নিশে কি? নিশে মার্কেটিং গাইডলাইন ২০২৪

অনলাইন আয় বিষয়ক যে কোন আলোচনাতেই (অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ব্লগিং) “নিশে”র কথা ঘুরে ফিরে বারবার চলে আসে। আপনি কি জানেন- নিশে কি? নিশে বা নিশ শব্দের প্রাথমিক উৎস ল্যাটিন। তখন উচ্চারণ ছিল ‘নাইডাস’। শব্দটির অর্থাৎ “নীড়” বা বাসা। ল্যাটিন থেকে ফ্রেঞ্চে এসে হল “নাইশার“ -অর্থ নীড় নির্মাণ বা একটা বাসা বানানো। তারও পরে, ফ্রেঞ্চেই এর উচ্চারণ হল “নিশ বা নিশে”। এই শব্দটির অর্থ নীড়ের ভেতরে নীড় বা কুলুঙ্গি।

অনলাইন ব্যবসার জগতে “নিশে (Niche)“ শব্দটিও এমন একটি সমভাবাপন্ন অর্থে ব্যবহার হয়। পুরো অনলাইনের সমস্ত বিষয়াবলী বা যা নিয়ে মানুষ অনুসন্ধান এবং আলোচনা করে তাকে যদি বড় একটা বাড়ি ভেবে নেন, তাহলে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজের ‘নিশ’ বেছে নেয়া হচ্ছে সেই বাড়ির ভেতরে আরেকটা ছোট বাড়ি বানানোর মত।

আজকের লেখায় “নিশে” বিষয়টিকে বোঝানোর চেষ্টা করা হল।

সূচীপত্র

নিশে মার্কেট কি (What is Niche Market)?

নিশে মার্কেট (Niche Market) হচ্ছে একটি বৃহত্তর মার্কেটের একটি ক্ষুদ্র অংশ। এটি ক্ষুদ্র অংশ হলেও তার নিজস্ব একটি চাহিদার বাজার রয়েছে। এই চাহিদার ব্যাপারটা মূল বৃহত্তর মার্কেট থেকে কোন এক প্রকারে ভিন্ন।

যেমন ধরুন, কম্পিউটারের বিশাল বাজার। কিন্তু ছাত্রদের পড়ালেখার জন্য বিশেষ সুবিধাজনক কম্পিউটার, গেমিং কম্পিউটার প্রতিটির জন্যই আবার আলাদা বাজার আছে। এসব কম্পিউটারে তাদের সুনির্দিষ্ট গ্রাহকদের চাহিদানুযায়ী স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে।

সুতরাং, কি নিয়ে ব্যবসা করছেন একদম নির্দিষ্ট করে জানুন, এবং ঠিক কারা আপনার গ্রাহক সেটি বুঝুন। পৃথিবীর সব লোকের কাছে পণ্য (আপনার লেখা কন্টেন্টও হতে পারে) বিক্রী করার চেষ্টা না করে একটি নির্দিষ্ট দলের কাছে বিক্রী করুন। ওটাই আপনার নিশে মার্কেট।

নিজের নিশে মার্কেটকে সুনির্দিষ্ট কেন করবেন?

আপনি যদি একটি অনলাইন মার্কেটে ব্যবসা করে সফল হতে চান, নিশেকে সুনির্দিষ্ট করা আপনার প্রথম কাজ। আপনার বাছাইকৃত মার্কেট যেমনই হোক সেটি নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে। সাথে আরও কিছু ধাপ অনুসরণীয়।

কি বিক্রী করবেন সেটি বেছে নেয়ার আগে, আপনার প্রতিদ্বন্দীদের বিষয়ে জানুন। কিভাবে তারা তাদের মার্কেটের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সেটি বোঝার চেষ্টা করুন। হতে পারে মার্কেটে খুব বেশী সংখ্যক প্রতিদ্বন্দী রয়েছেন। এবং মার্কেটে এককভাবে পণ্যের চাহিদা তেমন বেশীও নয়।

সুতরাং নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনি এখানে বিক্রী করতে পারবেন না বলেই মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে খুবই নতুন ব্যতিক্রমী পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। নয়তো নিশে পরিবর্তন করুন।

নিশে পণ্য মার্কেটে দেয়ার পরে, যেসব মানুষ আপনার নিশের সাথে মানানসই তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। এজন্য প্রথমে নিজের গ্রাহকদের বা অডিয়েন্সকে চিনে রাখা জরুরী।

আপনি যে পণ্য এনেছেন, সেটি উপস্থাপন করুন তাদের কাছে। মানুষের ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া গ্রহণ করুন সাদরে। সমালোচনাকে আহ্বান জানান এবং ইতিবাচক ভাবে নিন। সেই ভিত্তিতে পরিবর্তন আনুন আপনার ব্যবসায়।

নিশে মার্কেটের সুবিধা

একট নিশে মার্কেটের অংশ হওয়ার সুবিধা অনেক। যে কারণে বিভিন্ন ব্যবসাগুলো সবসময়ই চেষ্টা করে একটি “ইউনিক সেলিং প্রপোজিশান” শনাক্ত করতে, যেন একটা নিশে-তে স্থান করে নেয়া যায়।

একটি নিশের অংশ হলে অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে আপনার সুবিধা হচ্ছে :-

প্রতিযোগিতা : আপনার ব্যবসা যদি একটি নিশে মার্কেটের অংশ হয়, তাহলে সামগ্রিক বিচারে আপনার প্রতিদ্বন্দীর সংখ্যা কমে যাবে। এর কারণ একটি ব্যবসা যত বেশী বিশেষায়িত হয়, ততই অন্য ব্যবসাগুলোর তাদের সরাসরি প্রতিযোগী হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে।

ব্যবসায়িক মনযোগ : একটি নিশে মার্কেটের অংশ হওয়ার সুবিধা হচ্ছে আপনি একটি সুনির্দিষ্ট গ্রাহক সমাজের কাছে তাদের চাহিদার সাথে প্রাসঙ্গিক একটি পণ্যকে বিক্রয়ের বিষয়ে মনযোগ দিতে পারবেন।

এভাবেই আপনার বিক্রয়ে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বিশদ ও অনির্দিষ্ট গ্রাহক সমাজ নিয়ে কাজ করলে, সেখানে ক্রেতাদের চাহিদার মাঝে কোন মিল নেই, এবং অনাগ্রহী মানুষের কাছে বিক্রীর চেষ্টা করতে গিয়ে আপনার প্রচুর সময় নষ্ট হবে।

বিশেষজ্ঞতা : নিশে মার্কেটে যেসব প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা বিক্রী করতে চাচ্ছে, তারা তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে অনেক বেশী অভিজ্ঞ। তারা তাদের গ্রাহক সমাজকে বোঝেন এবং জানেন কিভাবে তাদের ব্যবসায়িক মূল্য তৈরী হয় এই মানুষদের কাছে।

এই ধরণের বিশেষজ্ঞতা দিয়ে আপনি আপনার নিশের বাইরের লোকদের আকর্ষণ করতে পারবেন না, কিন্তু নিশে মার্কেটে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি গ্রাহকরা আরও বেশী অনুরক্ত হবেন।

আরও পড়ুন-

নিশে মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে (How Niche Marketing Works)?

নিশে মার্কেটিং মূলতঃ তিনটি বিষয়ের সমন্বয় :

  • নিশে মার্কেট বা নির্দিষ্ট গ্রাহক সমাজ
  • নিশে প্রোডাক্ট বা আপনার বাছাইকৃত গ্রাহক সমাজের প্রাসঙ্গিক পণ্য
  • নিশে অডিয়েন্স বা গ্রাহক সমাজের যারা আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা

কোন নিশে মার্কেট নিয়ে আপনি কাজ করবেন সেটি না জানা পর্যন্ত আপনি আসলে কি পণ্য বিক্রী করবেন সেটিই নির্ধারণ করা মুশকিল। আবার, আপনি প্রমোট করে লাভ করতে পারবেন এরকম নিশে প্রোডাক্ট খুঁজে বের করার আগ পর্যন্ত আপনি একটা নিশে মার্কেট বেছেও নিতে পারবেন না।

এই নিশে প্রোডাক্ট বা নিশে মার্কেট কোনটিকেই বেছে নিয়ে লাভ নেই যদি না মূল গ্রাহক সমাজের মাঝে এই পণ্য কিনতে প্রস্তুত, ইচ্ছুক এবং সক্ষম একদল মানুষ অর্থাৎ নিশে অডিয়েন্সের অস্তিত্ব আপনি নিশ্চিত হতে না পারেন।

কি অর্থ হয় এসব কথার? নিশে মার্কেটিং হচ্ছে মার্কেটের ভেতরেই আরো ক্ষুদ্র, নির্দিষ্ট, সুসংজ্ঞায়িত একটি ক্ষেত্রে নিজের ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা করা। যেই ক্ষুদ্র ক্রেতা দল, যারা মার্কেটের এই নির্দিষ্ট অংশের প্রতি আগ্রহী – একান্তই তাদেরকে টার্গেট করে আপনি আপনার ব্যবসাটি তৈরী করবেন।

নিশে অনুযায়ী কাজ করার একটি মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব সত্ত্বেও নতুন ব্যবসায়ী হিসেবে বাজারে টিকে থাকা।

এজন্যই নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করছেন এমন একজনের জন্য নিশে মার্কেটিং এত জরুরী। একজন নবীন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের ক্ষেত্রে কিভাবে নিশে মার্কেট কাজ করছে সেটি বোঝানোর একটা চেষ্টা করা হল :

একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারের জন্য যেভাবে কাজ করে নিশে মার্কেটিং?

বিষয়টি এমন- আজকাল প্রচুর মানুষ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন; তারা সবাই অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট বিক্রী করে লাভ করতে চান। এখন এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের অনেকের প্রতিযোগিতাই হয়তো আপনার বিরুদ্ধে।

হতে পারে, তারা আপনার চেয়ে অভিজ্ঞতাতেও বেশী। তাদের ব্যবসার ক্ষেত্রটি হয়তো আরও পুরাতন এবং প্রতিষ্ঠিত। যে কারণে ক্রেতাদের কাছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাও বেশী।

যেসব প্রোডাক্ট বিক্রী করে সবচেয়ে বেশী মুনাফা পাওয়া যায়, অর্থাৎ যেগুলি নিয়ে সবচেয়ে বেশী সার্চ করে মানুষ ইন্টারনেটে সেগুলো নিয়ে প্রতিযোগিতাও প্রবল।

এখন নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে আপনি ভেবে দেখুন, এই দানবীয় অ্যাফিলিয়েটারদের সাথে আপনি রণক্ষেত্রে সম্মুখ যুদ্ধে নামবেন কি না।

আপনার হয়তো একটা ওয়েবসাইটের রক্ষণাবেক্ষণে খরচ প্রদান আর লেখালেখি করতে পারা ছাড়া আর কোন ক্ষমতা নেই। আর এসব ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে লক্ষ বা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা নির্মাণ করে ফেলেছেন।

আপনি চাইলে এদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে যেতে পারেন। কিন্তু ফলাফল খারাপ হওয়াটাই অধিক সম্ভাব্য এখানে।

একটি বড় প্রতিযোগিতাপ্রবণ ক্ষেত্রে একজন ছোট ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে, একটি কম প্রতিযোগিতা সম্পন্ন ক্ষেত্রে নিশে ভিত্তিক ব্যবসায়ী হলেই লাভ করার সম্ভাবনা বেশী।

এই কথাটি সত্য যে, উচ্চ প্রতিযোগিতার বাজারগুলোতে টাকার হাতছানি বেশী। নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণও এই বিষয়টিতে বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন। তারা হিসেব করেন এভাবে যে “গুগলে বলছে ফুটবল নিয়ে মাসে সাড়ে সাত মিলিয়ান সার্চ হয়ে থাকে। তাহলে আমি ফুটবল নিয়েই ব্যবসা করব।

কারণ এই সাড়ে সাত মিলিয়ান সার্চে একটা ভগ্নাংশ পেলেও তো আমার অনেক অনেক টাকা হয়ে যায়।” অথচ সেই গুগলেই কিন্তু বলছে যে, এই ফুটবল সার্চ টার্মটি জন্য সাড়ে চার বিলিয়ানের মত প্রতিযোগী রয়েছেন।

গুগলে আরেকটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই আপনার স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটতে থাকবে। দেখবেন যে, গুগলের বাক্সে ফুটবল লিখে সার্চ করলে তালিকার সবচেয়ে ওপর দিকে রয়েছে ন্যাশানাল ফুটবল লীগ, ইএসপিএন, উইকিপিডিয়া, বিবিসি স্পোর্টস, আর সিএনএন।

দেখতেই পাচ্ছেন, প্রথম পাতার ফলাফলে যাদের নাম আসছে, তারা সবাই বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংবাদ সংগঠন। এদের শত কোটি টাকার বাজেট রয়েছে। ইন্টারনেট এবং অফলাইন দুনিয়া দুই জায়গাতেই তারা অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত।

তাদের ওয়েবসাইট চালানোর জন্য, অনলাইন কাজকর্ম সামলানোর জন্য কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার কর্মচারী কাজ করছেন। এমন অবস্থায় আপনি যদি “ফুটবল” এর মত একটি বিশদ সার্চ টার্ম নির্বাচন করে প্রথম পাতায় আসতে চান তাহলে কি ধরণের প্রতিযোগিতায় পড়তে যাচ্ছেন সেটি আন্দাজ করতে পারছেন নিশ্চয়ই।

এখানেই নিশে মার্কেটিং এর সুবিধা। নিশে যেহেতু অনেক ছোট এবং সুনির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্র, সুতরাং এই নিয়ে অত বেশী সার্চ হয়তো হয় না। যেহেতু এখানে বিপুল টাকার হাতছানি নেই, তাই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা স্বাভাবিকভাবেই আকর্ষিত হন কম। অর্থাৎ, এই ক্ষেত্রটিতে প্রতিযোগিতা কম।

কম প্রতিযোগিতা মানেই ব্যবসা করে সফল হবার সম্ভাবনা আপনার বেড়ে যাচ্ছে যৌক্তিকভাবেই। মানে, একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে, ওয়েবসাইট নির্মাণ করা বা একটি সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন করে আপনি ভাল র্যাঙ্কিং করতে পারবেন।

ফলশ্রুতিতে, প্রথমেই কোটি কোটি টাকা না কামালেও, একটি বাস্তবসম্মত ইনকাম আপনি করতে পারবেন আশা করা যায়।

আরেকটি সুবিধা হচ্ছে- আপনি একটি ছোট, নির্দিষ্ট ক্রেতার দল তৈরী করতে পারবেন। তারা সংখ্যায় কম, কিন্তু প্রকৃতই আপনার পণ্যের ব্যাপারে আগ্রহী।

এখানে আগের উদাহরণটির সূত্র ধরে বলছি, আপনার নিশে হতে পারে “ফুটবল স্ন্যাক হেলমেট”। এই সার্চ টার্মটিতে প্রতিযোগিতা খুবই কম।

গুগলের সার্চ করে দেখবেন, একজন দু’জন আ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এই পণ্যটি বিক্রি করছেন অ্যামাজন থেকে, তার বাইরে তেমন কিছুই নেই। অথচ শুধু ফুটবল নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে গেলে আপনাকে যে ধরণের ওয়েবসাইট বানাতে হত, এখানে কিন্তু তার চেয়ে অতিরিক্ত ভিন্ন কিছু করতে হবে না।

প্রায় একই ধরণের আর্টিকেল এবং কন্টেন্ট নির্মাণ করে আপনি এই নিশের সাপেক্ষে আপনার ওয়েবসাইট গড়ে তুলতে পারেন। পার্থক্য হল, এখানে আপনার ইনকামের সম্ভাবনা বেশী।

যেভাবে নিজের নিশে নির্ধারণ করতে পারেন একজন অনলাইন উদ্যোক্তা

একজন অনলাইন উদ্যোক্তার জন্য নিজের নিশে নির্বাচন করা, সঠিক অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নির্বাচনের মতই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের মাথায় প্রথম যে টপিক আসে সেটি নিয়েই মার্কেটিং শুরু করে দেন।

কেন সেটি করা ঠিক হবে না, তা ওপরে আলোচনা থেকে স্পষ্ট হওয়ার কথা। নিশে নির্বাচনে ভুল করলে, তিন মাসের মাথাতেই আপনি ব্যবসায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন।

অধিকাংশ নবীন অনলাইন উদ্যোক্তাই দেখা যায় এই কারণে তাদের প্রকল্পটি ত্যাগ করেন।

কিভাবে একজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার নিজের উপযুক্ত নিশে নির্বাচন করতে পারেন তা নীচে উল্লেখ করা হল :

আপনার শখ, আগ্রহ ও ভালোলাগার বিষয়ের একটি তালিকা করুন

প্রথমেই আপনার যা ভাল লাগে, যেসব বিষয়ে আগ্রহ পান, বা টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্য ছাড়াই করে থাকেন, সেসবের একটি তালিকা করে ফেলুন। কোন কাজগুলোতে আপনার বেশী সময় ব্যয় হয় সেগুলোকে বিবেচনা করুন।

আপনার হয়তো ইতিমধ্যে একটি পেশা রয়েছে। সেই পেশা নিয়ে মানুষকে বলতে, পরামর্শ দিতে পছন্দ করেন। তাহলে সেটাকেও তালিকায় রাখতে পারেন। আবার যেসব টপিক নিয়ে আপনি আরও শিখতে চান, বা কৌতুহল পোষণ করেন, সেগুলিও হিসেব করুন। এভাবে অন্তত পনের বিশটি টপিক নিয়ে একটি তালিকা করে ফেলুন।

আপনার আগ্রহের ক্রমধারায় টপিকগুলোকে সাজান

এরপরে কাজ হচ্ছে তালিকার বিষয়গুলোকে সাজানো। সবচেয়ে বেশী যে টপিকগুলো নিয়ে মানুষকে বলতে, জানাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ও উপভোগ করেন, সেগুলোকে তালিকার শীর্ষে রাখুন।

এই কাজটি করতে গেলেই বুঝবেন, আপনার আগ্রহের বিষয়গুলোর মাঝেও কোনটির প্রতি ঝোঁক আপনার বেশী। এগুলোই আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর সম্ভাব্য নিশে।

আপনার পছন্দের বিষয়টি নিয়ে অন্য মানুষদের আগ্রহের সমীক্ষা করুন

তালিকার প্রথম টপিক দিয়ে শুরু করুন। রিসার্চ করে দেখুন যে এই বিষয়ে অন্য মানুষদের আগ্রহ কেমন। মানুষের পর্যাপ্ত আগ্রহ আছে এমন বিষয় নিয়েই আপনার কাজ শুরু করা উচিত।

এজন্য বিভিন্ন বড় বড় ট্রাফিক সোর্স যেমন: গুগল, ফেসবুক, টুইটার আর ইন্সটাগ্রামে আপনি কন্টেন্ট নিয়ে সমীক্ষা পরিচালনা করতে পারেন। যে টপিকের কথা ভাবছেন, সেটি নিয়ে দ্রুত গুগলের সার্চ করুন।

যে কন্টেন্ট সার্চ রেজাল্টে পাবেন, সেটি নোট করে রাখুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরণের কন্টেন্ট নিয়ে যে সকল কন্টেন্ট মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে সেগুলো থেকেও ধারণা নিতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি টপিকের “এনগেজমেন্ট” বা কি পরিমাণ লাইক, কমেন্ট, শেয়ার মানুষ করছেন বিষয়টি নিয়ে সেটি থেকে তার চাহিদা সমন্ধে একটি আন্দাজ করতে পারেন।

ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার সমীক্ষা করুন

আপনার নির্বাচিত বিষয়টি নিয়ে মানুষের আগ্রহ যদি আপনাকে তুষ্ট করে, তাহলে এরপরের কাজ হবে মার্কেটে বিষয়টি নিয়ে কিরকম প্রতিযোগিতা রয়েছে সেটি পরীক্ষা করে দেখা।

আগের ধাপের কাজ করার সময়ই আপনার একটা আন্দাজ পেয়ে যাওয়া কথা যে মার্কেটে কিরকম প্রতিযোগিতা আপনার বিষয়টি নিয়ে।

যেকোন ওয়েবসাইট যারা আপনার পছন্দের টপিকটি নিয়ে কন্টেন্ট মার্কেটিং করছেন – তারাই আপনার প্রতিদ্বন্দী। কারণ আপনি যে ক্রেতা সমাজের মনযোগ আকর্ষণ করতে চান, তাদের মনযোগ এরাও পেতে চাচ্ছেন।

প্রতিযোগিতা যত বেশী ততই এই কন্টেন্টে মার্কেটপ্লেসে আপনার অবস্থান পাওয়া কঠিন।

একারণে, আগে যা বলেছি সেটাই আবার বলব- নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে সবচেয়ে কম প্রতিযোগিতা সম্পন্ন টপিকটা নিয়েই কাজ করুন।

অনেক সময়, উচ্চ প্রতিযোগিতা সম্পন্ন একটি নিশেতেও সফল হওয়া সম্ভব যদি আপনি আপনার ব্যবসায়িক মনযোগ অধিক লাভজনক একটি মাত্র টপিকে নিবদ্ধ করতে পারেন।

ধরুন, আপনার টপিক হচ্ছে “রানিং” বা দৌড়ানো। সেক্ষেত্রে আপনি শুধুমাত্র দৌড়ানোর সময় যে সরঞ্জাম মানুষের প্রয়োজন হয়, সেসবের ওপর মনযোগ দিলেন। সাম্প্রতিকতম ও সবচেয়ে ভাল রানিং শু’জ, কাপড়চোপড় এবং বাজারে অন্য যেসব সরঞ্জাম পাওয়া যায় সেসব নিয়ে কন্টেন্ট বানিয়ে শেয়ার করলেন।

আপনার নিশে বিষয়ক কোন সমস্যাগুলো নিয়ে সবচেয়ে বেশী সার্চ হয় জানুন

নিশে নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পর কি ধরণের কন্টেন্ট নির্মাণ করবেন সেই বিষয়ে ভাবতে শুরু করুন। আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ওয়েবসাইট তৈরী করার আগে থেকেই আপনি কন্টেন্ট নিয়ে লিখতে শুরু করতে পারেন।

এর ফলে যেই মুহুর্তে ওয়েবসাইট চালু হবে, তখন থেকেই আপনি প্রমোশানের কাজ শুরু করে দিতে পারবেন।

কন্টেন্ট লেখার জন্য, আপনার প্রথমে জানা দরকার আপনার নিশেতে আগ্রহী মানুষরা এই ক্ষেত্রটিতে কি ধরণের সমস্যায় পড়ে থাকেন। এমন হতে পারে যে, এই টপিক নিয়ে আপনি নিজেই শিখছেন।

তাহলে, এই নিশেতে নবীনরা কি ধরণের সমস্যায় পরে সেগুলি চিন্তা করুন। এক্ষেত্রে যেটা হবে, একজন নতুনের দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি সমস্যাগুলো নিয়ে লিখতে পারবেন।

নিশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে এমন অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট খুঁজে বের করুন

জনপ্রিয়তা এবং প্রতিযোগিতা ভিত্তিতে একটি নিশে নির্বাচন করার পর, সেই নিশেতে কি কি ধরণের অ্যাফিলিয়েট পণ্য পাওয়া যাচ্ছে সেটি অনুসন্ধান করুন।

আগের ধাপে যে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছিলেন, সেগুলোকে সমাধান করতে পারে, এমন পণ্যের অনুসন্ধান ও নির্বাচন করা উচিত।

নিশে বিষয়টি যথেষ্ট বিমূর্ত। পূর্ব ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাহীন অনেকেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করার পর নিশে বুঝতে পারেন না বলেই, ব্যবসা করে সফল হতে পারেন না।

আপনি যদি বাস্তবতার নিরিখে কাজ করতে পারেন, অযৌক্তিক লাভের প্রত্যাশা না করেন এবং সঠিক নিশে নিয়ে কাজ করতে পারেন, তাহলে নিশ্চই আপনার অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং -এ সফল হবেন। উদ্যোক্তা হিসেবে কখনই আপনি নিজের স্বপ্নকে দমন করবেন না। কিন্তু বাস্তবতাও একটি ফ্যাক্ট। শুভকামনা সবার জন্য ।

সম্পাদকের বাছাই –

Leave a Comment