পরের বার যখন গুগলে যাবেন, কোন কিছু সার্চ করবেন, কয়েকটি বিষয় একটু লক্ষ্য করে দেখতে পারেন। ব্যবহারকারীর, অর্থাৎ আপনার জন্য কি কি করার চেষ্টা করছে গুগল?
গুগল তিনটি কাজ করছে-
১। আপনার প্রশ্নগুলোর যথাসম্ভব দ্রুত উত্তর দিচ্ছে।
২। সে উত্তরগুলো দিচ্ছে সর্বোচ্চ আত্নবিশ্বাসের সাথে।
৩। গুগল চেষ্টা করছে সবচেয়ে স্পষ্ট এবং পরিষ্কার উত্তর প্রদানের।
গুগল চায় না তার ব্যবহারকারী বিড়ম্বনায় পড়ুক। সে চায় না একই জিনিস তাদেরকে বারবার সার্চ করতে হোক। এবং গুগল চায় না শত হাজার সার্চ-রেজাল্ট ঘেঁটে নিজের উত্তরটি বের করুক তার ব্যবহারকারী। মোদ্দা কথা, গুগল তার ব্যবহারকারীর জীবনকে আরও সহজ করতে চায়।
সেই উদ্দেশ্যে , গুগল তার সার্চ-রেজাল্টগুলোকে বিভিন্ন রূপে হাজির করে। ব্যবহারকারী তার সুবিধা এবং অভিরুচি অনুযায়ী বেছে নেয়ার সুযোগ পান। সার্চকারীর জিজ্ঞাসার বিপরীতে গুগল দেখায় – বিভিন্ন ব্লগের আর্টিকেল, রেফারেন্স সাইট, পত্রিকার প্রতিবেদন, বইয়ের নাম, ভিডিও ব্লগ ইত্যাদি।
তবে, আমরা তো জানিই, ব্যবহারকারী কি চান। তারা চান প্রশ্নের উত্তর। এবং সেই উত্তরগুলো পেতে হবে সম্ভবপর সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের মাঝে। সুতরাং আপনার ওয়েবসাইট যদি সার্চ রেজাল্টগুলোর শীর্ষে থাকে, তাহলে ব্যবহারকারীরা যে ওখান থেকেই নিজেদের জিজ্ঞাসা মেটাবেন – এটি প্রায় নিশ্চিত হয়েই বলা যায়।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গুগলের প্রথম পাতার শীর্ষে যে তিনটি সার্চ রেজাল্ট দেখা যায় (যেগুলো বিজ্ঞাপন নয় এমন), সেগুলোই সমস্ত সার্চ-ইঞ্জিনের সত্তর শতাংশ ক্লিক পেয়ে থাকে। এই অবস্থানটি অর্জনের জন্য সাইটগুলোকে বিভিন্ন পদ্ধতি ও কৌশলের অনুসরণ করতে হয়।
সামগ্রিকভাবে যাকে বলে, সার্চ-ইঞ্জিন-অপটিমাইজেশান।
সরল ভাবে বললে, সার্চ-ইঞ্জিন-অপ্টিমাইজেশান হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড অথবা শব্দগুচ্ছের সাপেক্ষে আপনার সাইটকে সবচেয়ে বেশী প্রাসঙ্গিক করে তোলা। আপনি যখন গুগলে ভিজিট করেন এবং কোন কিছুর অনুসন্ধান করেন, সার্চ বাক্সে, আপনি হয়তো একটি মাত্র শব্দ বা অনেকগুলি শব্দ মিলিয়ে একটি শব্দগুচ্ছ লিখে থাকেন। এই শব্দগুলোকেই বলে সার্চ-টার্ম বা কিওয়ার্ড।
আরও পড়ুন-
আপনাকে নিজের সাইট এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন গুগলের কাছে মনে হয় – তার ব্যবহারকারীর টাইপ করা শব্দ বা শব্দমালার বিপরীতে আপনার সাইটের ( আবার সাইটের কোন পোস্ট, আর্টিকেল) চেয়ে ভাল কিছু ইন্টারনেটে নেই।
কিওয়ার্ড বিষয়টি অনেকেই স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারেন না। স্বল্প কথায় ব্যাখ্যার চেষ্টা করছি। আপনার ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেজের কন্টেন্টকে বর্ণণা করতে পারে এমন যেকোন শব্দ বা শব্দগুচ্ছই কিওয়ার্ড হিসেবে বিবেচিত।
একজন ব্যবহারকারী গুগলের সার্চ বাক্সে যা লিখেন সেগুলোই কিওয়ার্ড। সফল ওয়েবমাস্টারদের কিওয়ার্ড বিষয়ে দক্ষ হতেই হবে। সঠিক কিওয়ার্ড বেছে না নিলে আপনার সাইট গুগলে র্যাঙ্ক করতে পারবে না। পরবর্তী কোন লেখায় কি-ওয়ার্ড রিসার্চ , কী-ওয়ার্ড পরিকল্পনার বিষয়গুলোকে সবিস্তারে ব্যখ্যা করা হবে।
গুগল-র্যাঙ্কিঙের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ধূর্ত ওয়েবমাস্টাদের পরাজয়ের গল্প
“গুগলে কিভাবে র্যাঙ্ক করা যায়?” এই প্রশ্নটি সার্চ করলেই অনেক ধরণের “টিপস এন্ড ট্রিক্সের”র তালিকা সার্চ রেজাল্টে পাবেন। ইংলিশ, বাংলা দুটোতেই। সমস্যা হচ্ছে এরকম একটা তালিকা করা আসলে সম্ভব নয়। করলেও সেরকম তালিকার আয়ু ছয় মাসের বেশী হবে না। কারণ গুগল সময়ের সাথে আরও বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে। সে নিরন্তর ওয়েবমাস্টারদের নতুন চালাকিগুলো ধরে ফেলছে।
মেধা, পরিশ্রম, মৌলিকতা এবং যথার্থতাকে শনাক্তকরণের প্রচেষ্টা প্রবল হচ্ছে গুগলের। টিপস-এন্ড-ট্রিক্স জাতীয় পরামর্শে বিভ্রান্ত হতে না চাইলে গুগল-র্যাঙ্কিঙের ইতিহাসটি জেনে রাখা যেতে পারে। চালাকি কেন লং-রানে আপনার অনলাইন বিজনেসের জন্য ভাল না সেটি বুঝতে পারবেন।
গুগল বিভিন্ন সাইটকে কিভাবে র্যাঙ্ক করে?
সেই বিষয়টি সবসময় একরকম ছিল না। প্রতি বছরই পাল্টেছে। সামনের দিনে আরও পাল্টাবে। ২০১০ সাল পর্যন্ত গুগলের র্যাঙ্ক করা বেশ সহজ কাজ ছিল। ঐ সময়ে গুগলের এলগরিদম (যে জটিল সফটওয়্যার কোডটি নির্ধারণ করে দেয়, কোথায় র্যাঙ্ক পাবে একটি ওয়েবপেজ) মূলতঃ দুটি বিষয়ে ওপর নির্ভর করত-
১l ঐ ওয়েবপেজে যে কিওয়ার্ডগুলো রয়েছে।
২l অন্য পেজ থেকে যতগুলো লিংক ঐ ওয়েবপেজে নিয়ে আসে ব্যবহারকারীকে।
র্যাঙ্ক প্রদানের ক্ষেত্রে এ দু’টোই ছিল একমাত্র বিবেচ্য। এবং ওয়েবমাস্টাররাও বিষয়টা ভালোই অবগত ছিলেন।
এই দুটো বিষয়কেই ওয়েবসাইট মালিকদের পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দেখা গেল, একটু চতুর হলেই তারা এই দু’টি বিষয়ের ফায়দা লুটতে পারেন। সুতরাং, ওয়েবমাস্টাররাও আর দেরী করলেন না।
অনেক ওয়েবমাস্টারই তাদের সাইট সমন্ধীয় বিষয়গুলোকে খুব কৌশলের সাথে সাজাতে লাগলেন। একপ্রকার ধূর্ততার আশ্রয় নিতে শুরু করলেন তারা। ফলশ্রুতিতে, তাদের সাইটগুলোও SERPs বা সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ-গুলোতে ভাল অবস্থান পেতে শুরু করল।
ওয়েবসাইট মালিকদের চালাকিগুলোকে এভাবে বিবৃত করা যেতে পারে-
প্রথম চালাকিঃ যে কিওয়ার্ডের জন্য তিনি র্যাঙ্গ করতে চান সেটিকে শনাক্ত করতেন।
দ্বীতিয় চালাকিঃ এমন একটি পেজ বানাতেন যেটি সেই কী-ওয়ার্ড দিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ। যেন সার্চ ইঞ্জিনের কাছে মনে হয় ঐ কিওয়ার্ডের জন্য এর চেয়ে ভাল পেজ আর নেই।
এটা যে সময়ের কথা তখন কন্টেন্ট-কোয়ালিটি বা আপনার ব্লগ, পোস্ট, আর্টিকেলের মান , কার্যকারিতা, পাঠযোগ্যতা নিয়ে সার্চ-ইঞ্জিন মাথা ঘামাত না। এইচটিএমএল কোডের মাঝে যত জায়গায় পারা যেত তারা কীওয়ার্ড ভরে দিতেন। তখনকার দিনে এ চর্চাটির একটি নামও হয়েছিল- “কীওয়ার্ড-স্টাফিং”। কৌশলী ওয়েবমাস্টাররা কীওয়ার্ডটিকে,
- তাদের পেজের টাইটেলে,
- লেখার ভেতরে বা কন্টেন্টের বডিতে (প্রতি একশ শব্দে পাঁচ থেকে সাতবার, আরও বেশীও হতে পারে),
- ওপেনিং হেডারে বা একদম প্রথম হেডারে,
- “এএলটি ট্যাগ” বা একটি ওয়েবপেজে কোন ছবি বা অন্যবস্তুর বিকল্প বা এল্টারনেটিভ হিসেবে যে টেক্সট ব্যাবহার হয় তার ভেতরে অন্তর্ভুক্ত করে দিতেন।
- অনেক সময় খোদ ডোমেইন-নেমের ভেতরেও কী-ওয়ার্ড পুরে দেয়া হত। যতবার আপনি সার্চ-টার্মটিকে আপনার পেজের ভেতরে ঢুকাতে পারছেন, ততই লাভ আপনার।
তৃতীয় চালাকি : ভুলভাবে পেজের ব্যাংকলিংক তৈরি করা। অন্য ওয়েবসাইটগুলো আপনাকে ভালবেসে আপনার লিংক শেয়ার করে, সেটি এক জিনিস। কিন্তু এই ধূর্ত ওয়েবমাস্টাররা এই কাজটি করার জন্য রোবটই বানিয়ে ফেললেন। এই রোবটরা ওয়েবমাস্টারদের জন্য হাজার হাজার ব্যাকলিংক তৈরী করত। অন্তর্জাল জুড়ে অসংখ্য অকাজের পেজ রয়েছে। স্প্যামিং করা ও ইতোমধ্যেই আবর্জনাসংকুল এই পৃথিবীতে আবর্জনার সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নেই। ওয়েবমাস্টারদের রোবটরা গিয়ে এসব পেজে তাদের লিংক রেখে আসত। তাদের মনিবরা যে কী-ওয়ার্ড নির্বাচন করে দিয়েছিলেন, রোবটরা তাদের লিংক-টেক্সটে সেই কীওয়ার্ড ঢুকিয়ে দিত।
পড়ুন- ব্যাকলিংক কি? ব্যাকলিংক তৈরি করার উপায়
মূলতঃ এগুলোই ছিল তাদের সার্চ-ইঞ্জিন জয়ের কৌশল (এখনও অনেক টিপস-এন্ড-ট্রিকসে এসব পরামর্শ দেয়া থাকে)। এবং ঐ আমলে এই কৌশল কাজ করত বটে। এই অতি সহজ ফর্মুলা ব্যবহার করে আপনি আক্ষরিক অর্থেই যেকোন টার্মের জন্য র্যাঙ্ক করতে পারতেন।
ওয়েবমাস্টাররা তো মহাখুশি। যে কিওয়ার্ড ইচ্ছা, সেই কিওয়ার্ডের জন্য সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজগুলোতে তারা র্যাঙ্ক করতে পারছেন। আর তখন ইন্টারনেটের মোঘল আমল। ধরা যাক, আপনি গুগলের প্রথম পাতায় শীর্ষ দশে অবস্থান করছেন। তাহলে, আগামী তিনমাস আপনি ওখানেই থাকবেন। তিনমাস পর নতুন আপডেট আসার আগ পর্যন্ত এর কোন নড় চড় হবে না।
এই তখন অবস্থা। ধূর্ত ওয়েবমাস্টাররা জিতে গেছেন। গুগল হারিয়ে ফেলেছে নিয়ন্ত্রণ। কি ঘটছিল তাহলে বুঝতেই পারছেন নিশ্চয়ই। সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজগুলো, নানাবিধ আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করেছিল।
কোন দিশেহারা মানুষ হয়েতো উত্তর খুঁজতে গুগলে এসেছেন। এবং প্রবল মানসিক যন্ত্রণার সাথে লক্ষ্য করছেন, প্রথম পাতায় থাকা প্রতিটি ওয়েবপেজই একেকটি ধোঁকাবাজি। একটিও কাজের তথ্য নেই।
বিভিন্ন পেজ, তাদের ওয়েবমাস্টারদের নিয়োগকৃত স্প্যামিং রোবটগুলোর বদৌলতে র্যাঙ্ক করছিল। মেধা বা যথার্থতার কোন পাত্তাই ছিল না। আর তাতে নাম খারাপ হতে লাগল গুগলের। গুগল একটি সার্চ-ইঞ্জিন। সার্চ-ইঞ্জিন হিসেবে মানব সমাজের কাছে তার একটি দায়বদ্ধতা আছে।
সবচেয়ে ভাল, সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক এবং সবচেয়ে উঁচু মানের সার্চ-রেজাল্ট সে প্রদান করবে মানুষকে। কিন্তু ঐ ওয়েবমাস্টাররা বাস্তবে সেটি হতে দিচ্ছিলেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছিল শীর্ষ দশ নানান ধরণের অপ্রাসঙ্গিক, অনর্থক কন্টেন্ট দিয়ে পূর্ণ। সেগুলো সবই বিভিন্ন ধরণের স্প্যামিং-সাইট। ওয়েব-সার্ফারকে এই পেজগুলো মূল্যবান কিছুই দিতে পারছিল না।
গুগল তাদের এলগরিদমের প্রতি মনযোগী হল। সময়ের সাথে সেটিকে উন্নত করতে লাগল তারা। ফলে ওয়েবমাস্টারদের জন্যও গুগলের সিস্টেমের সাথে ধোঁকাবাজি খেলাটা দিনকে দিন কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। গুগলের লক্ষ্য এমন একটি এলগরিদম গড়ে তোলা – যেটি সম্পূর্ণ রূপে ওয়েবমাস্টারদের নিয়ন্ত্রণাতীত বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। অর্থাৎ, এমন বিষয় যেগুলোকে আপনি অটোমেশান করতে পারবেন না বা রোবট ব্যবহার করে যেসবে জেতা সম্ভব নয়।
ব্যাক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন সার্চ-রেজাল্ট দেখানো বা পার্সোনালাইজড সার্চ রেজাল্ট
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুগল তার সার্চ রেজাল্টগুলোতে আরও বেশী করে “পার্সোনালাইযেশান” প্রয়োগ করেছে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি সার্চ করবেন, সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির রুচি, অভ্যাস, জীবনাচারের সাপেক্ষে, তার কিওয়ার্ড ভিত্তিক রেজাল্ট দেখাবে গুগল। এভাবেই অতি-চালাক ওয়েবমাস্টারদের হারিয়ে দিয়েছে সার্চ-সম্রাট।
আপনি গুগলের একটি শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে যা দেখবেন, সেটি এই দেশেরই ভিন্ন অংশে বসবাসকারী একজন মানুষ ঐ একই শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে ঠিক তাই দেখবেন না। তিনি দেখবেন অন্যরকম। এমনকি আপনি আর আপনার প্রতিবেশীর সার্চ-রেজাল্টগুলোও একই কী-ওয়ার্ডের জন্য ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এমনকি আপনার পাশেই আপনার রুমমেট যে বসে আছেন সোফায়, বা আপনার পরিবারের কেউ, তিনি মোবাইলে একই কিওয়ার্ড সার্চ করে গুগলে প্রথমেই যা দেখছেন, আপনি হয়তো সেটি দেখবেন না।
আধুনিক ওয়েবমাস্টারগণ, যাদের সততা ও পরিশ্রম (এবং আল্লাহ্ যদি দিয়ে থাকেন তো মেধা, প্রতিভা) – এগুলো ব্যাতীত গুগলের সাথে জেতার কোনই উপায় নেই। তাদেরকে গুগল সার্চের এই আধুনিক চরিত্রটি বুঝতেই হবে। যে গুগলকে একই প্রশ্ন করে সকল ব্যক্তি হুবহু একই উত্তর পান না। সার্চ-সম্রাট গুগল তার রেজাল্টগুলোতে ফিল্টার বসিয়ে দিয়েছে। কোন ব্যাক্তির জীবনের পরিস্থিতি (যতটুকুর সন্ধান গুগল বিভিন্ন হিসাব নিকাশ করে পেয়েছে) এবং অতীতে ঐ ব্যাক্তিটি কি সার্চ করতেন, এ দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক ফলাফলগুলো দেখাবে গুগল। এবং সেকারণেই ব্যাক্তিভেদে রেজাল্টের ভিন্নতা।
একটি উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনি গুগলের একটি এন্টিভাইরাস প্রোগ্রামের জন্য সার্চ করলেন। আপনার ডিভাইসটি একটি আইম্যাক। সম্ভাবনা প্রবল যে আপনি আপনার সার্চ-রেজাল্টে “ম্যাক এন্টি-ভাইরাস টুল”-গুলো নিয়ে আলোচনাই বেশী দেখতে পাবেন। একই সাথে আপনাকে বিভিন্ন ফোরামও দেখাবে গুগল।
আপনি দেখবেন, সেখানে আপনার মতই ম্যাকের অন্য ব্যাবহারকারীগণ রয়েছেন। তারা আলোচনা করছে আপনার ম্যাক কম্পিউটারে এন্টি-ভাইরাসের প্রয়োজন আছে কি নেই, বা কোন এন্টিভাইরাসটি ভালো -এসব নিয়ে।
একই সার্চ আপনার পিসি থেকে করুন। আপনি সার্চ রেজাল্টে পিসি এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার বিষয়ক আলোচনা এবং রিভিউ দেখতে পাবেন। আবার এই কাজটিই যদি এন্ড্রয়েড ফোন বা আইফোন থেকে করেন তাহলে সেখানেও রেজাল্ট ঐসব ওপারেটিং সিস্টেমানুযায়ী আসবে।
এটি খুবই সরল একটি উদাহরণ। গুগল শুধু আপনার ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম নিয়েই পড়ে নেই। অন্য যে বিষয়গুলোকে সে বিবেচনা করে সেগুলো হল:
১। আপনার অবস্থান বা লোকেশান। এই অবস্থানটি আপনার নিজের রিপোর্ট করা ঠিকানা হতে পারে। আবার আপনার আইপি এড্রেস, বা মোবাইল ডিভাইসের জিপিএস তথ্য থেকে গুগল এটি শনাক্ত করতে পারে।
২। আপনার সার্চ হিস্টোরী বা গুগলে, সাম্প্রতিক অতীতে (বিগত কয়েকদিনে বা সপ্তাহে) যে ধরণের বিষয়গুলো আপনি খুঁজেছেন।
৩l আপনার সামাজিক চক্রটি কেমন। ফেসবুকে বা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যবহারকারী কিসে লাইক দেয়, কারা তার বন্ধু, কোন ধরণের গ্রুপে সে আছে, এগুলোকেও বিবেচনা করে গুগল।
৪l কোন যন্ত্র থেকে আপনি সার্চ করছেন। মোবাইল ডিভাইস, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, নাকী আপনার স্মার্ট-টিভি।
৫l আপনি যে ভাষায় ইন্টারনেটে কাজ করে থাকেন। যে ভাষার লেখা বেশী পড়েন।
সার্চ রেজাল্টের পার্সোনালাইজেশান বা ব্যক্তিকরণ, একটি সৎ উদ্দেশ্য নিয়েই করেছে গুগল। সে চায় আমাদের জীবনকে আরও সহজ করতে। এবং সেই উদ্দেশ্যে গুগল সফল তো বটেই। আবার একই কারণে সার্চ-ইঞ্জিন-অপটিমাইজেশানও কঠিন একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আপনি যেহেতু এখন আর নিশ্চিত হতে পারছেন না- কোন কীওয়ার্ডের জন্য কোন ব্যাক্তি গুগলে কি দেখছেন, সেই হেতু , পুরাতন চালাকিগুলো প্রয়োগ করে এখন আর গুগলের সাথে জেতা সম্ভব না।
শ্রম ও সততাই বর্তমান দিনে গুগলের র্যাঙ্ক করার একমাত্র উপায়। আজকের দিনে র্যাঙ্ক করার মত একটি ওয়েবপেজ কিভাবে তৈরী করবেন সেটি জানিয়ে দেব পরের লেখায়।