জেনে নিন ভালো শ্রোতা হওয়ার ১০টি কার্যকর উপায়

মানুষ হিসেবে পঞ্চইন্দ্রিয়ের অধিকারী হওয়ার দরুণ জীবনে চলার পথে প্রতিনিয়তই আমরা বিভিন্নজনের বলা বিভিন্ন কথা শুনছি৷ সে হিসেবে আমরা সবাই শ্রোতা হলেও একজন ভালো শ্রোতার সংজ্ঞা কিংবা গুণাবলি কিন্তু একটু আলাদাই বটে৷ কর্মক্ষেত্রে, পড়াশোনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন, সকলের বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং প্রশংসা অর্জন সর্বোপরি একজন মানুষের আত্নউন্নয়নে ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের লেখায় থাকছে, একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার দশটি উপায়, যা আপনাদের একজন ভালো শ্রোতা হতে কার্যকরীভাবে সহায়তা করার পাশাপাশি আপনাদের আত্মোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ভালো শ্রোতা বনাম সাধারণ শ্রোতা

বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে বলেছেন, “যখন মানুষ কথা বলে, পুরোপুরি শোনো। বেশিরভাগ মানুষ কখনোই শোনেনা।”

সত্যিই তাই! সবাই শ্রোতা হলেও একজন ভালো শ্রোতার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু গুণাবলি যা তাকে করে তোলে সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ। এখন হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগছে যে, ভালো শ্রোতা আবার কী! তাই চলুন শুরুতেই জেনে নেই, ভালো শ্রোতা বলতে কি বোঝায়।

ভালো শ্রোতা বলতে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা তাদের আশেপাশের ছোট, বড় প্রত্যেকের কথাগুলো সমানভাবে গুরুত্ব ও মনোযোগ দিয়ে শোনেন।

একজন ভালো শ্রোতা বক্তার প্রতিটি মতামতের প্রতি সর্বদা শ্রদ্ধাশীল থাকেন। তিনি তার বিভিন্ন গুণাবলির মাধ্যমে বক্তাকে তার মনের ভাব প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করেন। তিনি বক্তার প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন এবং নিরপেক্ষভাবে বক্তা কি বলতে চাইছেন তা বোঝার চেষ্টা করেন৷

পক্ষান্তরে একজন সাধারণ শ্রোতা কখনোই সবার কথা সমানভাবে মনোযোগ দিয়ে শোনেননা। তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিরপেক্ষ থাকেননা এবং তারা বক্তার কথার মাঝখানে তাদের মতামত দিয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে সহানুভূতিশীল হওয়ার প্রবণতাও তুলনামূলক অনেক কম। এগুলোই মূলত একজন ভালো শ্রোতা এবং একজন সাধারণ শ্রোতার মধ্যকার মূল পার্থক্য।

ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব

আমাদের সমাজে আমরা সাধারণত শোনার চেয়ে বলতেই বেশি পছন্দ করে থাকি। এমনকি আমরা ভালো শ্রোতা হওয়ার উপায়গুলো জানতেও তেমন আগ্রহ প্রকাশ করিনা৷ অথচ একজন ভালো শ্রোতার গুরুত্ব একজন ভালো বক্তার চাইতে কোনো অংশেই কম নয়৷ আসুন একটি ছোট্ট ঘটনার মাধ্যমে একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা করি।

ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব

ধরা যাক আপনি একজন শিক্ষার্থী। আপনাকে আগামীকালের মধ্যে একটি অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করে জমা দিতে হবে। সে অ্যাসাইনমেন্টটি কিভাবে করতে হবে সেটি আপনার শিক্ষক আপনাকে ক্লাসেই বিস্তারিতভাবে বলে দিয়েছেন।

আপনি সেসময় আপনার সেলফোনে ব্যস্ত ছিলেন, তাই শিক্ষকের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারেননি।

ফলস্বরূপ আপনি যখনই আগের রাতে অ্যাসাইনমেন্টটি করতে গেলেন, তখনই আপনি আবিষ্কার করলেন যে আপনি আপনার শিক্ষকের দেয়া দিক-নির্দেশনার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশ মনে করতে পারছেন না। যেগুলো আপনার অ্যাসাইনমেন্টটি করার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিলো।

কেন এমনটি হলো বলুন তো? আপনার শিক্ষক যখন আপনাকে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, আপনি সেই পরিস্থিতিতে একজন ভালো শ্রোতা ছিলেন না। অথচ আপনি যদি সে সময়ে মনোযোগ দিয়ে আপনার শিক্ষকের বলা কথাগুলো শুনতেন তাহলে আপনাকে এ ধরনের সমস্যায় পড়তেই হতোনা৷ একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব ঠিক এখানেই।

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্বগুলো হলো-

  • কর্মক্ষেত্রে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ভালো শ্রোতা কখনোই বক্তার বক্তব্যের মাধ্যমে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হলে সেটি ভোলেননা। তিনি বক্তার বক্তব্য পরবর্তীতে মনে রেখে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারেন। ফলস্বরূপ তিনি তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করতে পারেন।
  • যেহেতু একজন ভালো শ্রোতা নিরপেক্ষভাবে সকলের কথা শোনেন, তাই বন্ধু হিসেবে একজন ভালো শ্রোতার কদর রয়েছে সবখানেই। শুধু তাই নয়, একজন ভালো শ্রোতা সকলের কাছে একজন আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পেতে পারেন৷
  • একজন ভালো শ্রোতার কাছে অনেকেই তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য পরামর্শ চেয়ে থাকে এবং তিনি তার বিচক্ষণ গুণাবলির মাধ্যমে বক্তাকে তাদের সমস্যা সমাধানে সহায়ক বিভিন্ন গঠনমূলক পরামর্শ দিতে পারেন।
  • একজন ভালো শ্রোতাকে সবাই শ্রদ্ধা করে থাকে এবং তিনি সকলের প্রশংসা পেয়ে থাকেন।
  • ভালো শ্রোতার মধ্যে বিচক্ষণতা, ধৈর্য্য ইত্যাদি গুণ থাকার ফলে তিনি নিজের ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন সমস্যাও সুনিপুণভাবে সমাধান করতে পারেন।
  • আত্মোন্নয়ন বা নিজের ব্যক্তিগত উন্নতি সাধনের জন্যেও একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন মানুষ কেবলমাত্র বক্তার কথা পুরোপুরি শোনার মাধ্যমেই ভালো শ্রোতা হিসেবে পরিচিতি পান না, বরং বক্তার কথা শোনার পাশাপাশি তাকে আরো বিভিন্ন গুণাবলি অর্জন করতে হয়৷ যা একজন মানুষের ব্যক্তিগত উন্নয়ন সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এতক্ষনে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ভালো শ্রোতা হওয়া কতটুকু গুরুত্ব বহন করে। সমাজে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার উপায় সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। কেননা প্রতিটি জায়গায় একজন ভালো শ্রোতার যথেষ্ট কদর রয়েছে।

ভালো শ্রোতা হওয়ার উপায়

ভালো শ্রোতা হতে পারা নিঃসন্দেহে অনেক বড় একটি অর্জন। কেননা একজন ভালো শ্রোতা তার এ অর্জনের জন্য নিজের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উভয় জীবনেই বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন৷ তবে একজন ভালো শ্রোতা হওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়।

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার কিছু সুনির্দিষ্ট উপায় রয়েছে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনারা খুব সহজেই ভালো শ্রোতা হতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেই ভালো শ্রোতা হওয়ার সে উপায়গুলো –

১। বক্তার প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগী হোন

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার সর্বপ্রথম উপায় হলো বক্তার প্রতি মনোযোগী হওয়া৷ বক্তা যা বলছে তা মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করুন৷ বক্তা বলছে তাই শোনার জন্য আপনি শুনছেন, ব্যাপারটি যেন কোনোভাবেই এমন না হয়।

কেননা বেশিরভাগ সময় দেখা যায় শ্রোতাদের কেউ মনোযোগ দিয়ে না শুনলে বক্তারা সেটি ধরে ফেলতে পারেন৷ এতে করে যেমন বক্তার বলার আগ্রহ নষ্ট হতে পারে তেমনি বক্তার সামনে আপনার ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হতে পারে৷ তাই বক্তা যা বলতে চাইছে সেটি মন দিয়ে শুনুন। পাশাপাশি আপনার দেহভংগি দিয়েও বক্তাকে বুঝিয়ে দিন যে আপনি তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন৷ বক্তার চোখে চোখ রেখে তার কথা শুনুন, মাঝে মধ্যে মাথা নাড়ুন।

২। ইলেকট্রনিক গ্যাজেট দূরে রাখুন

ইলেকট্রনিক গ্যাজেট দূরে রাখুন

অনেকেই রয়েছেন যারা বক্তা কিছু বলার সময় সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে নিজের সেলফোনে ব্যস্ত থাকেন। এটি কখনোই করা যাবেনা। কেননা একজন বক্তা সবসময় আশা করেন তার কথা চলাকালে আপনি তার দিকেই পূর্ণ মনোযোগ দেবেন৷

এজন্যে বক্তার প্রতি আপনার মনোযোগ নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো জিনিস যেমন মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ, টেলিভিশন ইত্যাদি নিজের থেকে দূরে রাখুন। দেখবেন বক্তা যখন বলা শুরু করবে তখন আপনি অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে পারবেন।

৩। বক্তার কথার মাঝে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার আরেকটি উপায় হলো বেশি শোনা এবং কম বলা। একজন ভালো শ্রোতা হিসেবে আপনার অন্যতম দায়িত্ব হলো আপনার বক্তাকে সাবলীলভাবে কথা বলতে দেয়া।

আপনি যদি বক্তার কথার মাঝখানে কথা বলতে যান তাহলে বক্তার কথা বলার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাবে। কথা বলার মাঝখানে কথার খেই হারিয়ে ফেলা যথেষ্ট বিরক্তিকর ও বটে। তাই কখনোই বক্তার কথার মাঝখানে তাকে থামিয়ে নিজের কোনো কথা বলতে যাবেননা।

এমনকি যদি গঠনমূলক কথাও হয় তাও যে বলছে তার বলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। এতে করে দেখবেন একদিকে আপনি যেমন একজন ভালো শ্রোতা হতে পারবেন তেমনি বক্তার আপনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হবে।

৪। শ্রবণকালে নিরপেক্ষ থাকুন

একজন মানুষ তার কোনো একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে যেভাবে অনুভব করে আপনি কখনোই তার মতো করে অনুভব করতে পারবেননা। তাই যখন আপনার বক্তা আপনার সাথে তার যেকোনো অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে আপনি নিরপেক্ষভাবে সেটি শোনার চেষ্টা করুন। কারো কাছ থেকে কিছু শোনার সাথে সাথেই তাকে বিচার করতে যাবেন না। বরং যথাসম্ভব নিরপেক্ষ থেকে সহানুভূতির সাথে আপনার বক্তা যেটি বলতে চাইছে সেটি শুনুন।

৫। তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন

ধরুন আপনি কারো কাছে আপনার ব্যক্তিগত একটি কষ্টের কথা বলতে গেলেন৷ তখন সে আপনাকে থামিয়ে তার নিজের জীবনের কষ্টের কথা বলতে শুরু করলো। আপনার তখন খারাপ লাগবেনা?

ঠিক এই বিষয়টিই যখন আপনি শ্রোতা তখন মাথায় রাখবেন। কেননা তুলনা করা থেকে বিরত থাকা ভালো শ্রোতা হওয়ার একটি কার্যকরী উপায়।

শুধুমাত্র বক্তার কোনো দুঃখের কাহিনীর ক্ষেত্রেই নয়, বরং বক্তা যখন যেই বিষয়টি নিয়েই কথা বলুকনা কেন সবসময়ই বক্তার সাথে নিজের তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন। অনেকে মনে করেন বক্তার সাথে নিজের তুলনা করলে হয়তো বক্তা মানসিক শান্তি পাবেন। এ ধারণাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল। উপরন্তু তুলনা করা হলে বক্তা বিরক্ত বোধ করেন, ক্ষেত্র বিশেষে কথা বলার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন৷ তাই অবশ্যই বক্তার সাথে নিজের তুলনা করা থেকে বিরত থাকুন।

৬। বক্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন

বক্তার প্রতি সহানুভূতিশীল হোন

ভালো শ্রোতা হওয়ার সার্বজনীন একটি উপায় হলো বক্তার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা। যদি দেখেন বক্তা কিছু বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেনা, তাহলে কখনোই বক্তাকে জোর করবেন না। তাকে সহজ হওয়ার জন্য সময় দিন৷ তাকে আপনার অভিব্যক্তির মাধ্যমে বোঝান সে যখন বলবে আপনি তখনই শুনতে প্রস্তুত।

পাশাপাশি বক্তা যখন কিছু বলবে তখন সে অনুযায়ী আপনার প্রতিক্রিয়া দেখান। যেমন বক্তার কোনো কথার সাথে আপনি একমত হলে মাথা নেড়ে কিংবা ছোট্ট করে “ঠিক বলেছেন ” বলুন। কিংবা বক্তা যখন কোনো দুঃখজনক ঘটনা বলবে তখন সে অনুযায়ী আপনার মুখের অভিব্যক্তি বদলান। এতে বক্তা বুঝতে পারবে যে আপনি তার প্রতি সহানুভূতিশীল।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সহানুভূতিশীল শ্রোতা পেলে বক্তা তার কাছে বন্ধুর মতো নিজের সমস্ত গোপন কষ্টের ঘটনা বলে হালকা হতে চান। কেননা সবাই সহানুভূতি দেখাতে পারেনা৷ সুতরাং আপনার যদি ভালো শ্রোতা হওয়ার এ উপায়টি জানা থাকে তাহলে আপনি বক্তার বন্ধু হওয়ার সুযোগ ও পেতে পারেন।

তবে সহানুভূতি দেখাতে গিয়ে বক্তার অনুমতি ব্যতীত কখনোই তাকে আগ বাড়িয়ে কোনো পরামর্শ দিতে যাবেননা। বক্তা যদি পরামর্শ চায় তাহলেই গঠনমুলক পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করুন।

৭। বক্তার বলা কথাগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন

বক্তার বলা কথাগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন

আপনি ছোট কিংবা বড় যার কথাই শুনুন না কেন, বক্তা যেটুকু বলবে সেটুকু যথাসম্ভব মনে রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার দুটো লাভ হবে। প্রথম লাভটি হলো পরবর্তীতে আপনি প্রয়োজনে বক্তার সাথে কথা তার বলা বিষয়টি নিয়ে সহজেই কথা বলতে পারবেন। দ্বিতীয়ত আপনার বক্তাকে তার বলা বিষয়টি সম্পর্কে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবেনা। তাই বক্তার বলা কথাগুলো যথাসম্ভব মনে রাখার চেষ্টা করুন৷

৮। বক্তার বিশ্বাস বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিন

বক্তা যখন আপনাকে কিছু বলে তখন অনেক সময় এমন কিছু ঘটনা থাকে যেগুলো তার একান্তই ব্যক্তিগত।

এসব ক্ষেত্রে একজন ভালো শ্রোতা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো বক্তাকে আশ্বস্ত করা যে বক্তার বলা প্রতিটি কথা আপনি গোপন রাখবেন এবং কখনো সেটি জনসম্মুখে বলবেননা।

মনে রাখবেন, বক্তার বিশ্বাস বজায় রাখতে পারা একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার অন্যতম উপায়। তাই বক্তার বিশ্বাস অর্জনে সচেষ্ট হোন।

৯। যৌক্তিক এবং পরিস্থিতি উপযোগী প্রশ্ন করুন

এমন অনেক সময় আছে যখন শ্রোতা হিসেবে বক্তার বলা কথাগুলো ভালোমতো বোঝার জন্য বক্তাকে প্রশ্ন করতে হয়। বক্তাকে কখনোই কোনো অযৌক্তিক প্রশ্ন করবেন না। এতে বক্তা বিরক্ত হতে পারে। বক্তার বলা কোনো কথা বুঝতে না পারলে বক্তার বলা শেষ হওয়ার পর তাকে প্রশ্ন করুন।

আপনার প্রশ্ন যেনো গঠনমূলক হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

পাশাপাশি এমন কোনো প্রশ্ন করবেন না যেটি উক্ত পরিস্থিতির সাথে বেমানান। আবার এমনও হতে পারে আপনি কোনো যৌক্তিক প্রশ্ন করলেন কিন্তু বক্তা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার জন্য আপনার প্রশ্নটির উত্তর দিলেননা। সে সময়েও একজন ভালো শ্রোতা হিসেবে বক্তার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখুন৷

১০। বক্তার খোঁজ রাখুন

একজন ভালো শ্রোতা হওয়ার আরেকটি উপায় হলো বক্তার খোঁজ রাখা। তবে এ উপায়টি সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়৷

আপনি যখন দেখবেন বক্তা তার কোনো সমস্যা আপনাকে বলছে তখন আপনি পরবর্তীতে তার খোঁজ নিতে পারেন তার সমস্যাটি সমাধান হয়েছে কিনা জানার জন্য। তবে খোঁজ নিতে গিয়ে আবার বিরক্ত করে বসবেননা যেন।

এই ছিলো ভালো শ্রোতা হওয়ার কিছু কার্যকরী উপায় যেগুলো অনুসরণ করে আপনারা আপনাদের শ্রবণ দক্ষতা বাড়িয়ে একজন ভালো শ্রোতা হতে পারবেন।

মনে রাখবেন, ভালো শ্রোতা হতে পারা একটি অসাধারণ গুণ যে গুণটির কদর সবাই করে থাকে। পাশাপাশি এটিও মনে রাখবেন, কোনো গুণ ই একদিনে অর্জন করা যায় না।

তাই ধীরে ধীরে ভালো শ্রোতা হওয়ার উপায়গুলো অনুসরণ করতে থাকুন, দেখবেন আপনি একদিন অবশ্যই একজন ভালো শ্রোতা হয়ে সকলের মন জয় করতে পারবেন।

প্রাসঙ্গিক লেখাসমূহ পড়ে দেখতে পারেন-

1 thought on “জেনে নিন ভালো শ্রোতা হওয়ার ১০টি কার্যকর উপায়”

  1. অনেক উপকারী একটি লেখা।
    আমি আপনার লেখা থেকে অনেক কিছুই নোট করে নিয়েছি।
    ভবিষ্যতে আপনি আপনার লেখা চালিয়ে যাবেন এই কামনা করছি।
    এমন একটি উপকারী লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

    Reply

Leave a Comment