অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের যে সাধারণ ভুলগুলো নতুনরা প্রায়ই করে থাকেন

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের কেউ কেউ সাফল্য না পাওয়ায় একটা পর্যায়ে গিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছেন ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ছেড়ে দিচ্ছেন। এর মূল কারণ কিছু সাধারণ ভুল। প্রায়ই নবীন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা এক বা একাধিক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের ভুল ত্রুটির ফলে সফলতা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

সূচীপত্র

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যে সাধারণ ভুলগুলো প্রায়ই করা হয়

আজকের এই লেখায় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর ক্ষেত্রে সাধারণ যে ভুলগুলো করে থাকেন নবীন উদ্যোক্তারা সেই বিষয়ে আলোচনা করব। জেনে নিন এবং এড়িয়ে চলুন এগুলোকে। তাহলে আপনিও হতে পারবেন একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার।

শুধুমাত্র ওয়েবসাইটকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং -এর একমাত্র উপায় মনে করা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি ওয়েবসাইট আপনার লাগবেই। আপনার ব্যবসা আবর্তিত হবে এই ওয়েবসাইটকে কেন্দ্র করে। অর্থাৎ ওয়েবসাইট নির্মাণ ও সেটির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কার্যক্রমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়ে থাকে।

তবে ওয়েবসাইট গুরুত্বপূর্ণ হলেও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর একমাত্র মাধ্যম নয়। এই জায়গাতেই একটি সাধারণ ভুল করে থাকেন অ্যাফিলিয়েটাররা। তারা ওয়েবসাইট নিয়ে এত বেশী ব্যস্ত থাকেন যে অন্য ক্ষেত্রগুলোর বিষয়ে সম্পূর্ণ ভুলে যান। অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্টগুলোকে প্রমোট করার অন্য মাধ্যমগুলোর ব্যবহার করা তাদের হয়ে ওঠে না।

ফেসবুক, টুইটার, এমনকি ইন্সটাগ্রাম সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে আপনি যদি সময় না দেন, তাহলে কখনই আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে সম্পূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। পাশাপাশি আপনার নিশের বিভিন্ন ব্লগ ও অন্য ওয়েবসাইটের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও সেখানে গেস্ট পোস্টিং করাটাও জরুরী।

আপনার অ্যাফিলিয়েট ওয়েবসাইটটি অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, মোট সময়ের ষাট কি সত্তর ভাগ আপনি সেখানে দিতে পারেন। কিন্তু অবশিষ্ট সময়টুকু বিনিয়োগ করুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সম্ভাব্য অন্যান্য মাধ্যমের পেছনে।

একদম শুরু থেকে একটি কমিউনিটি গড়ে না তোলা

ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বড় বড় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ বিভিন প্রকার মূল্যহ্রাস, ফ্রি পণ্য, সেবা ও অন্যান্য প্রমোশনমূলক বিষয়ের দাবী করতে পারেন মূল প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। এই কাজটা তারা করতে পারেন প্রধানতঃ এই কারণে যে, কয়েক হাজার মানুষ তাদের কন্টেন্ট অনুসরণ করে থাকেন। এই বিপুল সংখ্যক অনুসারীই একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের ক্ষমতার উৎস। সুতরাং আপনাকেও এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রথম দিন থেকেই একটি কমিউনিটি গড়ে তোলায় মনযোগী হোন।

উপকারী কন্টেন্ট তৈরী করুন

আপনার একদম প্রথম আর্টিকেল বা ভিডিওতেই, অডিয়েন্স বা পাঠকদেরকে এই কমিউনিটির অংশ বিবেচনা করে অগ্রসর হোন। এই মনোভাব যদি আপনার থাকে, তাহলে এই তালিকায় যে ভুলগুলো আমরা উল্লেখ করছি – তার অনেকগুলোই আপনি করবেন না।

আপনার মাথায় যখন থাকবে- আমি একটি কমিউনিটি গড়ে তুলব; তখন আপনি কন্টেন্ট তৈরীর সময় আপনার কমিউনিটির সদস্যদের আগ্রহ ও প্রয়োজনকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবেন। আপনার প্রোডাক্টগুলি থেকে কমিশনের রেট বা এই কন্টেন্ট কতজন ক্রেতা আনতে পারবে সেটি মুখ্য হয়ে দাঁড়াবে না।

আপনি এমন কন্টেন্ট তৈরী করবেন যেটির মূল উদ্দেশ্য আপনার অডিয়েন্সকে বা ফলোয়ারদের উপকার করা। তাদের মধ্যেই কেউ কেউ যদি ক্রেতায় পরিণত হন তো সেটি একটি বাড়তি অর্জন।

তথ্য সমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরী করুন

একদম শুরুর দিকে অবশ্য, কমিউনিটির সদস্যদের সাহায্য করার জন্য তাদেরকে নিশে সম্পর্কিত জরুরী তথ্যগুলো সরবরাহ করুন। আপনার সাইট থেকে যখন ভিজিটররা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন, তখন আপনার ওয়েব ঠিকানাটি তাদের জন্য একটি নির্ভরতা ও ভরসার জায়গায় পরিণত হবে।

এবং, ওয়েবের অন্যান্য জায়গায় তারা আপনার সাইট নিয়ে আলোচনা করবে। ফলশ্রুতিতে, আপনার কমিউনিটি আরও বড় এবং শক্তিশালী হয়ে উঠবে।

বিক্রীর উদ্দেশ্যে নিজের পণ্যকে অতিশায়িত রূপে হাজির করা

অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারই ভেবে থাকেন যে, একটি প্রোডাক্টকে প্রমোট করতে হলে সেটি নিয়ে শুধু ভালো ভালো কথা বলতে তো হবেই, সেই সাথে পণ্যের দোষ ত্রুটি আড়াল করে তাকে আরেকটু বাড়িয়ে অতিশায়িত রূপে উপস্থাপন করাও জরুরী।

এটি খুবই ভুল একটি ধারণা। একটা সময় এসব দুই নম্বরী পদ্ধতি হয়তো কাজ করত বটে। কিন্তু সেটি আগেরকার দিনের কথা। তখন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করত কম, বুঝতও কম।

বর্তমানে একজন গড়পড়তা ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীও অনেক বুদ্ধি রাখেন। কোন তথ্যটি ভুল বা অতিরঞ্জিত সেটি তারা চট করেই ধরে ফেলতে পারেন। আর যারা মোটামুটি দীর্ঘদিন ইন্টারনেটে কেনাকাটা করছেন, অতীতে এক দুই বার ঠকেছেন, তাদের ক্ষেত্রে তো বিষয়টি আরও বেশী সত্য।

তাছাড়া, ইন্টারনেটে পণ্য বিক্রয়ের হাজার হাজার ঠিকানা রয়েছে বর্তমানে। ফলে ক্রেতাদের যাচাই বাছাইয়ের সুযোগটি অনেক বেশী।

বর্তমান অনলাইন ক্রেতা বুদ্ধিমান ও প্রতিবাদপ্রবণ

যে পণ্যটি আপনি বিক্রী করছেন, সেটির গুণাগুণ ও সুবিধা নিয়ে যদি আপনি অতিরিক্ত কিছু দাবী করেন, অধিকাংশ মানুষই সেটি ধরে ফেলবেন এবং কঠিন ভাবে তাদের বিরুদ্ধ মতামতটি প্রকাশ করবেন।

এ ধরণের দুই নম্বরী কাজের বিষয়ে মানুষ এখন অনেক বেশী সচেতন এবং প্রতিবাদী। কারও যদি এরকম মনে হয় যে, আপনি উল্টোপাল্টা দাবী করে লোক ঠকিয়ে পণ্য বিক্রী করতে চাচ্ছেন, তাহলে তারা আপনাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক লেখালেখিও করতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক পোস্ট এবং রিভিউয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবসাকে আক্রমণ করা মানুষের একটি সাধারণ চর্চায় পরিণত হয়েছে বর্তমানে।

আরও পড়ুন –

পণ্য বিষয়ে সত্য ও নিজের অভিজ্ঞতাটি বয়ান করুন

তাই , আপনার পণ্যের বিষয়ে কন্টেন্ট তৈরীর সময়, শুধুমাত্র সত্য ও বাস্তব তথ্য উপস্থাপন করুন। আপনি ধরুন নিজে পণ্যটি ব্যবহার করেছেন। তাহলে, আপনার নিজের ইতিবাচক অভিজ্ঞতাটির বয়ান করুন শুধু। কিন্তু আপনার পাঠক বা দর্শকদের জোর করবেন না।

আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে পণ্য ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি একটি-দুটি অসুবিধার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। তাতে পণ্যটিকে একটি বাস্তব জিনিসের মত দেখাবে মানুষের কাছে।

আপনি যদি অস্বাভাবিক গুণবালী আরোপ করে মানুষের প্রত্যাশা অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেন, তাহলে পণ্যটি কেনার পর তারা নিশ্চিতভাবেই আশাহত হবেন। তখন এই ক্রেতারা আপনার ওয়েবসাইটে এসে নেগেটিভ কমেন্ট করবেন।

আপনাকে ব্যাক্তিগত ভাবেও আক্রমণ করতে পারেন। আপনার সমস্ত ব্যবসাটিকেই তারা বলতে পারেন একটি ভাওতাবাজি। এসব আপনার ব্যবসার জন্য খুবই খারাপ। সুতরাং, সৎ থাকুন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে কোন সঙ্গী না রাখা

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্যবসা শুরু করা খুবই সহজ। আপনি চাইলেই কিছু টাকা খাটিয়ে ব্যবসা করতে পারেন। একা একা কাজ করে ব্যবসাকে বেশ অনেক দূর এগিয়েও নিয়ে যেতে পারেন।

তবে এই সহজগম্যতার কারণেই এই ব্যবসা ব্যর্থ হওয়া ও কাজ ছেড়ে দেওয়াটাও খুব অনায়াসে হয়ে থাকে। অধিকাংশ মানুষ যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ব্যর্থ হয়েছেন, তারা দেখবেন কোন প্রকার অর্থ উপার্জনের পূর্বেই ব্যাবসা থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

এরা দেখা যায়, প্রথম কয়েক সপ্তাহ কন্টেন্ট নির্মান করলেন। কিন্তু সেই কন্টেন্ট থেকে কোন ফলাফল পেলেন না। তখন সমস্ত প্রক্রিয়াটির বিষয়েই তারা সন্দিহান হয়ে ওঠেন। এবং, ব্যবসা ছেড়ে দেন।

যেকোন নতুন ব্যবসা থেকে সাফল্য পাওয়ার জন্য অন্তত ছয় মাস সময় তো দিতে হয়। কিন্তু তারা দেখা যায়, এই সময়েরও আগেই নিজেদের কার্যক্রম গুটিয়ে ফেলছেন।

বিজনেস পার্টনার মানসিক শক্তির উৎস

এরকম ঘটনা থেকে বেঁচে থাকার উপায় হল, আপনি যে লক্ষ্যে বিশ্বাস করেন, সেরকম একই বিশ্বাস ধারণকারী মানুষদের সাথে নিয়ে কাজ করা। এখানে কোন কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হচ্ছে না।

বরঞ্চ, একজন ব্যবসায়িক পার্টনার নিয়ে কাজ করার কথা বলা হচ্ছে। একজন বিজনেস পার্টনার আপনাকে অনুপ্রেরণা ও সাহস যোগাতে পারবেন। আপনি যখন মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যাবেন, বিজনেস পার্টনার তখন আপনার ব্যবসার হাল ধরবেন।

আপনার পার্টনারের জন্যও আপনি অনুরূপ ভূমিকা পালন করবেন। তাছাড়া পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে দু’জনই ব্যবসার প্রতি সিরিয়াস থাকতে পারবেন।

ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমিয়ে আনুন

পার্টনার থাকলে ব্যবসায় প্রদত্ত মোট সময়ের পরিমাণটি যেমন বাড়ে, তেমনি আর্থিক দিকটিও সুরক্ষিত থাকে। একটি ব্যবসা শুরু হওয়ার পর বেশ কিছুদিন মূলধনের ওপর ভরসা করে চলতে হয়।

আপনি একা ব্যবসা করলে এই মূলধন নিয়ে আপনাকে বেশী ঝুঁকি নিতে হবে। কিন্তু একাধিক পার্টনার থাকলে এই ঝুঁকির বিষয়টি সবার মাঝে বন্টন হয়ে যায়।

পার্টনার থাকলে অর্গানিক ট্রাফিক বাড়বে

ব্যবসা শুরু করার পর, প্রথম যে মানুষরা আপনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অ্যাফিলিয়েট লিংক, ওয়েবসাইট, কন্টেন্ট এসব দেখবে- তারা হলেন আপনার পরিবার পরিজন বন্ধু বান্ধব।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায়, অ্যাফিলিয়েট ব্যবসাটি সম্পর্কিত যা কিছু শেয়ার করবেন, তার প্রথম দর্শক, পাঠক এঁরাই। এক্ষেত্রে আপনার যদি একজন পার্টনার থাকে, তাহলে এই মানুষের সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, আপনার অর্গানিক মার্কেটিং উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, আপনার অ্যাফিলিয়েট ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মানসিক শক্তি, ঝুঁকি বন্টন, এবং অর্গানিক মার্কেটিং বৃদ্ধি করা – সবটার জন্যই একজন পার্টনার থাকাটা বেশ জরুরী।

নবীন উদ্যোক্তাদের মনজগতের স্থিরতার অভাব

অধিকাংশ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের অসফলতার একটি অন্যতম প্রধান করার তাদের মানসিক অস্থিরতা। বিশেষ করে তরুণ উদ্যোক্তাদের মাঝে বিষয়টি বেশী দেখা যায়।

একজন নবীন উদ্যোক্তার মন সবসময়ই নতুন নতুন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার সন্ধানে উন্মুখ হয়ে থাকে। বিষয়টি এমন যে, তারা যখন একটি ব্যবসা নিয়ে কাজ করছেন, তখনও অন্য ব্যবসার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ফলাফল হচ্ছে, কোন ব্যবসাতেই তারা সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন না।

মানসিক শৃঙ্খলার অভাব

নবীন উদ্যোক্তাদের অনেকের ভেতরে এই শৃঙ্খলার বড় অভাব। তারা কিছুদিন একটি ব্যবসা করেই বিরক্ত হয়ে যান। নতুন কিছু নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেটিও সম্পূর্ণ করতে পারেন না, আরেকটায় চলে যান।

ধরা যাক, একজন একটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন। সেই আইডিয়া থেকে রাতারাতি কোন ফলাফল তিনি পেলেন না। তাই বিরক্ত হয়ে নতুন কিছু ধরলেন।

এভাবে শেষ পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ সময় এবং শ্রম নষ্ট হয়ে যায় তাদের। সেই অনুযায়ী অর্জন কিছুই থাকে না। তারা ভাবতে থাকেন, অনলাইন উপার্জনের এই কাঠামোটাই হয়তো একটি ভাওতামি ছাড়া আর কিছুই নয়।

নতুন আইডিয়া ভবিষ্যতের জন্য নোট করুন

এই সাধারণ ত্রুটিটি আপনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে চাইলেই এড়াতে পারেন। সেজন্য আপনার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে তার একটি স্পষ্ট ও পূ্‌ণাঙ্গ রূপরেখা তৈরী করুন। এবং নিজের প্রতি আপনার জবাবদিহিতার অভ্যাস তৈরী করুন।

ধরুন, আপনি একটি ব্যবসার মাঝখানে আরেকটি ব্যবসার আইডিয়া পেয়ে গেলেন। এখানে উপলব্ধি করা জরুরী যে, নতুন ব্যবসা শুরু করতে গেলে আপনার বর্তমান ব্যবসা থমকে যাচ্ছে। ফলে, এই ব্যবসার পেছনে আপনার শ্রম ও সময় বিফলে গেল।

আবার নতুন ব্যবসার কাজও আপনাকে শুরু করতে হবে একদম গোড়া থেকে। ফলে সর্বমোট ব্যাবসায়িক অগ্রগতি আপনার শূন্য। তার চেয়ে, যেটা করতে পারেন, আপনি নতুন ব্যবসায়িক আইডিয়াগুলোকে গুছিয়ে নোট করে রাখুন। পরে সময়মত শুরু করা যাবে।

আপাতঃ সময়ের জন্য আপনার সমস্ত বুদ্ধি, শক্তি, শ্রম দিন বর্তমান প্রকল্পের পেছনে। আপনার বর্তমান প্রকল্পের পেছনে আপনি যতবেশী সময় এবং শ্রম বিনিয়োগ করবেন, আপনার সাফল্যের সম্ভাবনাও তত বাড়বে।

প্রয়োজন হতে পারে এমন কিছু-

কাজের সুষম বন্টন করতে ব্যর্থ হওয়া

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটি বিশদ ব্যাবসায়িক কার্যক্রম। প্রতিটি পেশাদার ব্যবসায়ীই তার ব্যবসায়িক কার্যক্রমটিকে সুষম রূপে বন্টন করে থাকেন। আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য একটি কমিউনিটি গড়ে তুলতে হলে আপনাকে অনেক কাজ করতে হবে।

আপনাকে শত শত হাজার শব্দের কন্টেন্ট বানাতে হবে। কয়েক শত ঘন্টার ভিডিও তৈরী করতে হবে। অডিও কন্টেন্টও তৈরী করতে হবে প্রচুর পরিমাণে।

কন্টেন্ট তৈরি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ

এখানে একটি বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন। কন্টেন্ট তৈরী করা কিন্তু শুধুমাত্র লেখা বা রেকর্ড করাতেই সীমাবদ্ধ নয়। যেকোন কিছু লেখার আগে সেই বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা করতে হয়।

যে আর্টিকেল লেখা হবে, সেসব প্রুফরিড করতে হবে। ভিডিও বানালে সেই ভিডিও সম্পাদনা করার ব্যাপার থাকে। আপনার ব্লগের পোস্টগুলোর জন্য স্বতন্ত্র কপিরাইটমুক্ত ছবির প্রয়োজন হবে। ওদিকে ইউটিউবের জন্য আবার থাম্বনেইল ইমেজ তৈরী করা দরকার।

ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট ব্যবহার করুন

অর্থাৎ, কয়েক হাজার ঘন্টার পরিশ্রমের ওপর সাফল্য নির্ভর করে। একজন মাত্র মানুষের পক্ষে এই পুরো জিনিসটি সামাল দেয়া একটি অবাস্তব অসম্ভব বিষয়। যদি সফল হতে চান, সাহায্য নিতে হবে আপনাকে।

এরকম অবস্থায় ভি-এ বা ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট আপনার কাজে আসতে পারে। যদি বাস্তবে একজন সহকারী বা এসিসটেন্ট নিয়োগ দেন, সেখানে অনেক কিছু বিবেচনা করতে হয়। যেমন, সেই সহকারীর বেতন, বেতনের বাইরেও বাড়তি সুযোগ সুবিধা, কাজের বিভিন্ন টুলস এবং অন্যান্য বিষয়সমূহ।

অন্যদিকে ভার্চুয়াল এসিসটেন্টকে নিয়োগ দিবেন একটি তৃতীয় পক্ষীয় প্রতিষ্ঠান। আপনি একজন ফুলটাইম বাস্তব সহকারীকে যা দিতেন, তার একটি ভগ্নাংশ পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করবেন এই কোম্পানীকে।

বিনিময়ে, কোম্পানী আপনাকে একজন সহকারী সরবরাহ করবে, যার মধ্যে আপনার ব্যবসার সাথে সম্পর্কযুক্ত প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে।

ভার্চুয়াল এসিসটেন্টের রকমফের

আজকের দিনে অনেক প্রকারের ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট পাওয়া যায়। অনেকে আছেন যারা সব ধরণের কাজেই পারদর্শী। তারা আপনার কন্টেন্ট লিখে দেয়া থেকে শুরু করে ইউটিউবের ভিডিও সম্পাদনা সবটাই করতে পারেন।

কোন কোন ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট কোন একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার অধিকারী হয়ে থাকেন। তারা আপনার ব্যাক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করতে পারেন। আপনার ক্লায়েন্টদের ইমেইলের উত্তর দিতে পারেন। এবং, আপনার বিভিন্ন অ্যাপয়েন্টমেন্ট শিডিউল তৈরী করে দিতে পারেন।

ফলে এসব কাজ নিয়ে আপনাকে ব্যাস্ত হতে হয় না। কিছু ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্র যেমন- গৃহায়ণ, অর্থ-বানিজ্য, হিসাববিজ্ঞান এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন।

কাজ বন্টন

আপনি নিজে যেসব কাজ ভাল পারেন না, শুধুমাত্র সেগুলির জন্যও ভার্চুয়াল এসিসটেন্টের সাহায্য নিতে পারেন। যেমন ধরা যাক, আপনি ভিডিও সম্পাদনা করতে পারেন না। অথবা সাইটে কোডিঙের কিছু কাজ আছে। বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান বিষয়টি আপনি কম বোঝেন।

সেক্ষেত্রে শুধু এরকম নির্দিষ্ট দক্ষতা সম্পন্ন ভার্চুয়াল এসিসটেন্ট আপনি নিয়োগ দিতে পারেন। নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অংকের অর্থে একমত হোন। প্রকল্প প্রতি পেমেন্ট ভিত্তিতে কাজ শুরু করুন।

কাজের মান, এবং ডেডলাইন যদি তারা ঠিক রাখতে পারেন, তাহলে ভবিষ্যতে আবারও তাদেরকে নিয়োগ দিতে পারেন আপনি। কাজের মান আপনার পছন্দ না হলে, ভবিষ্যতে আর তাদেরকে ডাকবেন না।

অফলাইনের মতই, অনলাইনের কাওকে নিয়োগ দেয়া বেশ কঠিন কাজ। আপনার ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াটির সাথে মানিয়ে নিতে পারবে এমন একজনকে খুঁজে পাওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করতে হতে পারে।

ব্যবসার অগ্রগতিকে ঠিকমত ট্র্যাক করতে ব্যর্থ হওয়া

আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সম্পূর্ণ কাঠামোটি গড়ে তোলার পরেই কিন্তু কাজ শেষ হয়ে যায় না। অনেকেই এমন ভাবেন যে, একবার ব্যবসা তৈরী করে দেয়ার পর, তাদের আর কিছুই করতে হবে না। বসে বসে টাকা কামাবেন শুধু। বাস্তবতা বেশ ভিন্ন। আপনাকে সবসময়ই সমস্ত সিস্টেমটিকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আপনাকে ভাবতে হবে কিভাবে সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রমটিকে আরও উন্নত করা যায়।

ক্রেতাদের পরিবর্তনশীল মানসিকতা বুঝুন

একটি পণ্য ক্রয় করার আগে আপনার ক্রেতারা কি কি পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন সেগুলি পর্যবেক্ষণ করুন। সাফল্যের হার বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন উপায়ের অনুসন্ধান করতে হবে।

অনেক ক্ষেত্রেই, সাইটে ট্রাফিকের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। মনে রাখবেন, ইন্টারনেট (তথা মানব সমাজ ও মানুষের রুচি) একটি নিয়ত পরিবর্তনশীল ক্ষেত্র। এই ব্যাপরে সবসময়ই সতর্ক থাকতে হয় একজন অনলাইন ব্যবসায়ীকে।

ট্র্যাকিং টুলস ব্যবহার করুন

আপনার সাইটে কি কি উন্নয়ন প্রয়োজন সেটি বোঝার জন্য আপনাকে সাইটের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ট্র্যাক করতে হবে। এই কাজটি করার জন্য অনেক টুলস রয়েছে। যেমন গুগল এনালাইটিক্স, গুগল ওয়েবমাস্টার টুলস, টুইটার এনালাইটিক্স , ফেসবুক পিক্সেল।

এসব টুলস ব্যবহার করে আপনি বিনা খরচে আপনার সাইট সমন্ধীয় তথ্যাবলীর একটি হিসাব রাখতে পারেন। এই টুলসগুলো আপনাকে ব্যবসায়িক অগ্রগতির একটি সামগ্রিক চিত্র দিতে পারবে।

এগুলি ব্যবহার করা খুবই সহজ। এবং এখান থেকে যে তথ্যসমূহ পাওয়া যাবে, সেটাই রচনা করে দিতে পারে আপনার সাফল্য এবং ব্যর্থতার পার্থক্য।

এই অতি সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে চললে, আপনি আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সাফল্য পাবেন আশা করা যায়। প্রয়োজন ধৈর্য্য এবং সততার সাথে কাজ করা। সকল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের সাফল্য কামনা করে এই লেখা এখানেই শেষ করছি।

সম্পাদকের বাছাই –

Leave a Comment