ক্রিকেটের জানা-অজানা অদ্ভূত রেকর্ডসমূহ

বেশি রান, বেশি উইকেট, বেশি ম্যাচ সেরা, বেশি সেঞ্চুরি এসব গল্প প্রায় আমরা যারা খেলা অনুসরণ করি তারা প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু ক্রিকেট মাঠের এমন কিছু ঘটনা আছে যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়! যার বেশিরভাগই থেকে যায় অজানা। এরকম অনেক অজানা বিষয় বা রেকর্ড নিয়ে আজকে আলোচনা করব এই আর্টিকেলে।

তবে চলুন শুরু করা যাক।

গ্লেন ম্যাকগ্রার রানের চেয়ে তার আন্তর্জাতিক উইকেটের সংখ্যা বেশি। তার টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে মোট রান ৭৬১ এবং তার টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি মিলিয়ে মোট উইকেট শিকারের সংখ্যা ৯৪৯!

ভারত হচ্ছে একমাত্র দল যারা ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৫০+ চেস করেছে ৩ বার এবং প্রতিবারই বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করেছে।

বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরি করেও ম্যাচ হারা একমাত্র ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে।

বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ধোনি কখনওই এশিয়ার বাইরে সেঞ্চুরি করতে পারেনি, সেটা কোন ফরম্যাটেই না।

সাবেক নাম্বার ওয়ান ওয়ানডে বোলার সাঈদ আজমল কখনই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরষ্কার পাননি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ডি.আর.এস এর ব্যবহার শুরু হয় ২০০৮ সালে ভারত ও শ্রীলংকা সিরিজ দিয়ে। যেখানে প্রথম রিভিউতে আউট হন ভিরেন্দর শেহবাগ।

বর্তমান ক্রিকেটে ৩ ফরম্যাটে ১৫ জনের উপরে সেঞ্চুরি করা খেলোয়ার থাকলেও সর্ব প্রথম ৩ ফরম্যাটে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ক্রিস গেইল।

ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ টানা ৪ বার ম্যাচ সেরা পুরষ্কার

ক্রিকেট ইতিহাসের ওয়ানডে সংস্করণে সর্বোচ্চ টানা ৪ বার ম্যাচ সেরার পুরষ্কার অর্জন করেন ভারতের সৌরভ গাঙ্গুলী।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এখনও শ্রীলংকা কোন টেস্ট ম্যাচ জয় লাভ করেনি।

টেস্ট ক্রিকেটে টানা সর্বোচ্চ ২১টি মেডেন ওভারের রেকর্ড গড়েন ভারতের বাপু নাদকারনি। ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি এই রেকর্ড গড়েন তিনি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে টানা সর্বোচ্চ ৪টি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার সাঙ্গাকারা। ২০১৫ বিশ্বকাপে এই রেকর্ড গড়েন তিনি।

ইংল্যান্ডের জিম ল্যাকার একবার এক টেস্ট ম্যাচে এক ইনিংসে ১০ উইকেট সহ মোট ১৯টি উইকেট নেন।

অভিষেক হতে ক্যারিয়ার শেষ, এই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টেস্ট ম্যাচ খেলেছে টানা ৯৬টি।

ক্রিস গেইলের টেস্ট রেকর্ড: ১৪৪ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে গেইল হচ্ছে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম বলেই ছক্কা মেরেছেন। মজার ব্যাপার সোহাগ গাজীর প্রথম বলে ছয় মারা ম্যাচে তার বলেই আউট হন তিনি।

একবার শচীন টেন্ডুলকারের উইকেট পাওয়ার পর ব্রাড হগ শচীনের কাছে অটোগ্রাফ চান। শচীন অটোগ্রাফে লিখে দেন ‘তুমি আর কখনও আমার উইকেট পাবে না’ এবং সে তার ক্যারিয়ারে আর কখনও শচীনের উইকেট পাননি।

বিরাট কোহলি ২০১১ সালে একবার লিগ্যাল ডেলিভারি করার আগেই উইকেট পান। তার বল ছিল ওয়াইড। তাতে ধোনি স্ট্যাম্পিং করে আউট করেন কেভিন পিটারসেনকে। তাতে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে লিগ্যাল ডেলিভারি ছাড়া উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন বিরাট কোহলি।

ওয়ানডে ম্যাচ ড্র করার জন্য খেলা!

শুনে হাসি পাচ্ছে তাই না? হ্যা, এ রকম হাস্যকর কান্ডই ঘটিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটিং কিংবদন্তী সুনীল গাভাস্কার। ৬০ ওভারের বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে ভারতকে টার্গেট দেয়া হয় ৩৩৫ রানের। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারত ৬০ ওভারে সংগ্রহ করে ১৩২ রান। সুনীল গাভাস্কার সংগ্রহ করেন ৩৬ রান ১৭৪ বলে!

ম্যাচ শেষে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়- তারা এভাবে জয়ের জন্য ব্যাট না করে টেস্ট মেজাজে খেললো কেন তখন সুনীল গাভাস্কার জানান- সে ড্র করার উদ্দেশ্যে ব্যাট করেছে। সে ভেবেছে অপরাজিত থাকতে পারলে ম্যাচটি ড্র হবে! চিন্তা করা যায়? একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে মাঠে নেমেছেন, অথচ সাধারণ একটা নিয়মই তার জানা নেই!

টেস্টে সব পজিশনে খেলা একমাত্র ক্রিকেটার বেন স্টোকস যিনি ওপেনিং থেকে ১১ নাম্বার পর্যন্ত সব পজিশনে খেলেছেন।

ডি.আর.এস : ২০০৮ সালে টেস্ট সিরিজে বিশ্ব ক্রিকেট প্রথম পরিচিত হয় রিভিউ এর সাথে। সর্ব প্রথম রিভিউ নেন হারভজন সিং এবং সর্ব প্রথম এই সিদ্ধান্তে আউট হন শেহবাগ।

ভারতের এক অনন্য কীর্তির গল্প শুনবেন?

ভারত হলো ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র দল যারা ৬০ ওভার বিশ্বকাপ, ৫০ ওভার বিশ্বকাপ ও ২০ ওভারের বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস ট্রফি টুর্নামেন্ট জিতেছে। জেনে রাখা ভালো, ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত বিশ্বকাপ হতো ৬০ ওভারে। ভারত শেষ দল হিসেবে ৬০ ওভারের বিশ্বকাপ জয় করে।

গ্রায়েম স্মিথ হচ্ছে একমাত্র অধিনায়ক যিনি টেস্ট ও ওয়ানডে, ২ ফরম্যাটেই ১০০+ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১০৯টি টেস্ট ও ১৫০টি ওয়ানডে ম্যাচে নেতৃত্ব দেন তিনি।

ডি ভিলিয়ার্সের ৩১ বলের সেঞ্চুরির গল্প সবাই জানি। কিন্তু আমরা কি জানি, সেদিন ডি ভিলিয়ার্সের এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হয়ত আমাদের বঞ্চিত করত এরকম এক ইনিংস দেখা থেকে। সেদিন রুশো আউট হওয়ার পর ডি ভিলিয়ার্স চেয়েছিলেন ডেভিড মিলার মাঠে যাক কিন্তু কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোর পিড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামতে বাধ্য হন এবি। চিন্তা করুন সেদিন যদি তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতো কোচ তবে আমাদের ভাগ্যে এরকম একটা ইনিংস জুটতো কিনা!

আপনি জানেন কি, ওয়ানডে ক্রিকেটে ১ ওভারে ৩০ বা তারও বেশি রান অনেক ব্যাটসম্যান নিলেও একমাত্র এবি ডি ভিলিয়ার্স ৩ বার এক ওভারে ৩০+ রান নিয়েছেন!

টেস্ট ক্রিকেটে সর্বোচ্চ গড় ডন ব্রাডম্যানের।

অথচ তার প্রথম ও শেষ টেস্ট ইনিংসে রানের সংখ্যা ০!

ক্রিকেট ইতিহাসে রিকি পন্টিং হচ্ছেন একমাত্র ক্রিকেটার যিনি নিজের শততম টেস্টের ২ ইনিংসেই ১০০ রানের ইনিংস খেলেছেন।

ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩৮ ওভার বা তার পরে ব্যাট করতে নেমে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি করেছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স! মনে আছে কবে? যেদিন ৩১ বলে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি আসে তার ব্যাট হতে, ৪৪ বলে ১৪৯ রান করেন সেদিন।

অ্যালেক্স স্টুয়ার্টের নাম শুনেছেন? তিনি ইংল্যান্ডের সাবেক লিজেন্ডারি উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। তার জন্ম তারিখ ১৯৬৩ সালের ৮ এপ্রিল। এই তারিখ আমরা কিভাবে লিখবো? অবশ্যই ৮.৪.৬৩!

তার জন্ম তারিখের বিশেষত্ব কি? টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ঠিক ৮৪৬৩ রানই করেছেন!

২০১১ সালে দক্ষিন আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে ম্যাচ চলছিল দক্ষিন আফ্রিকার মাঠে। ৫ম দিন ছিল ১১ নভেম্বর। ম্যাচের শেষ দিনে ঠিক সকাল ১১.১১ মিনিটে দক্ষিন আফ্রিকার প্রয়োজন ছিল ঠিক ১১১ রান!

ব্যাপারটা অবশ্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার কারন? সব জায়গায় ১ এর ছড়াছড়ি! ১১ মাস, ১১ তারিখ, ১১ সাল, ১১.১১ সময় সাথে রানেরও দরকার ১১১! এরকম ব্যাপার আর কখনও ঘটবে? মনে হয় না!

ভারতের শেষ ৩ জন নিয়মিত অধিনায়ক অধিনায়ক হচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, এম এস ধোনি এবং বিরাট কোহলি। ৩ জনের মধ্যে একটা অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে। ৩ জনেরই ওয়ানডে সর্বোচ্চ রান ১৮৩!

টেস্ট ক্রিকেটে ড্যানিস লিলি ছিল ফাস্টেস্ট বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেট নেয়া ক্রিকেটার। ৩০০ উইকেট নিতে তার ম্যাচ লাগে ৫৬টি টেস্ট। সেদিন ছিল ২৭ নভেম্বর ১৯৮৯ সাল।

তার এই রেকর্ড ভেঙে দ্রুততম ৩০০ টেস্ট উইকেট নেন ভারতের রবিচন্দ্র অশ্বিন, যার ম্যাচের দরকার হয় ৫৪ টি। এখানে মজার বিষয় কি জানেন? রেকর্ড গড়ার দিনও ছিল ২৭ নভেম্বর!

শচীন টেন্ডুলকার প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওডিয়াই ডাবল সেঞ্চুরি করেন ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সালে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে।

ক্রিস গেইল প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ওডিয়াই ডাবল সেঞ্চুরি করেন ঠিক ৫ বছর পর ২০১৫ সালে সেই ২৪ ফেব্রুয়ারিতেই! (কো-ইন্সিডেন্স!)

অবসর নেননি, এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে মাত্র ২ জন ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে ৫ দিনের প্রতিদিন ব্যাট করেছে। তারা হলেন ভারতের চেতেশ্বর পুজারা ও ইংল্যান্ডের রোরি বার্নস।

পড়ে ভালো লাগতে পারে এমন কিছু লেখা-

  • বেলা গেটম্যানের অভিশাপ
    আচ্ছা আপনি ভাগ্যে বিশ্বাস করেন? কিংবা অভিশাপে? মনে করুন কেউ একজন আপনাকে একটা অভিশাপ দিলো। সেটা আপনার জীবনে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে! ভেবে দেখুন তো, কেমন লাগবে?
  • ক্রিকেটের জানা-অজানা অদ্ভূত রেকর্ডসমূহ
    বেশি রান, বেশি উইকেট, বেশি ম্যাচ সেরা, বেশি সেঞ্চুরি এসব গল্প প্রায় আমরা যারা খেলা অনুসরণ করি তারা প্রত্যেকেই জানি। কিন্তু ক্রিকেট মাঠের এমন কিছু ঘটনা আছে যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়! যার বেশিরভাগই থেকে যায় অজানা। এরকম অনেক অজানা বিষয় বা রেকর্ড নিয়ে আজকে আলোচনা করব এই আর্টিকেলে। তবে চলুন শুরু করা যাক। গ্লেন ম্যাকগ্রার … Read more
  • ইতিহাসের সেরা অল-রাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস
    সম্ভবত তিনি জন্মেছিলেন ভুল দেশে, কিংবা তাকে নিয়ে মানুষের চর্চা হয়েছিল কম। তিনি জ্যাক ক্যালিস, তিনি আফ্রিকান ক্রিকেট লিজেন্ড।
  • ক্রিকেট খেলার অতীত ও বর্তমান
    যতদূর জানা যায়, ক্রিকেট খেলাটির যাত্রা ১৫৯৮ সালে শুরু হয়েছিল বলে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেটি অনুসারে ১৫৫০ সালের দিকেও খেলাটি প্রচলিত ছিল। কিন্তু ক্রিকেটের আসল উৎপত্তি কবে, কোথায় হয়েছিল, তা এখনও এক রহস্য। তবে বেশিরভাগ মতই বলছে ক্রিকেটের জন্ম হয় ইংল্যান্ডে। মোটামুটি দৃঢ়ভাবেই বলা যায় যে, ১৫৫০ সালের আগেও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট, সাসেক্স … Read more
  • এই প্রজন্মের সেরা ক্রিকেটার বিরাট কোহলি
    বর্তমান বিশ্বের সেরা ফুটবলার কে? কেউ বলবে মেসি কেউবা রোনালদো! কিন্তু যদি প্রশ্ন টা হয় ক্রিকেটে, কে বিশ্বসেরা? তাতে মনে হয়না খুব একটা দ্বিমত আসবে বিরাট কোহলির নাম নিয়ে। আচরণের জন্য তাকে অনেকে পছন্দ না করলেও ক্রিকেটার হিসেবে তিনি যে সেরা তাতে কারোরই সন্দেহ থাকার কথা নয়, উচিত নয়।

Leave a Comment