যেখানে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা নামক মহামারী, আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রাণপনে চাইছে সুস্থ হয়ে ফিরতে, সেখানে নিজ দেশে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যা। অর্থাৎ, করোনার পাশাপাশি আনুপাতিক হারে বেড়েছে আত্মহত্যা করার প্রবণতা।
বাংলাদেশে করোনার সূচনা ঘটে ২০২০ এর শুরুর দিকে। এবং মার্চ মাসেই সকল কর্মপীঠ অনির্দিষ্ঠকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং লকডাউন জারি হয়। এতে ঘরের ভেতর একা থাকতে থাকতে অনেকের মধ্যে চেপে বসেছিলো অবসাদ। চার দেওয়ালের মাঝখানে এতটাই হাপিয়ে উঠেছিলো যে, শেষমেশ অনেকেই বেছে নিয়েছে আত্মহত্যার পথ।
যদিও বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, করোনাই একমাত্র কারণ নয়। আরও নানাবিধ কারণ রয়েছে আত্মহত্যার পিছনে।
সম্প্রতি অবাক করা এক তথ্য পাওয়া গেছে। আর তা হলো, মহামারি করোনা ভাইরাসে জাপানে গত বছরের অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজার ৮৭ জন।
কিন্তু তার আগের বছরেও জাপানে আত্মহত্যা করেছেন তার চেয়েও বেশি মানুষ এবং এ সংখ্যা ২ হাজার ১৫৩!
জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ সংস্থার পক্ষ থেকে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় অনেকে অর্থনৈতিক সংকটের জন্যও আত্মহত্যার কথা নাকি ভাবছে।
লকডাউন এর সময়কাল যতটা বাড়তে থাকলো ততই যেনো বাড়লো মানুষের মধ্যে ডিপ্রেশন। অনলাইন, পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েও প্রত্যেকটা মানুষ সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারে নি। আর শুরু হয় একটার পর একটা আত্মহত্যা এবং এই তালিকায় বেশির ভাগই ছিলো ১৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সী মানুষ।
২০১৭ সালের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬৬৫২ জন গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ৩০৩৬ জন বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে। এবং ২৭ জন নিজেদেরকে আগুণে পুড়িয়ে আত্মহত্যা করেছে।
তাছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য স্বংস্থা আশঙ্কা করেছিলেন যে ২০২০ এ আত্মহত্যার পরিমাণ প্রতি ২০ সেকেন্ডে একজনে গিয়ে পৌঁছবে। বাংলাদেশে প্রতিবছরই ১১০০০ মানুষ আত্মহত্যা করছে। গবেষণায় জানা যায়, দিনে ২৮ জন এই পথ বেছে নেয়। যার বেশির ভাগই কিশোর – কিশোরী।
সাইকোলজিক্যাল তথ্য অনুযায়ী দুটো কারণে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে এখন। কারণ দুটো হলো- সাইবার বুলিং এবং ডিপ্রেশন।
পৃথিবীতে প্রতিবছর এই যুগে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়। আমি নিজেও সাইবার বুলিং এর স্বীকার হয়েছি। কিন্তু হাল ছেড়ে দেই নি, ছেড়ে দিলে চলবে না।
আত্মহত্যা কোনো কিছুরই সমাধান নয়, তা আমিত্ব দিয়ে বুঝেছি। তবুও এই কারণেই প্রতিনিয়ত মানুষ তলিয়ে যাচ্ছে মৃত্যু নামক অতলে।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে ৪.৪ শতাংশ মানুষ বর্তমানে হতাশায় ভোগে। এর মানে হলো ৭০০ কোটি মানুষের মধ্যে ৬০ কোটি মানুষই হতাশাগ্রস্ত। তার কারণ গুলো হলো পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক সমস্যা, প্রভৃতি। এছাড়া সামাজিক অবক্ষয়ও এক্ষেত্রে অতোপ্রোতভাবে জড়িত।
কিন্তু করোনা কালীন সময়গুলোতে বেশির ভাগ আত্মহত্যার পিছনের ঘটনা জানতে গেলেই শোনা যায় সেগুলো ডিপ্রেশন থেকে ছিলো। ডিপ্রেশন ঠিক যেসব কারণে হয়, সেগুলোকে মেন্টাল সাপোর্ট এর অভাব এর জায়গায় ফেলা যেতে পারে।
ডিপ্রেশন একটি ক্ষতিকর আবেগজনিত বিষয়, যাতে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা ভুগে চলছে অবিরত। পরিবারের সদস্যদের উচিত সন্তানকে সময় দেয়া। যেটুকু সময় সে অনলাইন ঘাটতে ব্যয় করছে তার থেকে অর্ধেক সময় যেনো পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে কাটাতে পারে।
একদিকে শহরের পরিবার বলতেই একক পরিবার। যেখানে মা বাবা ব্যস্ত থাকে নিজ কর্মসংস্থানে এবং বাড়ি ফিরেও বেশির ভাগ পরিবারেই অশান্তি ছাপ থাকে। সন্তানদের মানসিক বিকৃতি ঘটে এতে। এই কারণ গুলোও একটি মানুষের ডিপ্রেশনের জন্য দায়ী। তারপর বেছে নেয় তারা চিরসুখ হিসেবে আত্মহত্যার পথ।
মানুষ হিসেবে মানুষকে মূল্য দেয়া প্রয়োজন আমাদের। পরিবারের সদস্য হিসেবে কে কেমন আছে! সবটাই খোঁজ রাখার দায়িত্বটা আমাদেরই। এতেও কমে আসতে পারে আত্মহত্যার প্রবণতা।
প্রাসঙ্গিক লেখা-