স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। কথাটার সত্যতা বর্তমান যুগে বেশি অনুভব করতে পারে মানুষ। রোগ-ব্যাধি যেনো বেশিরভাগ পরিবারের স্থায়ী সদস্য হয়ে উঠেছে। সময় যত ধাবিত হচ্ছে, তারই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসুখ-বিসুখ।
অসুস্থতার এখন আর নির্দিষ্ট কোনো বয়সের সীমাবদ্ধতা নেই। যে কোনো বয়সের মানুষই কোনো না কোনো অসুস্থতায় ভুগে এখন।
তারমধ্যে ডায়াবেটিস, মেয়েদের মেয়েলি সমস্যা, প্রেশার, থাইরয়েড হরমোন বেড়ে যাওয়াসহ এসিডিটির মত অনেক রোগই এখন ঘরে ঘরে পাওয়া যায়।
এসব কিছুর জন্য দায়ী মানুষের অনিয়মে ভরা জীবন। খাবার দাবার থেকে ঘুম কোন কিছুই অতটা নিয়মমাফিক করা হয়ে উঠে না। এ ধরণের মানুষের সংখ্যাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।
বাইরের ফাস্ট ফুড খাওয়া যেনো ট্রেন্ড এ পরিণত হয়েছে। আমরা কয়েক বছর পিছিয়ে উনবিংশ শতাব্দীর কথাই ধরতে পারি। তখনকার যুগে মানুষ ঘরে তৈরি খাবারই খেতো এবং প্রতিটি খাবারই ছিলো স্বাস্থ্যসম্মত।
বর্তমানে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ মাংস সকল কিছুতেই মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর ক্যামিকেল। বেশি ফলনের আশায় ব্যবহার হচ্ছে রাসায়নিক দ্রব্য যা দেহের পরিপাক সহ ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে শারীরিক বৃদ্ধিতেও।
অন্যদিকে রেস্টুরেন্টগুলোতে ভীর জমছে প্রচুর। যেখানে মাংসের চাহিদাটাই বেশি। স্বাস্থ্যবিদদের মতে অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে বেড়ে যায় ক্যান্সার হবার আশংকা।
আর যারা পুড়িয়ে মাংস খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। পোড়া যে কোন খাবারই কিডনি, ফুসফুস, লিভার এবং স্কিনের রোগের জন্য দায়ী।
এসএসএর প্রধান গবেষক ও পরামর্শক গাই পপি জানান- এসব খাবারে বিপজ্জনক অ্যাক্রিলামাইড রয়েছে, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই খাবারের দিক থেকেও সচেতনতাটা বিশেষভাবে জরুরি। কম তেলে রান্না করে খাওয়া, শাকসবজি বেশি খাওয়া, চিনি যথাসম্ভব পরিত্যাগ করা একান্তই জরুরি।
এখন আসা যাক নিয়মমাফিক সুস্থ জীবনে। আমরা ছোট বেলায় ইংরেজীতে একটি ছড়া পড়েছি “early to bed, early to rise”..
এখন সারারাত জেগে শেষ রাতে বা খুব সকালে ঘুমাতে যাওয়াটাই কিছু কিছু মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভুল ব্যবহারই অনেকটা দায়ী।
যা কিনা মূল নিয়ামক শক্তি হয়ে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাড়াচ্ছে আমাদের সুস্থ-স্বাবাভিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথা ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার প্রভৃতি ব্যবহারকারীর অনিয়ন্ত্রিত ও ক্রম বর্ধনশীল সংখ্যাটাই বলে দেয় আমাদের বর্তমান প্রযন্মের শারীরিক ও মানুষিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রধান অন্তরায় হয়ে উঠছে প্রযুক্তির এইরূপ ব্যবহার।
এরপরই রয়েছে বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন ভিডিও গেমস সমূহ, যা কিনা তরুন প্রযন্মকে এক কথায় গেম এডিক্টেড করে তুলছে।
চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন- ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে থেকে ঘর অন্ধকার থাকা উচিত। তার পরিবর্তে রাতের অন্ধকারে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থেকে নিঃস্বরিত একটি ক্ষতিকর রশ্মি চোখের সামনে ধরে রাখলে ঘুম না আসাটাই স্বাভাবিক। যার দরুন বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই ৩ টা ৪ টা অব্দি সময় কাটায় স্মার্টফোন চালিয়ে এবং বেড়ে উঠছে একটি অসুস্থ সময়জ্ঞান নিয়ে। এছাড়া এতে স্বাস্থ্য নষ্ঠ হবার ঝুঁকি তো আছেই।
একটি গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে- মানুষের সাফল্যের পিছনে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠার প্রভাব অনেকখানি। একারণেই শরীরচর্চা/ব্যায়াম কিংবা প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজের রুটিনে হাটাহাটিটাও সংযুক্ত করার প্রয়োজন।
শহুরে পরিবারে দুজন সদস্যের জন্যও রাখতে হচ্ছে কাজের বুয়া। মানুষ হয়ে উঠছে আরামপ্রিয়। এগুলোই ডেকে নিয়ে আসছে রোগবালাই।
এ যেনো এক অসুস্থ হবার প্রতিযোগিতা।
আর এ কারণেই নিজেকে সুস্থ রাখতে সময়মত ঘুমানো এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠা যেমন জরুরি। পাশাপাশি খাদ্যাভাস যেনো ক্ষতিকর প্রভাব না ফেলে সেই দিকেও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
শরীর ভালো থাকলে মনেও আসবে প্রশান্তি।
সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদস্বরূপ। নিজেকে সুস্থ রাখুন, অন্যকে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিন।
প্রাসঙ্গিক লেখা-