ব্রণ যেমন অনাকাঙ্খিত বস্তু। ব্রণের দাগও তেমনি। ব্রণ ভালো হয়ে গেলে এর দাগ রেখে যায়, যা মুখের সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। ব্রণের দাগ দূর করার উপায় নিয়ে আপনার, আমার, আমাদের সবার চিন্তার শেষ নেই। কি কি না ব্যবহার করেছেন? দাগ দূর করার সাবান, ফেসওয়াশ, ক্রিম ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু দিন শেষে? অনেক টাকা খরচ হলেও ফলাফল শূন্য!
আসলে যেকোনো ধরনের ক্রিমই হোক, এগুলোতে থাকা কেমিক্যাল সাময়িক সময়ের জন্য দাগ দূর করে। কিছুদিন দেওয়া বন্ধ করলেই আসল কাহিনী লক্ষ্য করা যায়। মুখ খসখসে হয়ে যাওয়া, লাল লাল ছোপ পরা, ব্রণ ওঠা, আরো নানান কাহিনী।
আশ্চর্য হলেও সত্যি, ঘরোয়া কিছু উপাদান দিয়ে স্থায়ীভাবে ব্রণের দাগ দূর করা সম্ভব। আপনার হাতের কাছেই যখন সমাধান আছে, তাহলে অযথা টাকা খরচ করে হয়রানির শিকার হবেন কেনো?
ব্রণ দূর করা সহজ হলেও ব্রণের দাগ দূর করা একটু সময় সাপেক্ষ। তবে ত্বক সুরক্ষিত রেখে স্থায়ী দাগ দূর করতে গেলে একটু-আধটু ধৈর্যশীল তো হতেই হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক ব্রণের দাগ দূর করার উপায়গুলো –
ব্রণের দাগ দুর করতে লেবুর ব্যবহার
১। লেবুতে আছে সাইট্রিক এসিড ও ভিটামিন সি, যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করে। দাগ দূর করতে লেবু অনেক বেশি কার্যকর। একটি বাটিতে ২ চামচ লেবুর রস নিন। স্বাভাবিক ত্বক হলে এর সাথে যুক্ত করুন আধ চা চামচ মধু (ত্বক সংবেদনশীল হলে ১ চামচ মধু)।
ভালোভাবে মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে দাগের জায়গায় লাগান। একবার লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে আরেকদফা লাগিয়ে শুকানো অব্দি অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
এই সহজ উপক্রনটি দাগ না কমা পর্যন্ত ১দিন পর পর ব্যবহার করুন। এছাড়াও ১ চামচ লেবুর রসের সাথে ২ চিমটি হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে দাগের স্থানে ব্যবহার করতে পারেন।
২। দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি হচ্ছে আপেল ও মধুর মিশ্রণ। মিশ্রণটি বানানোর জন্য ২-৩ টুকরো আপেল পেস্ট করে নিন। উক্ত পেস্টে যুক্ত করুন ১ চামচ মধু।
উভয় উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে কটন বারের সাহায্যে দাগের স্থানে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দাগ না কমা পর্যন্ত প্রতিদিন মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
মুখের ব্রণের দাগ দূর করতে অ্যালোভেরার ব্যবহার
৩। অ্যালোভেরা চেহারার উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও দাগ কমাতে দারুন কার্যকর। অ্যালোভেরা থেকে ২-৩ চামচের মতো জেল বের করে নিন। এর সাথে যুক্ত করুন ২ চিমটি হলুদ গুড়ো। উপকরণগুলো মিশিয়ে নিন।
এবার এই মিশ্রণটি আলতো ঘষে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগ ও ছোপ দূর হবে।
এছাড়াও, অ্যালোভেরা থেকে ২ চামচ জেল বের করে এর সাথে যোগ করুন ১ চামচ লেবুর রস ও আধ চামচ চিনি। উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। ২০-২৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দাগ কমাতে মিশ্রণটি ১ দিন পরপর ব্যবহার করুন।
৪। ২ চামচ দুধের সাথে ২ চামচ মধু ও ১ চামচ গোলাপজল ভালোভাবে মেশান। মুখ ধুঁয়ে একটি তুলোর সাহায্যে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন।
আধঘন্টা রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। টানা ১৫-৩০ দিন ব্যবহারে দাগ উধাও হয়ে যাবে। সাথে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মোলায়েম।
৫। গোল করে কাটা ৩ টুকরো শসা ও মাঝারি সাইজের টমেটোর অর্ধেক নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এবার এই মিশ্রণটি ২০ মিনিটের জন্য ত্বকে লাগিয়ে রাখুন।
এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দাগ না কমা অব্দি টানা ব্যবহার করতে থাকুন। শসা ও টমেটো ত্বক উজ্জ্বল ও দাগ দূর করতে কার্যকর। মিশ্রণটি দাগ কমানোর পাশাপাশি মুখের লাবণ্য বৃদ্ধি করবে।
৬। ৩ চামচ পেঁপের পেস্টের সাথে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মুখ পরিষ্কার করে আধঘন্টার জন্য ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এ মিশ্রণটি দাগ দূর করার পাশাপাশি ত্বককে করবে কোমল ও সুন্দর।
আরও পড়ুন-
আলু ব্যবহার করে ব্রণের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
৭। এক টুকরো আলু ব্লেন্ডারে পেস্ট করে নিন। এবার এ পেস্ট পাতলা কাপর দিয়ে ছেঁকে রস বের করে নিন। আলুর রসের সাথে যুক্ত করুন এক চামচ অ্যালোভেরা ও ১ চামচ গোলাপজল। উপকরণগুলো মিশিয়ে নিন।
মুখ ধুয়ে তুলোর সাহায্যে আলতো করে ঘষুন। ৫ মিনিট ঘষার পর পুনরায় দাগের স্থানে মিশ্রণটি লাগিয়ে ২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আলুতে রয়েছে ক্যাটেকোলেজ নামক উপাদান যা ত্বককে করে তোলে উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত।
৮। আলুতে থাকা ভিটামিন এ,বি ও সি হারানো উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং দাগ দূর করে। দাগ দূর করতে- আলু ব্লেন্ড করে নিন। উক্ত পেস্ট পাতলা কাপড়ে ছেঁকে রস বের করুন।
আলুর রস ১০-১৫ মিনিট নরমাল ফ্রিজে ঠান্ডা হতে দিন। এবার একটি বাটিতে ৪ চামচ আলুর রস ও ২ চামচ কাঁচা দুধ একত্রে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি তুলোর সাহায্যে আলতো ঘষে ত্বকে লাগান।
২০-২৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি একদিন পর পর ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বক হলে সাথে মুলতানি মাটি যুক্ত করতে পারেন।
৯। টমেটো ও পেঁপে একত্রে ব্লেন্ড করে নিন। একটি পাত্রে ৩-৪ চামচ উক্ত পেস্টের সাথে ১ চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি আধঘন্টার জন্য সমগ্র মুখে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ২ দিন পর পর এটি ব্যবহার করুন। মিশ্রণটি ত্বককে করে তুলবে দাগমুক্ত ও ফর্সা।
১০। ২ চামচ দারুচিনি গুড়ো, ২ চামচ গোলাপজল ও ১ চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে, আধঘন্টার জন্য ত্বকে লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি ১ দিন পরপর ব্যবহার করুন।
১১। ২ চামচ চন্দনের গুড়োর সাথে ১ চামচ গোলাপজল ও ১ চামচ দুধ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে ২০ মিনিটের জন্য রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ বার ব্যবহার করুন।
১২। ১ চামচ অলিভ অয়েল, ১টি ভিটামিন ই ক্যাপস্যুল ও ১ চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে নিন। ত্বক পরিষ্কার করে মিশ্রণটি লাগান। সারারাত রেখে সকালে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। মিশ্রণটি নিয়মিত ব্যবহারে দাগ কমবে।
১৩। ৩ চামচ মসুর ডালের পেস্ট, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ মধু ও ২ চিমটি হলুদ গুড়ো একত্রে মিশিয়ে নিন। এরপর মুখে লাগান।
প্যাকটি ব্যবহারের পূর্বে ত্বক পরিষ্কার করে নেওয়া জরুরী। এর জন্য ২ চামচ গোলাপজল ও ২ চামচ মধু মিশিয়ে তুলোর সাহায্যে মুখে লাগান। এতে করে ত্বক পরিষ্কার হবে। প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও দাগমুক্ত।
১৪। ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ বাদামের তেল, ২ চামচ কমলালেবুর রস পরিমাণ মতো চালের গুড়োয় মিশিয়ে নিন।
মিশ্রণটি আধঘন্টার জন্য ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ২ দিন পর পর ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন ব্যবহার করুন। প্যাকটি দাগ দূর করার পাশাপাশি দূর করবে ময়লাও। ত্বককে করে তুলবে ঝলমলে ও পরিষ্কার।
ব্রণের দাগ দূর করতে ডাবের পানির ব্যবহার
১৫। ৬ – ৭ চামচ ডাবের পানির সাথে ৩ চামচ গোলাপজল মিশিয়ে বরফ বানিয়ে নিন। এই বরফ ১০-১৫ মিনিট মুখে ঘষুন।
এরপর ২ চামচ লেবুর রস, ২ চামচ টমেটোর রস, ১ চামচ মধু ও ২ চামচ কমলালেবুর রস পরিমাণ মতো চন্দন গুড়োর সাথে মিশিয়ে একটি প্যাক বানিয়ে নিন। সম্ভব হলে প্যাকটি প্রতিদিন ব্যবহার করুন অথবা ২ দিন পর পর। তবে ডাবের জল ও গোলাপজলের বরফ প্রতিদিন ব্যবহার করুন।
সম্পাদকের বাছাই –