লিংক বিল্ডিং – ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার সেরা উপায়

সুষ্ঠু সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের একটি অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে- “জনপ্রিয়তা”। একটি ব্লগ তৈরি করে সফল হবার উপায় হিসেবে জনপ্রিয়তা একটি শক্তিশালী এসইও ফ্যাক্টর রূপে কাজ করে। আপনার সাইট একবার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারলে, সহজে এই অর্জনটির ক্ষতিও করা যায় না। আজকের এই লেখাতে, লিংক বিল্ডিং এর মাধ্যমে ব্লগ বা ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার সেরা কিছু উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বেশীরভাগ সময়ই, সার্চ ইঞ্জিনগুলো অন্য ওয়েবসাইট এবং ওয়েবপেজের লিংক মারফত আপনার সাইটের হদিস পায়। এই লিংকের ওপর ভিত্তি করে আপনাকে নির্ভরযোগ্যতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতায় একপ্রকার নম্বরের মত প্রদান করা হয়। বিষয়টিকে বলে “ট্রাস্ট ফ্যাক্টর”।

আপনার লিংকটির ভিত্তিতে সার্চ ইঞ্জিন ধারণা করে এই কন্টেন্টটি কতটুকু জনপ্রিয়, এবং এর ওপর ভরসা করা যায় কি না।

ডট গভ (.gov) বা ডট অর্গ (.org) ওয়েবসাইটের লিংককে সাধারণতঃ গুরুত্ব সহকারের নেয়া হয়। এই সাইটগুলো থেকে শেয়ার করা লিংকের ক্ষমতা ও মানসম্পন্নতা বেশী – এরকম একটি ধারণা পোষণ করে সার্চ ইঞ্জিনগুলো।

ডট গভ বা ডট অর্গ সাইটগুলো সরকার বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় তাদেরকে নির্ভরযোগ্যতার একটি মাপকাঠি হিসেবে দেখার এই প্রবণতা সার্চ ইঞ্জিনদের।

আজ থেকে বছর কয়েক আগের কথা ভাবুন। লিংক তখন কোন বিষয়ই ছিল না ব্যবসা প্রতিষ্ঠানদের জন্য। লিংক তৈরি করে দেওয়ার তখন কত রকমের নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট জুড়ে খুচরা লিংক বিক্রেতার অভাব ছিল না।

আপনি এদের কাছে সাবস্ক্রাইব করবেন। এরা তারপর ভাড়ার বিনিময়ে তাদের ওয়েবসাইট নেটওয়ার্কে আপনার লিংক শেয়ার করে দিত। মানে আপনি পয়সা দিয়ে কৃত্রিম লিংকের সৃষ্টি করছিলেন। জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যমে নয়।

সেই দিন অবশ্য গত হয়ে গেছে। এর মধ্যে বহুবার আপডেট হয়েছে গুগলের এলগরিদাম। নিম্ন মানসম্পন্ন সাইট থেকে লিংক তৈরি করছে এরকম ওয়েবসাইটগুলোকে দুই নম্বরী সাইট হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এখন।

সঠিকভাবে লিংক বিল্ডিংয়ের সেরা কিছু উপায়

আপনার সাইট অবধি লিংক তৈরি বা লিংক বিল্ডিংয়ের সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে বা অর্গানিকভাবে তা ঘটতে দেওয়া। আপনি উচ্চ-গুণসম্পন্ন উপকারী কন্টেন্ট তৈরী করলেই এই ঘটনা ঘটবে।

এই মর্মে প্রয়োজন দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তাভাবনা। একটি পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যেতে হবে আপনাকে। আপনাকে নিজের ওয়েবসাইটের বাইরেও অন্য ভাল ওয়েবসাইটগুলোর পেছনে সময় দিতে হবে। সেই সাথে নিম্ন মান সম্পন্ন ওয়েবসাইটগুলোকেও নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

লক্ষ্য রাখতে হবে এরা যেন আপনার ওয়েবসাইটের লিংক না দেয়। কারণ নিম্ন মানের ওয়েবসাইটের লিংক হচ্ছে “ টক্সিক লিংক”। আপনার র্যাঙ্কিঙের জন্য ক্ষতিকর।

সুবিধা হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন একটি উপায় রেখেছে আপনার জন্য। গুগল সার্চ কনসোল বা ওয়েবমাস্টার ওয়েবসাইট মনিটরিং টুলসে “ ডিস-এভো” বা অস্বীকার করার একটি অপশন থাকে। এই অপশনটির মাধ্যমে আপনি আপনার সাইটে আসা লিংকের মাঝে কয়েকটিকে লো-কোয়ালিটি লিংক হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন এবং “ডিস-এভো” বা অস্বীকার করতে পারেন।

অনেক এসইও টুলসেই সাধারণত লিংকের মান পরীক্ষা করে দেখার একটি ফিচার থাকে। এই ফিচার ব্যবহার করে আপনি একটি তালিকা পেতে পারেন।

সার্চ ইঞ্জিনের প্লাটফর্মে তালিকা আপলোড করে দিলেই নিম্ন মানসম্পন্ন লিংকগুলোকে অস্বীকার করা হয়ে যায়।

লিংক বুস্ট করার ক্ষেত্রে উপকারী এবং স্বতন্ত্র কন্টেন্ট তৈরি করার চেয়ে বেশী কার্যকর কোন উপায় নেউ। যে ভিডিও দেখে বা লেখা পড়ে মানুষ সরাসরি তাদের সমস্যার সমাধান পান, বা যে কন্টেন্টকে তারা কাজে লাগাতে পারেন সেগুলোই আপনাকে লিংক এনে দিবে।

আপনার ‘নিশ’ বা সাইটের বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত অন্য ব্লগ অথররাই অনলাইনে তাদের দর্শক বা পাঠকদের সুবিধা ও উপকারের জন্য, নিজেদের ব্লগিং ব্যবসার খাতিরেই, আপনার লিংক শেয়ার করবে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও একইরকম প্রতিক্রিয়া পাবেন এই ক্ষেত্রে। সুতরাং, উচ্চমান সম্পন্ন কন্টেন্ট তৈরীতে মনযোগী হন।

লিংক বিল্ডিংয়ের জন্য যা যা করণীয়

  • মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠিত ডট গভ , ডট অর্গ সাইট থেকে লিংক পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন।
  • আপনার হোমপেজ, এবং সাইটের অন্য যে গুরুত্বপূর্ণ পেজগুলোকে আপনি র্যাঙ্ক করতে চান, লিংকগুলো সেদিকে পয়েন্ট করুন।
  • যে টার্মটির জন্য আপনি র্যাঙ্ক করতে চান, আপনার ওয়েবসাইটের লিংকের এংকার টেক্সটে সেই টার্মটি ব্যবহার করুন।
  • আপনার কন্টেন্ট মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ও মানুষকে অবগত করার জন্য “কন্টেন্ট প্রমোশানের” কাজ করুন।
  • প্রতি মাসেই একবার, কোন একটি লিংক-কোয়ালিটি-টুল ব্যবহার করে আপনার সাইটে আসা লিংকগুলোর মানের মূল্যায়ন করুন। নিম্ন মানসম্পন্ন লিংকগুলোকে সার্চ কনসোলের মাধ্যমে “ডিসএভো” করে দিন।

লিংক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে যা করবেন না

  • নিম্নমানের স্প্যামি ভাড়া-খাটা ধরণের সাইটগুলো থেকে লিংক নিবেন না।
  • শুধুমাত্র আপনার হোমপেজে অবধি লিংক করবেন না।
  • এংকার টেক্সটে শুধুমাত্র “ ক্লিক হেয়ার” জাতীয় উদাসীন কথাবার্তা লিখবেন না।
  • যেই কিওয়ার্ডের জন্য আপনি র্যাঙ্ক করতে চান সেটি ব্যাবহার করতে কখনই ভুলবেন না।
  • টাকা দিয়ে লিংক কেনা থেকে বিরত থাকুন।

লিংক বিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল যে জিনিসটা আপনাকে বুঝতে হবে, সেটি হচ্ছে – অর্গানিকালি বা প্রাকৃতিক ভাবে লিংক পাওয়াই একমাত্র উপায়।

আপনাকে হাই-কোয়ালিটি কন্টেন্ট নির্মাণ করতে হবে। তাহলে অন্য সাইট এমনিই আপনার লিংক শেয়ার করবে। সেরকম সাইট-ই করবে যারা একই বিষয়ে নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছেন।

আপনার “কন্টেন্ট প্রমোশান” এবং লিংক বিল্ডিংয়ের আরও কিছু অর্গানিক উপায় আছে। সেগুলো বর্ণণা চেষ্টা করা হল-

পেইড মিডিয়া

পেইড সার্চ বা কন্টেন্ট প্রমোশানের বিভিন্ন মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে আপনি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ট্রাফিক আপনার সাইটে নিয়ে আসতে পারেন। এতে করে আপনার কন্টেন্টের বিষয়ে বহু মানুষ জানতে পারবেন।

এক্ষেত্রে ফেসবুক এডের কথা ভাবা যায়। ফেসবুকের নিজস্ব পেজ-বুস্টিং এবং বিজ্ঞাপনের একটি সিস্টেম আছে বর্তমানে। সাধারণতঃ পাঁচশ টাকায় পাঁচদিন আপনার কন্টেন্টের বিজ্ঞাপন দেবে ফেসবুক।

তাই বলে, ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতারক চক্রের “পাঁচ হাজার টাকায় পনেরশ লাইক” জাতীয় কোন প্রকল্পে জড়াবেন না যেন। এরা সাধারণতঃ ফেক-আইডি ও অন্যান্য ধোঁকাবাজি কৌশল ব্যবহার করে লাইক দিয়ে থাকে। এগুলো অর্গানিক লাইক নয়, সুতরাং আপনার কোন কাজেই আসবে না। ফেসবুকের নিজস্ব এড সিস্টেমটিই ব্যবহার করুন।

তাছাড়াও, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, পোস্টারিং, গাড়ির স্টিকার, গুগল এডস -এসব পদ্ধতিতেও আপনি অর্থের বিনিময়ে সৎভাবে আপনার সাইটের প্রচার করতে পারেন।

অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্লগ ও ওয়েবসাইটে লিখুন (গেস্ট ব্লগিং)

বড় বড় সাইটগুলোর বিপুল সংখ্যা ও প্রকারের কন্টেন্টের প্রয়োজন হয়। তারা সাধারণতঃ একই নিশের অন্যান্য নবীন ও সম্ভাবনাময় সাইটের লেখকদের কাছ থেকে কন্টেন্ট নিয়ে থাকে।

এসব ক্ষেত্রে, ঐ সাইটের মালিকদের অনুমোদন সাপেক্ষে, আপনি তাদের কন্টেন্টের ভেতরেই নিজের সাইটের কথা উল্লেখ করতে পারেন বা লিংক শেয়ার করতে পারেন। আপনার অভীষ্ট ভিজিটরদেরকে আপনার কন্টেন্ট সম্পর্কে জানানোর এটি একটি চমৎকার উপায়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার চ্যানেলগুলো যেমন টুইটার, পিন্টারেস্ট, ফেসবুক প্রভৃতি আপনার কন্টেন্টকে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার চমৎকার মাধ্যম। আপনার নিজের যদি ভালো সংখ্যক বন্ধু ও ফলোয়ার থাকে তাহলে এই কাজটি খুবই সহজ হবে। তা না হলেও, ফেসবুকে আপনি আপনার সাইটের জন্য একটি পেজ তৈরি করে ধীরে ধীরে ফলোয়ার বৃদ্ধি করতে পারেন।

আপনার পরিচিত, ঘনিষ্ঠদের লিংক শেয়ার করার জন্য বলতে পারেন। তাছাড়া ভাল কন্টেন্ট হলে তো মানুষ এমনিতেও শেয়ার করবেন। আপনি শুধু প্রথম দিকে একটু আমন্ত্রণ জানাবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার পর্যাপ্ত বন্ধু বান্ধব থাকলে, সুসম্পর্ক থাকলে, কোন পয়সা খরচ না করেই আপনার সাইটকে বেশ কম সময়ের মধ্যেই পরিচিত করে তুলতে পারেন এবং লিংকও পেতে পারেন প্রচুর।

ইমেইল নিউজলেটারের ব্যবহার

যেসব ব্রান্ড ইমেইল নিউজলেটার প্রকাশ করে, এবং মেইলের তালিকাটি যাদের বড়, তারা নতুন আর্টিকেলের একটি লিংক সেখানে জুড়ে দিলেই মোটামুটি ভাল একটি প্রচারণা চালাতে পারবেন। মানুষ আপনার আর্টিকেলটির প্রতি আকর্ষিত হলে লিংকের সংখ্যাও বাড়বে।

ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম

প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যম বা নিউজ পোর্টালগুলোতে আপনি প্রেস রিলিজ দিতে পারেন। অনেক সময় নতুন সাইট শুরুর সময় প্রচারণার অংশ হিসেবে সংবাদ সম্মেলনও করে থাকেন অনেকে। আপনার ব্লগ বা সাইট যে বিষয়বস্তু নিয়ে, সেই বিষয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত পরিচিত মানুষদের কাউকে যদি সাথে রাখতে পারেন, বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাখতে পারেন, তাহলেও ভালো হয়।

ইউটিউব ভিডিও’র মাধ্যমে লিংক বিল্ডিং

নিউ ইয়র্ক টাইমসের হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীর দ্বীতিয় জনপ্রিয়তম সার্চ ইঞ্জিন এখন ইউটিউব। আপনার ব্রান্ড বা ওয়েবসাইট যে বিষয়েই হোক, ইউটিউবে একটি ভিডিও চ্যানেল তৈরি করে রাখুন। অন্তত হাতে গোনা হলেও কয়েকটি ভিডিও নির্মাণ করুন প্রাথমিক ভাবে।

সিরিয়াসলি ব্লগ তৈরি করে আয় করতে চায় এরকম সব ব্যবসায়ীই আজকাল তাদের ব্রান্ডের একটি ইউটিউব চ্যালেন তৈরি করেন। রান্না, সাজগোজ, বিসিএস পরীক্ষা, ওয়েবসাইট অপটিমাইজেশান -কোন বিষয়ের পরামর্শ দাতা এখন ইউটিউব বানায় না, বলুন? তাছাড়া ইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় হলে সেখান থেকেও তো উপার্জন করা যায় অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে।

এই বিষয়গুলো মেনে চললে আপনি কার্যকর উপায়ে লিংক বিল্ডিং করতে পারবেন। কোন প্রকার ছলনা , ধূর্ততার আশ্রয় নেয়ার প্রয়োজন হবে না। আপনার সাইট একটি জনপ্রিয় ও জননন্দিত সাইট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে। শুভকামনা সবার জন্য।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন –

Leave a Comment