মোবাইল ফোনের সেন্সর সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত সবকিছু!

আপনারা অনেকেই মোবাইল ফোনের সেন্সর কথাটির সাথে পরিচিত। কিন্তু অনেকেই এখন পর্যন্ত জানে না এই সেন্সর জিনিসটা কি বা তার ফোনে কি কি সেন্সর আছে এবং সেন্সর আসলে কি কাজ করে? তো আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো মোবাইল ফোনের সেন্সর সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত সবকিছু।


সেন্সর কথাটি এসেছে মূলত সেন্স শব্দ থেকে। অর্থাৎ যার সেন্স আছে তাকে বলা হয় সেন্সর। তো আপনারা এক্ষেত্রে বলতে পারেন যে, মানুষেরও তো সেন্স আছে কিংবা পশু পাখি সবারই তো সেন্স আছে বা হুঁশ আছে। তাহলে সবাই কি সেন্সর?

আসলে মানুষ, পশু-পাখি, গরু-ছাগল এগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। এগুলো বাদে কোনো যন্ত্রের যদি সেন্স থাকে অর্থাৎ কোনো যন্ত্র যদি অটোমেটিক্যালি কিছু বুঝতে পারে তবে ঐ যন্ত্রকে সেন্সর বলে।

আপনারা রোবট সোফিয়ার নাম শুনেছেন, দেখেছেন? সে কিন্তু অটোমেটিক্যালি সবকিছু বুঝতে পারে এবং উত্তর দেয়। সে কিন্তু অটোমেটিক্যালি সবকিছু দেখতেও পারে।

রোবটের মুভিগুলোতেও ঠিক এমনটাই দেখবেন যে, তারা সব দেখে ডিটেক্ট করতে পারে। তো আসলে, তার মধ্যে, তার মস্তিষ্কে অনেকগুলো সেন্সর ব্যবহার করা হয়। সেন্সরগুলোর মাধ্যমে সে সবকিছু সহজেই নির্ণয় করতে পারে।

তো এইবার চলে আসি- কি কি ধরণের সেন্সর আছে এবং সেগুলোর কাজ কি, এই সম্পর্কিত আলোচনায়। আমরা আসলে মোবাইল ফোনের সেন্সরের বিষয়ে আলোচনা করবো।

মোবাইল ফোনে কি কি সেন্সর থাকে এবং কোন কোন সেন্সরের কি কি কাজ হয়ে থাকে?


এক্সিলেরোমিটার সেন্সর – মোবাইল ফোনের সেন্সর হিসেবে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে

আমাদের ফোনে প্রধান যে সেন্সরটা থাকে সেটা হচ্ছে এক্সিলেরোমিটার সেন্সর। আমরা যখন আমাদের ফোনটাকে রোটেট করি বা রোটেট মোডে চলে যাই, ল্যান্ডেস্কপ মোড করি তখন এক্সিলেরোমিটার সেন্সর বুঝে যায় যে, ফোনে একটা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে- ফোনটাকে এভাবে বাঁকা করে দেখানো হবে বা রোটেট করতে হবে। তখন এক্সিলেরোমিটার সেন্সর সেটা করে দেয় অটোমেটিক্যালি।

ম্যাগনেটোমিটার বা মেটাল সেন্সর

এরপরের সেন্সরটা হচ্ছে ম্যাগনেটোমিটার বা মেটাল সেন্সর। ম্যাগনেটোমিটার সেন্সর আসলে সব ফোনে থাকেনা। দামি ফোন, বিশেষ করে, স্যামসাং, মোটোরোলা, এলজি এইসব ফোনে এই সেন্সর পাওয়া যায়। তো, ম্যাগনেটোমিটার সেন্সর বা মেটাল সেন্সরের কাজ হচ্ছে- এই সেন্সর মূলত ম্যাগনেট বা মেটাল নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়।

অর্থাৎ কোনো মেটালের সামনে যদি ফোনটা ধরেন তাহলে এই সেন্সরের মাধ্যমে ফোনটি অটোমেটিক্যালি তা ডিটেক্ট করে ফেলবে। এ ধরনের কাজের জন্য আসলে এই সেন্সর ব্যবহার করা হয়।

প্রক্সিমিটি সেন্সর

যে সেন্সরটা আমাদের সবার ফোনেই থাকে তা হলো প্রক্সিমিটি সেন্সর। আমরা যখন ফোনে কথা বলি তখন দেখবেন ফোনটা কানে নেওয়ার সাথে সাথে কিন্তু ফোনের লাইটটা অফ হয়ে যায়। এইটাই মূলত প্রক্সিমিটি সেন্সর এর কাজ।

খেয়াল করলে দেখবেন, এই সেন্সরটা মূলত ক্যামেরার আশেপাশে থাকে বা ফ্ল্যাশ লাইটের আশেপাশে থাকে। তো আমরা যখন ফোনটার সামনে দিয়ে হাতটা নিয়ে যাই, নির্দিষ্ট একটা দূরত্বে আসলে ফোনটা অফ হয়ে যায় অর্থাৎ স্ক্রিনটা আলো বন্ধ করে দেয়।

তো, এইটা আসলে কেন করা হয়? কারণ, আমরা যখন ফোনে কথা বলি, আমাদের কানের কাছে ফোনটা চলে আসে। কোনোভাবে কানের টাচ লেগে কলটা না কেটে যায় বা আমাদের কোনো অসুবিধা না হয় এবং ব্যাটারিতে যেন চার্জ না ফুরায় এইজন্য মূলত প্রক্সিমিটি সেন্সর কাজ করে।

তাই, আপনি যখন কথা বলবেন তখন এই সেন্সর এভাবেই লাইট অফ করে কাজ করে থাকে। শুধু কথা না, হাত দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখলেও আলো বন্ধ করে দিবে।

লাইট সেন্সর

এবারে যে সেন্সরের বিবরণ নিয়ে আসছি সেটা হলো লাইট সেন্সর। লাইট সেন্সরের কাজ মূলত আলোকে কেন্দ্র করে। আপনার ফোনে যদি লাইট সেন্সর চালু থাকে, অটো ব্রাইটনেস চালু থাকে (অটো ব্রাইটনেস প্রায় সবার ফোনেই চালু থাকে) তবে এই সেন্সরের কাজ বুঝতে পারবেন সহজেই।

এই সেন্সরের কাজ হচ্ছে, আপনি যেই পরিবেশে আছেন সেই পরিবেশের লাইটকে ডিটেক্ট করে। তারপরে সে কি করে- ফোনে একটা অটোমেটিক্যালি ব্রাইটনেস দিয়ে দেয়।

এখন আপনি ধরুন দিনের বেলায় আছেন। তারমানে দিনের বেলা অনেক আলো আছে। তো লাইট সেন্সর করবে কি- আলোটাকে অটোমেটিক্যালি কমিয়ে দিবে। যাতে আপনি দেখতে পান কিন্তু আপনার চোখে কোনো সমস্যা না হয়।

এবার রাতের বেলা যখন থাকবেন, তার মানে আপনি অন্ধকারে আছেন, আশেপাশে অন্ধকার আছে। তখন এই সেন্সরটা বুঝে নিবে যে, এখন অন্ধকার আছে তাই বেশি আলো দরকার। তাই তখন ডিসপ্লেটা বেশি উজ্জ্বল দেখাবে। ফলে খুব সহজেই আপনি সবকিছু দেখতে পারবেন। তো এইটাই মূলত লাইট সেন্সরের কাজ।

ব্যারোমিটার সেন্সর

এরপর আরেকটি সেন্সরে আসি। তা হলো- ব্যারোমিটার সেন্সর। এগুলো মূলত দামি দামি ফোনে থাকে। তো ব্যারোমিটার সেন্সরের কাজ হচ্ছে,  আপনি সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে কতো উপরে আছেন অর্থাৎ সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে কত উচ্চতায় আছেন, যেমনঃ দশ তলা বিল্ডিংয়ে নাকি বিশ তলা বিল্ডিংয়ে আছেন এটা কিন্তু ব্যারোমিটার সেন্সর ডিটেক্ট করে দেয়।

এছাড়া স্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করেও এই সেন্সর কাজ করে। অনেকে দেখবেন হার্টরেট বা হার্টবিট মাপে এই ব্যারোমিটার সেন্সর দিয়ে।

প্যাডোমিটার সেন্সর

পরের সেন্সরটি হলো প্যাডোমিটার সেন্সর। এটিও দামি ফোনে থাকে। এই সেন্সরের কাজগুলো অ্যাপ বা সফটওয়্যার দিয়েও করা যায়। কিন্তু ফোনে যদি সেন্সর থাকে তবে সেটা দিয়ে নিখুঁতভাবে করা সম্ভব। তো প্যাডোমিটার সেন্সরের কাজ হচ্ছে এটি নির্ণয় করে দেয় যে, দিনে আপনি কত পা হাঁটলেন।

অর্থাৎ কত পা ফেললেন বা কত ধাপ ফেললেন। এগুলো কিন্তু এই সেন্সর অটোমেটিক্যালি পরিমাপ করে ফেলে। ফলে আপনার হেলথের যে বিষয়টি আছে সেটি কিন্তু এই প্যাডোমিটার সেন্সর দ্বারা পরিমাপ করা যায়।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর

তারপরে যে সেন্সরের কথা বলবো সেটি হলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। তো ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের কাজ তো আপনারা বোঝেন। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর মূলত আপনার ফোনের নিরাপত্তা দেয়। অর্থাৎ আপনার হাতের ছাপ ছাড়া অন্য কারো ছাপ দিয়ে এই লক খুলবেনা।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের ব্যবহার এখন অধিক হয়ে যাচ্ছে। কারণ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরই এখন একমাত্র বড় সিস্টেম লক। iPhoneX এ যে ফেইস লকটা আছে সেটা কিন্তু অনেকে ভেঙে ফেলেছে। কিন্তু এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরকে কেউই ভাঙতে পারবেনা।

কারণ, আপনার হাতের ছাপ না দেওয়া পর্যন্ত এই লক খুলবেই না। তো এই সেন্সর দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে যাবে। সাধারণ ফোনগুলোতেও এই সেন্সর দেওয়া হতে পারে।

এই ছিলো সেন্সর এবং সেন্সরের কাজ। তো, এখন কিভাবে বুঝবেন যে আপনার ফোনে কি কি সেন্সর ব্যবহার করা হয়? গুগল প্লে-স্টোরে গিয়ে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে। অ্যাপটির নাম CPU-Z। এই অ্যাপ ডাউনলোড করে দেখবেন যে সেন্সর নামে একটা অপশন আছে। ওখানে ক্লিক করলেই দেখতে পাবেন আপনার ফোনে ব্যবহৃত সেন্সরগুলো। চাইলে টেস্ট করেও দেখতে পারেন সেন্সরেগুলো।

এই ছিলো মোবাইল ফোনের সেন্সরের আদ্যপান্ত। লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট ও শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন!

সম্পাদকের বাছাই –