ওয়েবসাইটে ফ্রি ট্রাফিক পাওয়ার ৮টি উপায়

ওয়েব ট্রাফিক দুই প্রকারের হয়। পেইড ট্রাফিক এবং ফ্রি ট্রাফিক। ওয়েবমাস্টার টাকা খরচের মাধ্যমে, যেমন- বিজ্ঞাপন, ওয়েবসাইট ব্যানার ইত্যাদির বদৌলতে যে ট্রাফিক তার সাইটে নিয়ে আসেন সেটি পেইড ট্রাফিক। অন্যদিকে টাকা খরচ না করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এবং অন্যান্য কৌশলী প্রক্রিয়ায় যে ট্রাফিককে স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে আপনার সাইটে নিয়ে আসছেন সেটিই ফ্রি ট্রাফিক। এ লেখাতে ওয়েবসাইটে ফ্রি ট্রাফিক পাওয়ার ৮টি উপায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

অনলাইন জগতে ব্লগ তৈরি করে সফল হতে চাইলে উচ্চ মানসম্পন্ন ফ্রি ট্রাফিক আপনার সাইটে নিয়ে আসা অনিবার্য। তবে কাজটি মোটেও সহজ নয়। আপনাকে বেশ কিছু ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। অনেকগুলো জরুরী উপাদান রয়েছে যেগুলির সমন্বয় সাধন প্রয়োজন।

ফ্রি ট্রাফিক একটি মার্কেটিং কার্যক্রমকে বিবিধ প্রকারে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে যদি সাথে পেইড ট্রাফিক, অন্যান্য মিডিয়া কৌশল, এসবও থাকে। ফ্রি ট্রাফিকের বিষয়ে সফল হলে আপনার পেইড ট্রাফিক কার্যক্রমের সমস্ত পয়সাও উসুল করে নিতে পারবেন বলে আশা করা যায়।

ওয়েবসাইটে ফ্রি ভিজিটর পাওয়ার উপায়

ফ্রি ট্রাফিক পাওয়া বা ফ্রি ভিজিটর পাওয়ার কৌশলগুলোঃ যেমন- এসইও করা, সাইটের কন্টেন্টের পরিমাণ ও মান দুটোরই উন্নয়ন ঘটানো, সাইট ব্যবহারকারীর সাইট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করা, ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারলে অনলাইনে আপনার পণ্যের বিক্রী বাড়বে। সার্চ ইঞ্জিনে র্যাঙ্কে এগিয়ে যাবেন। এবং আপনার ট্রাফিকের প্রবাহে উন্নতি লক্ষ্য করবেন।

ওয়েবসাইটে ফ্রী ট্রাফিক পাওয়া জন্য বেশ কিছু উপাদানের সমন্বয় প্রয়োজন।

উদ্যোক্তা হিসেবে একজন ওয়েবমাস্টারকে এই বিষয়গুলোর পেছনে বিনিয়োগ করতে হবে।

আরও পড়ুন-

কর্মোদ্যগী একটি কর্মী বাহিনী ( আইটি ও ম্যানেজমেন্ট টিম)

ওয়েবসাইটের সাফল্যের জন্য আপনার একটি নিবেদিত প্রাণ কর্মীর দল প্রয়োজন। ছোটখাট শখের ব্লগ আপনি হয়তো একাই সামলাতে পারবেন। কিন্তু পূর্ণকালীন ওয়েবমাস্টার যারা হতে চান তাদের একটি ছোট হলেও কর্মী বাহিনীর প্রয়োজন। বিশেষ করে সহযোগিতার মনোভাব সম্পন্ন একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ এবং ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট টীম থাকতে হবে আপনার। যেন, সবচেয়ে কম সময়ের ব্যবধানে অপটিমাইজেশানের বিভিন্ন কাজগুলি সম্পন্ন করা যায়। একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদের অভাবে আপনার ওয়েবসাইট পিছিয়ে পড়তে পারে অন্যদের তুলনায়।

এসইও সম্পর্কিত বিভিন্ন পরিবর্তনগুলোর সাপেক্ষে আপনার কর্মীবাহিনী যত দ্রুত ব্যাবস্থা নিবে, আপনার সাইটের পারফরম্যান্সও ততই ভালো হব। ফলে ফ্রি ট্রাফিকও পাওয়া যাবে বেশী।

এসইও বিশেষজ্ঞ (SEO Expert)

একজন শক্তিশালী এসইও বিশেষজ্ঞ, ওয়েবসাইট মালিকের জন্য আবশ্যক। বিভিন্ন ধরণের এসইও এক্সপার্টরা রয়েছেন। কেউ কেউ শুধু কারিগরি কাজটি পারেন। অন্য আর কিছুই বোঝেন না। আবার কিছু এসইও বিশেষজ্ঞ আছেন যারা কন্টেন্ট বিষয়েও যথেষ্ট জ্ঞান রাখেন।

আপনার এমন একজন এসইও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন, যিনি কারিগরি বিষয়াদির বাইরে অন্য বিষয়গুলোও মোটামুটি বুঝতে পারেন। সাইটের কন্টেন্ট বিষয়ে না বুঝলে তিনি আপনাকে কখনই ঠিকমত সাহায্য করতে পারবেন না।

একজন এসইও এক্সপার্টের কাছে থেকে নূন্যতম যে বিষয়গুলো আশা করতে পারেন-

১। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের কাজগুলোতে তিনি দক্ষ হবেন।
২। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট, ই-কমার্স সাইটের সর্বপ্রকার ব্যবহার জানবেন।
৩। অনলাইন প্রযুক্তিতে নতুন কি আসছে, না আসছে সেসব খবর রাখবেন।

ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বিশেষজ্ঞ (User Experience Expert)

আপনার সাইটের ভিজিটরদের চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা উপহার দিতে চাইলে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স বা আপনার সাইটে আগমনকারীর সাইট ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যদি ভালো না হয় সেটি আপনার ব্যবসার জন্য দুঃসংবাদ।

ওয়েবের দুনিয়া প্রতিনিয়তই পাল্টে যাচ্ছে। ডিভাইস ভিত্তিক ব্যবসা থেকে মানুষ এখন ভয়েস বা কনভার্সেশানাল কমার্সের দিকে ঝুঁকছে। সেই অনুযায়ী অনলাইনের প্রতি ইউজারদের আশা আকাঙ্ক্ষাতেও পরিবর্তন আসছে। এই বিষয়গুলোকে ঠিকমত বুঝতে পারেন এমন একজন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ‌এক্সপার্টকে আপনার প্রয়োজন।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পরিবর্তনশীল রুচি ও আকাঙ্ক্ষার সাথে তিনিই আপনার সাইটকে প্রাসঙ্গিক রাখতে পারেন।

নিয়মিত ও নিরন্তর কন্টেন্ট নির্মাণ

কন্টেন্ট আপনার সাইটের প্রাণ। সুতরাং সাইট ভালো রাখতে হলে সবসময় নতুন ও প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট আপনাকে যুগিয়ে যেতে হবে। আর সেজন্য একটি কন্টেন্ট প্রডাকশান টীম ছাড়া চলবেই না। একটি শক্তিশালী কন্টেন্ট প্রডাকশান টীম, যারা দ্রুতগতিতে কার্যকর কন্টেন্ট তৈরি করতে পারে, আপানার সাইটে অর্গানিক বা ফ্রি ট্রাফিক নিয়ে আসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।

ফ্রি ট্রাফিক বিষয়টি অনেকাংশেই আসলে আপনার কন্টেন্টের ওপরই নির্ভর করে। কন্টেন্টকে ভাবতে পারেন একটি বিশাল মাছ ধরার জাল। জাল যত বড় হয়, মাছও ততই বেশী ধরতে পারবেন।

সংবাদ পরিবেশনকারী সাইটগুলোর কথাই ধরুন। তারা বিপুল পরিমাণে ফ্রি ট্রাফিক পেয়ে থাকেন। এর কারণ তারা প্রায় সারাক্ষণই নতুন কন্টেন্ট সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি, সেই কন্টেন্টকে মানুষের কাছে হাজির করার মত যথেষ্ট পরিমাণ কৌশলও তাদের রয়েছে। এসবের সুসমন্বয়ে, কন্টেন্টের প্রাচুর্যে পূর্ণ বড় বড় সাইটগুলো অনলাইনের সমস্ত ট্রাফিককে নিয়ে নেন। এজনই কন্টেন্ট প্রডাকশান টীম প্রয়োজন।

তথ্য বিশ্লেষক বা এনালাইটিক্স বিশেষজ্ঞ (Analytics Expert)

ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে তথ্য বিশ্লেষণ দিনকে দিন আরও গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠছে। তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে কন্টেন্ট নির্মাণ করে থাকেন আধুনিক ওয়েবমাস্টাররা। ওয়েবসাইট বিষয়ে তারা যে উদ্যোগই নেন তার পেছনে তথ্যগত কারণ থাকবেই।

একজন অনলাইন ব্যবসায়ী তথ্য-উপাত্ত-প্রমাণ ব্যাতীত তার পারফরম্যান্সের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি পাবেন না। তাই ওয়েবসাইটে ফ্রি ট্র্যাফিক পেতে চাইলে, এসব তথ্য বিশ্লেষণে সক্ষম এমন একজন বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন পড়বে আপনার।

আপনার সাইটের ভিজিটর কোথা থেকে আসছে, কোন সার্চ টার্মের জন্য আপনার সাইটে আসে মানুষ, কি ধরণের ডিভাইস তারা ব্যবহার করছে এসব বিষয় এনালাইটিক্স বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনা করবেন এবং সিদ্ধান্ত দিবেন।

আপনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের জন্য যে উদ্যোগগুলো নিয়েছেন, সেগুলো কতটুকু কাজ করছে বুঝতে হলেও আপনার তথ্য বিশ্লেষণ করতে হবে। সুতরাং, একজন এনালাইটিক্স বিশেষজ্ঞ যথেষ্টই জরুরী। অন্যথায়, তথ্য উপাত্তের বিশাল সমুদ্রে আপনি দিকভ্রান্ত জাহাজের মত ঘুরপাক খাবেন।

প্রসেস ম্যানেজমেন্ট (প্রক্রিয়া ব্যবস্থাপনা) টীম

প্রসেস ম্যানেজমেন্টের ওপরই বিভিন্ন মার্কেটিং প্রকল্পগুলো টিকে থাকে বা ধ্বংস হয়ে যায়। বর্তমান দিনে, মার্কেটিং প্রকল্পগুলো অনেক বেশী জটিল এবং কারিগরি রূপ ধারণ করেছে। খুঁটিনাটিতে সমৃদ্ধ পরিকল্পনা নির্মাণ, যোগাযোগ এবং প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপগুলো ঠিকভাবে সম্পন্ন না করলে আপনি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। সুতরাং আপনার প্রয়োজন নিবেদিত প্রাণ এবং দক্ষ একদল “প্রসেস ম্যানেজার”।

এখন ওপরের বিনিয়োগগুলো যদি আপনি এই মুহুর্তে করতে না পারেন তাহলে আপাতঃ সময়ের জন্য এসইও এবং কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের দিকে মনযোগী থাকুন। যদিও, আপনার সকল পরিশ্রম সত্ত্বেও, উল্লেখিত উপাদানগুলোর অভাবে, ফলাফল পেতে দেরী হবেই। লোক নিয়োগ দেয়ার মত টাকা না থাকলে, আপনি “পেইড মিডিয়া”র পেছনে কিছু বেশী খরচ করতে পারেন।

অর্থাৎ ফ্রি ট্রাফিকের বদলে পেইড ট্রাফিকের প্রতিই মনযোগী হন। পেইড ট্রাফিকে খরচ হলেও, একটি ক্ষণকালের এটি আপনার ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে পারবে। তবে, প্রয়োজনীয় এই পদক্ষেপগুলো পূরণের উপায় আপনাকে খুঁজতেই হবে। পাশাপাশি ফ্রি ট্রাফিকের জন্য আরও যে দুটো কাজ করতে পারেন।

এসইও শিখুন (Learn SEO Properly)

শুনতে বিস্ময়কর মনে হলেও, এসইও কিন্তু কৌশলগত পর্যায় থেকে তেমন জটিল কোন বিষয় নয়। সার্চ ইঞ্জিন কি ধরণের দর্শনে বিশ্বাস করে সেটি বুঝলেই তাদের কর্ম প্রক্রিয়াও বোঝা সহজ হয়ে যায়।

গুগল তার নিজের সমন্ধে বলেছে-

“ গুগলের মিশন হল পৃথিবীর সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্যকে এমনভাবে সাজানো ও গোছানো যেন মানুষ সহজেই সেগুলোর নাগাল পেতে পারে।”

এই উদ্ধৃতিতেই গুগলের উদ্দেশ্য পরিষ্কার। এই কথাটিকে যদি আরেকটু বিশ্লেষণ করে দেখি-

  • সাজানোর কাজটি করে গুগলের এলগরিদাম। এটিই বিভিন্ন কন্টেন্টকে সাজিয়ে সার্চ রেজাল্টে একটি র্যাঙ্ক প্রদান করে।
  • মানুষের নাগালে তথ্য এনে দেয়ার সাথে ‘সার্চ ক্রলার’গুলো সম্পর্কিত। এগুলি গুগলের রোবট। নতুন ওয়েবসাইট আবিষ্কার করার জন্য এরা ইন্টারনেট চষে বেড়ায়। তারপর লিংকের মাধ্যমে ইউজারদেরকে সেই পেজগুলোর সন্ধান দেয়।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য বলতে যেই কন্টেন্টকে তার বিষয়ের সাপেক্ষে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে গুগলের কাছে।

সুতরাং এসইও আর কিছুই নয়, এই শর্তগুলো পূরণ করা মাত্র।

জেনে নিন সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

অনলাইনে যেহেতু ব্যবসা করছেন, সার্চ ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে সেটি জেনে রাখা জরুরী। সার্চ ইঞ্জিনগুলো সবসময়ই অনলাইনে নতুন তথ্য খুঁজে বেড়ায়। কাজটি করার জন্য তাদের নিজস্ব সফটওয়্যার প্রোগ্রাম আছে। এই প্রোগ্রামগুলি ওয়েবকে “ ক্রল” করে বেড়ায়। তাদের স্পাইডার্স বা বট নামেও ডাকা হয়। এরা সাইট থেকে সাইটে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে।

একটি র্যাঙ্কিং এলগরিদাম ব্যবহার করে তারা নির্ধারণ করে কোন সাইটগুলোকে র্যাঙ্ক প্রদান করবে এবং কোন ক্রমানুসারে। ইউজারদেরকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং আসলেই তাদের কাজে আসবে এমন কন্টেন্ট প্রদানের জন্যই এ কাজটি করা হয়। একটি ব্রান্ড বা ওয়েবসাইট হিসেবে আপনি যদি এই কাজটি না করতে পারেন, অর্থাৎ এরকম কন্টেন্ট তৈরী করতে না পারেন, তাহলে সম্ভাবনা প্রবল যে সার্চ ইঞ্জিনের পাতায় আপনাকে দেখা যাবে না।

সেক্ষেত্রে, আপনি নিজে এসইও শেখা শুরু করুন বা একজন এসইও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিন। যেসব ওয়েবমাষ্টার এসইও শিখতে চাচ্ছে তাদের জন্য গুগলের একটি “স্টার্টার গাইড” ও রয়েছে। তবে অর্থ সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই একজন ‌এস-ইও এক্সপার্ট নিয়োগ দেয়া উচিত, যিনি এই বিষয়গুলো ভালোমত বোঝেন এবং কাজের অভিজ্ঞতা রাখেন।

ফ্রি অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়ার জন্য এই বিষয়গুলো লাগবেই আপনার। যদি বিনিয়োগ করার মত টাকা এই মুহুর্তে না-ও থাকে, তারপরও পরিকল্পনায় রাখুন সবসময়। পূর্ণকালীন এবং পেশাদার একজন ওয়েবমাস্টারকে আজ হোক কি কাল, এই কাজগুলো করতেই হবে।

লিখেছেন : সালেহ মুহাম্মাদ

প্রাসঙ্গিক লেখা-

Leave a Comment