চলতে পথের প্রতিটি মানুষের কাছে নিজেকে প্রিয় মানুষ হিসেবে আখ্যায়িত হতে কে না চায়? এই প্রবল ইচ্ছা প্রতিটি মানুষের মধ্যেই থাকে। কিন্তু সবাই অন্যের কাছে প্রিয় হতে পারে না। এই প্রিয় না হতে পারার জন্য মাঝে মধ্যে কি কষ্ট হয়? কেন আপনি সবার প্রিয় নন? খুব রাগ হয় সেসব মানুষের ওপর যারা খুব জনপ্রিয়?
কোন মানুষই জন্ম থেকে সবার প্রিয় একটা অবস্থানে আসিন হয়ে আসেন না। এটি নিজেকে নিজের চারিত্রিক গুনাবলি দিয়ে অর্জন করতে হয়। সবাই আপনাকে ভালো বলবে, আপনাকে বিশ্বাস করবে, সবাই এইরকম ভরসার মানুষ হিসেবে আপনাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দেখবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি তাদের মন জয় পারবেন না।
আপনি সবার মন জয় করে প্রিয় হওয়ার এই প্রবল ইচ্ছে পূরণ করতে আপনার জন্য থাকছে কিছু পরামর্শ।
সদ্য পরিচিত মানুষকে বন্ধুসুলভ আচরণে মুগ্ধ করবেন কিভাবে?
মনে করুন, আপনার সামনে একজন অপরিচিত মানুষ। আপনি মানুষটির কাছে নিজেকে বোরিং হিসেবেও তুলে ধরতে পারবেন আবার মানুষটির মনও জয় করতে পারবেন. মানুষটি আপনাকে কেমন মানুষ হিসেবে ভাববে সেটা সম্পূর্ণ আপনার উপর নির্ভর করবে।
অপরিচিত মানুষের সাথে গম্ভীরভাবে আচরণ না করে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন। হাসুন এবং আন্তরিক হন। অন্যের সঙ্গে যখন কথা বলবেন তখন সুন্দর করে চোখে চোখ রেখে হেসে হেসে মিষ্টি ভাষায় কথা বলুন। এতে সে আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে।
সবার প্রিয় হওয়ার পথের সঠিক যাত্রা এখান থেকেই শুরু। এমনভাবে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করবেন যেন অপর অপরিচিত ব্যাক্তি দেখলেই না বুঝতে পারে আপনারা সদ্য পরিচিত।
এটাই সুযোগ নিজেকে সবার কাছে প্রিয় করে তোলার। সংকোচবোধ না করে হাঁসি মুখে কথা বললে খুব সহজেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আবদ্ধ হয়ে যাবেন।
এইভাবে অপরিচিত মানুষ বা নতুন পরিবেশে নিজেকে খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারবেন এবং পছন্দের মানুষ হতে পারবেন।
প্রথমে আপনি হয়তো খুব সহজে মিশতে পারছিলেন না। কিন্তু অপরিচিত ব্যক্তিটির সাথে কয়েকটি বাক্য বলার পরই খুব সহজ বোধ হয়েছে। মনে হয়েছে যেন কতকালের পরিচিত।
আপনি কি অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না? তাহলে আপনি কখনই প্রিয় মানুষ হতে পারবেন না।
মনে করুন আপনি সহ আপনার কিছু বন্ধু আড্ডা দিচ্ছেন। সেখানে আপনি আপনার আলোচ্য বিষয় নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন, কিন্তু অন্যদের মতামতের সুযোগ দিচ্ছেন না তাহলে সবার কাছে আপনি প্রিয় মানুষ না হয়ে বিরক্তির মানুষ হয়ে উঠবেন।
তাই, শুধু নিজের বিষয়েই কথা বলবেন না, অন্যরা কী বিষয়ে কথা বলতে চায় সেটাও প্রাধান্য দিন। তারা যা বলে, মন দিয়ে শোনার ইচ্ছা রাখুন। শুনতে ভালো না লাগলেও কখনই লজ্জা দিবেন না বরং ধৈর্যসহকারে শুনবেন।
এমনকি শুনতে ভালো না লাগলেও অন্যদের কথায় সাড়া দিন। যাতে তারা বুঝতে পারে আপনি তাদের কথা মন দিয়ে শুনছেন। তাদের হাসির কথায় হাসুন, দুঃখের গল্পে দুঃখ প্রকাশ করুন, অবাক হবার মতো কিছু শুনলে অবাক হন।
চেহারার অভিব্যক্তি দেখে যেন কখনো মনে না হয় আপনি শুধু তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে বা আপনার শুনতে ভালো লাগছেনা তাদের কথা
কাউকে লজ্জা দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন: মনে করুন আপনার একজন বন্ধু যে গ্রাম থেকে শহরে এসেছে, শহরের কিছুই জানে না বুঝে না। প্রথমদিন যখন আপনার সাথে লিফটে উঠেছিলো কিন্তু সে উঠার পর ভয় পাচ্ছিলো আর অস্বস্তিবোধ করছিলো।
আপনি লিফটে চলাফেরা করে কতটা অভ্যস্ত সেই গল্প তাকে আকার ইঙ্গিতে শোনাবেন না। সহমর্মী হয়ে সেই বন্ধুকে নিয়ে হাসাহাসি না করে বরং আপনি প্রথমবার আপনিও লিফটে উঠে ভয় পেয়েছিলেন সেই গল্প করুন । এতে সে লজ্জিত বোধ করা থেকে বাঁচবে ও তাদের মনে আপনার প্রতি ভালো একটি ধারণা জন্মাবে।
আপনি কাউকে তার যোগ্যতা আর সৌন্দর্য দিয়ে বিবেচনা করেন? মোটেও এই কাজ করবেন না।
যোগ্যতা আর সৌন্দর্য্য এইসব কিছুর উর্ধ্বে আমরা সবাই মানুষ. এই মনোভাব নিয়ে সবার সাথে কথা বললে আপনি ছোট বড় সবার চোখে সম্মান পাবেন।
আপনি অফিসে অনেকের বস হতে পারেন, বাসায়ও আপনি আপনার গৃহকর্মী, দারোয়ান ও ড্রাইভারের বস। বস বলে আপনি তাদের ধমক দিতে পারেন না। তাদেরকে আপনার মতো মানুষ মনে করুন, আপনার আর তাদের মধ্যে যোগ্যতা দিয়ে বিবেচনা করবেন না। আর আপনি কাউকে কটু কথা কিংবা বকা দেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন আচরণ কেউ আপনার সাথে করলে আপনার কেমন লাগবে?
রূঢ় আচরণ বর্জন করুন। কারো সাথে রূঢ় ব্যবহার করবেন না।
ক্ষমা ও ধৈর্যশীল হয়ে উঠুন
ধৈর্যশীল হওয়া মানুষের মহৎ গুণগুলোর মধ্যে অন্যতম গুণ। কেউ কোন ভুল করলে ধৈর্য সহকারে তাকে বুঝিয়ে দিন- সে কি ভুল করেছে? এবং, ভুলের জন্য তাঁকে ক্ষমা করে দিন।
ক্ষমা নামক গুনটি না থাকলে মানুষ রাগান্বিত উঠে ধীরে ধীরে। আর এই ক্রোধ মানুষকে বিপথগামী করে! তাই ক্ষমাশীল হয়ে উঠুন।
ভালো কাজের প্রশংসা করুন
নিজের ভালো কাজের প্রশংসা, অন্যের মুখে শোনার মধ্যে একটা অদ্ভুত আনন্দ আছে। কেউ ভালো কাজ করলে তাকে প্রশংসা করুন।
সে যদি কাজটি সম্পূর্ণ নাও করতে পারে তাও তার কাজটিকে খারাপ না বলে হাসিমুখে ভালো বলবেন। আপনার একটু প্রশংসা যদি অন্যের মুখের হাসির কারণ হতে পারেন, তাহলে দিনশেষে এর চেয়ে খুশির ব্যাপার আর কিছুই নেই।
পরনিন্দা করবেন না
কেউ কেন ভুল করেছে বা খারাপ কাজ করেছে সেটা নিয়ে সবার কাছে তার বদনাম করবেন না।
আপনার খুব কাছের মানুষ হলেও কখনই তার কাছে সমানে অন্যের কথা বলবেন না। হতে পারে আপনার সেই কাছের মানুষটির সাথে আপনার সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়ে গেলো। তখন সে কি সেই বদনামগুলো তাকে বলবে না?
অবশ্যই বলবে । আর আপনি তখন তার সাথে খুবই ঘৃণিত মানুষ হিসেবে পরিচিত হবেন। সুতরাং কারো পিছনে কারো পরনিন্দা করবেন না। এতে করে আপনি কারো কাছে খারাপ মানুষ হিসেবে পরিচিত না হয়ে বরং সবার কাছে আপনার এই গুনের জন্য প্রিয় হয়ে উঠবেন।
আপনি কি কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেন না? যদি না পারেন তাহলে আপনি কারো প্রিয় হতে পারবেন না। বরং মিরজাফর নামক কুৎসিত পদবিতে অ্যাখায়িত হবেন।
আবেগে খুব খুশি হয়ে কাউকে কোন কথা দিবেন না থাকা। আপনার না রাখতে পারা কথা অন্যের মনে আঘাত দিতে পারে। কাউকে কখনই ভালো রাখতে না পারলেও কখন কষ্ট পাবার মত কারণ হবেন না। কথা দেওয়ার আগে ভাবুন এবং আবার ভাবুন। ভেবে কথা দিন।
জীবনের বিনিময়ে হলেও কথা রক্ষার চেষ্টা করুন। দেখবেন সবার আস্থাশীল ব্যক্তিতে পরিণত হয়ে গেছেন।
সৎ পরামর্শ দিন
আপনার কাছে কেউ পরামর্শ চাচ্ছে আর আপনার মনে হচ্ছে সেই পরামর্শ দেওয়ার জন্য সে আপনার থেকে বড় কিছু পেয়ে যাবে?
কেউ আপনার কাছে কখন একটা পরামর্শ চায় বলুন তো? যখন, সে মনে করে আপনি পরামর্শ দেওয়ার উপযুক্ত লোক। তাহলে আপনাকে এতো সম্মান দেওয়ার পরও আপনি সেই সম্মানের অমর্যাদা করবেন?
তাই, যে আপনার কাছে পরামর্শ চায় তাকে পরামর্শ দিবেন। এমনকি নিজে থেকেও পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। সে যদি আপনার শত্রুও হয়ে পরামর্শ চায় তাও তাকে সৎ পরামর্শ দিবেন।
সদা সত্য কথা বলবেন
সত্যবাদী কে না ভালোবাসে? আপনি যদি মিথ্যা কথা বলেন তাহলে কেউ আপনাকে ভালোবাসা দূরে থাক আপনার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। সবসময় সত্য এবং নিষ্ঠার পথে চলবেন। এতে করে সবাই খুব সহজে বিশ্বাস করবে। ছোট-বড় সবাই সম্মান করবে।
সব সময় অন্যদের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন
নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবীটা দেখলে আপনি সবার প্রিয় হতে পারবেন না। অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে পৃথিবী দেখলে তবেই আপনি সবার কাছের মানুষ হতে পারবেন।
কারো মুখে হাসির কারণ না হতে পারলেও দুঃখের কারণ হবেন না।
কাজটি করলে আপনি কারো মুখের হাসির কারণ হবেন! এই কথা মাথায় রেখে যেকোন কাজ করবেন; আপনি অব্যশই প্রিয়পাত্র হতে পারবেন!
প্রাসঙ্গিক লেখা-