আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর দূর্দান্ত ৬টি উপায়

আত্ম শব্দটির অর্থ হলো নিজ। আত্মবিশ্বাস শব্দের অর্থ নিজের উপর বিশ্বাস। নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, জ্ঞান, বিচার, বুদ্ধির উপর আস্থা বা বিশ্বাস না থাকলে কেউ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষদের জীবনী পড়লে সবার আগে আত্মবিশ্বাস আমাদের চোখে পরে। নিজের উপর আস্থা ও বিশ্বাসের ফলেই কঠিনতম কাজে তারা লেগে ছিলেন এবং শেষ অব্দি সাফল্যের ছোঁয়া পেয়েছিলেন।

জীবনে চলার পথে নানা বাধা বিপত্তি আসে। নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। অন্যের কটাক্ষ শুনতে হয়। আরো অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবং, এই সময়ে যারা নিজের উপর বিশ্বাস রেখে এগিয়ে চলেন, বার বার ব্যর্থ হওয়ার পরও চেষ্টা চালিয়ে যান; তারাই সফল হন। তাই স্বপ্ন পূরণ করতে চাইলে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর উপায়গুলো নিচে দেওয়া হলোঃ-

১। ইতিবাচক থাকুন

সমাজের কিছু মানুষ আছে তারা অন্যকে হেয়ো, ছোট, অপমান ইত্যাদি করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। মূল কথা হচ্ছে, এরা খুবই তুচ্ছ প্রকৃতির হয়। এদের প্রধান উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে অপমান করা, তুচ্ছ জ্ঞান করা, যাতে ঐ ব্যক্তি হাল ছেড়ে দেয়।

যাতে আর এগোতে না পারে। অর্থাৎ, তার থেকে ভালো অবস্থানে কেউ যাক সেটা সে কখনোই চায় না। আর যদি তার থেকে ভালো অবস্থানে যায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির প্রাপ্তি বা সফলতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে ও দোষ বের করার চেষ্টায় থাকে সারাক্ষন।

সমাজে যেমন ভালো আছে, তেমনি খারাপও রয়েছে অনেক। ভালো খারাপ মিলিয়েই সমাজ। কেউ যদি আপনাকে শিঁয়াল বলে, তাতে আপনি তো আর শিয়াল হয়ে যাবেন না। ঠিক একইভাবে কেউ যদি কাঁকাতুয়া বলে, তো আপনি কাকাতুয়া হয়ে যাবেন না।

এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি দিন শেষে ঐ নিন্দুকটা আপনার মুখে খাবার তুলে দিবে না এটাও সত্য। তাহলে আসল পয়েন্ট হচ্ছে, এমন কারো কথায় আপনি কেনো কষ্ট পাবেন, যে দিনশেষে আপনার পাশে থাকে না। আপনার মুখে আহার তুলে দেয় না। বরং আপনাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে?

মানুষের স্বভাবই হচ্ছে সন্দেহ প্রকাশ করা। আপনি একটা কাজ শতভাগ সুন্দর করে করলেও কেউ না কেউ নাক সিঁটকাবে। দোষ খুঁজে বেড়াবে। কে কি বললো, না বললো সেটা ধরে বসে থাকলে জীবন থমকে যাবে। জীবনকে এগিয়ে নিতে চাইলে নেতিবাচক কথা সাইডে রেখে দিন।

কামিনী রায়ের কবিতাটা মনে আছে?

করিতে পারি না কাজ
সদা ভয়, সদা লাজ
সংশয়ে সংকল্প সদা টলে
পাছে লোকে কিছু বলে।

পিছনের লোকরাই একমাত্র আপনাকে নিয়ে কটু কথা বলে। একটি কথা মনে রাখবেন, যারা সত্যিকার অর্থে আপনার উপরের পর্যায় আছে তারা সবসময় আপনাকে উৎসাহ দিবে। তাই পিছনের সারির মানুষদের নেতিবাচক কথা ধরে বসে থাকবেন না। ইতিবাচক মানুষদের সাথে চলাফেরা করুন ও ইতিবাচক হোন।

২। যত্নশীল হোন

নিজের প্রতি যত্নশীল হলে, নিজেকে ভালোবাসতে পারলে, কেবল তখনই আপনি কাজ করার প্রেরণা পাবেন। এর জন্য দৈনন্দিন জীবনকে কিছুটা রুটিনের আওতায় আনতে হবে। যেমন- সঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুমাতে যাওয়া, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য গ্যাপ না দিয়ে কাজ করা ইত্যাদি।

যখন আপনি নিজের বাহ্যিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হবেন তখন আপনি মনের শান্তির পথ খুঁজে বেড়াবেন। আপনার যদি কোনো স্বপ্ন থাকে তাহলে সেটা আপনার মনে তাড়না সৃষ্টি করবে। অর্থাৎ আপনি যদি লক্ষ্য বা স্বপ্ন পূরণে সচেষ্ট না হোন তাহলে তাড়না সৃষ্টি হবে মনে। এবং, অশান্তি অনুভব করবেন। এর জন্য আত্নবিশ্বাসের হাজারটা বই পড়লে বা কারো কাছে পরামর্শ চাইলে কাজ হবে না। তাই আগে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে এবং তারপর স্বপ্ন পূরণে যত্নশীল হতে হবে।

৩। লক্ষ্য স্থির রাখুন

কি করবেন বা কি হতে চান, এগুলো স্থির করে রাখা অনেক বেশি জরুরি। আপনি যদি লক্ষ্য স্থির না করেন, তাহলে চালকবিহীন জাহাজের মতো অবস্থা হয়ে যাবে। কোথায় যাবেন, না পৌছানোর আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালাতে হবে। লক্ষ্য স্থির করা না থাকলে গন্তব্যের কোনো কূল কিনারা পাবেন না।

গন্তব্য স্থির রাখলে পরিকল্পনা মোতাবেক এগোনো যায়। এবং, মনের মধ্যে বিশ্বাস জন্ম নেয় যে, আপনি সঠিক পথে যাচ্ছেন। সফলতা পেতে চাইলে সর্বপ্রথম একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন। এরপর পরিকল্পনা করুন এবং পরিশেষে পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ করুন। লক্ষ্য স্থির থাকলে সবকিছু আপনার হাতের মুঠোয় থাকবে। আত্নবিশ্বাস তখন স্বাভাবিকভাবে এসে যাবে।

৪। অপরকে সাহায্য করুন

মানব ধর্মের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে একে অপরের সাহায্য করা, মানসিক শান্তির জন্য যা অনেক বেশি জরুরি। কাউকে সাহায্য করলে যে প্রশান্তি আপনি পাবেন তা আপনাকে আরো মানুষকে সাহায্য করার প্রেরণা দিবে। সে প্রেরণাই বেশি বেশি কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।

সৃষ্টির সেবার মধ্যেই স্রষ্টাকে পাওয়া যায়। স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার পথ আরো বেশি সুন্দর, সুগম হবে। চলার পথে স্রষ্টার দয়া ছাড়া কিছুই সম্ভব না। স্রষ্টার নৈকট্য পেতে চাইলে ওনার সৃষ্ট জীবের প্রতি সদয় হোন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। মূল কথা হচ্ছে স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখলে আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস আসবে। অন্যথায় সাফল্যের দ্বারে কখনোই পৌঁছাতে পারবেন না। সাফল্য পেতে, নিজের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা, মনের প্রশান্তি অনেক বেশি জরুরী।

৫। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হোন

পরিষ্কার পরিচ্ছিন্ন পোশাক পরিধান করুন। উশকো খুশকো চুল না রেখে নিয়মিত শ্যাম্পু করুন, তেল দিন। নখ নিয়মিত কাটুন। অর্থাৎ, নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্যের দিকে মনোযোগ দিন।

কথা বলার সময় আগে অপরপক্ষকে বলতে দিন। বুঝুন, তারপর আপনার মতামত বলুন। ব্যক্তিত্ববান মানুষ কখনো না জেনে কথা বলে না। তাই যা আপনি না জানেন, তা বলা থেকে বিরত থাকুন। অপরের সাথে হাঁসিমুখে কথা বলুন।

এই ছোট খাটো বিষয়গুলো আপনাকে সুন্দর ব্যক্তিত্বের অধিকারী করে তুলবে। নিজেকে ব্যক্তিত্ববান বা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারলে আপনার আত্নবিশ্বাস আকাশচুম্বী হয়ে যাবে।

বিষয়টা আরো পরিষ্কারভাবে বোঝানো যাক- যখন আপনি ময়লা পোশাক পরিধান করেন, তো স্বাভাবিকভাবেই তখন চিন্তা বিরাজ করে পাশের লোকগুলো কে কি বলবে। বা যখন আপনি অনেক বড়সড় নখ রাখেন, চুল হিরো স্টাইলে বড় বড় করে কাট দেন, তখন আপনার কাছে অনেক কুল মনে হলেও আশেপাশের মানুষগুলো আপনাকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনাই করে। তখন নিজ থেকেই খারাপ লাগে আর কনফিডেন্স লেভেল জিরো হয়ে যায়।

কাজেই আপনি যদি আত্নবিশ্বাসী হতে চান তাহলে নিজেকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। অর্থাৎ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হতে হবে। তবেই আশেপাশের মানুষগুলো আপনাকে মূল্যায়ন করবে।

৬। দুশ্চিন্তাকে না বলুন

দুশ্চিন্তা আপনার বর্তমান জীবনের উপর প্রভাব ফেলে এবং বর্তমান সুখকে গ্রাস করে ফেলে। যে যতো বেশি চিন্তামুক্ত থাকে, সে ততো সুখি জীবনযাপন করে। ভবিষ্যৎ এর কথা অধিক চিন্তা করতে করতে চলে আসে দুশ্চিন্তা। ভবিষ্যতে জীবন কেমন হবে, সুখে কাটবে না দুঃখে কাটবে, অথবা অতীতে আরেকটু কাজ করলে হয়তো ভবিষ্যতটা আরো সুন্দর হতে পারতো, ইত্যাদি ইত্যাদি।

অতীত কখনো ফিরে আসবে না। অতীতের ভুলগুলো কখনো সুধরানো যাবে না। এগুলো যেমন নির্মম সত্য, ঠিক তেমনি ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বর্তমানে। বর্তমানে আপনি কি করছেন, নিজের কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যাওয়ার জন্য কতটুক পরিশ্রম করছেন সে অনুযায়ী নির্ধারিত হবে আপনি ভবিষ্যতে কতোটুকু সাফল্য পাবেন।

ভবিষ্যৎ যেহেতু বর্তমান সময়ের উপর নির্ভর করছে তাই বর্তমানকে কাজে লাগান। ভবিষ্যৎ সুন্দর, সাফল্যমন্ডিত হতে বাধ্য। ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাকে না বলুন। লোকে কি বললো সেটা নিয়ে বসে না থেকে আপনাকে নিয়ে লোককে কি বলাবেন সেটা নিজে নির্ধারণ করুন।

অহেতুক দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে, আপনার কতুটুকু আছে, সাফল্য পেতে কতুটুকু লাগবে, সে অনুযায়ী পরিশ্রম করুন। যখন আপনি অহেতুক দুশ্চিন্তা বাদ দিবেন তখন ইতিবাচক অনুভব করবেন। এবং, ইতিবাচক মনোভাবই আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য এনে দিবে।

প্রাসঙ্গিক কিছু লেখা-

Leave a Comment