শান্তি!

আমরা মাটির তৈরি কিন্তু নিজেকে ভাবি লোহা। আবার ভুলেই যাই- মাটি কেবল পুড়লে’ই শক্ত হতে পারে। আবার যেমন- আমরা অশান্তি প্রিয় মানুষ। ভাবছেন ভুল লিখেছি নিশ্চয়ই? নাহ! যা পড়লেন, একদম সঠিক…

অবাক হচ্ছেন তো? বাক্যটি এমনই!

আমাদের মুখে-মুখে শান্তি হিমালয় ডিঙিয়ে মহাকাশ! অথচ আমাদের মন অশান্তি নিয়ে বেশি আলাপনে মেতে থাকে । অবাক করা হলেও তেতো সত্যে। এক কথায় হতে পারে, স্বার্থ আছে যেখানে, শান্তি নেই সেখানে…

নাহ আমি বলছি না এখানেই সীমাবদ্ধ,
আরো কত কি আছে তার হিসেব রাখে কে?

আমার এই শান্তি শিরোনামে অশান্তি নিয়ে বিবরণে বিরক্ত হওয়াও একটা অশান্তি! ভেবে দেখলে পাবেন, তেতো খেলে পরে মুখ বিকৃত হয়, কিন্তু স্বাভাবিক হতে লাগে ধৈর্য আর সময়। এই ক্ষেত্রে আমার এই লিখাটি ব্যতিক্রম হবে না ।

যাই হোক, মূল কথায় আসি-

প্রথমত,

বাড়ির গাছগুলোকে দেখো তো? তোমার অজান্তেই তোমাকে বাঁচিয়ে রাখছে! তুমি দিছো তোমার বিষাক্ত শ্বাস আর তার বদলেও পাচ্ছো বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস।

অক্সিজেন ছাড়া আমার বাঁচতে পারবো না। ১ মিনিট হলেও পানি ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারি তবে সীমিত সময়ের জন্যও কিন্ত অক্সিজেন ছাড়া বেঁচে থাকা একেবারেই কল্প কথা। আরও লক্ষ্য করে দেখো? গাছ আমাদের খাবার যোগাচ্ছে। পাখিদের থাকার জন্য জায়গা দিচ্ছে। কিন্তু কোনোদিন আঙুল উচিয়ে বলেনি-

“হে জীব কূল দিয়েই গেলাম,
বিনিময়ে কিছু না নিলাম”!

তাহলে আমরা কেনো এতো অহংকারী? এতো কঠিন চোখে শুধু আপন চিন্তা করে অশান্তি ডাকি কেনো!

বুদ্ধি আছে বলে?
কথা বলতে পারি বলে?

ভুলে যেও না বুদ্ধিমান কখনো বাঁচাল হয় না! শান্তি প্রিয় কেউ সব কথা ধরে না, যুক্তি দিয়ে বিচার করতে যায় না। যে বাক্যগুলো অকথ্য হয় …

মজার ব্যাপার ভেবে দেখো? তুমি পৃথিবীতে না থাকাতে কারো ঘড়ির কাঁটা থেমে যাবে না। বিশেষ করে মানুষের ক্ষেত্রে মানুষের জন্য। অথচ তুমি চাইলে কারো মনে আমৃত্যু থাকার জায়গা করতে পারো।

তেমনই কেবল নিঃস্বার্থতাই পারে শান্তি বয়ে আনতে। তাই মানুষকে বুঝতে হবে, বুঝতে হলে- তোমাকে বোবা হয়ে প্রথমত শুনে যেতে হবে; কোনো মন্তব্য ছাড়া। আর যদি কথার মাঝেই এঁটে দাও তোমার মনের ভাবনা। তবে একবার, দুইবার, তিনবার, ঠিকই তারপর বিরক্ত হবে।

তোমার প্রতি তখন আর আগ্রহ কাজ করবে না। বিশ্বাস করে নির্ভয়ে কিছু বলতে আসবে না, কিন্তু সব শুনে যদি তোমার বক্তব্য রাখো? প্রশ্ন এঁটে তার কোনো গতি হয়, তখনই হয়ে উঠতে পারো কারো প্রিয়!

বয়ে আসবে শান্তি তখন, দেখবে যে তোমার তেতো কথাও সে গায়ে মাখবে না। কারণ সে বুঝে যাবে তুমি কেমন?

আরো অনেক উদাহরণ আছে এই পৃথিবীর গায়। বুঝে নিতে হবে তোমাকে।

কি করলে শান্তি পাচ্ছো? অভাব নেই! অভাব শুধু আমাদের বুঝতে পারার মনমানসিকতার। গাছের মতো হয়ে যাও …

গাছের গাঁয় কত পাখি বাসা বাঁধে। কিন্তু পাখিকে কখনো কিছু বলেনি। গাছের গাঁয় কুড়াল দিয়ে ডাল কাটছি, বিক্রি করছি, টাকা পাচ্ছি, তবুও গাছ কিছু বলেনি।

যদি বলতো- আমি আমার ফল-ফুল অক্সিজেন, ডাল-পাতা দিবো না। ভাবতে পারো? পৃথিবীতে কি অশান্তি শুরু হতো? তাহলে প্রথমত অক্সিজেন এর অভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস বেড়ে যেতো। হিমালয়ের বরফ গলে গোটা পৃথিবী পানিতে প্লাবিত হয়ে যেতে। আমাদের অস্তিত্ব থাকতো না!

কাজেই বুঝতে পারছো তো? সহ্য ক্ষমতা কতটা ভালো বয়ে আনে? গাছ কথা জানে না, তবুও তার নিরবতার কতটা মূল্যয়ান করলো সকলে!

অথচ, অন্যদিকে আমরা মানুষরা ছাঁড় দিতে পারি না। বরং ঘাড়ে চেপে বসতে পারি। একটু কিছুতেই অন্যের দাপট দেখিয়ে নিয়ে আসি অশান্তি। অথচ চিৎকার বলি শান্তি চাই!

ভাবতে হাস্যকর লাগে না?

মনে রাখতে হবে, সুখ-শান্তির অনুভূতি কেউ দিতে পারে না। কে কতটুকুতে নিজের জন্য যথেষ্ঠ বলে ভাবতে পারে তা নিজের ব্যাপার! নিজের ভাবনার কাছে, মস্তিষ্কের কাছে, সব আছে; এটাও মনে রাখা দরকার। নিজেকে ভালো রাখতে চেষ্টা করো, শান্তি ধরা দিবেই।

পৃথিবীতে ভরপুর শান্তি আছে, কিন্তু অশান্তি শুধুমাত্র আমাদের মনে!

লিখেছেন- ফাহমিদা সুহা

প্রাসঙ্গিক লেখা-

Leave a Comment