সেই আদিকাল থেকে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তথা রূপচর্চায় গোলাপজল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র সব রকমের ত্বকেই গোলাপজল ব্যবহার করা যায়। এই জলীয় দ্রবণটি খুবই সস্থা, যে কেউ চাইলে কিনে অথবা বাড়িতে বানিয়ে, ব্যবহার করে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে পারেন। এটি নিয়মিত ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। চোখের নিচের কালো দাগ দূর করে। ত্বককে কোমল ও মৃসণ করে।
ব্রণ কমাতেও গোলাপজল অনেক কার্যকর। ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রাখার পাশাপাশি ত্বককে হাইড্রেট রাখে। গোলাপজল লোমকূপের দূষিত কনা বের করতে সাহায্য করে। ফলে মুখ থাকে সতেজ ও পরিষ্কার। এছাড়াও মেকআপ সেটিং করতে গোলাপজল জনপ্রিয়।
মেকআপ রেমুভারের কাজও করে থাকে এটি। ৩০ বা এর থেকে বয়স বেশি হলেই হলে চামড়া কুচকে যায়। বয়সের ছাপ পরতে থাকে। বয়সের ছাপ দূর করতেও গোলাপজলের কার্যকরীতা অপরিসীম।
ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে ও রুপচর্চায় গোলাপজল এর ৯টি অসাধারণ ব্যবহার
১। গোলাপে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে। এ কারণে গোলাপজল অ্যান্টি এজেন্টের কাজ করে থাকে। অ্যান্টি এজেন্ট ত্বককে সতেজ রাখে পাশাপাশি ময়লা দূর করে এবং বয়সের ছাপ দূর করে মুখকে রাখে টানটান ও সজীব। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ১ চামচ গোলাপজলের সাথে ১ চামচ মধু মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে সম্পূর্ণ মুখে লাগিয়ে নিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন৷ মিশ্রণটি বার্ধক্যজনিত ছাপ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করবে।
২। মেকআপ ছাড়া আজকাল আমাদের কারোরই চলে না। হোক সেটা অনুষ্ঠান বা সামান্য মার্কেটে যাওয়া। মেকআপ যেনো নিত্যদিনের সঙ্গী। মেকআপ ভালোভাবে সেট করতে অনেকেই আমরা সেটিং স্প্রে ব্যবহার করি।
মেকআপ প্রিয়দের জন্য সুখবর! টাকা খরচ করে সেটিং স্প্রে কিনতে হবে না। স্প্রে বোতলে গোলাপজল নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন সেটিং স্প্রে হিসেবে। এতে ত্বকে সমস্যা হওয়ার ভয় থাকবে না। নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।
এটি ব্যবহারে ত্বক ভালো থাকবে। মেকআপ ভালোভাবে বসবে ও এক্সট্রা সতেজ দেখাবে আপনাকে।
৩। মেকআপ করতে তো কম বেশি সবাই আমরা ভালোবাসি। কিন্তু সমস্যা হয় মেকআপ তোলার সময়। ফেসওয়াশ দিয়ে ঘষে মেজে, নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায় ত্বকের।
বাজারে মেকআপ রিমুভার পাওয়া যায়। সেটা অনেকটা দামী হওয়ায় অনেকের পক্ষেই কেনা সম্ভব হয় না। এই সমস্যা থেকে প্ররিত্রাণ পেতে গোলাপজলই হতে পারে সবচেয়ে সস্তা ও ভালো রিমুভার।
মেক আপ রিমুভ করার জন্য গোলাপ জল ও নারিকেল তেল কয়েক ফোঁটা একসাথে মিশিয়ে তুলোর সাহায্য মেক আপ উঠিয়ে নিন। মুখটা পানি দিয়ে ধুয়ে, পুনরায় গোলাপ জল ও গ্লিসারিন একত্রে মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে হালকা ঘষে ৫-১০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন। এতে করে এক্সট্রা মেকআপও উঠে যাবে।
৪। ব্রণের সমস্যা থাকলে বা মুখ জ্বালাপোড়া করলে ৪ চামচ গোলাপজলে ১ চামচ পানি মিশিয়ে বরফ বানিয়ে নিন। উক্ত বরফ মুখে ঘষুন। গোলাপজলে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা মুখের জীবাণু দূর করে। ব্রণের সমস্যা থাকলে গোলাপজলের বরফ ব্রণ ছোট করবে। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ব্রণ দূর হবে। এটি জ্বালাপোড়া দূর করবে পাশাপাশি মুখকে করবে ঠান্ডা ও সতেজ।
৫। নিত্যদিনের ধুলোবালিতে ত্বকের বারোটা বেজে যায়। এবং ত্বকের নানারকম সমস্যা দেখা দেয়। ত্বকের ময়লা দূর করতে অনেকেই আমরা বেশি বেশি মুখ ধুয়ে থাকি। যা ত্বককে করে ফেলে রুক্ষ, শুষ্ক। ত্বককে কোমল, সুন্দর ও আদ্র রাখতে ময়শ্চারাইজড রাখা অনেক বেশি জরুরী। এর জন্য গোলাপজল হতে পারে বেস্ট ময়শ্চারাইজার। ৭ চামচ গোলাপজলের সাথে ৪ চামচ গ্লিসারিন ২ চামচ নারিকেল মিশিয়ে বোতলে ভরে ফেলুন। মুখ ধুলে প্রতিবার ভালোভাবে ঝাঁকিয়ে ৩-৪ ফোঁটা মুখে লাগান। এটি খুব ভালো ময়শ্চারাইজের কাজ করবে।
৬। গোলাপজলের এন্টিস্যাপ্টিক ও এন্টিবায়োটিক গুন ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। এটি ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দূর করার পাশাপাশি ব্রণের দাগ ও মুখ পরিষ্কার করে থাকে।
ব্রণ দূর করতে গোলাপজলের কিছু জনপ্রিয় প্যাক
লেবু ও গোলাপজল
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন সি – যা অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে, ত্বকের ক্ষত দূর করে। ভিটামিন সি কোলেজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে ফলে মুখের যাবতীয় দাগ দূর হয়। এছাড়াও এতে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমটরি উপাদান ব্রণ থেকে মুক্তি দেয়।
১ চামচ লেবুর রসে ১ চামচ খাঁটি গোলাপজল মিশিয়ে নিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে দ্রবণটি তুলোর সাহায্যে ব্রণ আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১৫ – ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ৩ দিন পর পর প্যাকটি লাগান।
গোলাপজল, লেবু ও মুলতানি মাটি
৪ চামচ মুলতানি মাটিতে ১ চামচ লেবুর রস ও ২ চামচ গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিন। মুলতানি মাটিতে থাকা মিনারেল ত্বকে পুষ্টি যোগায়, মুখের অতিরিক্ত তেল ও দূষিত কনা দূর করে মুখকে ব্রণের হাত থেকে রক্ষা করে ও ত্বকে এনে দেয় মসৃণতা।
গোলাপজল ও বেসন
১ চামচ বেসনে ১ চামচ গোলাপজল মিশিয়ে নিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে প্যাকটি লাগান। ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। বেসন মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে। লোমকূপকে দূষনমুক্ত করে ও ত্বকের অতিরিক্ত তেল বের করে দেয়। বেশির ভাগ সময় অতিরিক্ত তেলের কারনে ব্রণ দেখা দেয়। তেল ও জীবাণু বের হয়ে গেলে ব্রণ কমতে শুরু করে। তাই যাদের ব্রণ আছে তাদের জন্য প্যাকটি অনেক কার্যকর।
শসা, মধু ও গোলাপজল
অর্ধেক শসা ব্লেন্ড করে নিন। এতে যোগ করুন ১ চামচ মধু ১ চামচ গোলাপজল। প্যাকটি আধঘন্টার জন্য রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মধুতে রয়েছে অ্যান্টিস্যাপ্টিক উপাদান ও গোলাপজলে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। প্যাকটি ব্রণ দূর করার পাশাপাশি ত্বকে এনে দিবে কোমলতা ও সতেজতা।
আরও পড়ুন-
৭। ঠিকমতো ঘুম না হলে বা অতিরিক্ত ঘুমালে, চোখ ফুলে যায় বা লাল হয়ে যায়। বর্তমানে আমরা সবাই ঘন্টার পর ঘন্টা বিভিন্ন ধরণের স্ক্রিণ, যেমন- মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, প্রভৃতির দিকে তাকিয়ে থাকতে অভ্যস্ত। এর ফলে চোখ ক্লান্ত হয়ে যায়।
শুরু হয় মাথা ব্যথা। অনেক সময় চোখ জ্বালাপোড়াও করে। এরকম সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে ৫ মিনিটের জন্য ৩-৪ চামচ গোলাপজল ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিন। এবার, এই ঠান্ডা গোলাপজলের দ্রবণে তুলো ভিজিয়ে চোখে দিয়ে রাখুন ৫ মিনিটের জন্য। প্যাকটি দুপুর ও রাতে ব্যবহার করুন। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হবে। চোখ থাকবে ঠান্ডা ও সতেজ৷
৮। সানবার্ন ও ত্বকের কালো দাগ দূর করতে গোলাপজল অনেক ভালো কাজ করে। সানবার্ন বা রোদেপোঁড়া দাগ দূর করতে নরমাল ফ্রিজে ৩-৪ চামচ গোলাপজল ৫-১০ মিনিট রেখে তুলোর সাহায্যে মুখে লাগাতে হবে। বিশেষ করে বাহির থেকে এসে তৎক্ষনাৎ এই প্যাকটি লাগাতে পারলে রোদে পোঁড়াভাব চলে যায়। নিয়মিত লাগালে কোনোরকমের কেমিক্যাল ছাড়াই সানবার্ন দূর হবে।
ত্বকের কালো দাগ দূর করতে পরিমাণ মতো আলু ব্লেন্ড করে নিন। তাতে যোগ করুন পরিমাণ মতো গোলাপজল। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি ২ দিন পর পর ব্যবহার করুন। নিমিষেই কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকে এনে দিবে উজ্জ্বলতা।
৯। ত্বক ঝকঝকে করতে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন মেথি ও ৩-৪ টুকরো শসা ব্লেন্ড করে নিন। সাথে যুক্ত করুন গোলাপজল ও ৩-৪ ফোটা মধু। ব্যস, হয়ে গেলো ত্বক পরিষ্কার করার দারুন কার্যকরী একটি প্যাক। আধঘন্টা লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করুন।
প্রয়োজন মনে হলে পড়ে নিতে পারেন-