়। তবে যদি সেটি অতিরিক্ত হয়ে যায়, তবে ব্যাধির পর্যায়ে পড়ে। তখনই তাকে বলা হয় অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার।

বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি সাধারণ অভিজ্ঞতা হিসেবেই ধরা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি সমস্যায় ভোগে। প্রতিদিন কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে স্ট্রেস অনেকটাই কমিয়ে ফেলা যায়।

জেনে নিন অভ্যাসগুলো-

ব্যায়ামঃ

স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করতেই হবে, তা হচ্ছে ব্যায়াম। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ব্যায়ামের ফলে শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসোলের মাত্রা কমে যায়। পাশাপাশি শরীর চর্চার ফলে এন্ডেরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মন ভালো রাখে ও প্রাকৃতিক ব্যথানাশকের কাজ করে।

যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের রাতে ভালো ঘুম হয়। অন্যদিকে যেখানে স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটির কারণে ঘুম নষ্ট হয়। আরেকটি বড় ব্যাপার হচ্ছে, নিয়মিত ব্যায়াম করার ফলে শারীরিক গঠন সুন্দর হয়। আত্মবিশ্বাস বাড়ে ও মানসিকভাবে ভালো বোধ হয়।

পাশাপাশি স্ট্রেস বলও স্ট্রেস কমাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস কেবল নিজেকে নয়, প্রভাব ফেলে আশেপাশে থাকা মানুষের জীবনেও। এই বলে চাপ দেওয়ার সময় যে মনোযোগ দেওয়া হয় এতে স্ট্রেস দূর হয় সহজেই।

স্ট্রেস বল
স্ট্রেস বলের ব্যবহার (image source: shutterstock.com)

এই স্ট্রেস বলটি চাপ দেওয়ার ফলে মস্তিষ্ককে হরমোনগুলি ক্ষরণে সহায়তা করে যা মানসিক চাপ বা স্ট্রেস এর ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই স্ট্রেস বল এর ব্যবহারকে মিনি ওয়ার্কআউটও বলা হয়।

আরামদায়ক স্নানঃ

চাপের কারণে অনেক সময় ঘুমে ব্যাঘাত হয়। আবার কাজ শেষে ফেরার পর শরীর-মন উভয়ই অবসন্ন মনে হয়। এর সহজ সমাধান হলো স্নান নেয়া। তবে পানি হালকা গরম হলে আরাম পাওয়া যায়। স্নান করার ১০-১৫ মিনিট আগে গোলাপ জল বা লেবুর খোসা ফেলে রাখুন। এরপর ওই পানি দিয়ে স্নান সারুন। এমনভাবে শরীরে পানি ঢালুন, যেন পানি মাথা বেয়ে ঘাড় ও মেরুদণ্ডের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে ভালো বোধ হবে।

নিজের জন্য সময় রাখুনঃ

নিজের জন্য সময় না রাখার দীর্ঘমেয়াদি ফল হতে পারে স্ট্রেস। তবে ভেবে দেখুন নিজের জন্য সময় রাখতে না পারার কারণে আপনি স্ট্রেসে আক্রান্ত হচ্ছেন। নিজের জন্য সারা দিনের এক টুকরো সময় বরাদ্দ রাখুন। নিজের শরীর, ত্বক ও চুলের যত্ন নিন। সপ্তাহে দুদিন বডি ম্যাসাজ করে নিতে পারেন পছন্দের তেল দিয়ে।

নিয়ম করে ত্বকে ফেসপ্যাক লাগান। চোখের ওপর দুটি শসার টুকরা রেখে ২০ মিনিট বিশ্রাম নিন। অথবা ঈষদুষ্ণ জলে পা ডুবিয়ে পড়ুন পছন্দের বই। ২০ মিনিট পর পামিস স্টোন দিয়ে পা ঘষে নিন। এতে আরাম ও যত্ন দুই-ই হবে।

নেতিবাচকতা এড়িয়ে যানঃ

ইতিবাচকতা মানসিক প্রশান্তি আনে। স্ট্রেস দূর করতে পছন্দের কাজ করায় উৎসাহী হয়ে উঠতে হবে। মোটকথা সক্রিয় থাকতে হবে। নেতিবাচক মন্তব্য, আচরণ ও কাজ থেকে বিরত থাকুন সবসময়। স্ট্রেসের সময় এগুলোর চর্চা ভালো ফল দেবে।

উৎকণ্ঠা কাটাতে অনেকেই মদ্যপানের দিকে ঝোঁকেন৷ কিন্তু এতে হিতে বিপরীত ফল হয়৷ অতিরিক্ত মদ্যপান অ্যাংজাইটি বাড়িয়ে দেয়৷ তাই অ্যালকোহল খাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখুন৷

অনেকের চা কফি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। ৩ কাপের বেশি ক্যাফেইন আমাদের শরীরে যায় তাহলে উৎকণ্ঠা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ যা ডেকে আনে ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা৷ এই সমস্যার সম্মুখীন হলে ঘুম না হওয়াটাই স্ট্রেস বা অ্যাংজাইটির বড় কারণ হয়ে দাড়াতে পারে ।

স্ট্রেস / অ্যাংজাইটির বিষয়ে সচেতনতা আসলেই এগুলো নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসা যায়। এই ব্যাধিগুলোকেও এড়িয়ে গেলে চলবে না। নিজের খেয়াল নিজেরই রাখতে হবে। পজিটিভ চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিতে হবে নিজের মধ্যেই।

প্রাসঙ্গিক লেখা-

Leave a Comment