যারা দীর্ঘ মেয়াদে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে চান, তাদেরকে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে নিতেই হয়। তবে ওয়েবসাইট তৈরী করায় কিছু ঝামেলার যোগ আছে। ডোমেইন রেজিস্ট্রেশান এবং ওয়েব হোস্টিং এর জন্য কিছু টাকা লাগবে। তারপর আবার অপেক্ষায় থাকতে হবে কখন সেই ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আসা শুরু হয়। এই মুহুর্তে ওয়েবসাইট তৈরি করার পেছনে সময় দেয়া যাদের জন্য সম্ভব নয়, বা যারা ইচ্ছুক নন; তারা চাইলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বা সোস্যাল মিডিয়ায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। অর্থাৎ ফেসবুক, লিংডইন, ইনস্ট্রাগ্রাম বা ইউটিউব ব্যবহার করেও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করা সম্ভব।
এই লেখায় আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে এবং এসব মাধ্যমগুলোতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে সফল হওয়ার কৌশলগুলোর বিষয়ে আলোচনা করব।
তবে আপনি যেই মাধ্যমই ব্যবহার করেন না কেন, প্রথমবার যে কোন একটির প্রতি মনযোগ দিন। অর্থাৎ ফেসবুক হলে ফেসবুকই। ইউটিউব হলে ইউটিউব। একসাথে দু’টো নিয়ে কাজ করলে কোনটির প্রতিই সর্বোচ্চ শ্রম ও সময় দিতে পারবেন না। একটিতে সফলতা পাওয়ার পর অন্যটিতে যাওয়া উচিত।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন –
ফেসবুকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার কৌশল
অন্যান্য সোস্যাল সাইটগুলোতে যেখানে কয়েক মিলিয়ন, কি কয়েক’শ ফলোয়ার, সেখানে ফেসবুকের ফলোয়ার সংখ্যা কয়েক বিলিয়ন। পৃথিবীতে এত বেশী লোক ফেসবুক ব্যবহার করেন যে, সম্ভাবনা প্রবল- আপনার জীবনে ব্যবহার করা প্রথম সোস্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্ক ফেসবুকই। এবং অন্যান্য মানুষদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য। বাস্তবতা হচ্ছে, এখনও অধিকাংশ লোক সোস্যাল মিডিয়া বলতে শুধুমাত্র ফেসবুককেই চিনেন বা জানেন।
আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, ফেসবুকে আপনি খুব নির্দিষ্ট করে চিহ্নিত করতে পারবেন আপনার অভীষ্ট অডিয়েন্সকে। এজন্য ব্যবহার করা যায় ফেসবুকের “অডিয়েন্স ইনসাইটস”।
কিভাবে কাজ করে এই প্রক্রিয়া? ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে। ফেসবুকের তথ্য সংগ্রহের মাত্রাটি ঠিক কল্পনাসাধ্য কোন ব্যাপার নয়। আধুনিক মানুষ সারাটা দিনই কোন না কোনভাবে নিজের সোস্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত থাকেন। সুতরাং, একজন ব্যবহারকারীদের সারা দিনের সকল তথ্যই ফেসবুক সংগ্রহ করে বলা যায়।
সংগ্রহ করা ডেটাকে ফেসবুক প্রক্রিয়াকরণ করে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিন্যস্ত করে। এরপর এই তথ্য বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রী করা হয়। ফেসবুকের ফিল্টার আর ক্যাটেগরী গুলোর সাহায্য নিয়ে আপনি সুনির্দিষ্ট অনুসন্ধান চালিয়ে বের করতে পারেন- যে নিশ নিয়ে আপনি কাজ করছেন সেটির প্রতি ঠিক কারা আগ্রহী।
একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনি ফেসবুকের এই টুলসগুলোর সাহায্য নিতে পারেন এবং আপনার নিশে অডিয়েন্সকে ফেসবুকে আরও ভালোভাবে শনাক্ত করতে পারেন। এতে আপনার কাজের পরিধি আরও সুনির্দিষ্ট হয়। সময় বা শ্রম কোনটাই অপচয় হবে না। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আরও পড়ুন-
ফেসবুক অ্যাডস
ফেসবুকের অ্যাডভার্টাইজিং প্লাটফর্মটি সবচেয়ে লাভজনক বিজ্ঞাপনী প্লাটফর্মগুলোর একটি। কেননা, এর মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক বেশি সংখ্যক টার্গেটেড অডিয়েন্স এর সামনে অর্থাৎ তাদের ফেসবুক হোমপেজে নিজের অথবা অ্যাফিলিয়েট পণ্যের প্রচার করা যায়। ফলশ্রুতিতে খুব দ্রুত সেলস জেনারেট করে অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের মাধ্যমে আয় করা যায়।
তারপরও নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং যারা করছেন, তাদের ক্ষেত্রে ফেসবুক অ্যাডের পেছনে বেশী খরচ না করাই ভালো। আসলে, নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কোন ধরণের পেইড অ্যাডভার্টাইজিংয়ে যাওয়ারই দরকার নেই। আপনি আপনার বিজ্ঞাপনী প্লাটফর্ম এবং অভীষ্ট অডিয়েন্স একদম স্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে বুঝে নেওয়ার পরই অ্যাডের পেছনে টাকা খরচ করতে পারেন।
নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা যেসব কারণে লোকসানের সম্মুখীন হন, সেগুলির মাঝে এটি অন্যতম। যারা বিজ্ঞাপনের বাজেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তাদের ক্ষেত্রে এই ক্ষতি বেশ গুরুতর রূপ নিয়ে থাকে। আপনি যদি ফেসবুক বা অন্য যে কোন ব্যায় সাপেক্ষ বিজ্ঞাপনী ব্যবস্থা ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার পুঁজি সাপেক্ষে বিজ্ঞাপন বাবদ টাকা বরাদ্দ খুব বেশী রাখবেন না। এবং ব্যয়ের সমস্ত প্রক্রিয়াটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন।
নতুন ব্যাবসায়ীদের অনেকের মাথাতেই থাকে না যে, যতটুকু বাজেট আপনি ফেসবুক অ্যাডের ক্ষেত্রে নির্ধারণ করছেন, সেটি একটি দৈনন্দিন বাজেট। ফলে যেটা হয়, দুই কি তিনদিন পরেই ফেসবুকে ঢুকে তারা আবিষ্কার করেন যে, ধারণার চেয়ে অনেক বেশী টাকা তারা খরচ করে ফেলেছেন।
ফেসবুক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সীমাবদ্ধতা
ফেসবুক ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে একটি সীমাবদ্ধতার কথা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। কিছু কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে ফেসবুক ব্যবহারে বিধিনিষেধ থাকে।
যেমন, অ্যামাজন সাধারণতঃ তাদের অ্যাফিলিয়েট লিংক আছে এমন ফেসবুক পোস্ট আপনাকে প্রমোট করতে দিবে না। অর্থাৎ আপনি আপনার ফেসবুক পোস্টে অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট লিংক রাখতে পারেন। কিন্তু সেই পোস্ট ফেসবুক অ্যাডে প্রমোট করতে পারবেন না।
একেক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ম নীতি একেক রকম। সুতরাং আপনাকে একটু জেনে নিতে হবে এবং কাজ করতে হবে সেই অনুযায়ী। যেমন- আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ব্যবসায় ফেসবুক যদি একটি ছোট অংশ মাত্র হয়ে থাকে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না অ্যামাজন আপনার একাউন্ট বাতিল করুক।
ফেসবুক অ্যাফিলিয়েটের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে আপনি যেটা করতে পারেন সেটি হচ্ছে- একটি “ব্রিজ বা ল্যান্ডিং পেজ” তৈরী করা। এই ল্যান্ডিং পেজটি একটি সরল এক পাতার ওয়েবসাইট। এই পেজ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের সরাসরি আপনার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বা ফেসবুক অ্যাডস এর মাধ্যমে আপনার অ্যাফিলিয়েট অফারটিতে নিয়ে আসে। এখানে অবশ্য আপনাকে ওয়েবপেজ তৈরীর ঝামেলায় যেতে হচ্ছে। তবে একপাতার ওয়েবসাইট তৈরীতে ঝামেলা অবশ্যই তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
ল্যান্ডিং পেজটির মধ্যে আপনার অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টটির সামগ্রিক বিবরণ আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করুন। এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা ও অসুবিধা সমূহ উল্লেখ করে ভিজিটরদের প্রোমোট করা পণ্য সমূহ দৃষ্টিনন্দন Call to Action বাটনে অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে সেই বাটনে প্রেস বা ক্লিক করার মাধ্যমে বিক্রেতার ওয়েবসাইটে গিয়ে পণ্যটি ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করুন।
আপনি ইচ্ছে করলে জনপ্রিয় ইমেইল মার্কেটিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ConvertKit এর ওয়েবসাইটে একটি ফ্রি একাউন্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একাধিক প্রফেশনাল মানের ল্যান্ডিং পেজ তৈরি করে নিতে পারবেন।
লিংকডইন এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায়
লিংকডইন এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানকার অভীষ্ট অডিয়েন্স অনেক বেশী পেশাদার। সেই হিসেবে এখানে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করাটা একটু বেশী সহজ।
লিংক-ইন তার ব্যবহাকারীদের পারস্পারিক সংযোগের ভিত্তিতে শনাক্ত করে। একজন ব্যবহারকারী আপনার কতটা নিকটবর্তী সেই হিসেবে তিনি ফার্স্ট-ডিগ্রী, সেকেন্ড-ডিগ্রী বা থার্ড-ডিগ্রী কানেকশান। ফার্স্ট ডিগ্রী আপনার সবচেয়ে কাছের। এই ব্যবহারকারী আপনার বন্ধু বা এমন কেউ যার সাথে আপনার সরাসরি যোগাযোগ হয়। সেকেন্ড ডিগ্রী আপনার বন্ধুর বন্ধু। থার্ড ডিগ্রী কোন অপরিচিত জন। কোন ধরণের কানেকশানের সাথে আপনি কিভাবে কাজ করেন সেটি আপনার কাস্টমাইজ করা থাকবে।
লিংকডইনে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য আপনাকে একটি “কোম্পানী পেজ” খুলতে হবে। কোম্পানী পেজ সাধারণতঃ কোম্পানীর জন্য খোলা হয়ে থাকে। কিন্তু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের মত একজন স্বাধীন ব্যবসায়ীও এরকম পেজ তৈরী করতে পারেন। লিংকড-ইনে একটি কোম্পানী পেজ তৈরী করা আপনার নিজের ব্র্যান্ডিং করার একটি উপায়।
এই পেজের মাধ্যমে আপনি একটি ব্যবসায়িক পরিচয় প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। অর্থাৎ, অন্য সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে যেমন আপনি শুধুমাত্র আপনার অ্যাফিলিয়েট অফারটির প্রতি মনযোগী হবেন, এখানে তেমন নয়। লিংকড-ইনে একপ্রকার ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মত উপস্থিতি (কোম্পানী প্রেজেন্স) তৈরী করার সুযোগ আছে।
আপনার নিশে অনুযায়ী লিংকড-ইনের বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে যোগ দিন। এবং কন্ট্রিবিউট করতে শুরু করুন। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিন, আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন আর গ্রুপের একজন মূল্যবান সদস্য হিসেবে নিজের সুনাম তৈরী করুন। আপনার নিশের অন্তর্ভুক্ত অন্য পেজগুলোর সাথেও যুক্ত হন এবং মিথস্ক্রিয়া ঘটান। আপনার লক্ষ্য হবে, লিংকড-ইনে আপনার পরিসরে বা বন্ধুচক্রে একজন সক্রিয়, নিবেদিত সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা। এরপর এমনিই মানুষ আপনার অ্যাফিলিয়েট অফার গ্রহণ করবে।
ইউটিউবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয়
ইউটিউব একটি চমৎকার ভিডিও শেয়ারিং তথা সোশাল মিডিয়া সাইট। একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে ইউটিউবে আপনার কাজ হচ্ছে- আপনার নিশে অনুযায়ী ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলুন। নিশে অনুযায়ী ভিডিও তৈরী শুরু করে দিন।
প্রথমদিকে ইউটিউবের দর্শকদের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরীর এটিই উপায়। আপনার নির্মিত ভিডিওগুলি কাজের ভিডিও হওয়া দরকার। অর্থাৎ, ভিডিও দেখে ব্যাবহারকারীরা তাদের সমস্যা সমাধানের বা কোন কিছু শেখার মত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। এই ভিডিওগুলো দিয়ে আপনি গড়ে তুলবেন আপনার অডিয়েন্স।
উদাহরণ স্বরূপ, ধরুন, আপনার নিশ হচ্ছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা। আপনি সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরামর্শমূলক ভিডিও বানাতে পারেন। ভাল ও উপকারী ভিডিও বানাতে পারলে আপনার একদল অনুসারী তৈরী হবে ফেসবুকে।
এই ভিডিওগুলোর ভেতরেই আপনি স্বাস্থ্য বিষয়ক যে পণ্য নিয়ে কাজ করছেন সেগুলিকে উল্লেখ করবেন, প্রমোট করবেন, আপনার ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করে দিবেন। আপনার ইউটিউবটিকে চ্যানেলটাকে প্রমোট করার জন্য ওয়েবসাইট আর ইমেইল ব্যবহার করতে পারেন।
এখানে লক্ষণীয় যে, ইউটিউব এখন পেইড সাবক্রিপশানের ব্যবস্থা করেছে। এই সার্ভিসে নাম লেখানো দর্শকদের বিজ্ঞাপন দেখতে হয় না। সুতরাং ভবিষ্যতে ইউটিউবে মার্কেটিং করা এখনকার মত লাভজনক নাও হতে পারে। কারণ এই অ্যাড-ফ্রি অপশনটির জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রতিদিনই।
আজকের দিনে ভিডিও তৈরী করা খুবই সহজ। অতীতে, অনেক ধরণের বিশেষায়িত সরঞ্জামের প্রয়োজন হত একটি ভিডিও নির্মাণের জন্য। বর্তমানে আপনি কয়েক মিনিটের মাঝেই আপনার ফোনে ইউটিউবের উপযোগী একটি ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারেন। আপনি যদি চান খুব ভাল মানের কিছু তৈরী করবেন, তাহলে ঐ ভিডিও ল্যাপটপ কি মোবাইলের সফটওয়্যার ব্যাবহার করে এডিট করে, মিউজিক যোগ করে উপস্থাপন করতে পারবেন।
ভিডিও নির্মাণের একটি চমৎকার কৌশল হচ্ছে “গ্রীণ স্ক্রীণ” এর ব্যবহার। ভিডিও করার সময় আপনার সাবজেক্টের পটভূমিতে থাকবে একটি সবুজ রঙের পর্দা। পরে এডিট করার সময় আপনি এই পটভূমি বা ব্যাকগ্রাউন্ডটিতে আপনার ইচ্ছেমত দৃশ্য বসিয়ে নিন। আপনি চাইলে অফিস, সমুদ্র সৈকত, বা অন্য কোন দেশের দৃশ্য জুড়ে দিতে পারেন। বিষয়টি প্রায় জাদুর মতই। এবং বর্তমান দিনের প্রযুক্তির কল্যাণে খুব অনায়াসেই করা যায়।
অডিয়েন্স তৈরী করার জন্য এমন মূল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ ভিডিও দিন। আপনার চ্যানেলের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকবে। লাইক এবং সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও যথেষ্ট পরিমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। এরকম সময়ে ইউটিউবের দেয়া মার্কেটিং টুলস, যেমন ‘কার্ডস’, আপনি ব্যবহার করতে পারেন। ইচ্ছে করলে, ভিডিওর ভেতরেই ক্লিক করার মত কিছু লিংক এমবেড করা যায়। এসবই নানা ধরণের “টুলস”।
কিভাবে সেগুলি ব্যবহার করতে হবে, তাই নিয়েও ভিডিও ইউটিউবেই পাবেন। ভিডিওতে অ্যাফিলিয়েট লিংক এমবেড করার সময়, একটি চার : এক অনুপাত ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ প্রতি একটি অ্যাফিলিয়েট সেলসের ভিডিওর বিপরীতে আপনাকে চারটি তথ্যসমৃদ্ধ ভিডিও নির্মাণ করতে হবে।
যখনই কোন কিছু প্রমোট করবেন, আপনি বিক্রী করার জন্য অতিরিক্ত উদগ্রীব বা দিশেহারা -এমন যেন মনে না হয়। একটি বিক্রয়-প্রধান কন্টেন্ট আর চারটি তথ্য-সমৃদ্ধ কন্টেন্ট এই অনুপাতটি সব জায়গায় একই রকম রাখার চেষ্টা করবেন। ইমেইল, ওয়েবসাইট পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও এবং সামাজিক গণমাধ্যমের পোস্ট সবক্ষেত্রে একই অনুপাতে কন্টেন্ট তৈরি করে পাবলিশ করবেন।
আরও পড়ুন –
ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে আয়
ইন্সটাগ্রাম একটি সোশাল মিডিয়া সাইট। যেখানে প্রতিনিয়ত প্রতিদিন সমগ্র বিশ্বের অগণতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে রাজনীতি, অর্থনীতি ও মিডিয়া জগতের তারকাদের ছবি এবং ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ইন্সটাগ্রাম ব্যবহার করে যে কোন ব্যক্তির পক্ষেই তাদের নিজেদের ছবি ও ভিডিও ক্লিপসমূহ নিজেদের আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শেয়ার করা সম্ভব। এই দিক দিয়ে চিন্তা করলে একে একটি ছবি শেয়ারের সোশ্যাল মিডিয়া সাইট বলা যায়।
ইন্সটাগ্রাম দেখার জন্য আপনি আপনার আইওএস বা অ্যানড্রয়েড ফোনে অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে পারেন। এখানে আপনি বিভিন্ন উদ্ধৃতি, ছবি, ভিডিও পোস্ট করতে পারবেন। ইউটিউবের মত এখানে পণ্য বিক্রী করতে অতিরিক্ত দিশেহারা হবেন না। একটি সেলস-পোস্টের বিপরীতে চারটি করে তথ্য সমৃদ্ধ পোস্ট করবেন।
ইন্সটাগ্রামের ছবি বা লিংকে আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করতে পারেন। কিন্তু এই লিংকে সাধারণতঃ ক্লিক করা যায় না। আপনি চাইলে, আপনার সিগনেচারগুলোতে (ইমেইলের শেষে আপনি যে সংক্ষিপ্ত তথ্য যোগ করে থাকেন, যেমন- আপনার ওয়েবসাইটের ইউআরএল) ইন্সটাগ্রামে নিয়ে আসে এমন একটি ক্লিকযোগ্য লিংক যুক্ত করে দিতে পারেন।
ইন্সটাগ্রামে একটি পোস্ট ক’দিন টিকবে (অর্থাৎ মানুষ দেখবে, ক্লিক করবে) সেটি নির্ভর করে বিষয়বস্তুর ওপর। সাধারণতঃ একটি ইন্সটাগ্রাম পোস্টের আয়ু দুই দিনের বেশী হয় না। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন গ্রুপে ঢুকলে দেখবেন সবচেয়ে পুরাতন পোস্টগুলির বয়স এক দিন বা এরকম।
ইন্সটাগ্রামের ব্যবসা প্রমোট করার অসংখ্য উপায় আছে। স্টোরীবোর্ড, গ্রুপ, গ্রুপের ভিতরে যোগাযোগ ইত্যাদি। ইন্সটাগ্রাম বিনামূল্যে যেসব টুলস দেয় সেগুলো কাজে লাগান।
রেডডিট (www.reddit.com) এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
রেডডিটের হাজার হাজার গ্রুপে মানুষের শত লক্ষ আলাপন অনুষ্ঠিত হয় নিত্য দিন। এক হিসেবে এই পৃথিবী গ্রহের মানুষের যাবতীয় কথোপকথন আলাপচারিতা তর্ক বিতর্কের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংঘটিত হয় রেডডিটে।
আপনি, একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হলে, রেডডিটের এই গ্রুপগুলোতে যোগ দিন। কমেন্টে কি আলাপ হচ্ছে শুনুন। তারপর আপনার মূল্যবান তথ্যপূর্ণ মতামত সেখানে প্রদান করুন। এভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ কন্ট্রিবিউটার হিসেবে রেডডিটে পরিচিত হয়ে উঠুন। আপনার ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হলে, প্রথমে আপনার নিজের অবস্থান তৈরী করতে হবে।
আপনি রেডডিটে একটি প্রোফাইল তৈরী করে নিতে পারেন। তবে রেডডিটের সেলফ-প্রমোশানের গাইডলাইনগুলো পড়ে নিবেন। সেলফ-প্রমোশানকে খুব একটা ভালো ভাবে দেখা হয় না রেডডিটে। তথাপি কাজটি নিষিদ্ধও নয়। রেডডিট কর্তৃপক্ষ যে নীতিমালা নির্ধারণ করে দিয়েছে নিজ পন্যের প্রচার বা সেলফ-প্রমোশান বিষয়ে সেগুলি মেনে চলুন।
যে গ্রুপে থাকবেন, সেই গ্রুপের নিয়মনীতি মেনে চলবেন। কিছু গ্রুপে অ্যাফিলিয়েট অফার দেয়ার বিষয়ে সরাসরি নিষেধ করে দেয়া হয়। কিছু গ্রুপে আবার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংকে উৎসাহিতই করা হয়। কোন কোন গ্রুপে একটি নির্দিষ্ট ধরণের পণ্যের বাইরে আলোচনা করা যায় না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনি আপনার প্রোফাইলের বাইরে অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করতে পারবেন না। খেয়াল রাখবেন আপনাকে যেন ব্যান করা না হয়। রেডডিট সহ বহু সোশাল মিডিয়া প্লাটফর্মেই অতিরিক্ত ব্যবসায়িক প্রচারের জন্য বহু ব্যবসায়িরাই ব্যানড হয়ে থাকেন।
অথচ কৌশলী হলে আপনি যেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবেন সবার কাছে, তেমনি আপনার পণ্যও বিক্রী হবে। সুতরাং রেডডিটের ক্ষেত্রেও, একটি বিক্রয়-পোস্টর বিপরীতে চারটি তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট প্রদানের নীতি মেনে চলুন।
ক্বোরা’তে (Quora.com) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার উপায়
গুগলের চোখে ক্বোরা (www.quora.com)-র অবস্থান খুবই ভালো। ক্বোরা-কে একটি সম্ভাবনাময় সাইট হিসেবে বিবেচনা করে গুগল। ক্বোরা একটি প্রশ্নোত্তরের সাইট। তথ্য বিনিময় ও ভাগ করে নেয়ার চমৎকার একটি সাইট ক্বোরা। একদল মানুষ এখানে প্রশ্ন পোস্ট করেন। অন্য আরেকদল মানুষ সেগুলির উত্তর দেন।
সুতরাং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে, আপনি এখানে মানুষের প্রশ্নের সমাধান দেয়াকেই মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করবেন। সরাসরি আপনার অ্যাফিলিয়েট অফারটি নিয়ে আক্রমণ করে বসবেন না। ক্বোরার ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসাগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করুন। নিয়মিত উত্তর দিতে থাকলে এক প্রকার সম্পর্ক গড়ে উঠবে অডিয়েন্সের সাথে। তখন আপনি আপনার উত্তরের ভেতরেই অ্যাফিলিয়েট অফারের লিংক জুড়ে দিতে পারেন।
ক্বোরায়, নিজের নাম আর সংক্ষিপ্ত আত্মকথা লিখে আপনি প্রোফাইল তৈরী করে নিতে পারেন। আপনার প্রোফাইলের প্রথম ৫০টি ক্যারেক্টার আপনার উত্তরগুলোর ওপর দেখা যাবে। আপনার উত্তরের সাথে প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন লিংক আপনি সংযুক্ত করতে পারবেন। অপ্রাসঙ্গিক লিংক অবশ্যই দিবেন না। এই লিংক হতে পারে আপনার অ্যাফিলিয়েট সাইটের লিংক।
পড়ুন – কোরা (Quora) এবং মিডিয়াম পার্টনার প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে কিভাবে অনলাইনে আয় করা যায়?
অতিথি ব্লগিং (Guest Blogging) এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
গেস্ট ব্লগিং বা অতিথি ব্লগার আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যবসার প্রচার ও প্রসারের জন্য খুব ভাল একটি কৌশল হতে পারে। আপনাকে প্রথমেই ভেবে দেখতে হবে কেন অন্য একটি ওয়েবসাইট আপনাকে অতিথি ব্লগার হিসেবে গ্রহণ করতে চাইবেন। কি লাভ তাদের আপনাকে দিয়ে?
একটা সময়ে গেস্ট ব্লগিংই ছিল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটের ব্যবসা প্রসারের এবং অডিয়েন্স গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায়। বর্তমান সময়ে অবশ্য বিষয়টি আরও জটিল। কিছু অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক ইদানীংকালে অতিথি ব্লগ পোস্টগুলোতে তাদের অ্যাফিলিয়েট লিংক অনুমোদন করে না। কিছু ব্লগ এবং আর্টিকেলের সাইট, অ্যাফিলিয়েট লিংক দেখলেই সরাসরি বাতিল করে দেয়। আবার একটা সমস্যা আছে যে, কোন গেস্ট ব্লগিং বা আর্টিকেলের সাইট যদি কোন স্প্যামারের পোস্ট গ্রহণ করে ফেলে এবং ব্যানড হয়, সেক্ষেত্রে আপনাকে সেই দুর্ভাগ্যের ভার বহন করতে হবে।
গেস্ট ব্লগিং করতে চাইলে, প্রথমেই ওয়েবসাইটের সুনাম এবং নির্ভরযোগ্যতা বিষয়ে নিশ্চিত হোন। এমন কোন সাইটে আপনি অ্যাফিলিয়েট লিংক সমৃদ্ধ আর্টিকেল, কন্টেন্ট দিবেন না যেটির কুখ্যাতি রয়েছে। সেক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হবে।
প্রথমেই যেমনটা বলেছিলাম, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ব্যবসায় স্বাধীনতা ও পূর্ণাঙ্গতা চাইলে আপনাকে নিজের ওয়েবসাইট বানাতে হবেই। সোস্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহার করলে সেই প্লাটফর্মগুলোর বিধিনিষেধ মেনে চলা ছাড়া উপায় নেই। তবে নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং সোস্যাল মিডিয়া একসাথে ব্যবহার করতে পারলে, আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যথেষ্ট সফল হবেন।
লিখেছেন : সালেহ মুহাম্মাদ
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন –