ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এর প্রয়োজন ও সুবিধাসমূহ জানার প্রয়োজনীয়তা তরুণ ও পেশাজীবি সমাজের জন্য অনেকটাই গুরুত্ব বহন করে। আসনু জেনে নিই- Digital Marketing এর বিস্তারিত সবকিছু।
অনলাইনে যেকোনো প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিসকে সহজেই এবং সফলভাবে মার্কেটিং করার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং করা হয়ে থাকে। যদি আপনি একজন অনলাইন ব্যবসায়ী (Online Businessman) হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সে ব্যবসায়ের জন্য হলেও আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং কি -এই সম্পর্কে ভালোভাবে জানে রাখা জরুরী।
তবে শুধু অনলাইন ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে নয়, অফলাইনে পরিচালিত ব্যবসায়ের জন্যেও Digital Marketing এর গুরুত্ব অপরিসীম।
তাই, যদি আপনি বর্তমান দিনে Digital Marketing সম্পর্কে না জেনে থাকেন, তাহলে বলতে হবে আপনি বেশ পিছনে পড়ে রয়েছেন।
কারণ, একটা সময় ছিল যখন আমরা আমাদের বিজনেস প্রচার, মার্কেটিং বা বিক্রি করার জন্য নানান দোকানে দোকানে ঘুরতাম অথবা ঘরে ঘরে যেতাম। এই পদ্ধতিতে আমাদের খরচ এবং কষ্ট দুটোই হতো অনেক বেশি।
আর এইভাবে মার্কেটিং করেও আমরা আমাদের বিজনেস এর প্রচার সঠিকভাবে করতে পারতাম না। আমাদের ব্যবসায়ের জন্য টার্গেটেট কাস্টমার পাওয়া যেত না।
তবে, বর্তমানে Digital Marketing এর বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়িতে বসেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই আপনার ব্যবসার প্রচার করতে এবং নির্ধারিত পণ্যের জন্য কাস্টমার খুঁজে পেতে পারেন।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মূলত সেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সিক্রেট কৌশল সমূহ নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া Digital Marketing এর কয়েকটি পদ্ধতি, এর লাভ বা সুবিধাগুলো সম্পর্কে জানব।
ডিজিটাল মার্কেটিং কি (What is Digital Marketing?)
সহজ ভাবে বলতে গেলে, ডিজিটাল মানে হল আধুনিক ইলেকট্রিক টেকনোলজি, আর মার্কেটিং মানে হলো কোনো কিছু প্রচার করা।
তাহলে আমরা বলতে পারি, অনলাইনে আমাদের যেকোনো ব্যবসা ইলেকট্রিক মিডিয়ার দ্বারা প্রচার করাকে বলা হয় ডিজিটাল মার্কেটিং।
বর্তমানে ইন্টারনেট এর ব্যবহার অনেকটা বেড়ে চলেছে। আর ইন্টারনেট এর ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে সেই ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে ব্যাবসার বিজ্ঞাপন প্রচার করায় Digital Marketing.
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি (Types Of Digital Marketing)
বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্য চাইলে বিভিন্ন উপায়ে মার্কেটিং করতে পারে। Digital marketing এর বেশ কয়েকটি লাভজনক প্রক্রিয়া আছে, যার মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই আপনার প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং করতে পারেন।
চলুন, নিচে Digital Marketing এর কয়েকটি লাভজনক প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিই-
Search engine optimization বা (SEO)
সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন বা এসইও হচ্ছে এমন এমন কিছু কলা-কৌশল বা পদ্ধতি যার প্রয়োগ করার মাধ্যমে কোন ওয়েব সাইটের টার্গেটেট কন্টেন্ট, পেজ, আর্টিকেল বা কিওয়ার্ডকে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ SERP’s এর প্রথম পাতায় নিয়ে আসা হয়।
আপনারা নিশ্চয়ই গুগল সার্চ এর নাম শুনেছেন। গুগলের সার্চ বাটনে কিছু লিখে সার্চ করা হলে ফলাফল হিসেবে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লিংক ও তথ্যসহ কিছু পাতা Browser Window তে দেখা যায়। যে লেখাটি লিখে সার্চ দেয়া হচ্ছে এসইও এর পরিভাষায় সেটি কিওয়ার্ড নামে পরিচিত।
মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ওয়েবসাইটের আর্টিকেলের মধ্য থেকে বাছাই করা কিছু কিওয়ার্ডকে এই সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজ এর প্রথম পাতায়, সম্ভব হলে প্রথম তিনটি রেজাল্ট এর মধ্যে নিয়ে আসা; যাতে করে সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ রেজাল্ট অনুসরণ করে ওয়েবসাইটে প্রচুর অর্গানিক ভিজিটর নিয়ে আসা যায়।
উপরের ছবিতে লক্ষ্য করে দেখুন। “কিওয়ার্ড কি” এটা লিখে সার্চ করার পরে গুগুল আমাদেরকে কিছু ফলাফল দেখিয়েছে। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, শতকরা ৯৫% মানুষ নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্য গুগল সার্চ করে খুঁজে বের করার সময় প্রথম তিনটি রেজাল্ট অনুসরণ করে প্রাপ্ত আর্টিকেল পড়ে দেখার পর আর নিচের দিকের আর্টিকেল লিংকে ক্লিক করার প্রয়োজন অনুভব করেন না। অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে বলা যায় সবার উপরের তিনটি সার্চ রেজেল্টে ক্লিক কবেন অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।
অর্থাৎ গুগল সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ (SERPs) এর টপ পজিশনে থাকার কারণে প্রথম তিনটি লিংকে সবচেয়ে বেশি ক্লিক পরে। আর গুগোল সহ প্রতিটি সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম ৩ থেকে ৫ নং অবস্থানে একটি ওয়েবসাইটের যেকোন তথ্য বা কিওয়ার্ড (Keyword) কে র্যাংক করানোর প্রক্রিয়াই হল SEO বা সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন।
SEO সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে –
- White hat SEO
- Gray Hat SEO
- Black hat SEO
Social Media Marketing (SMM)
সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) বলতে বোঝানো হয় Facebook, Twitter, Instagram ইত্যাদিকে। বর্তমানে ছোট থেকে বড়; সকল বয়সী মানুষরা এই সোশ্যাল প্লাটফর্ম গুলোতে সক্রিয় থাকে।
আর তাই বলা যেতেই পারে, অনলাইনে আপনার নির্ধারিত Products কিংবা Service প্রচার বা বিক্রি করতে social media marketing অনেক লাভজনক একটি প্রক্রিয়া।
এসকল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনি আপনার Company, Brand ও Products এর বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন সহজে। এসব জায়গা থেকে আপনার টার্গেট কাস্টমার পাওয়ার সম্ভবনা অনেকটাই বেশি থাকে।
Search Engine Marketing (SEM)
আমরা যেখানে কোনো কিছু লিখে সার্চ করি সেটাই হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন। আর এই সার্চ ইঞ্জিনকে ব্যবহার করে আপনি আপনার মার্কেটিং এর কাজ করতে পারেন।
আপনি হয়তো লক্ষ করে থাকবেন যে, আমরা যখন গুগলে কিছু সার্চ করছি তখন সেই সার্চ রেজাল্টের প্রথম ৩-৫ টি রেজাল্টের মধ্যে অনেক সময় বিজ্ঞাপন দেখা যায়। এসকল বিজ্ঞাপন Google AdWords দ্বারা দেওয়া হয়।
বিভিন্ন কোম্পানির মালিক তাদের পণ্যের গ্রাহক খুঁজতে এসব বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, যাতে তারা সে বিজ্ঞাপন এর সাহায্যে তাদের কাঙ্খিত ক্রেতা পেতে সক্ষম হয়। আর এই প্রক্রিয়াকে বলে Search Engine Marketing.
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর আরো একটি মাধ্যম হচ্ছে এফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate marketing)। এটি Digital Marketing এর এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নানান কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কে প্রমোট করিয়ে বিক্রি করার বিনিময়ে যে কাউকে কিছু কমিশন দিয়ে থাকে।
অর্থাৎ যে কেউ সেই কোম্পানির উক্ত প্রোডাক্ট প্রমোট করে বিক্রি করিয়ে সে প্রোডাক্ট এর বিনিময়ে কমিশন আয় করতে পারবে।
আরও পড়ুন-
ইমেইল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম পদ্ধতি বা মাধ্যম হলো ইমেইল মার্কেটিং (Email Marketing)। ইমেইল মার্কেটিং দ্বারা ইমেইল পাঠানোর মাধ্যমে একটি কোম্পানি তার প্রোডাক্ট বা ব্র্যান্ড এর মার্কেটিং করতে পারে।
আমরা যেভাবে সাধারণত কাউকে মেইল করি এটা সেইরকম নয়। এই প্রসেস এর মাধ্যমে যেকোনো কোম্পানি তার কাঙ্খিত প্রোডাক্ট সম্পর্কে প্রফেশনাল ভাবে একটি মেসেজ লিখে সেটিকে হাজার হাজার মানুষের কাছে ইমেইল করে দিবে। আর এই সম্পূর্ণ মার্কেটিং এর প্রক্রিয়াটি হচ্ছে Email Marketing.
এই প্রক্রিয়াতে আপনি আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে শুধুমাত্র একটি মেসেজ লিখে সেটিকে সহজেই পাঠিয়ে দিতে পারবেন হাজার হাজার লোকের কাছে। বর্তমানে ইমেইল মার্কেটিং প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ভিডিও মার্কেটিং
ভিডিও মার্কেটিং (Video Marketing) এর জন্য সবচেয়ে সেরা প্লাটফর্ম হচ্ছে ইউটিউব (Youtube)। বর্তমানে অসংখ্য কোম্পানি তাদের কোম্পানির নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে তার মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট, ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভিডিও বানিয়ে সেটির মার্কেটিং প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।
ইউটিউব এর মাধ্যমে ভিডিও মার্কেটিং অত্যন্ত লাভজনক। কারণ গুগলের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন হচ্ছে ইউটিউব। এছাড়াও ইউটিউব হচ্ছে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং মাধ্যম।
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড এর দ্বারা যেকোনো কোম্পানি খুবই সহজে তাদের প্রচার এর কাজ করতে পারেন।
কনটেন্ট মার্কেটিং
কথায় আছে ‘Content is King’, একটি পণ্যের সম্পূর্ণ তথ্য সবার সামনে প্রচার করার জন্য কনটেন্ট অনেক গুরত্বপূর্ণ। আর যেখানে মার্কেটিং এর কথা আসে সেখানে কনটেন্ট অবশ্যই জরুরি একটি বিষয়।
ধরুন আপনার একটি প্রোডাক্ট আছে, সেটি হলো একটি ইলেকট্রিক বাল্ব, আর এই প্রোডাক্ট প্রচার করতে বা কাস্টমার খুঁজতে আপনাকে অবশ্যই এই বাল্ব সম্পর্কে বিস্তারিত লিখতে হবে বা বলা যায় একটি কোয়ালিটি কনটেন্ট তৈরি করতে হবে। এরপরে আপনি আপনার টার্গেট কাস্টমার পেতে পারেন। এটাই হচ্ছে কনটেন্ট মার্কেটিং এর প্রক্রিয়া।
আর এর জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রোডাক্ট সম্পর্কে লিখবেন।
এছাড়াও আরো নানান মার্কেটিং প্রক্রিয়া রয়েছে।
কিভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শুরু করবেন?
যেহেতু এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনি আপনার নির্ধারিত পণ্যের জন্য কাস্টমার পেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমে আপনার প্রোডাক্ট এর একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি বেছে নিতে হবে।
এরপর আপনাকে আপনার সেই পণ্য অনুযায়ী সঠিক তথ্য দিয়ে একটি আকর্ষণীয় কনটেন্ট লিখতে হবে। পণ্যের চাহিদা ও ধরন অনুসারে কনটেন্ট সাজাতে হবে আপনাকে।
তবে এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেলস ফানেল তৈরি করা। সেলস ফানেল তৈরি করে পণ্য বিক্রির পরিমাণ ২-৩ গুন বাড়িয়ে নেওয়া সম্ভব।
সেলস ফানেল এর পর আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে কোন ডিজিটাল মাধ্যম অথবা সোর্স ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রচার করতে চান অথবা পণ্য বিক্রি করতে চান। যে মাধ্যমে আপনি আপনার পণ্য বিক্রি করতে চান সে মাধ্যমটি সম্পর্কে আপনার অবশ্যই ভালো জ্ঞান থাকা লাগবে।
শেষ কথা
তাহলে বন্ধুরা, আজকের “Digital Marketing কি ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সুবিধাসমূহ” শিরোনামের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং কি; মূলত সেই সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়ার চেষ্টা করেছি।
Digital Marketing এর ক্ষেত্রে যেটি প্রধান বিষয়, সেটি হচ্ছে নিশ (niche)। প্রথমতো আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য সঠিক নিশ রিসার্চ করতে হবে। এরপরে আসে ভাষা। অর্থাৎ কোন ভাষায় আপনি আপনার উক্ত নিশ সবার সামনে প্রচার বা মার্কেটিং করতে চান। সবশেষে আসে সঠিক মাধ্যম; যার দ্বারা আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস মার্কেটিং করবেন। এটিই হচ্ছে মূলত ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগের সারকথা।
আর্টিকেলটা যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। যেকোনো মতামত অথবা মন্তব্য সাদরে আমন্ত্রিত।
আরও পড়ুন-