কবির ভাষায়-
“যে সব বঙ্গেত জন্মি, হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।”
ভাষা মহান আল্লাহ তা’আলার অন্যতম একটি নিয়ামত। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন “তিনি তাদেরকে কথা, ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন।
মানুষের মনের ভাব একে অপরের কাছে পৌঁছানোর মাধ্যম হল ভাষা। মাতৃক্রোড়ে একজন শিশু যখন মায়ের মুখের বুলি আওড়াতে থাকে; এভাবেই আস্তে আস্তে সে শিখে ফেলে তার মাতৃভাষা।
মানব সভ্যতার শুরু লগ্ন থেকেই ভিন্ন এলাকা, ভিন্ন জাতির ভিন্ন ভিন্ন ভাষা। প্রত্যেক মাতৃভাষায় স্বীয় জাতির নিকট অত্যান্ত মূল্যবান।
সীমানা ও জাতিভেদে আমাদের মাতৃভাষা হল বাংলা। আমরা বাংলা ভাষায় মনের গহিনে লুকিয়ে থাকা সুখ-দুঃখ, চিন্তা-চেতনা, আবেগ- অনূভূতি একে অপরের কাছে প্রকাশ করে থাকি। এই বাংলা ভাষায় বিশ্বের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ কথা বলে।
জনসংখ্যা হিসাবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, সপ্তম স্থানীয় ভাষা হিসাবে দখল করে আছে। ভাষাবিদদের মতে বিশ্বে প্রায় ছয়-সাত হাজারের মত ভাষা রয়েছে। কোন কোন দেশে একাধিক ভাষাও প্রচলিত আছে।
আমাদের এই মাতৃভাষার পিছনে রয়েছে এক কঠিন ও সংগ্রামী ইতিহাস। বিশ্বের একমাত্র মাতৃভাষা বাংলা; যার স্বীকৃতির জন্য স্বীয় জাতির জনগন প্রাণ উৎসর্গ করেছিল।
প্রত্যেক মাতৃভাষার গুরত্বই অপরিসীম। পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মাতৃভাষা ছাড়া কোন জাতি কখনো উন্নতি লাভ করতে পারেনা।
মহান আল্লাহ তা’আলা মাতৃভাষার গুরত্ব বুঝাতে পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন- “আমি সব পয়গাম্বরকে স্ব জাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি, যাতে তারা স্বীয় জাতিকে পরিস্কার ভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়। (সুরা:আর রাহমান-৩,৪)।
মাতৃভাষার গুরত্ব বুঝাতে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “আনা আফসাহুল আরব”। অর্থাৎ আরব জাতির মাঝে আমিই সর্বাদিক বিশুদ্ধ ভাষী।
ভাষণ, বক্তৃতা, লিখনীতে নিখুঁত, নির্ভুল হওয়াই হল রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুস্বরণ। প্রত্যেক যুগের নিজস্ব ভাষা ও সাহিত্য হল মানুষের চিন্তার বাহন। তাই স্বীয় জাতিকে ইসলামী তাহযীব তামাদ্দুন ও সাংস্কৃতিতে জাগ্রত করতে হলে প্রয়োজন স্বীয় মাতৃভাষায় পারদর্শী হওয়া।
ধর্মীয় অঙ্গনে বাংলা ভাষার চর্চা যতবেশী গুরুত্ব পাবে ততই ধর্মীয় প্রচার-প্রসারের কাজটি সহজতর হবে। কেননা ভাষা ও সাহিত্য হল এমন এক শক্তি, যা তার পাঠক/ শ্রোতাকে মনের অজান্তেই প্রভাবিত করে ফেলে।
মাতৃভাষায় সাহিত্য চর্চা ও বক্তৃতায় মানুষের হৃদয় ও মনকে নতুন চিন্তা চেতনায় উজ্জিবীত করা সম্ভব।
মাতৃভাষার প্রতি গুরত্বরোপ করতে প্রখ্যাত দার্শনিক মনিষী আল্লামা সাইয়্যাদ আবুল হাসান আলী মিয়া নদভী(রহঃ)বলেছেন, মাতৃভাষার প্রতি অবজ্ঞা জাতি হত্যার নামান্তর।
তাই আমাদের জাতিকে ইসলামী চিন্তা চেতনায় উজ্জীবিত করতে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা ও সাহিত্য চর্চার বিকল্প নেই।
বাঙালি জাতি হচ্ছে বিষ্মৃতপ্রবন জাতি খুব সহজেই ভুলে যায় স্বীয় জাতির ত্যাগ।
বাংলা ভাষাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যে জাতি নিজের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে সেই জাতিরই ভাষায় আজকে যে হারে বিদেশী ভাষা প্রচলনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে তা সত্যিই বাংলা ভাষার জন্য অশনি সংকেত।
আজকে আমরা যতটা আয়ত্ব করেছি ইংরেজি ভাষা ততটা স্বীয় বাংলা ভাষাও আয়ত্ব করিনা।
তাইতো দেখা যায় একজন সরকারী ব্যক্তি ভুল ইংরেজি বললে লজ্জিত হন;কিন্তু কথায় কথায় ভুল বাংলা বলাতে তার বিন্দুমাত্রও ভাবান্তর হয়না।
যে ভাষার জন্য এত ত্যাগ -তিতিক্ষা, রক্তপাত সে ভাষাকে এভাবে অবজ্ঞা করা নিজের রক্তের সাথে বেঈমানী করার সমান। তাই আসুন ভাষার মাসে বাংলা ভাষাকে সঠিক চর্চা ও সমুন্নত রাখার শপথ নেই।
লেখকঃ
সুলতান আফজাল আইয়ূবী
পাকুন্দিয়া, কিশোরগঞ্জ।
প্রাসঙ্গিক লেখা সমূহ-