ফাইভার থেকে আয় করার উপায়

ফাইভার থেকে আয় করার বিভিন্ন উপায় ও প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনাটি সাজানো হয়েছে।

ফাইভার থেকে আয় করার উপায় নিয়ে কম বেশী সব ফ্রিল্যান্সারই ফ্রিল্যান্সিং জীবনের কোন না কোন সময়ে ভেবে থাকেন। ফাইভার অনলাইনের একটি গিগ আদান প্রদানের সাইট।

ফ্রিল্যান্সাররা এইসব গিগ বা এককালীন কাজগুলো করে দেয়ার বিনিময়ে নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে টাকা আয় করে থাকেন। তবে অন্য সমস্ত ফ্রিল্যান্সিং ইনকামের মতই ফাইভার থেকে আয় করার জন্যও আপনাকে যথেষ্ট পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হবে।

আপনি যদি পার্টটাইমে ফাইভার থেকে আয় করতে চান তাহলে নিজের ন’টা-পাঁচটা চাকরী বাদে, বাকী পুরো অবসর সময়টাই ফাইভারে ব্যয় করতে হবে।

ফাইভার থেকে টাকা আয় করার বিভিন্ন কৌশল

আপনি হতে পারেন একজন লেখক, একজন ওয়েব ডেভেলপার, বা একজন নির্দিষ্ট বিষয়ের উপদেষ্টা। ফ্রিল্যান্সিং করে ফাইভার থেকে আয় করতে চাইলে আপনাকে নিজের সবটুকু দিয়েই খাটতে হবে।

ফাইভার শুরুতে ছিল একটি ছোট সাইট। মানুষ সেখানে প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন কাজ, যেমন সাইটের কোড লেখা, ডিজাইন করা, বিভিন্ন দলিলপত্র অনুবাদ, ভিডিওতে কন্ঠ দান – এসব কাজের প্রস্তাব দিতেন। বিনিময় মূল্য ছিল পাঁচ ডলার।

তবে সেটি বেশ আগেকার কথা। এরপর অনেক দূর এসেছে এই প্লাটফর্ম। এখন চাইলে ফাইভার থেকে পূর্ণকালীন উপার্জন করা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন, ফাইভারের প্রতিটি সাফল্যের গল্পের বিপরীতে হতাশা, বিফলতার কাহিনী রয়েছে দশটা।

চলুন, আপনার ফ্রিল্যান্সিং তথা অনলাইন থেকে আয়ের জীবনে, ফাইভার পরিক্রমণে সফল হওয়ার জন্য কি কি কাজ করতে পারেন তা দেখে নেই।

১। নিজের দক্ষতা আবিষ্কার করুন

ফাইভার থেকে আয় করার ক্ষেত্রে অনেক মানুষ এমন সব গিগ নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন যেগুলোকে আপাতদৃষ্টে তাদের কাছে সরল মনে হয়। অথচ কাজটি করতে গেলেই দেখা যায় যা চাওয়া হচ্ছে সেটি যোগান দিতে তারা সক্ষম নন।

এই ভুলটি করা যাবে না। ফাইভার বা ফাইভার অ্যাপে নাম লেখানোর পূর্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে – আপনাকে জানতে হবে আপনি কোন কাজটি ভাল পারেন। এবং সেই কাজটি করে কিভাবে আপনি টাকা আয় করতে চান।

ধরা যাক, আপনি একজন লেখক। আপনার লেখালেখি স্কুল কলেজের ম্যাগাজিনে ছাপা হত। বিভিন্ন সময় কিছু মানুষ হয়তো আপনাকে বলেছেন যে আপনি ভাল লেখেন। সেক্ষেত্রে ফাইভারে লেখালেখি আপনার নিশে হতে পারে।

লেখালেখি করে ফাইভার থেকে আয় করার যথেষ্ট সুযোগ আপনি পাবেন। কোন একটি বিজ্ঞাপনী ওয়েবসাইটের জন্য আপনি ব্লগ লিখতে পারেন। অথবা আপনি যদি সৃজনশীল লেখক হন, তাহলে ফাইভারে অন্য লেখকদের উপন্যাস, গল্পের বই সম্পাদনায় সাহায্য করতে পারেন। এমনকি অনেকে ঘোস্ট রাইটার হিসেবে কাউকে একটা সম্পূ্র্ণ বই লিখে দেয়ার কাজও পেয়ে যেতে পারেন।

আবার আপনি হয়তো ভাবছেন, টেকনিকাল রাইটিং থেকে ফাইভারে আয় করবেন। কারণ অমুক বিষয়টি নিয়ে আপনার যথেষ্ঠ পড়াশোনা রয়েছে। এবং, আপনার বর্তমান পেশায়ও এই কাজটি আপনাকে প্রায়ই করতে হচ্ছে।

বিভিন্ন কোম্পানীগুলোর ইন্সট্রাকশান ম্যানুয়াল এবং আইনী পত্র লেখানোর লেখক চাচ্ছে। এক্ষেত্রে, ফাইভারে এরকম প্রতিষ্ঠানদের জন্য আপনি কাজ করতে পারেন।

ফাইভারে লেখালেখি করে আয় করার জন্য আপনাকে মহান লেখক হতে হবে না। শুদ্ধ করে অর্থোবোধক বাক্য এবং প্যারাগ্রাফ লিখতে পারলেই হবে। বড় কাজ পেলে, ডেডলাইন মাথায় রেখে নিয়মিত রুটিন করে লিখতে হবে। এখানে প্রতিভার চেয়ে পরিশ্রমের মানসিকতা ও ধৈর্য্য বেশী জরুরী।

গ্রাফিক ডিজাইনিং থেকেও ফাইভারে আয় করে থাকেন বহু ফ্রিল্যান্সার। ফাইভারের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি গ্রাফিক ডিজাইনের কোন ফুলটাইম চাকরীও পেয়ে যেতে পারেন।

গ্রাফিক ডিজাইনিং থেকে ফাইভারে আয়ের ক্ষেত্রে লোগো ডিজাইন থেকে শুরু করে মোবাইল বিজ্ঞাপনের ব্যানার বানানো, ইউটিউব কভার ডিজাইন, প্রভৃতির মধ্যে যেকোন কিছু করতে পারেন। গ্রাফিক ডিজাইন নিয়ে ফাইভারে অসংখ্য জবস এবং সাব-ক্যাটাগরী রয়েছে।

এগুলো বাদেও ফাইভারে ওয়েব ডেভেলপিং, এ্যাপ ডেভেলপিং, এসইও স্পেশালিস্টের মত বিশেষায়িত কাজ থেকে শুরু করে প্রায় অভাবনীয় বিচিত্র কাজ করেও আয় করছেন মানুষ। আপনাকে শুধু নির্ণয় করতে হবে আপনি কোন কাজটি ভাল পারেন। আগ্রহ নিয়ে পরিশ্রম করতে পারেন এবং তারপর সেই অনুযায়ী তৈরী করবেন একটি গিগ।

আরও পড়ুন-

২। কিভাবে ফাইভারের গিগ তৈরি করতে হয়?

কি সেবা দিতে বা কি কাজ করে ফাইভার থেকে আয় করতে চান, সেটি জানা হয়ে গেলে এবার একটি গিগ তৈরি করুন আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের দেখানোর জন্য।

ফাইভারের গিগ তৈরি করার জন্য পেজের একদম ওপরের “গিগ” ট্যাবটি ক্লিক করুন। তারপর ক্লিক করুন “ক্রিয়েট নিউ গিগ” বাটনটি।

ফাইভারের গিগ তৈরী করার সময় টাইটেল বা শিরোনামটির ব্যাপারে মনযোগী হতে হবে আপনাকে। এমন একটি শিরোনাম দিন যেটি মানুষের দৃষ্টি ও চিত্তকে আকর্ষণ করে, এবং একই সাথে গিগটি সমন্ধে অনেক কিছু জানিয়েও দেয়। অর্থাৎ, টাইটেলটির চিত্তহরণের সাথে সাথে বর্ণণাগুণও থাকতে হবে।

শিরোনামের পর প্রাঞ্জল ভাষায় একটি বিবরণ লিখুন। ফাইভারের গিগের ডেসক্রিপশান লেখার সময় লেখাটির উদ্দেশ্য প্রচারণা ও বিজ্ঞাপনমূলক হলেও, আপাতদৃষ্টে যেন উদ্দেশ্য দুটি প্রকট না দেখায় সেটি খেয়াল রাখবেন। মানুষকে বিশ্বাস প্রদান করার চেষ্টা করুন যে তাদের কাজ আপনি ঠিকমত করে দিতে পারবেন এবং সেটির স্বপক্ষে যুক্তি দিন। কিন্তু অতিশায়িত কথাবার্তা কিছু লিখবেন না।

ফাইভার থেকে টাকা আয়ের ক্ষেত্রে আপনার কাজের প্রাইসিং বা দাম সঠিকভাবে নির্ধারণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং একই সাথে বেশ জটিলও। যদি অতিরিক্ত দাম ধরেন, তাহলে বহু মানুষই আপনার গিগ এড়িয়ে যাবে। কারণ কম দামে কাজ করে দেয়ার লোক ফাইভারেই রয়েছে। আবার যদি দাম অতিরিক্ত কম লেখেন, তাহলেও আপনাকে কম টাকার জন্য বেশী পরিশ্রম করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে হবে।

ফাইভারে গিগের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে কোন ধরা বাঁধা নিয়ম বলা যায় না। আপনি যদি অতীতে অনলাইনে বা অফলাইনে নির্দিষ্ট কোন কাজ করে অর্থ উপার্জন করে থাকেন, সেখানে যে কাজ করে যেমন টাকা পেয়েছিলেন সে অনুযায়ী গিগের দাম নির্ধারণ করতে পারেন।

আপনার গিগটি কতবার দেখা হয়েছে সেটি জানতে পারেন ড্যাশবোর্ড থেকে। ভিউ, ও ক্লিকের সংখ্যা থেকে আপনি একটি ধারণা পাবেন যে আপনার গিগটির বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কেমন। আরও বেশী মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য গিগটির এসইও করুন। কোন একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডকে গিগের টাইটেল এবং ডেসক্রিপশানের ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার গিগকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করতে পারেন।

৩। “গিগ-এক্সট্রা”র সুবিধা নিন

ফাইভারে আয়ের ক্ষেত্রে আপনার গিগ থেকে অধিক টাকা বানানোর একটি কৌশল হচ্ছে, একটি গিগের প্যাকেজের ভেতরেই একাধিক ভিন্ন ভিন্ন এক্সট্রা অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া।

আপনার মূল গিগ শুরু হবে কম প্রাইসে। কিন্তু সাথে অনেকগুলো এক্সট্রা গিগ বা বোনাসের প্রস্তাব জুড়ে দিবেন আপনি। এই প্রতিটি এক্সট্রার জন্যও ছোট ছোট অংকের প্রাইস ধরা হবে। আপনার গিগ যিনি কিনছেন, তিনি যেন চাইলেই বাড়তি আরও কিছু টাকা খরচ করে এই সেবা নিতে পারেন আপনার কাছ থেকে।

ধরুন, আপনি বিজ্ঞাপনমূলক লেখা লিখবেন একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য। শুধু বিজ্ঞাপনী লেখাটির জন্য একটি প্রাইস ধার্য করা থাকবেই। সাথে এমন একটি অফার দিলেন যে, কেউ যদি চায় নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য এসইও করতে হবে, তাহলে প্রতিটি কিওয়ার্ডের এসইও করার জন্য আপনি পাঁচ ডলার করে নিবেন।আবার এমনও হতে পারে, আপনি পাঁচ ডলারে একটি কাজ তিন দিনে করে দেন। কিন্তু দশ ডলার দিলে আপনি কাজটি এক দিনেই করে দিবেন।

ফাইভার থেকে আয়ের ক্ষেত্রে অনেক ফ্রিল্যান্সারই গিগ-একস্ট্রা ব্যবহার করে তাদের উপার্জনের পরিমাণ বাড়িয়ে থাকেন। এই কাজটি যে আপনাকে করতেই হবে এমন নয়, তবে এটি আয় বৃদ্ধির একটি ভাল কৌশল অবশ্যই।

প্রয়োজন মনে হলে পড়ে দেখতে পারেন –

৪। যোগাযোগ যত বাড়াবেন তত লাভ

অনেক ফাইভার সেলারই একটি ভুল করে থাকেন যে তারা তাদের ক্রেতাদের সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে যোগাযোগ করেন না যে, মুহুর্তে আপনি একটি কাজের অর্ডার পাবেন, সাথে সাথে ক্রেতাকে বার্তা প্রদান করুন এবং তাকে জানিয়ে দিন যে আপনি অর্ডারটি দেখেছেন, এবং এই মুহুর্তে আপনি কাজ শুরু করছেন। নিয়োগদাতা বা ক্রেতারা যখন তাৎক্ষণিকভাবে তাদের গিগদাতা বা সেলারের কাছ থেকে কোন যোগাযোগের উৎসাহ দেখেন না, তারা ভাবেন যে এই মানুষটি হয়তো আমাকে এবং আমার কাজটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এবং কাজটি হয়তো তিনি ঠিকভাবে সম্পন্ন করবেন না।

প্রাথমিক কথোপকথনের পাশাপাশি, আপনার সবসময়ই ক্লায়েন্টদেরকে কাজের অগ্রগতি সমন্ধে আপডেট দেয়া উচিত। বিশেষ করে অর্ডারটি যদি এমন হয় যে শেষ হতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে, সেক্ষেত্রে এই কাজটি অবশ্যই করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট অসমাপ্ত কাজটি দেখতেও চাইতে পারেন, যে ঠিকভাবে কাজটি এগুচ্ছে কি না।

একজন স্বাধীনচেতা ফ্রিল্যান্সার, ক্লায়েন্ট বারবার আপডেট চাইলে বিরক্ত হতেই পারেন। তারপরও চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব তাদের সাথে সৌহার্দ্যমূলক আচরণ করতে। কারণ যিনি টাকা দিয়ে কাজ করাচ্ছেন, তাও আবার এমন কাউকে দিয়ে যাকে দেখা যাচ্ছে না, সেই নিয়োগদাতার দুশ্চিন্তাও আপনাকে বুঝতে হবে।

যদি কোন কাজ ডেডলাইনে শেষ করতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই সেটি আগে ভাগে জানিয়ে দিবেন। না জানিয়ে ডেডলাইন মিস করে ফেলার মত খারাপ আর কিছুই হয় না। সেক্ষেত্রে ক্লায়েন্ট আপনাকে বাজে রেটিং দিতে পারেন। যেটি আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে না।

৫। আপনার রেটিঙের দিকে নজর রাখুন

ফাইভার থেকে টাকা আয়
ফাইভার থেকে টাকা আয় করার জন্য আপনার রেটিঙের দিকে সতর্ক নজর রাখুন

ফাইভার থেকে আয় করার ক্ষেত্রে আপনার রেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরিচিত মানুষেরা এই রেটিং দিয়ে আপানকে মূল্যায়ন করে কাজ দিবেন। সবসময় চেষ্টা করতে হবে রেটিংয়ে যথাসম্ভব ভালো করার।

আপনার রেটিং যত ভাল হবে তত বেশী মানুষ আপনার প্রোফাইলের বিষয়ে আগ্রহী হবে, এবং আপনার গিগের প্রতি তাদের সাড়া প্রদানের সম্ভাবনাও তত বাড়বে। তারা যদি নিজেরা আপনার গিগ নাও কিনেন, অন্য পরিচিত লোকজনকে সুপারিশ হয়তো করবেন।

ফাইভার থেকে আয়ের ক্ষেত্রে সাইটের অ্যানালাইটিক্স ট্যাবটি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য বেশ কাজের জিনিস। এর মাধ্যমে আপনি শুধু আপনার কাস্টমার রেটিংসই নয়, আরও অনেক পরিমাণগত তথ্য জানতে পারবেন। অ্যানালাইটিক্স ট্যাব থেকে জানা যায় অর্ডার প্রতি আপনার গড় উপার্জন কিরকম। এই পরিমাপ ব্যবহার করে আপনি বুঝতে পারবেন আপনি সঠিক পরিমাণ টাকা চার্জ করছেন কিনা। অথবা সম্ভাব্য ক্রেতাদের যথেষ্ট মিথস্ক্রিয়া ঘটছে কিনা।

যদি লক্ষ করেন যে, আপনার রেটিংস কমে যাচ্ছে, বা অনেক ক্রেতাই আপনাকে খারাপ রেটিংস দিচ্ছেন, আপনি তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন; অর্ডারের কোন বিষয়টি নিয়ে তারা অসন্তুষ্ট। তারা যা জানাবেন সেগুলিকে উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করুন। অথবা তাদেরকে কম মূল্য কাজটি আবার করে দেয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন।

আপনার কাজ বিষয়ে ক্রেতাদের কি মতামত সেটি জানিয়ে একটি রিভিউ লেখার জন্য অনুরোধ করতে পারেন তাদেরকে। অনেক সময়ই একজন ক্রেতা কাজ শেষ হওয়ার পর রেটিং বা কোন ধরণের মন্তব্য করতে ভুলে যান। সুতরাং তাদের স্মরণ করিয়ে দিন।

৬। একাধিক গিগ চেষ্টা করে দেখুন

ফাইভার থেকে আয়ের একটি সুবিধা হচ্ছে এখানে মাত্র একটি গিগের মাঝে আপনাকে সীমাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে না। যত বেশী অর্ডার আপনি পাবেন, এবং বিক্রেতা হিসেবে ফাইভারের প্লাটফর্মে আপনার স্ট্যাটাস যত বাড়বে ততই আপনি নতুন গিগ তৈরী করার সুযোগ পাবেন।

আপনার বর্তমান গিগের সম্পূর্ণ ভিন্ন সাব ক্যাটাগরীতে আপনি একটি গিগ তৈরী করতে পারেন। অথবা এমন একটি গিগ তৈরী করলেন যেটি একদমই ভিন্ন বিষয়। যেমন আপনি কোডিং ও লেখালেখি দুটোই করে থাকেন। তাহলে কোডিং এর জন্য একটি গিগ, আবার লেখালেখি ভিত্তিক আরেকটি গিগ আপনি বানাতেই পারেন।

যারা অনেকগুলো বিষয়ে দক্ষতা রাখেন, এরকম একাধিক গিগের মাধ্যমে তারা বেশী উপার্জন করতে পারবেন। তাছাড়াও, কাজের ক্ষেত্রে একঘেয়েমিকেও এড়াতে পারবেন এর মাধ্যমে।

৭। ছবি আর ভিডিওর মাধ্যমে সমৃদ্ধ করুন আপনার ফাইভার উপস্থিতিকে

আপনি যদি ভিডিও বা ইমেজ এডিটিং করতে পারেন , তাহলে ফাইভারে আপনার ল্যান্ডিং পেজে ছবি আর ভিডিও জুড়ে দিন। এতে আপনার গিগটি অনেক বেশী আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে ক্রেতাদের কাছে।

একটি গিগের যদি পেশাদার ভঙ্গিমায় সম্পাদিত ভিডিও থাকে, যেখানে দেখানো থাকবে আপনার গিগ থেকে ক্রেতারা কি ধরণের সেবা ও সুবিধা পাবেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এই গিগে ক্লিক করতে আগ্রহী হবেন ফাইভারের ক্রেতারা।

একটি প্রোফাইল পিকচারও খুব শক্তিশালী জিনিস। কারণ অনলাইনে অপরিচিতদের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে অনেক মানুষই এক ধরণের সূক্ষ্ণ অস্বস্তিতে ভুগে থাকেন। সেক্ষেত্রে একটি ভাল প্রোফাইল পিকচার, যেটি দেখে আপনাকে চেনা যায়, এরকম কিছু তাদেরকে খানিকটা হলেও আশ্বস্ত করতে পারে।

অস্পষ্ট প্রোফাইল পিকচার ব্যাবহার করবেন না। তাতে আপনাকে নির্ভরযোগ্য একজন মানুষ বলে মনে হয় না। একটি সুন্দর, ভদ্রস্থ, পেশাদার ছবি ব্যবহার করুন। ছবি দেখেই যেন আন্দাজ করা যায়, আপনি কি ধরণের মানুষ এবং ক্রেতার যেন মনে হয় আপনি আন্তরিকতার সাথে তাদের কাজ করবেন।

নিজের ব্যাক্তিগত ছবি ব্যবহারে আপনার যদি খুব বড় ধরণের কোন সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে এমন একটি ছবি দিন যেটি পেশাদার; নিজের কোন ব্রান্ড লোগো বানিয়ে সেটি দিতে পারেন।

বাংলা ভাষায় “পহেলা দর্শনধারী, পরে গুণ বিচারী” বলে একটা কথা রয়েছে – এখানে এটি অত্যন্ত বেশী প্রযোজ্য। একটি প্রোফাইল পিকচার আপনার ফাইভার সাফল্যের অনেকটুকুই নিয়ন্ত্রণ করে।

৮। অতীতের কাজের নমুনা দিন

আপনার যদি একটি ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট থাকে, বা অনলাইনের যেকোন জায়গাতে আপনার কাজের নমুনা থেকে থাকে, অবশ্যই সেগুলির লিংক সংযুক্ত করে দিবেন প্রোফাইলে।

অধিকাংশ মানুষই আপনার গিগ কেনার আগে আশ্বস্ত হতে চাইবেন যে, আপনি কাজটি ঠিকমত সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা। যেকারণে যে দক্ষতার দাবী আপনি করছেন সেটি যে আসলেই আপনার আছে, সেটি নিশ্চিত হতে চাইবেন তারা। এজন্য এমনও করতে পারেন যে, ফাইভার থেকে লিংক করার জন্যই একটা ফ্রি ওয়েবসাইট বানিয়ে রাখলেন।

এই বিষয়গুলি থেকে মানুষ বুঝবেন যে আপনি পেশাদার এবং আসলেই তাদের কাজ ঠিকভাবে করবেন। যদি ওয়েবসাইট তৈরী করা অতিরিক্ত ঝামেলা হয়ে যায় আপনার জন্য, সেক্ষেত্রে অন্তত আপনার কাজের নমুনা প্রদান করুন ফাইভারের প্রোফাইল পেজে।

৯। কমিউনিটি ফোরামে সক্রিয় থাকুন

ফাইভারে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের একটি সমৃদ্ধ কমিউনিটি রয়েছে। এরা সবসময়ই পরামর্শ খুঁজে থাকেন ও দিয়ে থাকেন বিভিন্ন বিষয়ে। এই ফোরামগুলোতে সাইনআপ করুন। কোন একটি অর্ডার নিয়ে যদি সমস্যায় পড়ে থাকেন, তো এখান থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতে দ্বিধা করবেন না। ফোরামগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সহৃদয় বিক্রেতা রয়েছেন, যারা খুশি মনে আপনাকে পরামর্শ প্রদান করবেন।

তবে, এই ফোরামগুলোর ব্যবহার পরামর্শ গ্রহণের জন্যই। ফোরামের প্রতিষ্ঠিত বিক্রেতাদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে গিগের জন্য আবেদন করবেন না কখনও। কিছু কিছু নতুন সেলার এই কাজটি করে থাকেন, এবং চর্চাটিকে মোটেও ভালোভাবে দেখা হয় না ফাইভার কমিউনিটিতে। আপনার একাউন্ট স্প্যাম হিসেবে মার্ক করাও হতে পারে।

ফাইভার থেকে আয়ের প্রচুর সুপরামর্শ বিনামূল্যে এই ফোরামগুলোতে পাওয়া যায়, এবং তা ব্যাতীত এর অন্য ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই।

১০। কিভাবে ফাইভারে কাজের টাকা পাবেন?

ওপরের সব ধাপ অনুসরণ করে ফাইভারে গিগ তৈরী করে, ক্রেতাদের কাছে সেটি বিক্রী করে তাদের সন্তুষ্ট করার পর এবার আপনার ফাইভার থেকে টাকা তোলার পালা।

ফাইভার থেকে আপনার পাওনা টাকা তোলাটা তেমন কঠিন কিছু নয়। অনেকগুলি পথ আপনি অনুসরণ করতে পারেন।
পেপ্যাল দিয়ে একটি একাউন্ট তৈরী করে নিতে পারেন। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে পেপ্যালের মাধ্যমে টাকা তোলা একটি জটিলতা। তবে বাংলাদেশেই অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা একটি নির্দিষ্ট চার্জের বিনিময়ে আপনাকে তাদের পেপ্যাল একাউন্ট ব্যবহার করতে দিবে এবং তাদের মাধ্যমে টাকা আপনি দেশে আনতে পারবেন।

পেপ্যালের এই ঝামেলায় যদি যেতে না চান, সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে ফাইভারে উপার্জিত টাকা সরাসরি ডিপোজিটের মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে নিয়ে আসতে পারেন।

আরেকটি উপায় হচ্ছে- ফাইভার রেভিনিউ কার্ড। এটি Payoneer মাধ্যমে কাজ করে। পেপ্যালের মতই একটি অনলাইন টাকা প্রদানের সাইট Payoneer।

যে পদ্ধতিই ব্যাবহার করুন না কেন, ফাইভারে উপার্জিত টাকা পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অন্য সাইটগুলোর চেয়ে সরলই। আপনি ফাইভার পেজের “আর্নিংস ট্যাবে” যাবেন, তারপর আপনি যে পদ্ধতিতে (পেপ্যাল, ফাইভার রেভিনিউ, ডিরেক্ট ডিপোজিট) টাকা নিতে চান, তার পাশের “উইথড্র” বাটনে ক্লিক করুন। আপনি বাটনে ক্লিক করার মাত্রই টাকা আপনার হাতে পৌঁছে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে।

শেষ কথা

ফাইভার থেকে আয়ের ক্ষেত্রে এই ১০টি পরামর্শ যদি মেনে চলেন এবং ধৈর্য্য ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করেন, তাহলে প্রথমে পার্টটাইম ও পরবর্তীতে চাইলে একটি ফুলটাইম আয়ের ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে আপনার ফাইভারে। সবার অনলাইন পরিক্রমণ শুভ হোক। হ্যাপি ফ্রিল্যান্সিং।

Leave a Comment