মানুষ যেমন শরীরকে সুস্থ রাখতে শরীরের যত্ন নেয়, নানা রকম পথ অনুসরণ করে। তেমনি মনটাও শরীরেরই একটি অংশ। যার পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ মনের ভালো থাকা, মন্দ থাকার সাথে নির্ভর করে শারীরিক সুস্থতা। মনের অসুখ থেকে শরীরে বাসা বাঁধে সেই অসুখ। বেশিরভাগ মানুষই মানসিক চাপ ও মনের অশান্তিতে ভুগে এবং করে থাকে নানান দুশ্চিন্তা। এইসব কারণই মনকে দূর্বল করে দেয়।
মনেরও যে স্বাস্থ্য রয়েছে তা আমরা গুরুত্ব দেই না। মনের যত্নও যে নেয়া প্রয়োজন সেটাও খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখে না কেউ।
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে করি নানা কাজ। ডুবে থাকি নানান চিন্তায়। যেটা প্রকাশ পায় মানসিক চাপ হিসেবে।
মানসিক চাপ হয়ে উঠে হরেক রকম রোগের কারণ। উচ্চ রক্তচাপ, মাথা ব্যথা, হরমোনাল প্রবলেম, মুখের ব্রণ, প্রভৃতি নানান সমস্যা রূপে দেখা দেয়।
মন সবারই আছে, তাতে ভালো মন্দ দুটোরই বাস। সুখ ও দুঃখ দুটোই মানিয়ে নিতে হয় মনে। সুখে মন আনন্দিত হয়, দুঃখে মন ভেঙে পড়ে।
হ্যা, একটা খারাপ ঘটনা কিংবা কাজ মনের উপর খারাপ প্রভাবই ফেলে। তাতে সাময়িক দুঃখ পাওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু মনকে শক্ত করে সবকিছু সইবার শক্তি রাখতে হবে।
আবার লক্ষ্য করলে দেখতে পারবেন, আমরা বেশির ভাগ সময়ই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনায় ডুবে থাকি। খেতে-বসতে গেলেও নেগেটিভ কথা আগে মনে পরে। কোনো একটা কাজ করার আগে আমরা ভয়টাকে আগে ধারণ করি, যা আমাদের মনের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।
মনের উপর নেগেটিভ প্রভাবটাই তখন আগে পরে। আর মনের সেই ধারনা থেকেই কোনো একটা দূর্ঘটনা ঘটে যায়।
চিন্তা সব মানুষই করে। একটা হলো সুচিন্তা, আরেকটা দুঃশ্চিন্তা। এই দুটোর মধ্যে যে কোনো একটা বাছাই করার থেকে নির্ভর করে মানুষের বেশিরভাগ উন্নতিই।
একটা ভালো চিন্তা থেকে ভালো কিছুর আশা আপনি অবশ্যই করতে পারবেন।
ধরুন, আপনি কোনো একটা জব ইন্টারভিউ দিতে গেলেন। এবং যাওয়ার আগ মুহুর্ত অব্দি আপনি হতাশায় ভুগছেন। ভাবছেন “আমার দ্বারা হয়ত হবে না”, “আমি পারবো না”, “আমি সবার থেকে হয়ত কম প্রস্তুতি নিয়েছি”; এসব ভাবনা আপনার মনের জোর এমনিতেই কমিয়ে দিবে।
দেখা যাবে আপনি এসব ভেবেই উত্তর দিতে থতমত খাচ্ছেন। এবং চাকরির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন।
সেটা কিন্তু আপনার নেগেটিভ ধারণা ও মনের আত্মবিশ্বাসের অভাবেই। মন, এমন একটা জিনিস; আপনি নিজে যেভাবে ভাববেন সেটাও তেমন ভাবেই নিয়ন্ত্রণ হবে।
মনের কোণে কোনো নেতিবাচক দিকের জন্ম দেয়া যাবে না। তাতে সেই প্রভাব আপনার উপরেই পরবে।
কিছু মানুষ আছে যারা কম কথা বলতে, মানুষের সাথে কম মিশতে ভালোবাসে। আর এরাই বেশিরভাগ সময় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ভুগে। কম করে হলেও প্রতিদিন ভালো ভালো মানুষের সাথে আড্ডা দেয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
পৃথিবীতে এখনও অনেক ভালো মানুষ রয়েছে, যারা অন্যের অনুপ্রেরনার কারণ। তাদের দেখে মানুষ ভালো কিছু করার সাহস পায়। মনের মাঝে শান্তি অনুভব করে।
ভালো ভালো বই, গল্প, সিনেমা এসবেও নিজেকে আগ্রহী করতে হয়। এগুলোও মন ভালো রাখার কারণ হয়।
মনের সুস্থতার জন্য আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। নিয়মিত ঘুমাতে হবে। পারিবারিক সম্পর্কের গুরুত্ব দিতে হবে। শারীরিক ব্যায়াম কিংবা যোগ-ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
প্রয়োজন রয়েছে বিনোদনেরও। খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে।
যদি মানসিক সমস্যা থেকে থাকে তবে অবশ্যই চিকিৎসক এর স্মরণাপন্ন হতে হবে।
মন নিয়ে কাজ করছে মনোবিজ্ঞান। এই মনোবিজ্ঞান নিয়েও ধারণা থাকা দরকার। মনোবিজ্ঞান মনকে সুস্থ রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে পজিটিভ চিন্তাভাবনার উপর।
মানসিক ধ্যান ধারণা ভালো থাকলেই জীবনে সুন্দর ভাবে গড়া সম্ভব। এটা মনে রাখতে হবে- শরীরের সুস্থতার পাশাপাশি মনের সুস্থতাও জরুরি।
মন ও শরীর একটি অন্যটির পরিপূরক। তাই, দুটোকেই সমান গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।
প্রাসঙ্গিক লেখা-