বহনের সুবিধার কারণে ডেস্কটপের চেয়ে ল্যাপটপের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। আর এ চাহিদা থেকেই ল্যাপটপে কাজ করতে মানুষ বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেগুলো স্মার্ট ফোনে করা সম্ভব নয়, সেগুলো মূলত ল্যাপটপেই করা হয়ে থাকে। তাই বর্তমান সময়ে কম বেশি আমরা সবাই ল্যাপটপ নির্ভর হয়ে যাচ্ছি। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইসটি ঠিক রাখা ও যত্ন নেওয়া আমাদের প্রত্যেকেরই কর্তব্য।
কিন্তু ল্যাপটপের যত্ন নেওয়ার বিষয় ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না জানা ও পালন না করার কারণে অনেকেরই ৪/৫ মাস না পেরোতেই ল্যাপটপ ধীরগতিসম্পন্ন হওয়া, চার্জ না থাকা, বন্ধ হয়ে যাওয়া, দেরী করে চালু হওয়া ইত্যাদি সমস্যায় পরতে হয়। তাই আজকের আলোচনায় থাকছে ল্যাপটপ ভালো রাখার কিছু সহজ উপায়। যেগুলো অবলম্বন করে চললে আপনার ব্যবহৃত ল্যাপটপটি থাকবে সচল, ও উচ্চগতিসম্পন্ন।
১। ল্যাপটপ সঠিক নিয়মে চার্জ দিন (ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম)
অধিকাংশ মানুষ জানেনই না কিভাবে ল্যাপটপ চার্জ দিতে হয়। ফলে তাদের ল্যাপটপে বেশিক্ষন চার্জ থাকে না। আবার, আপনি যতো দামী ল্যাপটপই কিনুন না কেন, সঠিক নিয়মে চার্জ না দিলে ৬ মাস বা ১ বছর পর ল্যাপটপের চার্জ দ্রুত কমতে থাকবে। অধিকাংশ মানুষই ব্যাটারি ১০০% চার্জ দিতে অভ্যস্ত।
এই অভ্যাসটির ফলে ব্যাটারির কোষগুলোর ধারনক্ষমতা কমে যায়, এবং কিছুদিন পর ল্যাপটপে বেশিক্ষণ চার্জ না থাকার সমস্যা দেখা দেয়। ব্যাটারি ১০০% চার্জ দেওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন।বিষেশজ্ঞদের মতে ল্যাপটপ ৮০-৮৫% চার্জ করা উচিত। তারপর যখন ব্যবহার করবেন, চার্জ ৪০% এ আসার পরই আবার চার্জ দিতে হবে। পুনরায় ৮০-৮৫% চার্জ হলেই চার্জার খুলে ফেলতে হবে।
চার্জে দেওয়ার পরপরই ল্যাপটপ ওপেন করা উচিত নয়। ৫-১০ মিনিট ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ দিয়ে তারপর ব্যবহার করুন। সপ্তাহে ২ দিন ল্যাপটপ ১০০% চার্জ শেষ করুন। এই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করলে ল্যাপটপের চার্জ বেশিক্ষন থাকবে।
২। স্ক্রিন প্রটেক্টর ও কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করুন (ল্যাপটপ ভালো রাখার কার্যকর উপায়)
ল্যাপটপ কেনার পরপরই প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে ল্যাপটপের স্ক্রিন ও কিবোর্ডর প্রটেক্টর কিনে ফেলা ও ব্যবহার করা। স্ক্রিন প্রটেক্টর হচ্ছে, আমরা স্মার্টফোনে যেরকম স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করি ঠিক সেরকম। স্ক্রিন প্রটেক্টর ব্যবহার করলে ল্যাপটপের স্ক্রিনে কোনো দাগ বা ময়লা জমতে পারবে না।
সব অবাঞ্ছিত দাগ স্ক্রিন প্রটেক্টরে লাগবে ও ধুলোবালি জমলে খুব সহজেই পরিষ্কার করা যাবে। ফলে ল্যাপটপের স্ক্রিন ভালো থাকার পাশাপাশি নতুনত্ব বজায় থাকবে। কিবোর্ড প্রটেক্টর হলো স্বচ্ছ রাবারের পর্দার মতো। এটি ব্যবহার করলে ল্যাপটপের কিবোর্ড থাকবে ধুলোমুক্ত ও নিরাপদ। কিবোর্ডে ধুলোবালি জমলে পরিষ্কার করা সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর একটি ব্যাপার। এই ঝামেলা থেকে বাঁচতে হলেও কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করা উচিত।
এছাড়াও যাদের চা -কফি খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করা অতিব গুরুত্বপূর্ন। কারণ বে-খেয়ালিভাবে চা-কফি পরে গেলে ল্যাপটপের বারোটা বেজে যাবে। এবং ঠিক করতে গেলেও মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হবে। তাই ল্যাপটপ ভালো রাখতে চাইলে অবশ্যই স্ক্রিন প্রটেক্টর ও কিবোর্ড প্রটেক্টর ব্যবহার করুন।
৩। কুলিং ফ্যান ব্যবহার করুন (ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায় সমূহের মধ্যে খুবই কার্যকর)
যারা অধিকাংশ কাজ ল্যাপটপে করেন, দেখা যায় কয়েকমাস যাওয়ার পর তাদের ল্যাপটপ হয়তো গরম হয়ে যাচ্ছে। বেশিক্ষণ ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ল্যাপটপ গরম হওয়াই স্বাভাবিক। ছোট পরিসরে ল্যাপটপে হার্ডডিস্ক, র্যাম, প্রসেসর, মাদারবোর্ড ইত্যাদি থাকে এবং ল্যাপটপ চলাকালীন অনেকক্ষন যাবৎ এগুলো ব্যবহৃত হওয়ার কারনে ল্যাপটপ গরম হয়ে যায়।
ল্যাপটপ গরম হওয়ার বিষয়টি চলতে থাকলে ব্যটারি লাইফও কমে যায়। এ সমস্যার সমাধান করতে কুলিং ফ্যান ব্যবহার করুন। কুলিং ফ্যানের উপর রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার করলে, ল্যাপটপ সহজে গরম হয় না এবং ল্যাপটপের ব্যাটারি লাইফও বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন-
৪। সঠিক জায়গায় ল্যাপটপ ব্যবহার করুন
অনেকেরই বিছানায় বা সোফায় আরাম করে বসে ল্যাপটপ চালানোর অভ্যাস আছে। অভ্যাসটি আপনারও থাকলে আজই তা ত্যাগ করুন। কারণ নরম জায়গায় ল্যাপটপ রেখে ব্যবহার করলে দ্রুত গরম বাতাস তৈরি হয় এবং সেটা ভেন্টিলেটর দিয়ে বের হতে পারে না। এমন চলতে থাকলে যে কোনোদিন আপনার প্রিয় ল্যাপটপটি ডিসাবেল হয়ে যেতে পারে। তাই সবসময় শক্ত ও সমান্তরাল স্থানে রেখে ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন।
৫। সঠিক নিয়মে পাওয়ার অন-অফ করুন (ল্যাপটপ ভালো রাখার গুরুত্বপূর্ণ উপায়)
গবেষণায় দেখা গেছে- প্রায় ২৭% মানুষ সঠিকভাবে ল্যাপটপ অন-অফ করে না। যার কারণে ল্যাপটপ অনেক বেশি স্লো হয়ে যায় ও ল্যাপটপের স্বাভাবিক কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়। অধিকাংশ মানুষ কী বাটন চেপে ল্যাপটপ অফ করে থাকেন। অভ্যাসটি আপনারও থেকে থাকলে দ্রুত ত্যাগ করুন।
ল্যাপটপ অফ করার সঠিক নিয়ম হচ্ছে অপারেটিং সিস্টেমে গিয়ে শাট ডাউন করা। আবার, আপনি যখন কাজ করার শেষে ল্যাপটপ রেখে দেন তখন কিন্তু ল্যাপটপ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় না। সেটা স্লিপ মুডে চলে যায়। এবং সে অবস্থায় যদি চার্জে দেওয়া হয় তাহলে ২/১ বারে কিছু না হলেও প্রায়ই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে ল্যাপটপে খারাপ প্রভাব পরে।
তাই যখনই কাজ শেষ হবে,অপারেটিং সিস্টেম থেকে শাট ডাউনের মাধ্যমে ল্যাপটপ অফ করতে হবে। এবং চার্জ থেকে খুলে সাথে সাথে কখনই ল্যাপটপ অন করবেন না। কারণ চার্জে থাকা অবস্থায় ল্যাপটপ কিছুটা গরম থাকে। তাই ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা হতে দিয়ে তারপর ব্যবহার করা উচিত।
৬। অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার আনইন্সটল করুন
ল্যাপটপে মাত্রাতিরিক্ত সফটওয়্যার না রাখাই উত্তম। যতোটুক আপনার প্রয়োজন ঠিক ততোটুকই ব্যবহার করুন। বাকী সফটওয়্যার আন-ইন্সটল করে ফেলুন। এতে করে ল্যাপটপের প্রসেসরে কম চাপ পরবে। বেশি সফটওয়্যার থাকলে বা রাখলে প্রসেসরের উপর চাপ বাড়ে এবং দ্রুত তা গরম হতে থাকে।
প্রসেসরের উপর চাপ কমাতে, একসাথে অনেকগুলো সফটওয়্যার কখনোই ওপেন রাখা যাবে না। প্রয়োজন মোতাবেক যেকোনো একটি সফটওয়্যার চালু রাখুন। এছাড়াও ব্রাউজারে অপ্রয়োজনীয় ট্যাব ওপেন রাখা থেকে বিরত থাকুন। একসাথে অনেকগুলো ট্যাব ওপেন রাখলে সেটাও প্রসেসরে চাপ সৃষ্টি করে। প্রসেসরে যতো কম চাপ পরবে ল্যাপটপের আয়ুষ্কাল ততো বৃদ্ধি পাবে।
৭। এন্টিভাইরাস ভাইরাস ব্যবহার করুন (ল্যাপটপ ভালো রাখার উপায়)
ফাইল ট্রান্সফার, পেন ড্রাইভ ইন-আউট, ওয়েব পেইজ খোলা ইত্যাদি কাজ আমরা নিয়মিত করে থাকি। এবং, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই জায়গাগুলোতে ভাইরাস থাকে এবং ল্যাপটপ থেকে ল্যাপটপে ছড়িয়ে যায়। ভাইরাস সফটওয়্যারের ক্ষতি করা থেকে শুরু করে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরিসহ, একাউন্ট হ্যাক করার ক্ষমতা পর্যন্ত রাখে।
এই সমস্যাগুলো থেকে বাঁচতে অবশ্যই ল্যাপটপে এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার রাখুন। অনলাইনে প্রচুর এন্টিভাইরাস পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারেন। তবে জানিয়ে দেওয়া ভালো অনলাইনে অহরহ পাওয়া এই এন্টিভাইরাসগুলো ভাইরাস রুখতে আংশিক কাজ করে থাকে। তাই সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকতে চাইলে লাইসেন্সড এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন।
৮। ল্যাপটপ পরিষ্কার ও বিদ্যুৎ সংযোগে সতর্কতা অবলম্বন করুন
মাসে অন্ততপক্ষে তিনবার ল্যাপটপ পরিষ্কার করা উচিত। পরিচর্যা করলে আপনার ব্যবহৃত ল্যাপটপটি ভালো থাকার পাশাপাশি থাকবে আকর্ষণীয় ও নতুন। তাই বলে ভেজা কাপড় দিয়ে ঘষে মেজে পরিষ্কার করতে যাবেন না যেনো! ল্যাপটপ পরিষ্কারের জন্য সবসময় নরম সুতি কাপর ব্যবহার করুন।
সুতি কাপড়ে ৩-৪ ফোটা ক্লিনার নিয়ে আলতো করে ল্যাপটপ মুছে নিতে পারেন। কিবোর্ড ও ভেন্টিলেটর পরিষ্কারের সময় অবশ্যই কটনবার ব্যবহার করে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
ভেন্টিলেটর সবসময় পরিষ্কার রাখলে কুলিং ফ্যান ভালো কাজ করে। বৈদ্যুতিক বোর্ডের সুইচ অন রেখে ল্যাপটপ প্লাগ ইন বা চার্জে ঢোকানো ও প্লাগ আউট করা থেকে বিরত থাকুন। সবসময় মাল্টিপ্লাগের সুইচ অফ রেখে চার্জে লাগান ও সুইচ অফ করে খুলে ফেলুন। এতে করে ল্যাপটপের পাওয়ার কানেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
আরও যা যা আছে-