ট্রল করাটা আর বিনোদনের পর্যায়ে নেই! চলে গেছে মানবিকতার বাইরে

আজকাল ট্রল শব্দটার সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বিশেষত যারা সোশাল প্লাটফর্মে আছে। ট্রল শব্দটার বাংলা অর্থ গিয়ে দাড়ায় খিল্লি করা কিংবা ব্যঙ্গ করা। ভালো, খারাপ সবকিছু নিয়েই এখন ট্রল হচ্ছে ফেসবুকে। কারণ ফেসবুকেই খুঁজে নিচ্ছে মানুষ সস্তা বিনোদন। বিনোদনের জায়গাটা যদি তিক্ততায় পরিপূর্ণ হতে শুরু করে তবে সেখান থেকে মন্তব্যও উঠে আসে।

একদল মানুষ আছে যারা ফেসবুকে প্রতিনিয়ত তাদের ব্যক্তিগত জীবনধারা তুলে ধরছেন। তারা ভাবছেন না এতে কার কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আরেক দল যেকোনো একটা ইস্যু পেলেই হলো তা নিয়ে ট্রল করা শুরু করে দিবে।

এই ট্রলে তারাই বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে; যারা মোটামুটি সোস্যাল প্লাটফর্মকে মাতিয়ে রাখেন। কিংবা তাদেরকে সোস্যাল মিডিয়ার সেলেব্রিটিও বলা যায়। তাছাড়া কিছু মানুষ নিজেকে সেলিব্রিটি করতে ব্যস্ত হচ্ছে। এবং এই ট্রল থেকেই সৃষ্টি হচ্ছে বড় বড় সমস্যা। একজন উচ্চশিক্ষিত মানুষ থেকে শুরু করে নিম্নবিত্তদেরও হতে হয় এখন ট্রলের আওতাধীন।

আসলে ট্রল করাটা কতটা যুক্তিপূর্ণ?

আমি এটাকে অযৌক্তিক বলেই দাবি করি। যদি বিনোদন নেবার জন্যও হয় তবুও আমরা আমাদের বিপক্ষের মানুষটিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ব্যবহার কিংবা ধরা যায় “বিষবাক্য” ব্যবহার করতে পারি না। এটা আমাদের বিকৃত মানসিকতার উদাহরণ দেয়।

কি কি নিয়ে ট্রল হচ্ছে?

সংবাদ মাধ্যম গুলোও বলুন আর ইন্টারনেটই বলুন; আপনি নেগেটিভ সংবাদ পাবেন ৮০ ভাগ। আর বাকি ২০ ভাগও ট্রলের মাধ্যমে বিকৃত হয়ে যায়।

আমরা মজা করতে করতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছি। ভাবছিনা আমরা, কি নিয়ে মজা করা যাবে? কি নিয়ে করা যাবে না? তাই নাক গলাচ্ছি একজনের ব্যক্তিগত জীবনেও।

ফেসবুক ঘাটলে দেখা মেলে এমন কিছু বিষয়, যা নিয়ে ট্রল করার কোনো যুক্তির মাঝে পরছে না। আবার ট্রল করে ভাইরাল করে দিচ্ছি একজন ক্ষুদ্র স্বত্ত্বাকেও।

খুব বাজে একটা গানটাকে ট্রল করে ভাইরাল করে দিয়ে, ইউটিউবে ভিউ বাড়িয়ে সুযোগ করে দিচ্ছে সেই অশ্রাব্য শিল্পীর ইনকামের। এতে হারিয়ে যাচ্ছে সভ্য সংস্কৃতি।

আবার, একজন উচ্চমহলের কারো অসুস্থতাও হয়ে যাচ্ছে ট্রলের মাধ্যমে হাসি তামশার বিষয়।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ক্রিকেটার সাকিবের মেয়ের ঘটনাটাও আমরা সবাই জানি। এটা ছিল ট্রলের মাধ্যমে যৌন হয়রানি, যা সামাজিকতা নষ্ট করে দিচ্ছে।

একজন উদ্যোক্তার পরিশ্রম গুলোকেও আমরা হাসি তামশা করে উড়িয়ে দিচ্ছি। তার পিছনের গল্প টা কিন্তু সবারই অজানা!

বাংলাদেশে ১১ কোটি ৭ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে বড় অংশ নারী। এবং তাদের ইন্টারনেট ব্যবহার বিঘ্নতা ঘটে ছবি, ভিডিও নিয়ো ট্রল এর মাধ্যমে।

আমরা একটা বিষয় নিয়ে মজা পজিটিভ ভাবেও করতে পারি। কিন্তু এই দেশে কিংবা উপমহাদেশের দেশগুলো যেভাবে ট্রল করা হচ্ছে তা একেবারেই হেট স্পিচ, যাকে হয়রানি বলা চলে। আমরা ট্রলের মাধ্যমে এখন মজা করি না। একে ইন্ডিরেক্টলি অপমান করাই বলে।

আমরা কি ট্রলকে আটকাতে পারি?

না, এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বরং আমরা নিজেরা অপমানজনক কথা বলা থেকে নিজেকে আটকে রাখতে পারি।

ট্রলের মধ্যে হয়রানির বিষয়টাও সাইবার বুলিং এর মধ্যেই পরে। আমরা যারা পজিটিভ চিন্তাভাবনা করতে ভালবাসি তারা ট্রলকে এড়িয়ে যেতে পারি।

যারা ঘৃণা ছড়ায়, যারা অন্যের আনন্দেও অপ্রীতিকর ভাষা ব্যবহার করে, তারা অসুস্থ মস্তিষ্কের। তাদের চিকিৎসকের পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে।

অনেক সাইকোলজিক্যাল তথ্য অনুযায়ী, যারা প্রতিনিয়ত ট্রল করে যাচ্ছে, তারা মানসিকভাবে অসুখী এবং বিকৃত চিন্তার অধিকারী।

আমরা বিনোদন নিতে গিয়ে ট্রলের নামে কারো মনে কষ্ট দিচ্ছি কিনা সেটা খেয়াল রাখা উচিত। ইন্টারনেটে এ পজিটিভ চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেওয়া হোক বেশি বেশি। তবেই কিছুটা হলেও এসব এড়ানো সম্ভব হবে।

প্রাসঙ্গিক লেখা-

Leave a Comment