ইউআরএল, এসএসএল সার্টিফিকেট, হেডার, ইমেজ ট্যাগের গুরুত্ব

সাইট বা ব্লগ নিয়ে আলোচনা একটু গভীর হলেই বা টেকনিকাল দিকে গেলেই ইউআরএল, এসএসএল সার্টিফিকেট, হেডার, ইমেজ ট্যাগের আলো‌চনাগুলো চলে আসেই। এই বিষয়গুলো কি, এবং মূলতঃ এদের সাথে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের সম্পর্কটি কিরূপ সে সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান রাখা অনলাইনে ব্লগিং করে আয় করতে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য খুবই জরুরী। আজকে এই বিষয়গুলো নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল।

ইউআরএল (URL)

ইউআরএল কি?

যে কার্যকৌশলটির মাধ্যমে ব্রাউজারগুলো ওয়েবে প্রকাশিত মানব জাতির সমুদয় সম্পদকে খুঁজে নেয় তাকেই বলে ইউআরএল। ইউআরএল এর পূর্ণ রূপ “ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটার”। একটি ইউআরএল ওয়েবে বিদ্যমান কোন একটি স্বতন্ত্র সম্পদের ঠিকানা ব্যতীত আর কিছুই নয়।

ইউআরএল (URL) এবং এসইও (SEO)

অনেকেই বিশ্বাস করেন যে অনলাইনে ব্যবসা করতে হলে একটি বিশেষ ইউ-আর-এল থাকতে হবে। বিশেষত্বটি এমন: যে কিওয়ার্ডের জন্য আপনি র্যাঙ্ক করতে চান সেটি ইউআরএল এর মাঝে থাকা বাধ্যতামূলক। এই ধারণাটি নিতান্তই অমূলক। হ্যাঁ, ইউআরএলএ কিওয়ার্ড থাকার কিছু উপকার আছে, তথাপি এটি অত্যাবশ্যকীয় কিছু নয়। সত্য বলতে কি, বিষয়টি নিয়ে বরঞ্চ একটু ঝামেলাই হতে পারে।

অতীতে দেখা গেছে “এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন” (যেসব ডোমেইনে টার্গেট কিওয়ার্ড ফ্রেসটি হুবহু রয়েছে, এবং তার ব্যাতীত আর কিছুই নেই) কে গুগল ভাল চোখে দেখেনি।

গুগলের সিস্টেমকে ধোঁকা দিতে চাচ্ছে, এই মর্মে তাদেরকে ধূর্ত, দুই নম্বরী ওয়েবসাইট হিসেবে বিবেচনা করেছে। এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন ঘটিত এই ঝামেলায় গুগলের কাছে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিল মাত্র তিন শতাংশ একটিভ ডোমেইন। তারপরও এর থেকে বেশ বোঝা যায় যে, গুগলের র্যাঙ্ক করার জন্য কিওয়ার্ড দিয়ে ডোমেইনে তৈরি করার কোন প্রয়োজন নেই।

বিষয়টি নিয়ে আরেকটু ভাবা যাক। ধরুন একটি সাইটের প্রধান কিওয়ার্ড “স্বপ্নীল বাংলা”। সাইটের মালিক চায় মানুষ এই কিওয়ার্ড সার্চ দিলেই গুগলের প্রথম পাতায় তাকে একনম্বরে দেখবে। সেক্ষেত্রে সাইটের ইউআরএল “swapnilbangla.com “ রাখলেই তার কাজ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আপনি গুগলে “স্বপ্নীল বাংলা” কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখুন। দেখবেন এই নামের ইউআরএল সম্পন্ন কোন সাইট গুগলের প্রথম পাতার শীর্ষে কি। প্রথম পাতাতেই নেই।

এর কারণ আজকের দিনে র্যাঙ্কিং করতে হলে অনেক গুলো মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। এক্সাক্ট ম্যাচ ডোমেইন এখন আর কোন নিশ্চিত উপায় নয়। তবে কিওয়ার্ডের কিছু অংশ আপনি ইউ-আর-এল এ রাখতে পারেন। মার্জিত পরিমাণে। অন্যসব ঠিক থাকলে তাতে সামান্য কিছু বাড়তি উপকার হয়তো পেতে পারেন।

ইউআরএল এবং লোকাল সার্চ

ইউআরএল এ আপনার কিওয়ার্ড ফ্রেস থাকলে লোকাল সার্চের ক্ষেত্রেও সুবিধা। ধরুন, আপনার সাইটটি ডায়াবেটিস বিষয়ক। আপনি বাংলায় ডায়াবেটিস রোগীদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করার জন্য ব্লগ বা সাইট বানিয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার কিওয়ার্ড “ডায়াবেটিস“ যদি ‘ইউ-আর-এল’ এ থাকে সেটি বাংলাদেশের ডায়াবেটিস রোগীদেরকে গুগল সার্চে সাইটটি খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।

বলা বাহুল্য, সাইটের টাইটেল ট্যাগে “আইসিটি” কিওয়ার্ড অন্তর্ভুক্তকরণ ও এসইও সংক্রান্ত অন্যান্য ধাপগুলো সম্পন্ন করার পর তবেই একমাত্র ইউআরএল এ কিওয়ার্ড যোগ করার এই বিষয়টি কাজে আসতে পারে।

ইউআরএলএর দৈর্ঘ্যও একটি বিষয়। আহরেফ (Ahref), প্রায় দুই মিলিয়ান ইউ-আর-এল নিয়ে গবেষণা করেছে সাম্প্রতিককালে। সেখানে দেখা গেছে, সংক্ষিপ্ত ইউআরএল, দীর্ঘতর ইউআরএল এর চেয়ে সার্চ রেজাল্টে ভাল ফলাফল দেয়।

লিংক বিল্ডিং

আপনার নিজের সাইটে কিওয়ার্ড যোগ করার পাশাপাশি, অন্য যেসব ইউআরএল আপনার সাইটে সার্চকারীকে নিয়ে আসে, সেগুলোতেও আপনি আপনার কিওয়ার্ড’স অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। এই বিষয়টিকে বলে লিংক বিল্ডিং।

কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ “এংকার টেক্সট“ থাকা লিংক বিল্ডিঙের একটি অত্যাবশ্যকীয় কৌশল। প্রতিবার যখন একটি ওয়েবসাইট শুধুমাত্র আপনার ইউআরএল এড্রেস (ধরুন, https://swapnilbangla.com) ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইটের সাথে লিংক তৈরি করে, সেই ইউআরএল যদি আপনার সাইটের প্রধান কিওয়ার্ডের আংশিক ধারণ করে, তবে গুগল সার্চ রেজাল্টে আপনার সাইট বুস্ট হবে।

প্রচলিত ইউআরএল বিষয়ক ধারণাটি সঠিক নয়

আরেকটি উদাহরণ দিয়ে ইউআরএল বিষয়ক প্রচলিত ধারণাটিকে ভুল প্রতিপাদন করা যাক। আমাদের দেশের জনপ্রিয়তম লেখক ছিলেন “হুমায়ূন আহমেদ”। হুমায়ূন আহমেদ ডট অর্গ (ও আর জি) নামে একটি সাইট বিদ্যমান ইন্টারনেটে। সেখানে হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সমস্ত বইকে একত্রিত করার একটি চেষ্টা করা হয়েছে।

এখন কিওয়ার্ড সমৃদ্ধ ইউআরএল এর ধারণা সঠিক হলে, আপনি যদি গুগলে ইংরেজিতে হুমায়ূন আহমেদ লিখে সার্চ দেন, তাহলে এই সাইটটিকেই সবার প্রথমে দেখানোর কথা। কারণ তাদের গোটা ইউ-আর-এল’টাই তো কিওয়ার্ড দিয়ে গড়া। কিন্তু গুগল এই সাইটকে দেখায় না। আপনি হুমায়ূন আহমেদ লিখে সার্চ করলে প্রথমেই পাবেন “উইকিপিডিয়ার” মত একটি নির্ভরযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইটের লিংক।

কেন এমন হচ্ছে? কারণ “ হুমায়ূন আহমেদ” কিওয়ার্ডটির জন্য সবচেয়ে বেশী সংখ্যক সাইট, লিংক উল্লেখ করে উইকিপিডিয়ার। এবং সাইট হিসেবে উইকিপিডিয়া অনেক বেশী প্রতিষ্টিত এবং নির্ভরযোগ্য।

আগে যেমন বলেছি, টপ র্যাঙ্কিং তৈরি করতে নানান ধরণের মানদন্ড পূর্ণ করতে হয়। আর একটি সুষ্ঠু ও ভাল ইউআরএল থাকা সেই বহু মানদন্ডের মাঝে মাত্র একটি।

পুরাতন ডোমেইন ক্রয়

সার্চ ‌ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের ক্ষেত্রে ইউআরএল নিয়ে আরেকটি কাজ করা যায়। আপনি চাইলে পুরাতন ডোমেইন ক্রয় করতে পারেন। এমন ডোমেইন যেটি বেশ আগে তৈরি করা হয়েছিল এবং কিছুটা প্রতিষ্ঠাও পেয়েছিল। এখনও হয়তো সেখানে কিছু ভিজিটরের আনাগোনা রয়েছে। গোড্যাডি বা সিডো ডট কম ব্যবহার করে আপনি এরকম পুরাতন ডোমেইন কিনতে পারেন।

আপনি যদি এমন একটি পুরাতন ডোমেইন ক্রয় করেন যেখানে ইতিমধ্যেই আপনার মূল কিওয়ার্ডের কিয়দংশ অন্তর্ভুক্ত তাহলে তো আরও ভালো। এক্ষেত্রে নিজের ওয়েবসাইট চালু করার সময়, আপনি এক লাফে বেশ কিছু দূর এগিয়ে যেতে পারলেন ।

কারণ যে, পুরাতন ডোমেইনটিকে ইতিমধ্যেই গুগল ইনডেক্স করে রেখেছে, সম্ভাবনা প্রবল যে সাইটটিতে অনেক ইনবাউন্ড লিংক রয়েছে। এবং যে কিওয়ার্ড আপনার এসইও’র লক্ষ্য সেটির জন্য হয়তো এর মধ্যেই র্যাঙ্ক করে ফেলেছে পুরাতন সাইটটি।

এসএসএল সার্টিফেকেট

এসএসএল সার্টিফিকেট কি?

ইউআরএল বিষয়ক আলোচনার পরেই , এসএসএল সার্টিফিকেট বিষয়ক আলাপটি সেরে ফেললে ভালো হয়। এসএসএল বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়েবে ব্রাউজ করলেই আমরা দেখি, সাইটগুলোর ঠিকানা http:, https: দিয়ে শুরু হয়। https:// অর্থ সাইটটি সুরক্ষিত বা সিকিওর।

যেসব সাইটের এড্রেসে https:// নেই, সেসব সাইটকে খারাপ সাইট হিসেবে গণ্য করে গুগল। কারণ এই ধরণের সাইটগুলো অরক্ষিত। তাদের এসএসএল সার্টিফিকেট নেই। এসএসএল’র পূর্ণ রূপ “সিকিওর সকেট লেয়ার”।

এসএসএল সার্টিফিকেট (SSL Certificate) এর গুরুত্ব

সিকিওর বা সুরক্ষিত ইন্টারনেট ব্যবহারের মেরুদন্ড বলতে পারেন এসএসএল’কে। আপনার সাইটের সংবেদনশীল ও মূল্যবান তথ্য সমস্ত বিশ্বের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক জুড়ে ভ্রমণ করে বেড়ায়। এই অবস্থায় আপনার ওয়েবসাইটকে রক্ষা করার জন্য এসএসএল সার্টিফিকেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আপনার সাইট যদি ক্রেডিট কার্ড ইনফরমেশানের মত অতি সংবেদনশীল তথ্য নিয়ে কাজ না-ও করে, তাহলেও এসএসএল আবশ্যক। একটি এসএসএল সার্টিফিকেট যোগাঢ় করা কঠিন কোন কাজই নয়। যে কোম্পানী আপনার সাইটকে হোস্ট করছেন, তারাই দিতে পারবেন।

আপনার ওয়েবসাইটের যদি এসএসএল সার্টিফিকেট না থাকে, আজই ব্যবস্থা করুন। সার্টিফিকেট আছে কি নেই সেটি বোঝার জন্য https:// টাইপ করে, তারপর আপনার সাইটের ইউআরএল লিখুন। যদি https:// ডেজিগনেশান সহকারে আপনার সাইটটি দেখা দিতে না পারে, তাহলে আপনার একটি সক্রিয় এসএসএল সার্টিফিকেট নেই।

যেসব সাইটের এসএসএল সার্টিফিকেট রয়েছে, তাদের এড্রেস যেভাবে টাইপ করা হোক না কোন (http://, www. ইত্যাদি) https://-এই রিডিরেক্ট করবে। আপনার হোস্ট এর সাথে কথা বলুন এবং আজই এসএসএল সার্টিফিকেট আপনার সাইটে ইনস্টল করে নিন। ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং বাড়াতে হলে এটি লাগবেই।

হেডিং ট্যাগস (h1, h2, h3) বা হেডারস

হেডিং ট্যাগস কি?

হেডিং ট্যাগ (বা অনেক সময় হেডারও বলা হয়) একটি ওয়েবপেজে কোন একটি লেখা বা টেক্সটের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই “হেডার ট্যাগ” জিনিসটাকে খুবই পছন্দ করে। কারণ, বড় বড় হেডিংওয়ালা পেজগুলো বুঝিয়ে দেয় যে, এই পেজের কন্টেন্টগুলো সমৃদ্ধ এবং গুরুত্বপূর্ণ।

হেডার বা হেডিংস ট্যাগের ব্যবহার

আপনার পেজের সাথে মানানসই h1, h2, h3 ট্যাগের যেকোনটি ব্যবহার করতে পারেন। হেডিং ট্যাগের ভেতরে আপনার কিওয়ার্ড অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। যেমন,

<h1>এসইও সহায়ক আর্টিকেল লেখার উপায়</h1>

h1 ট্যাগ ব্যাবহার করলে আপনার টেক্সটকে বেশ বড় একটি ফরম্যাটে দেখাবে। যদি না সিএসএস কোন পরিবর্তন করে দেয়। h2ট্যাগ ব্যাবহার করলে h1 ট্যাগের চেয়ে ছোট দেখাবে। h3 ট্যাগ দেখাবে h2 ট্যাগের চেয়ে ছোট। যে পেজকে আপনি আপটিমাইজ করতে চান সেখানে সর্বোচ্চ একটি h1 ট্যাগ ব্যবহার করুন।

হেডিং ট্যাগ নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। একটি পেজে একটি থেকে তিনটি ট্যাগের ব্যবহারই যথেষ্ট। মূল কথা হচ্ছে সমস্তটার মাঝে একটি সমন্বয় রক্ষা করা। অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত কৃত্রিম যেন না দেখায়।

আপনি যদি এমনভাবে ট্যাগ ব্যবহার করেন যে, আপনার টেক্সটকে অস্বাভাবিক দেখায়, তাতে আপনার আপনার সাইটেরই ক্ষতি। হেডারের অস্বাভাবিক ব্যবহার আপনার সাইটের পাঠযোগ্যতা বা রিডেবিলিটি এবং পারফরম্যান্সকে নষ্ট করবে।

গুগল ভাববে আপনার সাইটে নিশ্চয়ই কোন দুই নম্বরী ব্যাপার আছে। নইলে আর খামোখা কেন আপনি টেক্সটের গুরুত্ব বর্ধণের উদ্দেশ্যে হেডার ট্যাগের যত্রতত্র ব্যবহার করতে যাবেন। সুতরাং, বিষয়টি খেয়াল রাখা দরকার।

অল্টারনেটিভ ইমেজ ট্যাগস (alt tag)

অনেকেই ওয়েবসাইটে বা ব্লগে ছবি বা গ্রাফিক্স ব্যবহার করেন। অনেক সাইট কি ব্লগের “নিশ” বা বিষয়বস্তুটাই এমন যে ছবি ব্যবহার না করে আপনি পাঠককে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিতেই পারবেন না। যারাই ছবি ব্যাবহার করছেন ব্লগে, সেই ছবিগুলোতে এএলটি ট্যাগ (alt tag) থাকাটা খুবই জরুরী।

এএলটি ইমেজ (alt tag) ট্যাগ কি?

একটি ফটো, ইমেজ বা আইকনকে নাম দেয়াটাই এল্টার ট্যাগ যুক্ত করা। আপনার সাইটের ছবিগুলোর এল্টার ট্যাগ আছে কি না সেটি যাচাই করা অত্যান্ত সহজ। ছবিগুলোর ওপর মাউসের পয়েন্টার নিয়ে যান। যদি এল্টার ট্যাগ থাকে, তাহলে টেক্সট বা ছবি সম্পর্কিত লেখাটি দেখাবে। যদি কোন লেখা না দেখায় তাহলে বুঝবেন এল্টার ট্যাগ নেই। সেক্ষেত্রে যোগ করে দিন।

অল্টার বা এএলটি ট্যাগ (alt tag) এর প্রয়োজনীয়তা

এল্টার ট্যাগের আক্ষরিক সুবিধাটি এই যে, আপনার ওয়েবসাইটের ইমেজ লোড হওয়ার সময় তৎসম্পর্কিত টেক্সটি দেখাতে থাকে। তাতে ইউজারগণ আপনার পেজে কি কন্টেন্ট রয়েছে সে সমন্ধে তথ্য পান। এল্টার টেক্সট যোগ করার প্রধান উদ্দেশ্যটি ছিল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন মানুষদের জন্য পেজ ব্যবহার আরও সহজতর করা।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশানের ক্ষেত্রে alt tag এর সুবিধা বা প্রয়োজনীয়তাটি হচ্ছে- সার্চ ইঞ্জিন ক্রাউলার এই এল্টার ট্যাগ (alt tag) এর মাধ্যমে ব্যবহৃত ছবি সম্পর্কিত তথ্য গ্রহণ করে এবং সার্চ রেজাল্টে অল্ট ট্যাগকে কিওয়ার্ড হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে ইউজারদের সার্চ অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক ফলাফল প্রদর্শন করে।

অল্ট ট্যাগ (alt tag) ব্যবহারের নিয়ম

আপনার সাইটের ছবিতে ট্যাগ যুক্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কিওয়ার্ড ফ্রেস দিয়ে ট্যাগ তৈরি করা। এর পরপরই থাকবে বাদবাকী কন্টেন্ট। যদি একাধিক ছবি থাকে একটি পেজে, তাহলে প্রতিটি এল্টার ট্যাগের লেখা কিছু ভিন্নতা রাখার চেষ্টা করুন। হুবহু একইরকম লিখবেন না।

যেমন ধরুন, আপনার সাইটের বিষয় হচ্ছে এসইও। এসইও করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর উপায় নিয়ে আপনি একটি পেজ তৈরি করেছেন। সেখানে এসইও এর বিভিন্ন কলাকৌশল সহজে বোঝানোর জন্য কিছু ছবিও আপনাকে দিতে হচ্ছে।

আপনি এল্টার ট্যাগ (alt tag) ব্যবহারের সময় এল্টার টেক্সট লিখতে পারেন এভাবে – “এসইও করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর উপায়“। এই ক্ষেত্রে ইমেজ ট্যাগ তৈরির জন্য নিম্নোক্ত কোডটি ব্যবহার হতে পারে-

<img src=“../images/seo-tips.jpg” width=“350” height=“600” border=“0” alt=“এসইও করে ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর উপায়“>

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের অন্যসব প্রচেষ্টাগুলোর বিষয়ে যেটি বলেছি, সেটি এই এল্টার ট্যাগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এল্টার ট্যাগ বা ইমেজ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনি যদি পেজে খুব বেশী পরিমাণে ইমেজ ব্যবহার করেন তাহলে সাইট লোড হতে সময়ও খুব বেশী লাগবে। লোড স্পীড কমে গেলে গুগলে আপনি র্যাঙ্কিঙে পিছিয়ে পড়বেন।

কোন ছবিতে যদি খুব বেশী পরিমাণে ট্যাগ থাকে, তাহলে গুগল ভাবতে পারে আপনি কিওয়ার্ড স্টাফিং করছেন। আপনার পেজের প্রতিটি ইমেজের জন্যই এল্টার ট্যাগ তৈরি করুন। একটি মাত্র কিওয়ার্ড ফ্রেস দিয়ে সেগুলি লেখার চেষ্টা করুন।

ওয়েবপেজে ছবি ব্যবহারের নিয়ম

শেষ যে কথাটি বলব, সেটি খোদ ওয়েবপেজে ছবি সংযুক্ত করা বিষয়ে। মনে রাখবেন, ভিজিটর এসে আপনার সাইটে কতক্ষণ অবস্থান করছেন, কন্টেন্ট নিয়ে কি করছেন, এসবের ওপর আপনার সাইটের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে।

ইমেজকে ঠিকভাবে ট্যাগ করার পাশাপাশি, এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি একদম সঠিক ছবিটা ব্যবহার করবেন। পেক্সেল, পিক্সাবে, স্টকস্ন্যাপ প্রভৃতি কিছু সাইট আছে যেগুলো রয়্যালটি তথা কপিরাইট মুক্ত এবং একই সাথে মানসম্পন্ন ছবি সরবরাহ করে থাকে তাদের ভিজিটরদেরকে। এখান থেকে ছবি সংগ্রহ করতে পারেন আপনার সাইটের জন্য।

বিনা অনুমতিতে কপিরাইট যুক্ত ছবি ব্যবহার থেকে বিরত রাখুন। অর্থাৎ, গুগল সার্চ করে যে ছবি পেলেন সেটিকেই নামিয়ে নিয়ে নিজের পেজে সংযুক্ত করে দেবেন না। চৌর্যবৃত্তির দায়ে গুগল আপনাকে খারাপ সাইট হিসেবে বিবেচনা করবে।

অতঃপর আবারও,

কিওয়ার্ডের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে কিছু কথা : কিওয়ার্ড প্লেসমেন্ট

কিভাবে এবং কোথায় আপনার কিওয়ার্ড’গুলো ওয়েবপেজে ব্যবহার হচ্ছে এই বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব দিন। অর্থাৎ, সঠিক কিওয়ার্ড প্লেসমেন্টের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে। আজকের দিনে কিওয়ার্ড স্থাপনের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি জরুরী বিষয় নয়। কারণ গুগলের এলগরিদমগুলো আগের চেয়ে উন্নত। তারা দু’তিনটে কিওয়ার্ড ফ্রেস থেকেই আপনার সাইটের কন্টেন্টকে যথার্থরূপে শনাক্ত করতে পারে।

অনেকেই এখনও বিভিন্ন পুরান আর্টিকেল পড়ে ভাবেন যে, তাদের ওয়েবপেজটিকে শুধুমাত্র কিওয়ার্ড দিয়ে পূর্ণ করলেই তারা সার্চ ইঞ্জিনের রেজাল্ট পেজে ওপরের দিকে স্থান করতে পারবেন।

সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই চর্চাটিকে খুবই অপছন্দ করেছে। এই ধরণের সাইটকে তারা চাতুরীপূর্ণ দুই নম্বরী সাইট হিসেবে সাব্যস্ত করে। কতবার একটি কী-ওয়ার্ড আপনার পেজে দেখা দেয়, তাকে বলে কিওয়ার্ড ডেনসিটি বা কিওয়ার্ডের ঘনত্ব।

একটি কিওয়ার্ডকে র্যাংক করানোর জন্য আপনার আর্টিকেল এর মধ্যে ঐ কিওয়ার্ডটির বেশী ঘনত্বের প্রয়োগ করার প্রয়োজন নেই।

কিওয়ার্ড ডেনসিটি নিয়ে আগেও অনেক কিছু বলা হয়েছিল। পেজের মোট শব্দসংখ্যার দুই থেকে তিন শতাংশে আপনার কিওয়ার্ড থাকলেই চলবে। তার চেয়ে বেশী দরকার নেই। কারণ বর্তমানে কিওয়ার্ডের ডেনসিটির চেয়েও সেই কিওয়ার্ড কোথায় বসাচ্ছেন অর্থাৎ প্রপার প্লেসমেন্ট আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন- কিওয়ার্ড রিসার্চ কি ও কেন প্রয়োজন?

এই বিষয়ে নীচের নির্দেশগুলো অনুসরণ করলে ভালো ফল পাবেন আশা করা যায়-

১। টাইটেল ট্যাগ, ডেসক্রিপশান ট্যাগ, এল্টার ট্যাগ এবং হেডার ট্যাগগুলোর যেকোন একটিতে আপনার কী-ওয়ার্ডটি রাখুন।
২। আপনার পেজের প্রথম পঁচিশ শব্দের মাঝে কিওয়ার্ডটি রাখুন।
৩। আপনার পেজের শেষ পঁচিশ শব্দে কিওয়ার্ডটি রাখুন। এর একটি উপায় হচ্ছে পেজের ফুটারে, কপিরাইটের পরপরই কিওয়ার্ড যোগ করে দিন। যেমন : “© আপনার সাইটের নাম। আপনার সাইটের কিওয়ার্ড”।

কিওয়ার্ডের এধরণের ব্যবহার কোন অস্বাভাবিকতা তৈরি করে না। আপনার সাইটের ভিজিটররা সাধারণতঃ খেয়ালই করবেন না ফুটারে কিওয়ার্ডের ব্যবহার করেছেন। ফলে, তাদেরও মনে হবে না, এই ওয়েবমাস্টার অযথাই কিওয়ার্ড দিয়ে পেজ বোঝাই করে রেখেছেন। কিন্তু গুগলের ইনডেক্সিঙে আবার এটি সাহায্য করবে।

এই নিয়মের অনুসরণে আপনি কিওয়ার্ড ব্যবহার করলেই গুগল বুঝবে আপনার সাইটটি কোন কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করছে। আবার দুই নম্বরী সাইটও ভাববে না আপনাকে। অর্থাৎ একপ্রকার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারবেন।

তাছাড়া, অন্য যেসব সাইট অনপেজ এসইও’র পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে অথচ তাদের সাইট অপটিমাইজ করেননি, তাদের সাথেও প্রতিযোগিতায় আপনি এগিয়ে থাকতে পারবেন।

কিওয়ার্ড প্লেসমেন্টকে গুরুত্ব সহকারে নিতেই হয়। কারণ আপনার পেজের কতটুকুকে গুগল বট ক্রল করছে সেটি আপনার জানা নেই। বলা বাহুল্য, আমরা ধরেই নেই যে, ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত পুরো পেজকেই সে ক্রল করবে। কিন্তু নিশ্চিত তো জানতে পারছেন না। সুতরাং, নিজের কাজ ঠিকভাবে করে রাখা দরকার।

আজ এই পর্যন্তই। জ্ঞান অর্জন করুন, পরিশ্রম করুন, সফল হন। হ্যাপি ব্লগিং।

এসইও সম্পর্কিত লেখাসমূহ-

Leave a Comment